পাঁচ
পাকে বাঁধা
কাহিনী ১,
তরতাজা লাল গোলাপ বলে : আহ, ভালোবাসায় সামাজিক নামকরণ,কি
পরিতৃপ্তি!
ডায়েরির ভাজে শুকনো গোলাপটা নির্বিকার হেসে জবাব
দেয় : ন’ বছর প্রত্যাশাহীন অপেক্ষায় বয়স
বাড়লো দুজনের ..নামকরণ আনুগত্যে, ছেলেমানুষ হৃদয় পরোয়া
করেনি সিলমোহর ! জানি দেখা হবে ...
কাহিনী ২,
অপলক দেখছিলো কৃতি...
খুশি হওয়ার কথা তার আজ,
মনে পরে প্রথম দিন যখন দিশা বলেছিলো , “কাহন কে দারুণ লাগে,একটু
হেল্প করে দে না”
প্রিয় বন্ধু কৃতি আর কাহন !!
কোনো “না” শোনেনি কাহনের, যেন
বন্ধুত্বের আধিপত্যের নেশা পেয়েছিলো কৃতিকে..
অথবা,
ভালোই লাগতো শোনাতে, “কাহনের এরকম ভালো লাগে,এটা কর
দিশা”..
আজ তাহলে মন কিসের চক্রব্যুহে...
আজ ওদের আশীর্বাদ ।।
হাসছে ওরা দুজন...
কই কাহন বুঝছে না তো আজ, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে কৃতির।
ঘর ভর্তি চেনা অচেনা মুখ ।
সবাই খুশি কৃতির পছন্দে, একেবারে নাকি রাজযোটক ।
কাহন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো “কিরে এবার খুশী তো”?
বুক চিরে বেরিয়ে গেলো ধারালো ছুরিটা...
মাটিতে হাটু গেড়ে বসে চিৎকার করে বলে উঠলো কৃতি “কাহন মস্তো বড়ো ভুল হয়ে গেছে,প্লিজ
একবার বল, বিয়ে করবি আমায়,থাকবি শুধু
আমার গল্পের রাজপুত্র হয়ে ?”
কাহন মৃদু হাসে...
ফিরে যাচ্ছে দিশার কাছে..
না,কেউ শুনতে পেলো না কৃতির আর্তনাদ।
“প্রপোজাল”টা
অব্যক্ত থেকে গেলো দুজনের দীর্ঘনিশ্বাসে....
হতে পারতো ওদের গল্পটা অন্যরকম !!
বড্ড দেরী হয়ে গেছিলো কাহনের অভিমানটা বুঝতে ।।
কাহিনী ৩,
আধখাওয়া ফাইভ স্টারটা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না ।
হঠাৎ সন্ধ্যেবেলা একদিন মিষ্টিমুখ করিয়েছিলো
ছেলেটা..
সমর্পণ !!
কেটে গেছে গোটা এক বছর ,
অবশিষ্ট চকলেটটায় মেয়েটা চেনা স্পর্শ পায় আজও !!
ঠোঁটের ঊষ্মতায় প্রেম অপেক্ষা করে হিমশীতল
গহ্বরে...
কাহিনী ৪,
প্রেমটা রকবাজ টাফ ছেলেটাকেই,
কিন্তু...
ঋক গাল ফুলিয়ে হেসে দিলেই হৃদি চুলটা ঘেটে দিতো
আদর করে,
দোকানের সাজানো পসরা নয়,
এই “টেডি” হৃদির ব্যক্তিগত ।
প্রতিশ্রুতি ছিলো,কেউ হবে না আর এর ভাগীদার ...
চারটে বছর কেটে গেছে,
সারা বিছানা জুড়ে আজ কত্ত টেডি,
পেঁজাতুলোর মধ্যে ফুটফুটে দুটো চোখ,হাসিটা একদম এক..
ছোট্ট হাতটা দিয়ে হৃদি আর ঋককে আকড়ে ধরতে চায়..
একঢাল চুল চোখে মুখে,
গালদুটোয় আদর করেও আশ মেটেনা হৃদির..
সারাদিন কেটে যায় ওদের একান্ত নিজস্ব “টেডি”কে ঘিরে...
কথা রাখতে পারেনি সময়,
ভাগ হয়েছে কুসুম-পেলব-আদর !!!
এই প্রতিশ্রুতি ভাঙা ভালো...
এই প্রতিশ্রুতি ভাঙা শান্তির....
কথা রইল, তৃতীয় প্রবেশ নিষেধ ।।
কাহিনী ৫,
রোজ নতুন করে তোমায় পাওয়া,
কেটে গেছে এতগুলো বছর,
আজও , মেট্রোর সামনে প্রথম দেখেই তোমায় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে..
হ্যা হ্যাঁ নির্লজ্জ আমি, এমনই থাকবো!
হেসে মুখ ওঠাতেই , কপালে তোমার স্পর্শ...
“কেমন কাটলো দিন” ?
না, কোনও পার্ক না, নয় কোনও অন্ধকার বায়োস্কোপ...
তোমায় চাই গোলপার্কের মোড়ে,
তোমায় চাই জোড়াসাকোর ঠাকুরবাড়ি,
তোমায় চাই মধ্য কলকাতায়,
ট্রামে,ট্যাক্সিতে,হাত টানা রিক্সায়,হ্যাঁ,ছুয়ে থাকতে চাই !!
ক্লান্ত অগ্নিগর্ভ দুপুরে,তোমার আলিঙ্গনে একমুঠো শিউলি ফুল..
কনকনে ঠান্ডা রাস্তায়,ঠোঁটে একটা চুমু,বসন্তের আগমন..
ওই চায়ের ভাড়টা বড্ড প্রিয়,তোমার ঠোঁটের উষ্নতায় !
আর কি প্রিয় জানো???
আমি নিজে,তোমার মধ্যে লেপ্টে থাকা আমি , হ্যাঁ ভীষণ প্রিয়
....
অসভ্য আমি তোমার সাথে,
শরীর নাম দেয় সমাজ...
ঠিকই তো।
শরীর না থাকলে,মন বাসা বাঁধতে কোথায় শুনি!!
রক্ত মাংসের হৃদয় তোমার সাথে জড়িয়ে রাখতে চায়
নিজেকে...
প্রত্যেকটা ঠোঁটের স্পর্শে পরিপূর্ণ অস্তিত্ব !!!
নগ্ন হোক সংকীর্ণ মানসিকতা,
বদনাম হোক ভালোবাসা ।
প্রথাহীন যদি অবৈধ হয়,বেশ তো ।
তবুও বন্দী না, নিশ্বাস নিক কাছে আসার ইচ্ছেরা ।।.......
সুষ্মিতা রায়চৌধুরী