সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

সাং রী হান- সুবল দত্ত

 



কোরিয়ান কবি সাং রী হান এর দুটি কবিতা 

 (অনুবাদ সুবল দত্ত)

 

 

স্বপ্ন আমার নিজের ভুলের কথা

স্বপ্ন আমার নিজেরই ভুলের কথা

 যেন ফুল ফোটে

 ভেঙে পড়া রাজমহলের আঙ্গিনায়

 দেখে মনে হয় অতীতের দুর্ভোগ

 আমি তো এখানে কখনো ছিলাম না

 দেখিনি কতো যে আদিম রঙের মেলা

 যেন প্রকৃতির রঙিন সিনেমাস্কোপ

 ক্যালিডোস্কোপের স্মৃতি থেকে আমি বলছি

  

 যেন সুন্দরী বাওবাব গাছ মাথায়

 নিজেরই শাখা ও শেকড় প্রোথিত করে

 সারাদিন সারারাত স্বপ্ন দেখে

 স্বপ্নের কোষ হওয়ায় ছড়িয়ে দেয়

 বাতাসের দিকে মুখ ...

 

 না না ওসব কিছু না, ওসব ওদের ভুল,

 ওরা শুধু দেখে আকাশের কিছু স্বপ্ন

 মাটিতে নিজের শিকড় না পুঁতে শুধু

 ভাষা স্বপ্নের ক্ষরণ নিরন্তর

  

 আমি শুধু তার ছায়াই হারিয়েছি

 পুরো জীবনটা নিয়ত স্বপ্নময়

 প্রতিরাতে তার আত্মজীবনী পড়ি          

 প্যানোরামার মতো সেগুলো দৃশ্যমান

  

 আমি তো সমুদ্র দেখি

 আকাশে তাকিয়ে মহাবিশ্ব দেখতে পাই

 এ জীবন থেকে কাউকে দেখেছি পলাতক

 একটি স্বপ্ন দরজা দিয়ে সে পালিয়েছে

  

 একটু কষ্ট হয়, তাই বড় ব্যথা দূরে যায়,

 খারাপ জীবানু ঢোকে আর তাই বড় অসুখ থেকে বাঁচি

 স্বপ্ন একটি প্রতিষেধক, এক থিয়েটার

 অতীত জীবনের একটুকরো দৃশ্য

 

  

 

 মেরিডিয়ান লাইন

 দৈনিক জীবনযাপন আর প্রয়োজনহীন কিছু নিয়ে আমাদের সংসার

 যেকোন সময় যা বিনিময় করতে পারি

 তাই বুঝি আমাদের সবসময় সিদ্ধান্ত থেকেই কিছু বলার অভ্যাস

 মেরিডিয়ান এক মানদণ্ড, পরিবর্তনশীল

 কোন মেরিডিয়ান কিভাবে তার হয় ব্যবহার?

 গ্রিনউইচ মানমন্দির যদি আদর্শ মানি

 পূর্বে ইউরেশিয়া আর যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমে হয়

 যদি নিউজিল্যান্ড আর বেরিং ঝাও সাগর আদর্শ হয়

 ইউরেশিয়া পশ্চিম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব

 শুধুমাত্র একটি লাইন

 ইচ্ছে করলেই কি স্থান কাল বসাতে পারি নিজের মতন?

 এখন শুধুমাত্র বর্তমানকাল

 দক্ষিণ এবং উত্তর মেরু দিয়ে অসংখ্য কাল্পনিক রেখাগুলি

 আমাদের ভিতর দিয়ে গেছে

 পৃথিবীকে দক্ষিণ বা উত্তরে চিরে ফেলা হোক

 কিংবা মহাবিশ্বকে ডাইনে বাঁয়ে ছিঁড়ে ফেলা হোক

 অর্ধবৃত্তের জগৎ অর্ধবৃত্তই থাকে

 জলের বোতল সবসময় অর্ধপূর্ণ

   

 শরীর তো এক জলাধার, দেহের ভিতরে প্রবহমান

 আমার কল্পনায় অর্ধেক জল এক ব্যারেলের ভিতরে গড়িয়ে যাচ্ছে

 হঠাৎ ইচ্ছে হয় আমার আনন্দকে পবিত্র জলধারার মতো

 সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় স্নান করাই

 উষ্ণ বাস্পায়িত জল,স্বচ্ছ ঘূর্ণায়মান তার স্ফুটনাঙ্ক

 সরাসরি এক ঝলক তীব্র আলো বড় চোখে লাগে

  

যারা বেঁচে আছে তারা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার

 রোজকার জীবনযাপনে সব সহ্য হয়ে গেছে

 প্রতি মূহুর্তে প্রতিটি নতুন রুটিন একে একে অসমাপ্ত হয়ে যায়

 সবাই আগে আগে হাঁটছে

 দেখায় যেন স্থির, কিন্তু নিজের কক্ষে নিজেই ঘুরছে

 ঘুরতে থাকে আর খুঁজতে থেকে একটি বিনিময়যোগ্য মুহূর্ত

 ঘুরতে থাকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে মুখ করে

 কিন্তু কখনো তো সূর্য পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আঘাত হানে

 এমনও তো সময় আসবে

 হঠাত্‍ই ঝরে পড়বে সুতীব্র আলোক 

 

(সাং রী হান। কোরিয়ান মহিলা কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালে। জাপানী- কোরিয়ান অনুবাদক। সেজঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। Newcomer Award, কোরিয়ার Heonanseolheon Literature Award এবং জাপানের Sitosozo Award তাঁর সম্মান।)

 

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ