সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ফাল্গুনী দে: অণুগল্প:উপবন

 

উপবন 




ঘাসের উপর কিছু শুকনো ঝরা পাতা, গুটিকয়েক পোড়ামাটির ঘোড়া ও হাতি, সিঁদুর মাখানো ছোট বড়ো বিভিন্ন আকার আয়তনের পাথর, দেবতার আসনে সাজিয়ে গাছেদের অন্তরঙ্গ আশ্রয়ে তৈরী হয়েছে এই উপবন। জঙ্গলের ভেতর আরেক জঙ্গল। এপথে মানুষের আসা যাওয়া কম। তবু মাঝখান দিয়ে রাস্তা চলে গেছে এক অনির্দিষ্ট পথে। 

দেবতার এই চাতালে, ডালপালা বিস্তারে গাছেদের এমন কারুবিন্যাস, মাটিতে দাঁড়িয়ে কৌণিক দূরত্বে তাকালে অদ্ভুত দু'টি নরনারীর মূর্তি যেন পাশাপশি চিরন্তন। ঝড় বাদলের অমানিশা রাতে তারা কাঁধে কাঁধ রেখে গান শোনে, পরস্পরকে ভিজিয়ে দেয় শান্তির ওম উচ্চারণে। মেয়েটি যদি পাঠালে হলুদ ফুলের বসন্ত; ছেলেটি তবে দিলে রক্তিম লাল ফুলের দাবদাহ গ্রীষ্ম। শীতের শুরুতে পাতা ঝরানোর খবর এলে ওরা দুরুদুরু বুকে প্রহর গোনে। বনের পথে গরুর দল মাঝে মাঝে গাছের গায়ে গা ঘষে চলে গেলে ওরা নীরবে হাসাহাসি করে। আলোআঁধারি বর্ষার দিনে ঝিঁঝিঁ পোকার সকরুণ ডাকে লেখা হয় আশ্চর্য প্রেম ও প্রকৃতি পাঠ। গাছের রূপরেখার মধ্যে এমন দু'টি নরনারীর মূর্তি মানুষ চাইলেই দেখতে পেতো, কিন্তু কেউ কোনদিন চেষ্টা করেনি। এমনটি শুধু জগন হেমব্রম পারতো। 

জমি আন্দোলনে জগন আজ নিহত। আদিবাসীদের জমি জোর করে কেড়ে নিচ্ছে রাষ্ট্র। এই জঙ্গলের নিচে কয়লার খোঁজ পাওয়া গেছে। 






ফাল্গুনী দে 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ