পর্ব-১
লেখালেখির শুরুর দিনগুলোতে ' কেন
লিখি ' এই নিরীহ প্রশ্নটির উত্তরে গলা উঁচু করে
যেসব কথা বলতাম প্রায় ষাট বছর পর সেই উঁচু গলার উচ্চতা নেমে এসেছে অনেকটাই।
এখন হাতের নাগালের মধ্যে নেমে এসেছে উঁচু গলা !
তাবলে কী আগেকার স্পিরিট এখন আর নেই। এই ষাট বছরে উচু গলার পরতে পরতে পড়েছে
আস্তারণ ।সেই গলা গম্ভীর হয়েছে। অথবা স্পষ্টভাবে বললে বলতে হয় উত্তর এখন অনেক ঘনীভূত
হয়েছে । বক্তব্যও সঙ্কুচিত হয়েছে। বলার কথা কমে এসেছে।
লেখালেখির প্রায় শুরুর দিকে ধ্বংসকালীন। তখন মনে করতাম লেখা দিয়েই বদলে দেবো সবকিছু। কিন্তু পরিশেষে দেখলাম কিছুই বদলাতে পারিনি। এই না- পারার মধ্যে কোনো গ্লানি ছিল না। জয়-পরাজয় ছিল না। ইন-কামিং এবং আউট-গোয়িং এর কোনো ব্যালেন্সশিট করতে অগ্রসর হইনি। যৌবনের মৃদুমন্দ বাতাসে কেবলই ঘোরাফেরা করেছে সৃষ্টিসুখের উল্লাস । কী সৃষ্টি ! এই প্রশ্ন কখনোই মনকে ভারাক্রান্ত করেনি।
এর পরের পর্ব সরাসরি রাজনৈতিক ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়া এবং সেই মতো কবিতা
লেখার চেষ্টা করা। সেসব কবিতা কমরেডদের মুখে মুখে শোনা যেত। আমি উল্লসিত হতাম। নিজেকে
জনগণের কবি মনে করে আত্মসুখে ডুবে থাকতাম। প্রকৃতই আত্মসুখ।
এরপর এল বাণিজ্যিক পত্রিকায় যুক্ত থাকার সৌভাগ্য। শ্যামলদা বা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের
বদান্যতায় দুহাতে লিখতে শুরু করলাম। শ্যামলদা বলতেন আর আমি লিখতাম। এ যেন বা অর্ডার
সাপ্লায়ার। ফিচার তো লিখতাম, তাছাড়া গল্প, উপন্যাস, এমনকী ধারাবাহিক উপন্যাসও।
সাপ্তাহিক পত্রিকা তার চাহিদা প্রচুর। আর আমিও কোনো লেখাতে কখনো না করিনি। তখন আমি
জনপ্রিয় তালিকাভুক্ত হয়ে গেছি। পথেঘাটে মানুষ চিনতে পারে। সে এক মোহময় দিনগুলি রাতগুলি।
শ্যামলদার অনুগ্রহে আমি নিজেকে তৈরি করে নিয়েছিলাম।
এর পরের পর্ব কবিতা থেকে নির্বাসন। এই নির্বাসনের দিনগুলিতে আত্মগোপন নয়, নিজেকে জনসেবক রূপে প্রকাশ করার প্রচেষ্টা। তারপর এক ঘটনা আমাকে জানিয়ে দিল সাহিত্যের
আমি কেউ নই। আমি ঘুরে দাঁড়াবার শপথ নিলাম। প্রকাশিত হল কবিতাপাক্ষিক। ঠিক তখনই কেন
লিখি এই প্রশ্নের
উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করিনি। কবিতাপাক্ষিকের প্রথম বছর দ্বিতীয় বছর
নিজের কথা ভাবার বা নিজেকে দ্যাখার সময় পাইনি। এক বিশেষ মুহূর্তে লিখে ফেললাম ' সাক্ষাৎকার
' - এর প্রথম ২০ টি কবিতা। বারবার শুনে, সেই উষ্ণতাকে ধরে রেখে লিখে গিয়েছিলাম কবিতাগুলি।
পরে দেখেশুনে মনে এই সাক্ষাৎকার পর্বের কবিতাগুলি প্রচলিত বাংলাকবিতার মতো নয় , কিছুটা
অন্যরকম। তখন পোস্টমডার্ন কনসেপ্ট সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। তবে জেনে গিয়েছিলাম
এগুলি ভিন্ন। তখন বিভিন্ন জেলার বা অঞ্চলের কবিদের সমর্থন আমাকে ভিন্ন এক মোহে আচ্ছন্ন
করে রেখেছিল। হ্যাঁ , জেনেবুঝে মোহ শব্দটি প্রয়োগ করছি। বাংলাকবিতার পরিমণ্ডলে নিজেকে
আর এলেবেলে ভাবতে পারতাম না। এই কবিতাগুলির যে প্রভাব তা লক্ষ করতে লাগলাম।
এরপর শুরু হল পোস্টমডার্ন নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের হল্লাগুল্লা। আমরা প্রকাশ করলাম পোস্টমডার্ন বাংলাকবিতা।
একটা আগ্রহ তৈরি হল। এক নতুন বাকশস্য উপস্থিত হল বাংলাকবিতার পরিমণ্ডলে। এবার কেন লিখির একটা উত্তর তৈরি হতে
থাকল। আমি নিজেও কিছুটা অ্যাগ্রেসিভ হয়ে উঠলাম। অনেক বেশি আক্রমণমুখী হয়ে উঠলাম।
এতে একদিকে যেমন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলাম। অপরদিকে বন্ধুহ্রাস হতে শুরু করল। তখন এসব
ভাবার সময় নেই।
তখন থেকেই কবিতাকে update করার কথা ঘোষণা করলাম। জেনে গেলাম কবিতাকে
update করতে হবে। এবং কবিতাকে update করার জন্যই লিখি।
কেন লিখির ভূমিকা এইটুকুই। পরবর্তী সংখ্যার জন্য অপেক্ষা করা যাক। (ক্রমশঃ)
1 মন্তব্যসমূহ
ভালো লাগলো কবি জীবনে এই সংক্ষিপ্ত রোমন্থন পর্ব!
উত্তরমুছুন