সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

সম্পাদকীয়: জুন সংখ্যা ২০২৫

 



সম্পাদকীয়



সম্পাদক ও লেখক হিসাবে কতটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়া যায়  বা  প্রযুক্তিগত উন্নতিকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় এটা জানবার ইচ্ছা থেকে এ আই এর কাছেই  কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম।  এই বিষয়ে আরও আলোচনা  হোক, পাঠক লেখকদের কাছে এই প্রত্যাশা রইল। এই ভাবনাটাই এবারের ১৮ তম এবং সইকথা জুন, ২০২৫ (অনলাইন) সংখ্যার সম্পাদকীয় ...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) একবিংশ শতকের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত প্রযুক্তি। চিকিৎসা, পরিবহন, ব্যবসা, শিক্ষাপ্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সবচেয়ে জোরালো বিতর্ক দেখা দিয়েছে সৃজনশীল বা ক্রিয়েটিভ জগতেযেখানে কবিতা, গল্প, চিত্র, সঙ্গীত, ফিল্ম বা ডিজাইন আত্মার প্রকাশ হয়ে ওঠে। এই আবেগঘন, মানবিক শৈল্পিক পরিসরে প্রযুক্তির ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের প্রবেশ কি আশীর্বাদ, না অভিশাপ?

আশীর্বাদ যখন:

১. সহায়ক হাত হিসেবে AI:
লেখক বা শিল্পীরা প্রাথমিক খসড়া তৈরি, স্টাইল বিশ্লেষণ, অনুপ্রেরণামূলক ইনপুট অথবা অনুবাদে AI-এর সহায়তা নিতে পারেন। এটি সময় বাঁচায় এবং একঘেয়েমি ভাঙে।

২. নতুন ধারার সৃষ্টি:
AI নতুন ধরনের আর্ট ফর্ম তৈরি করেছে, যেমনজেনারেটিভ আর্ট, AI-নির্মিত সঙ্গীত, বা মেশিন লার্নিং দ্বারা পরিচালিত কবিতা। ফলে শিল্পের ধারণা ও সম্ভাবনার পরিধি বেড়েছে।

৩. সুলভতা ও অন্তর্ভুক্তি:
যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী কিন্তু আর্ট স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি, AI তাঁদের জন্য এক ধরনের ডেমোক্রেটাইজড প্ল্যাটফর্ম খুলে দিয়েছেযেখানে তারা নিজেদের ভাবনা মডেলের সাহায্যে রূপ দিতে পারছে।

অভিশাপ যখন:

১. সৃজনশীল শ্রমের অবমূল্যায়ন:
যখন AI দিয়ে লেখা গল্প, আঁকা ছবি বা বানানো গান অনায়াসে ব্যবহৃত হয়, তখন মানব শিল্পীর পরিশ্রম ও সময়ের গুরুত্ব কমে যায়। প্ল্যাগিয়ারিজমের মতো ইথিক্যাল প্রশ্নও উঠে আসে।

২. মূল্যহীন অসীমতা:
AI লাখ লাখ ছবি, কবিতা বা গল্প বানাতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাতে হৃদয়ের স্পর্শ বা সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার গভীরতা অনুপস্থিত। ফলে সৃষ্টি হয় অনেকটা "ভলিউম ওভার ভ্যালু" অবস্থা।

৩. চাকরির হুমকি:
কনটেন্ট রাইটার, ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর, এমনকি কণ্ঠশিল্পীদের ক্ষেত্রেও AI প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। এতে অনেকের পেশাগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

 

AI একটি যন্ত্রএর ব্যবহার নির্ভর করে মানুষের হাতে। সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে এটি হতে পারে এক অমূল্য সহচর; ভুলভাবে প্রয়োগ করলে হয়ে উঠতে পারে সৃজনশীলতার শত্রু। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সম্পূর্ণ আশীর্বাদ বা অভিশাপ বলার আগে আমাদের প্রয়োজন নৈতিক বিবেচনা, নীতিমালা ও সজাগ মনোভাবমানুষের হৃদয় আর যন্ত্রের মস্তিষ্ক যদি সহাবস্থানে চলতে পারে, তবে সৃজনশীলতার নতুন ভোর উদিত হবেই।

AI ও প্ল্যাগিয়ারিজমকেন সমস্যা হচ্ছে?

১. AI শেখে মানুষের তৈরি ডেটা থেকে:
অধিকাংশ AI মডেল ট্রেনিং পায় লক্ষ লক্ষ কবিতা, গল্প, গান, চিত্র বা ডিজাইন বিশ্লেষণ করেযার অনেক কিছুই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়, এবং যার মধ্যে বহু কনটেন্ট মূলত জীবিত বা প্রয়াত শিল্পীদের কপিরাইটযুক্ত সৃষ্টি।

২. নতুনহলেও অনেকাংশে পুরনো:
AI-generated চিত্র বা লেখায় প্রায়ই দেখা যায় কোনো বিশেষ শিল্পীর স্টাইল বা কনটেন্টের প্রতিলিপি। অনেক সময় লেখার গঠন বা বাক্যাংশ প্রায় হুবহু মিলেও যায়যা অনেকটা চৌর্যবৃত্তির কাছাকাছি।

৩. ক্রেডিটহীন সৃষ্টি:
যখন AI কোনো কবিতা, ছবি বা গান তৈরি করে, তা সাধারণত বলে না কোন কোন শিল্পীর কাজ ব্যবহার করে সে শেখেছে। ফলে মূল শিল্পীর কোনো স্বীকৃতি থাকে নাযা সরাসরি এক প্রকার অদৃশ্য প্ল্যাগিয়ারিজম

 এথিক্যাল (নৈতিক) প্রশ্নগুলো কী কী?

১. "যার থেকে শিখল, তাকে না জানিয়ে ব্যবহার এটা কি ন্যায়সঙ্গত?"

২. "AI তৈরি করলে কি আমি প্রকৃত অর্থে 'স্রষ্টা'?"
যিনি AI দিয়ে ছবি বা লেখা তৈরি করলেন, তিনি কি শিল্পী, না প্রোগ্রাম চালক?

  1. "মূল শিল্পী ক্ষতিপূরণ পাবেন না কেন?"
    কোনো ডিজাইনারের স্টাইল নকল করে ব্যবসায়িক লভ্যাংশ তোলা হলেতাঁর প্রাপ্য অর্থ বা সম্মান কীভাবে নিশ্চিত হবে?
  2. "কপিরাইট আইন AI-এর ক্ষেত্রে কতটা প্রযোজ্য?"
    অনেক দেশেই AI-এর তৈরি কনটেন্টের কপিরাইট আইন পরিষ্কার নয়। ফলে আইনি বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

 

 এই সমস্যার ভবিষ্যৎ প্রতিকার কী হতে পারে?

  • স্বচ্ছতা (Transparency):
    AI কখন, কী কী সোর্স থেকে শিখেছেতা প্রকাশযোগ্য হওয়া উচিত।
  • ক্রেডিটিং সিস্টেম:
    AI যদি কোনো কনটেন্টে কারো স্টাইল বা উপাদান ব্যবহার করে, তাহলে মূল স্রষ্টার নাম ও স্বীকৃতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া উচিত।
  • ন্যায্য পারিশ্রমিক ব্যবস্থা:
    যারা ডেটা দিয়েছেন বা যাঁর কাজ থেকে AI শিখেছে, তাঁদের অর্থনৈতিক প্রণোদনা (royalty, revenue-sharing) পাওয়ার ব্যবস্থাও জরুরি।
  • নীতিনির্ধারণ ও আইন:
    আন্তর্জাতিকভাবে এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি ও আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

AI আমাদের সৃজনশীলতার পরিসর যেমন বাড়াচ্ছে, তেমনই এটি নৈতিক, আইনি ও মানবিক কিছু প্রশ্ন তুলছে। প্ল্যাগিয়ারিজমের এই 'অদৃশ্য' সংস্করণ যদি অস্বীকার করা হয়, তবে একদিন সত্যিকারের শিল্পীর সত্তাকেই মুছে দিতে পারে। তাই সময় এসেছে এই প্রযুক্তির ব্যবহারকে নৈতিকতা, স্বীকৃতি ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পুনর্গঠন করার।

 

যে সাহায্যগুলো প্ল্যাগিয়ারিজম নয় (নৈতিক ও গ্রহণযোগ্য):

১. স্ট্রাকচার বা ফর্ম সাজিয়ে দেওয়া

যেমন: কেউ যদি গল্পের কাঠামো বা কবিতার ছন্দে সাজানোর ধারণা দেয়, অথচ ভাষা, ভাব ও উপমা লেখক নিজে তৈরি করেনতবে তা প্ল্যাগিয়ারিজম নয়। এটি গাইডলাইন।

২. ভাষাগত সহায়তা (ল্যাঙ্গুয়েজ এডিটিং)

বানান, ব্যাকরণ, বিরামচিহ্ন বা বাক্য গঠনের পরামর্শ দিলে, বা কোনো বাক্য আরো পরিশীলিত করে দিলেতা লেখার মূল ভাবপরিবর্তন করে না। এটিও গ্রহণযোগ্য।

৩. আইডিয়া অনুপ্রেরণা (Not Copying Content)

একটি থিম বা বিষয়ের পরামর্শ যেমন—“দুঃস্বপ্ন নিয়ে কবিতা লেখোকিংবা মহাকাশ নিয়ে গল্প লেখো”—এই জাতীয় অনুপ্রেরণা প্ল্যাগিয়ারিজম নয়, যতক্ষণ না আপনি কারো লেখা হুবহুনকল করছেন।

৪. রেফারেন্স দিয়ে উদ্ধৃতি

আপনি যদি অন্য কারো লেখা থেকে কিছু লাইন ব্যবহার করেন, এবং তা উদ্ধৃতিচিহ্ন দিয়ে সঠিকভাবে উৎসসহ উল্লেখ করেন, তবে তা বৈধ ব্যবহারfair use বা citation এর অন্তর্ভুক্ত।

৫. AI বা সহকারী ব্যবহার করে খসড়া বা বিকল্প শব্দের পরামর্শ নেওয়া

আপনি নিজে লেখক, কিন্তু AI কে বললেন, “এই প্যারাগ্রাফটা একটু সহজ করে দাও”—তাতে আপনি নিজেই নিয়ন্ত্রণে থাকেন। এটি লেখকের সাহায্য মাত্র, চুরি নয়।

 যে ধরনের সাহায্য প্ল্যাগিয়ারিজম হয়ে যেতে পারে:

·         হুবহু অন্য কারো লেখা কপি করে নিজের নামে চালানো

·         অনলাইনের কোনো কবিতা/গল্প থেকে কিছু বাক্য তুলে এনে নিজের লেখায় গুঁজে দেওয়া, অথচ উৎস না দেওয়া

·         AI বা অন্য লেখকের লেখা পুরোটাকপি করে নিজের লেখা বলে চালানো

·         ভাষা বা স্টাইল পুরোপুরি অন্য লেখার মতো করে তৈরি করাএমনকি সেটা "inspired" বললেও।

 সারসংক্ষেপ:

সহায়তার ধরন

প্ল্যাগিয়ারিজম কি?

গ্রহণযোগ্যতা

থিম বা আইডিয়া অনুপ্রেরণা

স্ট্রাকচার সাজানো

ব্যাকরণ / ভাষা ঠিক করা

হুবহু কপি/প্যারা রিপ্রোডিউস

AI-এর সম্পূর্ণ লেখা নিজের নামে দেওয়া

উদ্ধৃতি সহ ব্যবহার


 সংক্ষেপে মনে রাখুন – S.A.J.A.L. নিয়ম:

আদ্যাক্ষরঅর্থ
SSelf-voice বজায় রাখুন
AAI কে সহায়ক ভাবুন, লেখক নয়
JJudgment ব্যবহার করুন
AAcknowledge করুন প্রয়োজনে
LLimit করে ব্যবহার করুন

**এই সম্পাদকীয়টি  AI কে প্রশ্ন করে যা উত্তর পেয়েছি তার ভিত্তিতে সাজানো। 



 



 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ