একটু পরেই আকাশে ঝড় উঠবে।
কলিংবেল বাজালাম। ‘আরে, তুমি ?’
- ‘মিহিরদাকে একটা ম্যাগাজিন
দিতে এসেছিলাম।’
- ‘ও তো বাড়ী নেই, অফিসের
কাজে দিল্লীতে গেছে।’
কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
অজন্তা বৌদিই দুদন্ড কিছু ভাবলো, বললো -
‘ভেতরে এসো।
বাইরে ততক্ষণে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। অগত্যা ঘরের সোফায় গ্যাট হয়ে বসে পড়লাম।
মিহিরদার সাজানো গোছানো পরিপাটি সংসার। দাদা
আমার কলেজের সিনিয়ার, একই জয়গায় চাকরী করে, সেইসূত্রে চেনাজানাও।
এক চিলতে বারান্দা। লাগোয়া বসবার ঘর। ঝড়ের
প্রচন্ড হাওয়া। ঘটাং করে উদ্দাম দরজাটা
বন্ধ হয়ে গেলো।
বৌদি এগিয়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া দরজার
কপাটদুটো খুলে দিলো। সরিয়ে দিল সামনের ভারী পর্দাটাও।
বসলো আমার সামনের চেয়ারে।
দু’একটা কথা বার্তার পর উঠে
পড়লো- ‘একটু বসো সুমন, চা আনছি।’
ঘর জুড়ে নিস্তব্ধতা! চারদিকে পারফিউমের গন্ধ।
এদিকে ঘরের হাট করে খুলে রাখা দরজাটা। বৃষ্টির দমকা হাওয়া। ভেজা ভেজা জলের ছাট ঢুকছে! ঘরের মেঝেতে
আর্দ্রতা। ভাবছিলাম, হাঁ করে খুলে রাখা কপাট দুটো আমিই কি বন্ধ করে দেবো?
বৌদি চা আর স্নাক্সস নিয়ে এলো, বললো –‘খাও।
বর্ষার দিনে ভালোই জমবে!’
আমার সঙ্গে অজন্তা বৌদির কথা গড়িয়ে যায়!
-‘মিহিরদার কি আজকাল প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়?’
-‘এই দ্যাখো না, কেমন একটা ডিউটি! একা একা
আমার খুব খারাপ লাগে!’
উদাস মনে চা খাচ্ছিলাম। বৌদিও।
ক্রমশঃ হাওয়ার গুমরানো বেড়েই চলেছে। হঠাৎ দমকা হাওয়াতে দরজাটা
আবার নিজে নিজেই হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো।
ঘরটা আবার ভরে গেলো আবছায়ায়। গুহাগাত্রে নিটোল খোদাইকরা ভাষ্কর্যময়ী
অজন্তাবৌদি আমার মুখোমুখি! মনমুগ্ধকর ছায়াছবির একটা দৃশ্যের ভেতর আমি বসে আছি। আমার
সামনে অসামান্য এক নায়িকা। বৌদি সোফা থেকে উঠে পড়লো। আমি অপেক্ষা করছি!
এই মুহূর্তে দরজার দুটো কপাটই বন্ধ! আশপাশের
মানুষ জনতাদের জানালার চোখ দিয়ে এই বৃষ্টিতেও কি চারদিকে নজর রাখছে? মিসেস অজন্তা
সান্যালের ঘরে একজন অচেনা ছেলে ঢুকে পড়েছে? বৌদি এগিয়ে এলো। নিজের হাতে বন্ধ দরজা
দুটো আবার উদোম খুলে দিলো! একলা ঘরটাকে এমনি এমনি আর্দ্রতায় ভিজিয়ে দেয়া কি ঠিক?
এবারে কপাটদুটোর পায়ে রাবারের স্টপার।
বৃষ্টির দমকা হাওয়া যতই উতালপাথাল হোক, জলের ঝাপ্টায় যতই ভিজে যাক মানুষের শরীর,
কপাট দুটোয় বৌদি লাগিয়ে দিলো রাবারের খিল। দরজা আর কখনোই বন্ধ হবে না! ঘরের ভেতরটা
আর্দ্রতায় ভিজে যাচ্ছে, চারধারে তখনো আতরের ভেজা গন্ধ।
দরজা বন্ধ থাকলে হঠাৎ করে কি সুন্দরবনের
জঙ্গল বেরিয়ে আসে? শুরু হয় ফিসফাস, উড়ে আসে অজানা কোনো সোঁদালসোঁদাল রোমান্টিক
সুবাস! এই অসময়ে এখানে এসে পড়ায় নিজেকে কেমন অপরাধী ফিলিং হোলো।
অনেকক্ষণ পরে বৃষ্টি একটু থেমে আসতেই আমি
ভিজতে ভিজতেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
তারপর আরো অনেকবার বৌদির সঙ্গে এদিক ওদিকে
দেখা হয়েছে। এখনও দেখা হয়, অজন্তা বৌদি যখন আমার দিকে তাকায়, আমি কেমন যেন হয়ে
যাই! আমাকে আজও ক্রিমিনাল করে রাখে অতীতের সেই বৃষ্টি ঝরা দিনটা, হাওয়ায় কাঁপতে
থাকা ঘরের পর্দা, বৌদির জবরদস্তি খুলে রাখা সেদিনের দু-দুটো নিষিদ্ধ কপাট!