দুটি কবিতা
১
রেগিস্তান
নিঃসঙ্গ উটের শরীরে
গোলাকার ছায়া পড়ে আছে; ডাক্তারবাবু জড়িবুটি প্রাচীণ শিলাজিত খুলে এখানে বসুন,
রাত্রি-সরাইখানায় খেজুরের অশ্রু ঝরে পড়ে, কালো-চামড়ার থলির ওপরে। রেগিস্তানের এই
যে আগুনমদ পাত্র ফেলে উবে গেছে, নেশা ফেলে রেখে গেছে। নেশা নড়েচড়ে, পোকাদের মতো
কিলবিল করে, সে বাষ্পীয় কঠিনের মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে কালচে পাত্রের ছাপ। নিঃসঙ্গ
উটের শরীরে তারই গোলাকার ছায়া… ডাক্তারবাবু, ধীরে ধীরে সমস্ত ধারকের ছায়া গোলাকার হয়। উটের শরীরে পড়ে। গোলাকার ছায়ার ভেতর গোলাকার হয়ে
ওঠে উটের শরীর। অতিরিক্ততাটুকু ঝুলে থাকে রেগিস্তানের খেজুরকাঁটায়। ডাক্তারবাবু
এখানে বসুন, দেখুন কস্তুরী মেশানো কর্পূর গিলে নিচ্ছে গোলাকার রাত, দোল খাচ্ছে
গোলাকার উটের ছায়ায়
২
ছাদ
আমি বিশ্বাস করি আমাদের
পুরানো, শ্যাওলা-মলিন ছাদটির প্রাণ আছে। সে জানে কে কে তাকে ছেড়ে চলে গেছে, কে
রক্তমাখানো কর্পূরদান এনে রেখেছিল সন্ধের বুকে, এমনকি সে এটাও জেনেছে কারা তাকে
ছেড়ে চলে যাবে। আজ চব্বিশ কার্তিক, রোদ সরে গেছে; এ সময়ে প্রতিটি পাখির বুকে ঢুকে
যায় সিন্ধু-বিষাদ। ছাদে উঠে বুঝলাম ছাদ
বোবা হয়ে শুয়ে, ফোনের ওপারে মাঝে মাঝে ডুকরে উঠছেন কল্যাণীর সুভাষ বিশ্বাস।
পুত্রহারা পিতা, বিশ্বাস হারাতে হারতে না-হারানো কবি; বিনয় মজুমদারের শেষকৃত্যের
দিন নির্জনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দেখেছেন ডালে ডালে সবেদা ফলেছে আর কবির করোটি চেয়ে আছে
আকাশের দিকে। আমি জানি এ ছাদের প্রাণ আছে; সুভাষ বিশ্বাসের কথা শুনে সে’ও ডুকরে
কাঁদছে আর কর্পূরদান থেকে শিখা লাফিয়ে উঠছে হেমন্তসন্ধ্যায়
1 মন্তব্যসমূহ
মায়াবী লেখা।
উত্তরমুছুন