এবং সইকথা (ত্রৈমাসিক) ওয়েবজিন শারদ সংখ্যা, ১৪২৮
লেখক
সূচি
আকাশে জলদ মেঘ হয়ে উঠছে পেজা তুলো। মাঠে বনাঞ্চলে কাশ ফুলের রুপোলি ঝলক।
শরৎ প্রকৃতির বুকে পা রাখছে। আবার উৎসবের সমবেত খুশির জোয়ার আসছে। অতিমারীর প্রকোপ কিছুটা হলেও কমেছে। মাতৃশক্তির আরাধনাতে
আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ব আর কিছুদিন পরেই।
কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির দিকে মুখ ঘোরালেই দেখব, এই সময়ে আফগানিস্থানে প্রকাশ্যে মেয়েদের উপর অত্যাচার নেমে আসছে ধর্মীয় আইন বলবতের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে। স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। সময় যেন হঠাৎ করে পিছনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ধর্মের আড়ালে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। মিউজিক স্কুল ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাকাডেমিক শিক্ষার থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বড় হয়ে উঠতে দেখলে বিশ বছর আগের কথা মনে পড়ে যখন স্কুল কলেজে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আইনকেও তো সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে হবে। সাহিত্য সংস্কৃতির মতো আপডেট করতে হবে সময়ের চাহিদা মেনে। সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদ মাধ্যমের উপর নির্ভর করে যেটুকু খবর আমরা পাচ্ছি নারী ও শিশুদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সঠিক তথ্য যে আমাদের কাছে পোঁছায় না বা পোঁছাতে দেওয়া হয় না সেও তো সত্য । তবে এও আমরা জানি যে অনেক বিষয়ের উপর পরস্পর বিরোধী মত উপস্থাপন করাই যায়। বিশ্ব রাজনীতির গভীরে ঢুকলে অনেক আপাত ঠিক ভুল বলে মনে হতে পারে বা উল্টোটাও। তাই আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রইল আগামী দিনে ওখানকার পরিস্থিতির উপর। নারীদের অবস্থান বোঝার জন্য অবশ্য আমাদের দেশ বিদেশের খবর জানতে হয় না। পরিবার,সমাজ সবখানেতেই আমরা সেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি বা হতে দেখছি। কোভিড পরিস্থিতিতে গার্হস্থ্য হিংসা কিংবা অবাঞ্ছিত গর্ভ ধারণের উর্দ্ধমুখী পরিসংখ্যান তার ফল স্বরূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
শিল্পী শচীমোহন বর্মন। ওপার বাংলার, উত্তর বঙ্গের (কোচবিহার জেলা) কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, অভিনেতা, লোকসংগীত শিল্পী ও গবেষক শচীমোহন বর্মন। লোকশিল্পী থেকে লোকসংস্কৃতি গবেষক। আমরা জানি একজন গবেষকের ক্ষেত্রে দুটো বিষয়ে সস্পৃক্ত থেকে গবেষণার কাজ সুসম্পন্ন করতে হয়। একটি বিষয় তাত্ত্বিক এবং অন্যটি ব্যবহারিক। তাত্ত্বিক দিক যেমন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হয় একজন গবেষককে তেমনিভাবে ব্যবহারিক অর্থাৎ হাতে-কলমে শিক্ষার বিষয়টিও প্রাধ্যান্য দিতে হয় সমানভাবে। আমরা সংগীতের ক্ষেত্রে একটি কথা প্রায় বলে থাকি-গানের কথা প্রধান, না সুর প্রধান। কথা ও সুর এক্ষেত্রে দুটোই সমানভাবে বিবেচ্য। গবেষণার ক্ষেত্রে একজন গবেষকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সব সময় তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়ের উপর রাখতে হয়। এতে করে তাঁর গবেষণার কাজ সুসংহতভাবে সম্পন্ন হয়। লোকসংগীত শিল্পী ও লোকসংস্কৃতি গবেষক শচীনমোহন দুটি বিষয়কেই সমানভাবে আমলে নিয়ে রিনরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। আমাদের উত্তরাঞ্চলের তথা দেশ বরেণ্য ও খ্যাতিমান কবি, দেশ-দশ, মা-মাটি ও মানুষের কবি, পরম শ্রদ্ধেয়, অত্যন্ত প্রিয় এবং কাছের মানুষ সরোজদা (সরোজ দেব) আমাকে শচীমোহন বর্মন সম্পর্কে লিখতে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগান।| উত্তরবঙ্গের সংস্কৃতি জগতে শচীমোহন বর্মন একটি অতি পরিচিত মুখ। শচীমোহন বর্মন ও মুক্তচিন্তা যেমন একই সূত্রে গাথাঁ। শচীমোহন বর্মন একজন গবেষক এবং মুক্তচিন্তা তাঁর গবেষণাকেন্দ্র। মুক্তচিন্তাকেন্দ্রে সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ ও শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা হয়। মুক্তচিন্তা ভাবনা ও তার বাস্তব প্রয়োগ শুরু হয় ১৯৯৯ সালে মেখলীগঞ্জ ব্লকে। ভোটবাড়ীতে নিজ অর্থ ব্যয়ে জমি কিনে সাহিত্যের স্কুলের জন্য শ্রেণিকক্ষ, পত্রিকাগার, পাঠাগার, নাচ-গান ও অভিনয়ের অনুশীলন কক্ষ, শিশু বিদ্যা নিকেতন ও গবেষণা কাজের জন্য গবেষণাগার গড়ে তোলেন। সমাজ কল্যাণ কাজের জন্য গঠন করেছেন মুক্তচিন্তা ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। শচীমোহন বর্মন একাধারে একজন কবি, গল্পকার, গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সাহিত্যিক ও নৃত্যশিল্পী। পিতা হরিদয়াল বর্মন এবং মাতা সরলা বর্মনের অষ্টম সন্তান শচীমোহন। ১৯৬১ সালের ১৭ জানুয়ারি দিনহাটা মহুকুমার বড় শৌলমারী জিপির খারিজা বাত্রিগাছ গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। প্রথমে পড়াশোনা জুনিয়র বেসিক বিদ্যালয়, তারপর জামাদার বস জুনিয়র হাইস্কুলে ষষ্ঠশ্রেণিতে এবং পরবর্তীতে দিনহাটা সোনা দেবী হাইস্কুলে । ১৯৭৯ সালে দিনহাটা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্সে ভর্তি। পরবর্তীতে বি.এড করেন। ১৯৮২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নন্দবালা বর্মনের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
পর্ব-১
লেখালেখির শুরুর দিনগুলোতে ' কেন
লিখি ' এই নিরীহ প্রশ্নটির উত্তরে গলা উঁচু করে
যেসব কথা বলতাম প্রায় ষাট বছর পর সেই উঁচু গলার উচ্চতা নেমে এসেছে অনেকটাই।
এখন হাতের নাগালের মধ্যে নেমে এসেছে উঁচু গলা !
তাবলে কী আগেকার স্পিরিট এখন আর নেই। এই ষাট বছরে উচু গলার পরতে পরতে পড়েছে
আস্তারণ ।সেই গলা গম্ভীর হয়েছে। অথবা স্পষ্টভাবে বললে বলতে হয় উত্তর এখন অনেক ঘনীভূত
হয়েছে । বক্তব্যও সঙ্কুচিত হয়েছে। বলার কথা কমে এসেছে।
লেখালেখির প্রায় শুরুর দিকে ধ্বংসকালীন। তখন মনে করতাম লেখা দিয়েই বদলে দেবো সবকিছু। কিন্তু পরিশেষে দেখলাম কিছুই বদলাতে পারিনি। এই না- পারার মধ্যে কোনো গ্লানি ছিল না। জয়-পরাজয় ছিল না। ইন-কামিং এবং আউট-গোয়িং এর কোনো ব্যালেন্সশিট করতে অগ্রসর হইনি। যৌবনের মৃদুমন্দ বাতাসে কেবলই ঘোরাফেরা করেছে সৃষ্টিসুখের উল্লাস । কী সৃষ্টি ! এই প্রশ্ন কখনোই মনকে ভারাক্রান্ত করেনি।
বাংলা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম ড.শুভ জোয়ারদার। বাজারে যাওয়ার পথে কুমোরপাড়ার শিল্পীদের মূর্তি বানানো দেখে শিল্পী জীবনের শুরু। তারপর গান গাওয়া-লেখা-সুর করা; নাটক লেখা-অভিনয়-নির্দেশনা, ছবি আঁকা, চলচ্চিত্র নির্মাণ, ছড়া লেখা। এবং শেষ পর্যন্ত পুতুল নাট্যকলায় বিপ্লব ঘটানো। 'বঙ্গপুতুল'এর সৃষ্টি। পুতুলনাট্যকলার একাডেমিক পঠনপাঠনের বঙ্গীয় জনক। ৬০/৭০ দশকের আগুনে রাজনীতির প্রত্যক্ষ বাহক ও পালক। যা কিছু করেছেন, জনগণেশের মুখ চেয়ে, সাধারণের কাছে পৌঁছানোর জন্য, মানুষের কল্যাান-মঙ্গলের জন্য ।
প্রতিদিন একটা গল্প,এক বোতল মদ ও সাদাত হসন মন্টো ....
একবার মন্টো সাহেবের (উর্দুর মহান গল্পকার সাদাত হসন) এক বন্ধু মন্টো সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন .."আপনি উপন্যাস লেখেন না কেন?" মন্টো উত্তর দেন .."প্রতিদিন আমার মদ খাওয়ার জন্য টাকা চায়,তাই প্রতিদিন গল্প লিখি,কিছু টাকা পাই। তাহলে উপন্যাস কেন লিখতে যাবো?"
এটা বিচিত্র অন্তর্বিরোধ যে মন্টো টাকার জন্য গল্প লিখতেন,যদিও তাঁর কাছে টাকার কোনো গুরুত্ব ছিলো না। নিত্যদিনের প্রয়োজনের জন্য তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিলো,কিন্তু আত্মসম্মান হারিয়ে কদাপি নয়। একবার মন্টো সাহেব আমেরিকার নীতির ওপর টিপ্পনি করতে গিয়ে 'চাচা সাম 'নামে বেশকিছু চিঠি লেখেন। তা প্রকাশিত হতেই সে সময় তুমুল হৈ চৈ পড়ে গেছিল। তখন পাকিস্তানের আমেরিকার হাইকমিশনার মন্টোকে বলে পাঠান.."আপনি যদি আমাদের সংবাদপত্রের জন্য নিবন্ধ লেখেন,তাহলে এক একটা লেখার জন্য আপনাকে পাঁচশো টাকা করে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে"
"কবিতা তো মক্তবের
মেয়ে, চুল খোলা আয়েশা আক্তার।"
—কবিতার বিষয় যে এইভাবে রোজ ঘটে যাওয়া পাড়ার ঘটনা, তা এর আগে কেউ তুলে ধরেননি। তৎসম-তদ্ভবের সাথে লোকজ, বিশেষ করে মুসলিম জবানের অন্তরঙ্গ শব্দরাজির সহাবস্থান ঘটিয়েছেন কবি আল মাহমুদ। একান্ত ঘরোয়া সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা হলেও এর সাহিত্য গুণ আছে। তাইতো পুঁথি সাহিত্যের বিস্মৃত সৌরভ সহজেই শুঁকতে পারা যায় এই শব্দসমূহ থেকে। কিছু শব্দবন্ধ এইরকম— নালৎ, গতর, জবান নাপাক, কবুল, নাদানের রোজগার, কসুর ইত্যাদি। কবির আন্তরিক উচ্চারণের টানেই এই শব্দগুলো উঠে এসেছে বলে মনে হয়। এই মুখের ভাষা আসলে অন্তরের, অকৃত্রিম, এমনকি অসংস্কৃত। শাহীন রেজা একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার কীভাবে কবিতা হলেন? তখন তিনি স্মিত হেসে বলেছিলেন, 'এই যে জীবন, এই যে মহাজাগতিক সবকিছু, এই যে নদী নারী প্রকৃতি, এমনকি এই যে মহান প্রভু- যার ইশারায় আমাদের সৃষ্টি- কবিতার রসদ তো আমরা সঞ্চয় করি এসবেরই মধ্য থেকে। আয়েশা আক্তার তো এ রকমই একটি অনুষঙ্গ, যা অনিবার্যভাবে উঠে আসতে পারে আমাদের কবিতায়; এবং এসেছেও। ছোটোখাটো সুখ-দুঃখ, অনুভব- অনুভূতি, জীবনের মৃদু খুনসুটি, আত্মার অবয়ব— এসব নিয়েই তো আমাদের লেখালেখি। জীবনকে জীবনের চোখ দিয়ে খুঁজতে হয়। আর খুঁজতে খুঁজতে সাধারণ আয়েশা আক্তারও একসময় অসাধারণ 'কবিতা-চরিত্র' হয়ে ওঠেন।'
ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার কাব্যভাবনা
তিনি
বলেছেন—আমরা কেউই জানিনা কেমন করে একটা কবিতা জন্ম নেয়....
আন্দালুসিয়ার
নদী,
জল, ঘোড়া, জিপসি, বলদ,
ষাঁড়, ফ্লামেঙ্কো গান লোরকার কবিতার দেহে শিরায় শিরায়
লীন হয়ে থাকে। রূঢ় বাস্তবকে সরাসরি না দেখে কবি দেখেন
তার প্রতিবিম্ব।
অসীমের
প্রতি যে অকৃত্রিম আকর্ষণ তাঁর কবিতায় প্রত্যক্ষ করি তাতে কোনও চোখ-ধাঁধানো আড়ম্বর
নেই,
আছে এক স্নিগ্ধ সারল্য। লোরকা-বিশেষজ্ঞ গিয়ের্মো দিয়াস প্লাহার মতে
লোরকার সৃষ্টি আন্তর্জাতিক নয়, কিন্তু সর্বজনীন। আপাতবিরোধী
মন্তব্য সম্ভবত এইজন্যে তিনি অতিমাত্রায়
আন্দালুসিও হয়েও এমন কাব্য সৃষ্টি করেছেন যা পৃথিবীর সর্বত্র পাঠকের মনোগ্রাহী হয়ে
ওঠে। স্পেনের নোবেলজয়ী কবি হুয়ান রামোন হিমেনেস-এর
মতে ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা ‘খাঁটি আন্দালুসিও’।
লোরকা কবিতায় চিত্রকল্প নির্মাণ করেন, রঙের জাদু ছাড়া তাঁর কবিতা উপভোগ করা যায় না। মনে রাখা ভালো যে, লোরকা ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতরচয়িতা এবং পিয়ানো-শিল্পী। ফলে কাব্যে এবং নাটকে এইসব গুণের সমাহার দেখা যায়।
জগৎগৌরী, বিষহরি অথবা মনসা
“আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল……” বললেই নাগরিক জীবনে দেবব্রত কন্ঠ গমগম করে ওঠে। কিন্তু এখনও গ্রামদেশে যেখানে বর্ষায় লতাগুল্ম আগাছার আগ্রাসী সবুজে আদিম অরণ্য বাঙময় হয়ে ওঠে, সেখানে নীরবে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে আদিমতম সরীসৃপ তার চেরা জিহ্বা নিয়ে শিকারের সন্ধানে। তার প্রাণঘাতী বিষ এখনও মানুষের আতঙ্ক। আর এই আতঙ্ক মুক্তির উপায় হিসাবে ইতিহাসের কাল থেকে সে আত্ম সমর্পন করেছে সর্পদেবীর পায়ে। সর্পদেবী মনসা। নাগ-আভরণে ভূষিতা।
বাংলা ছন্দের সহজপাঠ
নৈঃসঙ্গ্যেরও গতি আছে
জীবনানন্দ দাশের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করতাম একাকীত্ব আপনার কি কারণে ভালো লাগতো। কবি মানুষজন তেমন পছন্দ করতেন না। হাঁটা পথে পরিচিতজনকে দেখলে তিনি উল্টো পথ ধরতেন। বিষয়টি জানা বলেই পরিচিতরা তো বটেই নতুনরা তাঁর কাছে যেতে বিব্রতবোধ করতেন। একাকী থাকতে পছন্দ করতেন বলেই কি তিনি অল্প আয়ুর ভেতরে কয়েক ট্রাংক কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখতে পেরেছিলেন? এসবও জিজ্ঞাসা করা যেত। আটান্ন বছরের অনুজের পক্ষে এই জিজ্ঞাসা কোনও মতেই সম্ভব না হলেও জীবনানন্দের সৃষ্টিশীলতার গভীর তল পেতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। ভারতের বাইরে তিনি কখনো যাননি কিন্তু তাঁর লেখার মধ্যে তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। নিঃসঙ্গ জীবনানন্দ এখানেই সার্থক।
মিথ্যে প্রচারের থেকেই কি মিথের জন্ম হয়? না’কি মিথের জন্ম দেওয়ার জন্যেই মিথ্যের প্রচার শুরু হয়? মিথের জন্ম প্রক্রিয়া কতটা সমাজিক আর কতটা রাজনৈতিক? মানুষের ইতিহাস পর্যালোচনা করে এই প্রশ্নগুলির উত্তর কি আমরা খুঁজে দেখতে যাই? সম্ভবত নয়। আমাদের চারপাশে কিভাবে প্রতিনিয়ত ছোটবড়ো মিথের জন্ম প্রক্রিয়া চলতে থাকে, সেই বিষয়ে কতটুকু ওয়াকিবহাল থাকি আমরা? সম্ভবত কেন, নিশ্চয় ওয়াকিবহাল থাকি না। থাকি না বলেই আমাদের চেতনে অবচেতনে আরও একটা মিথ দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আর সেটা হলো, বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও সন্ত্রাসবাদী যাবতীয় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একমাত্র রক্ষক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। এবং সেই সাথে দ্বিতীয় যে মিথটি সংযুক্ত। সেটি হল, সন্ত্রাসবাদ আর ইসলাম পরস্পরের পরিপূরক। বিশ্বজুড়ে ইসলামিক মৌলবাদের বিস্তারের সাথে এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি ও তাদের যাবতীয় নাশকতামূলক কার্যকলাপ সংযুক্ত। এখন বর্তমান বিশ্বকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে একমাত্র কে রক্ষা করতে পারে? না আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। এই বিষয়ে কারুরই কোন দ্বিমত নাই। এই এক মিথ। বিশ্বজুড়ে প্রায় প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কে আর চেতনায় বটবৃক্ষের মতো ঝুরি নামিয়ে দিয়েছে। পথে ঘাটে মাঠে ময়দানে যাকে খুশি জিজ্ঞাসা করলেই, একটাই নাম উঠে আসবে। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস দমনে আমেরিকাই একমাত্র ভরসা। প্রতিটি মানুষেরই চোখে ভেসে ওঠে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হওয়ার সেই ভয়াবহ চিত্র। যে চিত্রের সাথেই জুড়ে থাকে ইসলাম। সন্ত্রাস আর ইসলামকে মানুষ আর আলাদা করে ভাবতে চায় না। বিশেষ করে যে মানুষ যত বেশি সাম্প্রদায়িক। এবং যে মানুষ যত বেশি মুসলিম বিরোধী সেই মানুষ তত বেশি করেই মার্কিনপন্থী। আর তারই চেতনে অবচতনে একটাই ভরসাস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার বিশ্বাস আর অন্ধভক্তিতে একজনই রক্ষাকর্তা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখানেই সাফল্যজনক ভাবে একটা মিথের গড়ে ওঠা। বা আরও একটু স্পষ্ট করে বললে সাফল্যজনক ভাবে একটি মিথকে গড়ে তোলা। কিন্তু সেই মিথের জন্ম দিতে নিরন্তর চব্বিশ ঘন্টা ধরে মানুষের সামনে মিথ্যের পর মিথ্যেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। সে কিন্তু এক দুই দিনের কাজ নয়। এক নিরলস সাধনা। আর সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে বিশ্বব্যাপী এক মিডিয়াতন্ত্র গড়ে তুলেছে পাশ্চাত্য মিডিয়া। আর আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের ধনতান্ত্রিক এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দেশগুলির মিডিয়াও সেই পাশ্চাত্য মিডিয়ার বশংবদ আনুগত্য পালনে একনিষ্ঠ থেকে পাশ্চাত্য মিডিয়ার গড়ে তোলা মিথগুলিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সংক্রমিত করতে থাকে নিরলস ভাবেই।
গাড়ীতে বীয়ার লোড
করা হল। পিছনের সীটে আমি আর বুদ্ধদেব গুহ । বুদ্ধদেব গুহকে আমি কোনও দিন লালাদা বলে
ডাকিনি। বুদ্ধদেবদা বলতাম। এখন আমরা মধ্যপ্রদেশের সিংগরোলী জেলার সদর শহর থেকে পাঁচ
কিলোমিটার পিছনে আমরোলী মোড়ে। এরপর মাঢ়া কেভের রাস্তায় আর লিকার শপ নেই। মাঢ়ার পাহাড়ে কিছু শাক্ত গুহা আছে আর জঙ্গল।
আসতেই বীয়ার
খোলা হল। দুপাশে মহুয়া গাছের সারি। বুদ্ধদেবদা দুটো চুমুক দিয়েই বললেন বীয়ারটা ফ্ল্যাট
হয়ে গেছে। পুরানো স্টক। নতুন বিশেষণ শিখলাম।