তিনশো লাইক
সান্তা ক্লারার এক সফটওয়্যার কোম্পানীতে
আছেন অসিত মিত্তির। ষাট প্রায় ছুঁইছুঁই, কেটে গেছে প্রায় বিশ বছর এদেশে। মাঝারি হাইটের
বিরলকেশ ভদ্রমহোদয় কোম্পানি বদলেছেন যেমন ঠিক তেমনই মাথা থেকে যে হারে কেশ অবলুপ্তি
ঘটেছে তার থেকেও দ্রুত হারে ডলার কামিয়েছেন। দু তিনটে প্রপারটির মালিক, দোষ বলতে ওই
আর কি...একটু রসে বসে থাকেন। অশোকবনে সীতা যেমন অশোকগাছ
পরিবেষ্টিত হয়ে বন্দীদশা কাটিয়েছিল, সেইরকম মহিলা পরিবেষ্টিত
হয়ে মিত্তিরবাবু এদেশে কৃষ্ণের ভূমিকা পালন করতে চান। তবে তিনি লক্ষ্মণের গণ্ডী
টেনে রেখেছেন। সেফ সাইডে কিভাবে খেলতে হয় তিনি ভালভাবে জানেন। ছোট
ছোট বাচ্চা মেয়েগুলো বিদেশ বিভুঁয়ে চাকরি করতে এসে কোথায় যায় , তাই তিনি নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। মিত্তির বাবুর চাহিদা খুব সামান্যই।
একটু কফি, ডিনার উইথ ওয়াইন আর একটু গল্প সল্প...। বাচ্চা
মেয়েগুলো মিত্তির কাকু বলতে অজ্ঞান।
গিন্নী
বলে “বুড়ো ভাম তোমার ছোঁকছোঁক স্বভাব আর গেল না। তবে এটাও ঠিক এত বছরে অনিতা
বুঝেছেন মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত্যই। মিত্তির বাবু আর যাই করুন রাতে ঘরে ঠিকই
ফেরেন। তাই অনিতা স্বামীর গোপিনী প্রীতি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না। মিত্তিরবাবুও
আবিষ্কার করে ফেলেছেন গিন্নীকে খুশী রাখার উপায়। বছরে একটা হীরের নেকলেস,গাড়ীর নতুন মডেল আর নয়তো বছর শেষে হংকং নিউইয়র্কে শপিং। গতবছর টীনা নামে
একটা পাঞ্জাবী মেয়ের সাথে ডিনার করে বেশী রাত করে বাড়ি ফেরার খেসারদ স্বরূপ নিয়ে
যেতে হয়েছিল সুদূর চায়না, প্রাচীর দেখাতে। আজ
সানফ্রান্সিসকোতে বেঙ্গলী আ্যসোসিয়েশনের নিউইয়ার পার্টি। সুবেশা অনিতা গতবছরে
পাওয়া হীরের নেকলেশটা গলায় পড়েছেন। খোঁপায় একটা লাল গোলাপ। আজ তিনি পার্টিতে
মধ্যমণি হয়ে উঠতে চান। স্যুট পরিহিত মিঃ মিত্তির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাকে একবার
চিরুনি চালিয়ে নেন। তখন অনিতা এসে পাশ থেকে
আদুরে স্বরে বলেন “আজ একটা ইন্টিমেট ফটো চাই কিন্তু”। মিসেস সরকার গত
বছরের পার্টিতে যেরকম হাসব্যান্ডের কোমরে হাত রেখে ফটো তুলেছিলেন ঠিক সেইরকম।
মিসেস সরকারের ফেসবুক পেজে তো লাইকের বন্যা বয়ে গেছিল। মিত্তিরবাবুকে সেদিন কম
গালমন্দ খেতে হয়নি। তিনি মহিলা মহলে ব্যস্ত থাকায় মিসেস মিত্তিরের ফটো পোস মিস হয়ে
গেছিল। তাই এবছর মিত্তিবাবুকে আগে থেকেই সাবধান করে দিয়েছেন।পার্টি বেশ জমে উঠেছে।
ওয়াইনের গ্লাস হাতে মিত্তিরবাবু তখন মহিলাদের বোঝাতে ব্যস্ত ওয়াইনের প্রকারভেদ এবং
তার উপকারিতা। একটা সিগারেট ধরিয়ে বেশ কেতা মেরে ধোঁয়ার রিং ছুঁড়লেন বাতাসে। তা
দেখে রীনা সুতপা বলে ওঠে “কাকু ইউ আর সো হ্যান্ডসাম এট দিস এজ”। “ইউ
নো সুতপা ইউ লেডিস আর জাস্ট লাইক দিস সিগারেট,যদি ফুঁ না
দেওয়া হয় তাহলে নিভে যায়। মহিলাদের কমপ্লিমেন্টের ভীষন প্রয়োজন। হাই সৌমিলী ইউ লুক
স্টানিং”। বলে সৌমিলীর হাত ধরে নাচের ভঙ্গীতে পোস দেন।
চারদিকে হাসির রোল ওঠে। ক্যামেরায় ক্লিক হতেই তার ঝলক এসে লাগে অনিতার চোখে। কটকট
দৃষ্টিতে স্বামীকে বাগে আনার চেষ্টা করেন কিন্তু কে শোনে কার কথা। মিসেস সরকার তখন
তার হীরের নেকলেশ সম্বন্ধে জানতে চাইছেন। এ সুযোগ অনিতা হাতছাড়া করতে নারাজ।
হীরের দ্যুতির কাছে ক্যামেরার ঝলকও ম্লান হয়ে যায়।
পার্টি প্রায় শেষ, অনিতা কিছুটা অধৈর্য। মিত্তির মশাইকে ফাঁকা পেয়ে একটাও ফটো তোলার ফুরসত মেলেনি। হঠাৎ দেখলেন ওয়েটারের থেকে ওয়াইন ভর্ওি গ্লাস নিচ্ছেন মিত্তিরবাবু, তার বাঁ হাতে একটা লাল গোলাপ। এই গোলাপটা কে দিল? অনিতা গিয়ে দাঁড়ালেন মিঃ মিত্তিরের সামনে। -এ গোলাপটা কোথা থেকে পেলে,কে দিল তোমাকে? মিঃ মিত্তিরের তখন ল্যাজে গোবরে অবস্থা। কিন্তু এতদিনের প্রাক্টিস। প্রোগাম করে করে চুল সাদা নয় ঝরিয়ে ফেলেছেন। তাই ঝপ করে গিন্নীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। -ডার্লিং এ তো তোমারই জন্য । চারদিকে সাটারে তখন ক্লিক। পরদিন সেই ফটো ফেসবুকে দিয়ে অনিতা পেলেন তিনশো লাইক।
নন্দিনী
পাল