প্রদর্শশালাটি
( মূল কবিতা : The Gallery; কবি : Thomas Transtromer ; ২০১১ সালে নোবেলজয়ী সুইডিশ কবি )
টমাস ট্রান্সট্রোমার (১৯৩১ - ২০১৫)
সুইডেন-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কবি ।
সুইডেনে তাকে "ঈগল কবি" বলা হয় কারণ তার কবিতায় এক রহস্যময় দৃষ্টিকোণ নিয়ে একটা উচ্চতা থেকে দেখা পৃথিবীকে পাওয়া যায় অথচ তার নখদর্পণে উঠে আসে প্রাকৃতিক পৃথিবীর প্রতিটি খুঁটিনাটি । তার কবিতা যেন এক সীমান্ত অভিযান - নিদ্রা ও জাগরণের, চেতনা ও অবচেতনার । পেশায় মনস্তত্ত্ববিদ এই কবি ২০১১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী হন।
সুইডেনে তাকে "ঈগল কবি" বলা হয় কারণ তার কবিতায় এক রহস্যময় দৃষ্টিকোণ নিয়ে একটা উচ্চতা থেকে দেখা পৃথিবীকে পাওয়া যায় অথচ তার নখদর্পণে উঠে আসে প্রাকৃতিক পৃথিবীর প্রতিটি খুঁটিনাটি । তার কবিতা যেন এক সীমান্ত অভিযান - নিদ্রা ও জাগরণের, চেতনা ও অবচেতনার । পেশায় মনস্তত্ত্ববিদ এই কবি ২০১১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী হন।
আমি রাত কাটালাম
আমার ঘরে একটা গন্ধ
যেটা মিউজিয়ামের প্রাচ্য ঘরে পেয়েছিলাম
একটা বিবর্ণ দেওয়ালে মুখোশ, তিব্বতীয় ও জাপানি
কিন্তু এগুলো আর মুখোশ নেই , এগুলো মুখ
বিস্মৃতির সাদা দেওয়ালের ভেতর থেকে জোর করে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে, কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছে
তাদের যুদ্ধ এবং নিরুদ্দেশ এবং ফিরে আসা দেখতে আমি জেগে রইলাম
কেউ তাদের মুখ ভঙ্গি পরস্পরকে ধার দিল, বিনিময় করল মুখ আমার গভীরে যেখানে বিস্মৃতি এবং স্মৃতি, চাকা -এবং -বোঝাপড়া
তারা বিস্মরণের দ্বিতীয় স্তরটি ঠেলে ঢুকলো
সাদা দেওয়াল
তারা দৃশ্যান্তরে গেল, দৃশ্যমান হল
এখানে একটা দুঃখ আছে যে নিজেকে দুঃখ বলেনা
বিশুদ্ধ প্রদর্শশালা টিতে আপনি স্বাগত !
বিশুদ্ধ প্রকোষ্ঠটিতে আপনি স্বাগত !
বিশুদ্ধ জাফরিগুলি !
কারাটে পারদর্শী ছেলেটি যে কাউকে অসাড় করে দিয়েছিল এখনো
স্বপ্ন দেখে আরো দ্রুত অর্থের
পিছনে চুপি চুপি আসা শূন্যতার ক্ষুধার্ত মুখে ঢালার জন্য এই মহিলা জিনিস কিনে চলেন
জনৈক মিস্টার এক্স বাইরে বেরুনোর সাহস করেন না
অস্পষ্ট মানুষের একটা কালো আড়াল তার
এবং দ্রুত অপসৃয়মান দিগন্তের মাঝে দাঁড়িয়ে
সেই মেয়েটি যে কারেলিয়া থেকে পালিয়ে এসেছিল
সে যে হাসতে পারতো
এখন নিজেকে দেখায়
কিন্তু নির্বাক, ভয়ার্ত, একটি সুমেরীয় মূর্তি
যেমন আমি যখন বছর দশেকের বালক
এবং দেরি করে বাড়ী ফিরতাম
সিঁড়ির গর্তে আলো নেভানো
কিন্তু যে লিফ্টে আমি দাঁড়াতাম তা আলোকিত সেটা উঠত ডুবুরী-কক্ষের মতো
কালো গভীরতা ছাড়িয়ে
প্রতিটি তল পেরিয়ে
যখন কাল্পনিক মুখগুলি
গ্রিলের গায়ে আটকে থাকতো
কিন্তু মুখগুলি এখন আর কাল্পনিক নয়,
তারা বাস্তব;
রাস্তার মোড়ের মত আমি সোজা শুয়ে থাকি;
অনেকে সাদা কুয়াশা থেকে পা রাখে
আমরা পরস্পরকে একবার স্পর্শ করেছিলাম- হ্যাঁ করেছিলাম ;
একটা লম্বা উজ্জল কার্বলিক গন্ধের করিডর
হুইল চেয়ার ; কিশোরী মেয়েটির
কথা বলতে শেখা গাড়ি দুর্ঘটনার পর
সে, যে মানুষটি জলের তলদেশ থেকে বলতে চেয়েছিল এবং পৃথিবীর শীতল জড় তার নাক মুখের ভেতর দিয়ে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল;
মাইক্রোফোনে কণ্ঠস্বরটি বল্ল :
গতি-ই ক্ষমতা, গতি-ই শক্তি !
খেলাটা খেলো, শো-টা চলুক !
আমরা আমাদের পেশায় খাড়াই উঠি
প্রতিটি পদক্ষেপে
এটি জাপানি 'নোহ্' থিয়েটারের মতো
মুখোশ পড়ে উচ্চকিত গানে : আমি, আমি !
অকৃতকার্য যে, গোটানো কম্বল যেন সে
জনৈক শিল্পী বলেছিলেন : পূর্বে আমি
গ্রহ ছিলাম আমার নিজস্ব ঘন পরিবেশে
আলোর বলয়ে প্রবেশ রামধনুতে ভেঙে গেল চিরকালের ঝঞ্ঝা বিক্ষোভের প্রকোপ, ভেতরে
এখন আমি বিলুপ্ত এবং রুক্ষ এবং মুক্ত
আমার আর শিশুসুলভ উদ্যম নেই
আমার একটা দিক উষ্ণ, আর একটা দিক শীতল
কোনো রামধনু নেই
আমি সারারাত সেই প্রতিধ্বনিত বাড়িতে ছিলাম অনেকেই দেওয়াল ভেদ করে আসতে চেয়েছিল কিন্তু বেশিরভাগ সফল হয়নি
বিস্মৃতির সাদা শিসে তারা পরাহত;
অজ্ঞাত সংগীত দেওয়ালে ডুবে যাচ্ছে
গোপন ধাক্কার শব্দগুলো যা শোনাতে চায়না, দীর্ঘশ্বাস ফেলে
আমার পুরোনো কৌতুক হামাগুড়ি
দেয় নিরাশ্রয়ে ;
শোন, সমাজের যান্ত্রিক আত্মধিক্কার শোন
বড় পাখার আওয়াজ
ছ'শো মিটার নিচে খনির সুড়ঙ্গে
যান্ত্রিক বাতাসের মতো ;
পট্টির নিচে আমাদের বিস্তৃত চোখ খোলা
যদি তাদের বোঝাতে পারতাম
আমাদের নিচে এই কম্পনের মানে
আমরা সেতুর ওপরে আছি
অনেক সময় আমাকে স্থির নিশ্চল হতে হয়
আমি যেন সার্কাসের ছোরা-ছোঁড়া খেলার মাদারির টেনিয়া
যে প্রশ্নগুলো আমি রাগে ঝেড়ে ফেলেছিলাম তীক্ষ্ণ আওয়াজ তুলে ফিরে আসে
আমাকে আঘাত করেনা, কিন্তু আমার
দেহসীমানায় পেরেক পুঁতে দেয়
আমার একটা চটজলদি শরীরীরেখা আঁকা হয় এবং সেটা থেকে যায়, যখন আমি বেরিয়ে আসি
প্রায়ই আমাকে নীরব থাকতে হয় ।
স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে !
কারণ "শেষ কথাটি" বলা হয় বারবার
কারণ শুভ দিন এবং বিদায়
কারণ এই সেই দিন
কারণ সীমারেখাগুলো অবশেষে তাদের
সীমানা ছাপিয়ে ওঠে এবং
বলার কথাগুলোকে ভাসিয়ে দেয়
আমি 'নিদ্রাচারী'দের মোটেলটিতে
সারা রাত যাপন করেছিলাম
অনেক মুখ এখানে বেপরোয়া
অনেকের স্থির, বিস্মৃতির তীর্থযাত্রার পরে
তারা নিঃশ্বাসে ফিরিয়ে আনে
হারিয়ে যাওয়া লড়াই
তারা আমাকে উপেক্ষা করে
তারা সবাই চায় শ্রেষ্ঠ বিচারকের কাছে পৌঁছোতে
আমাদের মধ্যে একজন অন্যজনকে দেখার মতো ঘটনা খুবই বিরল
মুহূর্তের জন্য কোন মানুষ নিজেকে দেখায় ফটোগ্রাফের মতো কিন্তু পরিষ্কার
এবং তার প্রেক্ষাপটে বৃহৎ কিছু
যা তার ছায়ার চেয়ে বৃহত্তর
সে আপাদমস্তক দাঁড়িয়ে আছে পর্বতের সামনে পর্বতের চেয়েও শামুকের খোল বলা ভালো শামুকের খোলের চাইতেও একটা বাড়ি
বাড়ি ও নয় কিন্তু অনেক ঘর আছে
সেটাও অস্পষ্ট কিন্তু সুবিশাল
সে তার ভেতরেই বেড়ে উঠেছে
সেটিও তার মধ্যে থেকে
এটাই তার জীবন, এটাই তার গোলকধাঁধা
অভিজিৎ পালচৌধুরী