সম্পাদকীয়
এই পত্রিকার
সম্পাদনার কাজ যখন চলছে তখন নেট পাড়ায় একটা বিষয় খুব চর্চায় রয়েছে । তরুণ কবি তার লেখার সাম্মানিক ঘোষণা
করছেন । এবং সাম্মানিক না পেলে লিখবেন না বলে
জানিয়েছেন এইটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এসেছে সেইসব প্রসঙ্গও … মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো লেখক তীব্র অর্থকষ্টে চলে গেছেন। অন্যান্য আর্ট ফর্মের মতো এখানেও সাম্মানিক দেওয়ার মতো নিয়ম
চালু করার বিষয়ে বলা হয়েছে । আমি সেই
সব কবিদের সম্মান জানাচ্ছি যাঁরা মনে করেছেন সাম্মানিক প্রাপ্য। চাই এই নিয়ম চালু
হোক।
অনেকেই সহমত
পোষণ করেছেন। কেউ কেউ আবার নাম ও কবিতা ছাপার
অক্ষরে দেখেই খুশি থাকেন, কেউ কেউ সৌজন্য সংখ্যা পেলেই সম্মানিত বোধ করেন। কেউ কেউ
সাহিত্যকে সাধনা হিসাবে দেখেছেন। এরপরেও কিছু কথা , নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা চালিয়েছি। লিটল ম্যাগাজিন যাঁরা করেন মূলত কবিতা,
সাহিত্যকে ভালোবেসেই করেন। বেশিরভাগ ব্যক্তিগত উদ্যোগে। একজন সম্পাদককে একটি বিজ্ঞাপন জোগাড় করতে কাল ঘাম ছোটাতে হয়। অনেকেই পারেন না। কেউ কেউ সৌজন্য সংখ্যা দেন আবার কেউ কেউ তাও দেন না। কিন্তু একজন সম্পাদক সাম্মানিক দেওয়ার
কথা তখনই ভাবেন যখন পত্রিকা প্রকাশের খরচ উঠে আসে , অনেক পাঠক যদি পত্রিকাটি সংগ্রহ করেন তবেই সম্ভব। দুঃখের বিষয় সেই সংখ্যক পাঠক আমরা তৈরী করতে পারিনি। এমনকি বিনা পয়সায় দিলেও পাঠক নেই এমনও হয় । পাঠকের থেকে লেখক বেশি। কিছু কিছু
বিষয় ভিত্তিক লিটল ম্যাগাজিনের বিক্রি আছে। কিছু ম্যাগাজিন
সাম্মানিক দিচ্ছেনও। সেই সংখ্যায় খুবই কম। সম্পাদক কত সাম্মানিক দিতে পারবেন সেটা সম্পাদকের উপর ছাড়াই
বোধ হয় ভালো। একসময় রাজ সভায় কবিদের
সাম্মানিক বা মাসোহারা দেওয়া হতো। রাজার নিজের অনেক সম্পদ ছিল এবং সভাকবির
সংখ্যা দু-এক জন। কিন্তু আজ একটি লিটল ম্যাগাজিনে যদি
৫০ জন লেখক লিখে থাকেন। সাম্মানিক
দিলে সকলকেই দিতে হয়, সেটা একটা বড় অঙ্ক হয়ে যাবে। চার-পাঁচজন লেখক দিয়ে একটি পত্রিকা বের করা সম্ভব নয়। পত্রিকা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন না বেশিরভাগ সম্পাদক। সৌজন্য সংখ্যাটির
খরচও যেখানে উঠছে না। সম্পাদকের কাছে উদবৃত্ত না হলে সাম্মানিক দেওয়াটা বেশ শক্ত হয়ে দাঁড়ায় বৈকি।
প্রকাশক
বা সম্পাদককে ছাপাখানা ও অন্যান্য জায়গায় খরচ করতে হচ্ছে। সেখানে খরচ না করলে পত্রিকা হবে না। এমন যদি হয় সব
লেখকই এমন ভাবছেন যে সাম্মানিক ছাড়া লিখবেন না সেক্ষেত্রে পত্রিকার সংখ্যা হবে দু-একটি । লেখার সুযোগও থাকবে দু-একজনের। এমনিতেই বাংলা মাধ্যমে পড়া ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কমে আসছে, বলা
ভালো অদূর ভবিষ্যতে বাংলায় লেখার মানুষও
কমে আসছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছে এখন। কোনও বিশেষ কাগজে না লিখলে লেখক হওয়া যায় না একথা আর প্রযোজ্য নয়। প্রকাশনা জগতে ঢুকে পড়েছে লিটল ম্যাগাজিন। ম্যাগজিনের সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করলে চর্চা থাকবে তো? আবার একচেটিয়া একটি প্রতিষ্ঠানের
দিন ফিরে আসবে না ? আসলে আমাদের পরিকাঠামো নেই। অন্য রাজ্যগুলি কিছুটা পারছে বলে আমরা জানি। খুব কমিউনিকেটিভ কবিতাই বা কত লেখা হচ্ছে বা কতজন কবি মনে করেন সেরকম লেখা প্রয়োজন। আর এই আঁতুড়
ঘরে এক্সপেরিমেন্টাল লেখার কী হবে?
একটু প্রসঙ্গান্তরে
গিয়ে বলি,
৪ হাজার ৩০০ বছর আগে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতায় এনহেদুয়ান্না নামের
একজন রাজকন্যা ছিলেন। তিনিই ছিলেন বিশ্বের প্রথম কবি। আক্কাদীয় রাজা সারগনের
কন্যা ছিলেন তিনি। মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণে (ইরাক) উর শহরে বাস করতেন এনহেদুয়ান্না।
তিনি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। তার আগে কোনো নারী প্রধান পুরোহিত হওয়ার
সুযোগ পাননি। নিজের যোগ্যতাবলে তিনি এই পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এনহেদুয়ান্না
দেবী ইনান্নাকে নিয়ে শ্লোক লিখেছিলেন। তিনি ৪২টি প্রার্থনা সঙ্গীতও লিখেছিলেন।
এছাড়া কবিতাও রচনা করেছিলেন তিনি। এগুলো এখনো রক্ষিত আছে। তিনি রাজবংশের নারীদের
কবিতা লিখতে উৎসাহিত করেছিলেন। (তথ্য সূত্র ইন্টারনেট) । আমাদের
রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকি কে আদি কবি বলা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ/পঞ্চম শতাব্দীতে রামায়ন রচিত হয়েছিল। তাহলে
কবির ইতিহাস প্রাচীন। সভাকবি, পদ , সাম্মানিক
কোনও নতুন কথা নয়…
সাহিত্যপত্র
প্রবন্ধে বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত; সবুজ পত্র’ বাংলা ভাষার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন। প্রথম প্রকাশ ১৯১৪ সাল। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাস ১১০ বছরের ইতিহাস। লিটল ম্যাগাজিনের
বেশ কিছু বৈশিষ্টের মধ্যে একটি হল যেকোনো প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবসায়িক বৃত্তির বিরুদ্ধে
। যদিও বিগত দুই তিন দশকে লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্রের অনেক পরিবর্তন
ঘটেছে। এবং সইকথা
পত্রিকাও ইতিমধ্যে দুটি মুদ্রিত সংখ্যা করেছে । লেখককে সৌজন্য সংখ্যা দেওয়া হয়েছে। পাঠকের চাহিদা রয়েছে পত্রিকা কিনে
অনেকেই পড়ছেন। তবুও পত্রিকা প্রকাশের খরচের আশে পাশে
নয় সেই ফিরত আসা অর্থমূল্য । এবং সইকথা
কী করবে?
এবং সইকথা যদি সাম্মানিক দিতে পারত তাহলে আগেই তা করতো। তাহলে উপায় ? যেমন চলছে তেমন চলবে। তবুও বলব না
‘ বাংলা কবিতার পাশে দাঁড়ান ‘ বলব না ‘লিটল ম্যাগাজিনের পাশে দাঁড়ান' বলব না ‘কবির পাশে দাঁড়ান’ কারণ বাংলা ভাষা আমার অহংকার , লিটল ম্যাগাজিন আমার অহংকার। তবু কবিতার কাছেই ফিরব … লিটল ম্যাগাজিনের কাছেই
ফিরব…
আর হ্যাঁ। এবং সইকথা মুদ্রিত সংখ্যার পাশাপাশি ওয়েবজিনটি বছরে একটি / দুটি সংখ্যা যেমন প্রকাশ করছে। তেমনই করবে । আগে ত্রৈমাসিক ছিল এখন সময়াভাবে আর সম্ভব হচ্ছে না। তবু পাঠক লেখকের কাছে আগের মতোই জনপ্রিয়। মান ধরে রাখা প্রকাশকের/সম্পাদকের বড় দায়িত্ব। পাঠের সুবিধার্থে জুন মাস জুড়ে লিঙ্কগুলি কয়েকটি পর্বে প্রকাশিত হবে।
আপনারা পড়ুন এবং মতামত দিন। প্রকাশিত হল ১৭ তম, জুন,২০২৪ সংখ্যাটি।
শীলা বিশ্বাস
0৫/০৬/২০২৪
3 মন্তব্যসমূহ
সম্পাদকীয়টি বড় সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী। কিছু কবিতা পড়লাম। কিছু বানান ভুল চোখে পড়ল। যেমন একটি কবিতায় পেলাম- স্বাধীকার।
উত্তরমুছুনএগুলি অনভিপ্রেত একটি ভালো মানের পত্রিকার ক্ষেত্রে। পত্রিকার উন্নতি কামনা করি।
- শম্পা শুচিস্মিতা।
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনএবং সই কথায় বেশ কিছু কবিতা ও ছোটগল্প পড়লাম। ওখানে লেখা গুলো কেমন হয়েছে বা মতামত জানানোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো বলে আমার মনে হয়।
উত্তরমুছুন