পাতিপুকুর থেকে কলকাতা স্টেশনে ঢোকার মুখে কামরাটা
একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল বলা চলে। রুমিতা কামরার
শেষ প্রান্তে থাকা বৌদির উদ্দেশে বলল,
-ও বউদি এদিকে এসো
ট্রেনে ওঠার পর যে যেখানে সিট পেয়েছে বসে পড়েছিল। মিকিবউদি একটা খালি রিফাইন্ড অয়েলের জ্যারিকেন পাশে নামিয়ে রাখতে
রাখতে বলল,
-ভাবলাম যাচ্ছি যখন খালি হাতে ফিরব কেন...
-ভাল করেছ, আমার ত ওজন তোলা বারণ, ওর বাবা বছরে একবার করে দশ লিটার নিয়ে যায়,ওতে বছর চলে
যায়...
-চিনিস তো তোর দাদাকে...
রুমিতা কোন উত্তর করে না। বউদি
কথা চালু রাখতে বলে,
-ওটা টালা ট্যাঙ্ক না রুমি
-হ্যাঁ
-নতুন রঙ করার পর একেবারে চেনাই যাচ্ছে না
- যা বলেছ ঐতিহ্য বলে এখন আর কিছু নেই
-হ্যাঁ রে রুমি তোর বউমার এখনও কোন খবর হল না, অনেক দিন তো হল বিয়ে হয়েছে...
রুমিতা ফুঁসে উঠল, মহারানীর ওসব ভাবার সময় কোথায়, তিনি
তো এখন জিম, কম্পিউটার ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত
-জিমে কেন ও তো রোগাই
-বলে তো শুনি মেরুদণ্ডের হাড় নাকি একটু বেঁকে গেছে, আসলে ওসব কিছু না প্রিয়া যায় না, ননদের সাথে পাল্লা দিতে
হবে না
-আর কম্পিউটার
-বাবুর একটা ল্যাপটপ ঘরে পড়ে ছিল, প্রিয়া বলল, দাদা তোর তো এটা লাগছে না আমি নিয়ে যাব, বাবু তো এককথায় বোনকে দিয়ে দিল, ওমা কদিন যেতে না
যেতেই বউমা সেটা চেয়ে পাঠাল, কি-না উনি কম্পিউটার শিখবেন, জ্বলে গেলাম বউদি কী জিনিস নিয়ে যে সংসার করছি...
- তুই তা-ও ও বাড়ির রীতিটা এখনও বজায়
রেখেছিস। তোর বিয়ের পর দেখতাম তোর শাশুড়ি চৈত্র সংক্রান্তিতে
গঙ্গা স্নানে যায়। তুইও শুরু করলি, আমরা বাড়িতে বলতাম রুমিতার মতো মেয়ে হয় না
-তুমি আর মা তো কতবার আমাদের সাথে এসেছ, কী বলতো বউদি তোমার ভাগ্য ভালো আমার মা'র মতো শাশুড়ি
পেয়েছিলে, তোমার নন্দাই তো বলে আমাদের বউমা যদি ওর মা-র মতো শাশুড়ি
পেত বুঝত...
বৌদি গঙ্গার দিকে তাকিয়ে উদাস।
-সে তো
-দেখো না, জানে কিন্তু আজ আমি গঙ্গা
স্নানে যাব, তা তার বাড়ি থাকার উপায় আছে, ভোর না হতে কোন চুলোর দোরে গেছে, রাগ হয় কেন জান কোথায়
যাচ্ছে কিচ্ছু বলবে না
-তোর ছেলে কিছু বলে না
-জানই তো ছোট্টবেলা থেকে বাবু কেমন চুপচাপ, কাজ ছাড়া কিছু বোঝে না,ওই জন্যই তো অতো বাড়ানি
-আচ্ছা রুমি তোর শাশুড়ি যে বৃদ্ধাশ্রমে থাকে সেখানে কখনও
গেছিস
- কী যে বল না বউদি, সংসারের কাজের ঠেলায় সময় পাই কোথায়, ওর বাবাও তো সেই একবারই গিয়েছিল, আসলে কি বল তো বউদি অফিস, সংসার সামলে ওর বাবাও সময় করে
উঠতে পারে না, শাশুড়ি যাওয়ার পর কটা দিন সুখেই ছিলাম, তারপর এই কাল শত্তুর এল...
কথায় কথায় ট্রেন বি বা দি বাগ পৌঁছেছে। ট্রেন থেকে নেমে লাইন পেরিয়ে ওরা গঙ্গার ঘাটে নামতে গিয়ে দেখে এক তরুণী
বধু নবনিতিপর বৃদ্ধাকে গঙ্গা স্নান করিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।
এখন ভাটা স্নান করতে সিঁড়ি বেয়ে অনেক নিচে নামতে হবে।
1 মন্তব্যসমূহ
চমৎকার গল্প-- শতাব্দী চক্রবর্তী
উত্তরমুছুন