সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

তন্বী হালদার/জুন'২০২২

 


আমাদের কথা ( নাটক ) 


( চরিত্র – সত্যবতী, গান্ধারী, কুন্তী, দ্রৌপদী, সুভদ্রা, ভানুমতী, গঙ্গা, ভারতমাতা, সেবিকা ১ জন )

 

প্রথম দৃশ্য

 

[ মঞ্চ খোলার আগে – শঙ্খ ধ্বনি ৩ বার, তারপর মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃতের সন্তান ৪ লাইন, প্রতিটি চরিত্রকে পরিচয় করে দেওয়া হবে দর্শকের সাথে। তার আগে …  

নেপথ্যের ডায়ালগ – আসুন, আজ কিছুক্ষণের জন্য আমরা হাজার হাজার বছর আগে চলে যাই। মহাভারতের যুগ। মহাভারতে অনেক অনেক শৌর্য্য, বীর্য, ত্যাগ, মহিমায় অনেক পুরুষের নাম শুনেছি। অনেক নারীও আছেন। তাদের মধ্যে আমি মাত্র ৮ জন সহ ভারতমাতাকে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। 

মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চে আলো পড়বে। মঞ্চের ডানদিক থেকে ধীর পায়ে ভারতমাতার প্রবেশ। এনার পরনে লালপেড়ে গরদের শাড়ি। ফুলের গয়না। মঞ্চের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে … ]

 

ভারতমাতা – আমি ভারতমাতা। দেশমাতাও বলতে পারেন। এই যে ভায়ে ভায়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সবাই দেখছেন, আমিও দেখছি। এ এক ভয়ঙ্কর সময়। আমি তো মা। সক্কলের মা। তাই কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায় বুঝতে চাই না। আমি চাই আমার সন্তানেরা ভালো থাকুক। সুখী থাকুক।  [ বামদিক থেকে প্রস্থান ]    

 

[ মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চের বামদিক থেকে গঙ্গার প্রবেশ। মঞ্চের মাঝখানে এসে … ]

 

গঙ্গা – আমি গঙ্গা। দেবী গঙ্গা। মহারাজ শান্তনু আমাকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে শর্ত দিয়েছিলাম আমার গর্ভে যতগুলি সন্তান জন্মাবে সবাইকে আমি আমার বুকে টেনে নেব। অর্থাৎ জলে বিসর্জন দেব। যেদিন মহারাজ সন্তানকে দিতে অস্বীকার করবেন সেই দিনই আমি স্বর্গে ফিরে যাবো। তবে সন্তানটিকে মহারাজ শান্তনুর কাছে রেখে যাব। তাই আমি দেবব্রত পরে যাকে আপনারা ভীষ্ম বলে জানেন মহারাজ শান্তনুর হাতে তুলে দিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম আমার আবাসস্থলে। [ ডানদিক থেকে প্রস্থান] 

 

[ মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চের ডানদিক থেকে সত্যবতীর প্রবেশ। মঞ্চের মাঝখানে এসে … ]

 

সত্যবতী – আমি সত্যবতী। মাছের পেটে আমার নাকি জন্ম। তাই আমার আর এক নাম মৎস্যগন্ধা। এক যোজন দূর থেকে আমার গায়ের আঁশটে গন্ধে লোকে নাকে বস্ত্র চাপা দিত। জানেন সেই মাছের পেটে আমার এক যমজ ভাইও ছিল। তা ভাইটিকে ছেলে বলে দেশের রাজা তাকে নিয়ে নিল। হাজার হোক ছেলে তো! আর আমাকে এক ধীবরের কাছে দিয়ে দিল। আমি গান গাইতাম। নৌকো বাইতাম। নদীতে স্নান করতাম। তা একদিন পরাশর মুনি আমার নৌকোয় উঠে আমাকে কামনা করলেন। তার ঔরসেই জন্ম হল কৃষ্ণদ্বৈপায়নের। যাকে পরবর্তীকালে সকলে আপনারা ব্যাসদেব বলে জানেন। আর মুনি পরাশরের আশীর্বাদে আমার শরীর থেকে সমস্ত মাছের গন্ধ চলে গিয়ে পদ্মের সুবাসে সুবাসিত হয়ে যায়। বলতে পারেন মহাভারতের আখ্যান আমাকে দিয়েই আরম্ভ। [ বামদিক থেকে প্রস্থান ]    

 

[ মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চের বামদিক থেকে গান্ধারীর প্রবেশ। মঞ্চের মাঝখানে এসে … ]

 

গান্ধারী – আমি গান্ধারী। সেই সুদূর গান্ধার দেশ থেকে বিবাহের কারণে আমাকে এই দেশে আনা হয়েছিল। গান্ধার তো রুক্ষ্ম। চারদিকে খালি উঁচু, নিচু পাহাড় আর মরুভূমির পর মরুভূমি। সত্যি বলতে এদেশে এসে সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা বিস্তীর্ণ জমি, নদনদী, গাছগাছালি, পাখপাখালি দেখে আমার মনটা আনন্দে ভরে গিয়েছিল। আমি ঘরের জানলা দিয়ে সুযোগ পেলেই বাইরেটা দেখতাম। যতই দেখি না কেন আশ মিটত না। জানেন আমি জানতাম না যার সাথে আমার বিয়ে হল সেই মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ ছিলেন। খবরটা প্রথমে জেনে আমার বুকের ভিতরটা তোলপাড় করে ওঠে। পিতা, স্বামী সবার প্রতি অসম্ভব এক অভিমানে মনে হয় আমার স্বামী যখন প্রথম থেকেই চোখে দেখতে পান না তাহলে আর আমার কোনকিছু দেখার অধিকার নেই। তাই আমি নিজের চোখকে বস্ত্রখণ্ড দ্বারা আবৃত করে নিয়েছি। ও আমার আর একটা পরিচয় আছে। আমি দুর্বিত্ত, উদ্ধত, দুর্বিনীত দুর্যোধনের মাতা। [ ডানদিক থেকে প্রস্থান] 

 

[ মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চের ডানদিক থেকে কুন্তীর প্রবেশ। মঞ্চের মাঝখানে এসে … ]

 

কুন্তী – আমি কুন্তী। মহারাজ পাণ্ডুর স্ত্রী। আমার সপত্নীর নাম মাদ্রি। মহারাজের মৃত্যুর সঙ্গে মাদ্রি সহমরণে গেছে। মহারাজ পাণ্ডু শারীরিক অক্ষমতার কারণে পিতা হওয়া সম্ভব ছিল না। তাই ক্ষেত্রজ বা নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে আমার গর্ভে ধর্মরাজ, পবন এবং দেবরাজ ইন্দ্রের ঔরসে সর্বগুণসম্পন্ন তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। আর মাদ্রির অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের দ্বারা দুটি পুত্রের জন্ম হয়। আমার পাঁচ সন্তানই সর্বগুণসম্পন্ন। তাদেরকে নিয়ে আমি বহু কষ্ট, বহু ঝঞ্ঝা সামলেছি। [ বামদিক থেকে প্রস্থান ]   

 

[ মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চের বামদিক থেকে দ্রৌপদীর প্রবেশ। মঞ্চের মাঝখানে এসে … ]

 

দ্রৌপদী – আমি দ্রৌপদী। এছাড়াও আমার অনেক নাম আছে। পাঞ্চালী, কৃষ্ণা, যাজ্ঞসেনী কত কি। রাজা দ্রুপদের যজ্ঞের আগুণ থেকে আমার জন্ম। লোকে বলে আগুণের মতো রূপ আমার। এই রূপের জ্বালায় সারা জীবন ধরে নিজেই নিজেকে পুড়িয়েছি। স্বয়ম্বর সভা থেকে অর্জুন আমাকে লাভ করলেও মাতা কুন্তীর আদেশে পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী হয়ে যাই। দেব কৃষ্ণ আমার সখা ছিলেন। আমার জীবনটা লাঞ্ছনা আর লাঞ্ছনায় ভরা। তবে প্রতিশোধ আমিও নিয়েছি। এই যেমন দুঃশাসনের আমার কেশ আকর্ষণ করার জন্য ভীম তার বুক চিঁরে রক্ত এনে দিলে আমি আমার আজানুলম্বিত কেশ সেই শোণিতধারায় ভিজিয়ে নিয়ে তারপর চুল বাঁধা শুরু করি।    [ ডানদিক থেকে প্রস্থান] 

 

[ মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চের ডানদিক থেকে সুভদ্রার প্রবেশ। মঞ্চের মাঝখানে এসে … ]

 

সুভদ্রা – আমি সুভদ্রা। যদুকুলের বলরাম ও কৃষ্ণের একমাত্র আদরের ভগিনী। আমার জীবনটা পাখির ডাক, ঝর্ণার জল, ফুলের সুবাসের মতো সুন্দর ছিল। আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা চেয়েছিলেন দুর্যোধন পুত্র লক্ষ্মণের সঙ্গে আমার বিবাহ হোক। কিন্তু কনিষ্ঠভ্রাতা কৃষ্ণ তা হতে না দিয়ে অর্জুনের সঙ্গে আমার বিবাহ দেন। তারপরেই আমার জীবনটা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আমার পুত্র কিশোর অভিমন্যু মারা যায়। আমার জ্যেষ্ঠা সপত্নী, শ্মশ্রুমাতা কুন্তী সহ পঞ্চপাণ্ডব স্বর্গের অভিমুখে যাত্রা করেন। খা খা মৃত্যুপুরীতে রয়ে যাই আমি আর আমার বিধবা বালিকা পুত্রবধূ উত্তরা। আর উত্তরার গর্ভজাত সন্তান পরীক্ষিৎ। [ বামদিক থেকে প্রস্থান ]    

[ মিউজিক – গান – মহাভারতের কথা অমৃত সমান। মঞ্চের বামদিক থেকে ভানুমতীর প্রবেশ। মঞ্চের মাঝখানে এসে … ]

 

ভানুমতী – আমি ভানুমতী। মহাভারতে আমার একটাই পরিচয় আমি দুর্যোধনের স্ত্রী। আমার দুটি সন্তানও আছে। লক্ষ্মণ আর লক্ষ্মণা। লক্ষ্মণকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সহদেব হত্যা করে। জানেন লক্ষ্মণ আর সুভদ্রা পরস্পরকে ভালোবাসতো। আপনাদের ভগবান বংশীধারী শ্রীকৃষ্ণ বিয়েটা হতে দেয় নি। আসলে বিয়েটা হলে লক্ষ্মণকে যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করা একটু কঠিন হয়ে যাবে তো। শত হলেও কোন দাদা চায় নিজের আদরের বোনের সিঁথির সিঁদুর মুছে যাক। তবে বোনকে আটকাতে পারলেও নিজের পুত্র শাম্বকে আটকাতে পারে নি। শাম্বর জেদের কাছে হার মানতেই হয়েছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। শাম্ব আমার কন্যা লক্ষ্মণাকে বিয়ে করেই ছেড়েছিল। 

 

[ স্টেজ অন্ধকার হয়ে যাবে। ভানুমতী মঞ্চে থেকেই যাবে। ডানদিক দিয়ে সেবিকা সুবচনীর প্রবেশ। আবছা অন্ধকারে ভানুমতিকে বসে থাকতে দেখে সেবিকা  … ]

 

সেবিকা (সুবচনী) – রানিমা, ঘর অন্ধকার করে বসে আছেন? আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? মাথাটা একটু টিপে দেব? বা চুলে তেল মালিশ? 

 

ভানুমতী (হেসে ফেলে) – তুমি এতো সুন্দর করে কথা বল কি করে? আমি কথা বললেই তো সবাই বলে আমি নাকি মুখরা, কুচুটে, ঝগড়ুটে। 

 

সুবচনী – ও সব তাদের মনের ভুল ধারণা। আমি জানি আপনি কতটা কোমল প্রাণের স্বভাবের। 

 

ভানুমতী (শব্দ করে হেসে) – সেবিকা, তোমার কথায় সত্যিই আমি প্রীত হই। আজ থেকে আমি তোমার একটা নামকরণ করলাম। সুবচনী। 

 

সুবচনী – আমি ধন্য রানিমা। 

ভানুমতী – বেশ তুমি এখন যাও। আমি মাতা গান্ধারীর সঙ্গে একবার দেখা করতে যাবো। 

 

সুবচনী – যথা আজ্ঞা রানিমা। 

 

( সুবচনী প্রস্থানে উদ্যত হলে ভানুমতী আবার তাকে ডাক দেয় )

 

ভানুমতী – সুবচনী। 

 

( সুবচনী ঘুরে দাঁড়ায় )

 

ভানুমতী – মহারাজ দুর্যোধনের কোনও খবর জানো? আঁধার ঘনিয়ে এলো। আজ সারাদিন একবারের জন্যও অন্দরমহলে আসেন নি। 

 

সুবচনী – চিন্তা করবেন না রানিমা। মহারাজ ঠিক চলে আসবেন। হয়তো কোথাও খুব দরকারি কাজে আটকে পড়েছেন। 

 

ভানুমতী – তাই হবে হয়তো। আচ্ছা তুমি যাও। [বামদিক থেকে সুবচনীর প্রস্থান। ভানুমতী ডানদিক থেকে বের হয়ে যাবে। ]

 

[ মঞ্চে ফ্লাড লাইট জ্বলে উঠবে। নেপথ্যে সুরেলা কোনও বাদ্যযন্ত্র ১৫ সেকেন্ড মতো বাজবে। ]



দ্বিতীয় দৃশ্য

 

[ মঞ্চে রাখা ডানদিকের একটি চেয়ারে সুভদ্রা বসে আছে। দ্রৌপদী তাকে নৃত্য শিক্ষা দিচ্ছে। দু থেকে তিন মিনিট নাচ। তবলার সাথে ভারতনাট্যম। মঞ্চের মাঝখানের প্রবেশ দ্বার দিয়ে কুন্তীর প্রবেশ। কুন্তীকে দেখে দ্রৌপদী নাচ থামায়। সুভদ্রা উঠে দাঁড়ায়। তারপর দুজনে এগিয়ে এসে হাত জোড় করে বলে - ]

 

দ্রৌপদী ও সুভদ্রা – প্রণাম মাতা। 

 

কুন্তী ( দুজনের মাথাতেই হাত রেখে ) – আয়ুষ্মতী ভব। 

 

দ্রৌপদী – সুভদ্রাকে একটু নৃত্যের তালিম দিচ্ছিলাম। আপনার পুত্র তৃতীয় পাণ্ডব কতটা কলা অনুরাগী আপনি তো তা জানেন। 

 

কুন্তী – এইজন্য পাঞ্চালী তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকে আমার নিজের কন্যা ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। সুভদ্রাকে ছোট বোনের মতো ভেবে নিজের মতো করে গড়েপিঠে নাও। (সুভদ্রার দিকে ফিরে) সুভদ্রা তোমাকে একটা কথা বলি তোমাকে জীবনে একজন পুরুষেরই মন রক্ষা করলে চলবে। কিন্তু দৈবের দুর্বিপাকে পাঞ্চালীর জীবনে তা ঘটে নি। পাঞ্চালীকে আমার পাঁচ পুত্রেরই সমান মন যুগিয়ে চলতে হয়। 

 

সুভদ্রা – আপনি চিন্তা করবেন না মাতা। আমি জ্যেষ্ঠার কাছে এখানকার নিয়মরীতি সব শিখে নেওয়ার চেষ্টা করবো। 

 

[ কুন্তী সুভদ্রার থুঁতনি ধরে একটু আদর করে। চলে যেতে একটু এগিয়ে গিয়েও আবার দাঁড়িয়ে পড়ে। ]

 

দ্রৌপদী – কিছু বলবেন মাতা? 

কুন্তী – হ্যাঁ ( বলে এগিয়ে আসে। গলার স্বর একটু নামিয়ে বলে ) পাঞ্চালী তুমি সুভদ্রাকে সঙ্গে করে নিয়ে একবার দিদি গান্ধারী ও ভানুমতীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসো।]

 

দ্রৌপদী – মাতা গান্ধারী ঠিক আছে। কিন্তু ভানুমতী বড়ো মুখরা। 

 

[ কুন্তী হাত তুলে দ্রৌপদীকে থামিয়ে দেয় ]

 

কুন্তী – না না পাঞ্চালী। এমন কথা বোলো না। তুমি একজন নারীর জায়গা থেকে ভানুমতীর ভেতরটা দেখার চেষ্টা কোরো। আচ্ছা আমি আসি। [ এবার একটু খুশিখুশি গলায় বলে ] আমার ভীমের আর একবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আর তার এই ভোজন পর্বের সময় মা পাশে না থাকলে তার ঠিক খিদে মেটে না। 

 

[ তিনজনেই একটু হেসে ওঠে। মঞ্চের মাঝখানের দরজা দিয়ে কুন্তীর প্রস্থান। আর মঞ্চের ডানদিক থেকে দ্রৌপদী ও সুভদ্রার প্রস্থান। মঞ্চ অন্ধকার। ]

 

তৃতীয় দৃশ্য

 

[ নেপথ্যে প্রচুর জলের আওয়াজ শোনা যায়। মঞ্চের বামদিক থেকে সত্যবতীর প্রবেশ। আর ডানদিক থেকে গঙ্গার প্রবেশ। ] 

 

সত্যবতী – প্রণাম দেবী গঙ্গা। 

 

গঙ্গা – তুমি কে? ঠিক চিনতে পারলাম না তো। 

 

সত্যবতী – আমি আপনার সপত্নী সত্যবতী। আপনি মহারাজ শান্তনুকে ছেড়ে যাওয়ার পরে আমাকে উনি বিবাহ করেন। 

গঙ্গা – ও আচ্ছা। তুমিই সেই মৎস্যগন্ধা সত্যবতী। 

 

সত্যবতী – না দেবী। আমি এখন আর মৎস্যগন্ধা নই। পরাশর মুনির আশীর্বাদে আমি এখন পদ্মগন্ধা। যোজনগন্ধাও বলতে পারেন। এক যোজন দূর থেকে আমার সুবাস আপনি পাবেন। 

 

গঙ্গা – [খুব বিরক্ত হয়ে] দেখো সত্যবতী, তোমার শরীরের গন্ধ নিয়ে বিচার বিবেচনা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। সেই কৈলাস থেকে হাজার হাজার মাইল পাহাড় পর্বত, সমভূমি মালভূমি কত কিছুর উপর দিয়ে আমাকে নিয়ত বয়ে চলতে হয়। পথ ছাড়ো। আমাকে যেতে দাও। 

 

সত্যবতী – দেবী, আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি যদি আমার পুত্র বিচিত্রবীর্যকে একটিবার আশীর্বাদ করেন।

 

[ গঙ্গা ক্রোধে জ্বলে ওঠে ]

 

গঙ্গা – কিসের জন্য? আমার পুত্র দেবব্রতকে সিংহাসন বঞ্চিত করে তোমার ধীবর পিতা তোমার পুত্রকে সিংহাসনে বসানোর ব্যবস্থা কৌশলে করে নেয়। তখন আমার পুত্রের প্রতি তোমার মায়ের মমত্ব কোথায় ছিল? 

 

সত্যবতী – বিশ্বাস করুন দেবী আমি এ চাইনি। 

 

গঙ্গা – পথ ছাড়ো সত্যবতী। আমাকে যেতে দাও। নতুবা তোমাকে আমি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হব।

 

[ সত্যবতী সরে দাঁড়ায়। গঙ্গা মঞ্চের বামদিক থেকে বেরিয়ে যায়।]

 

সত্যবতী – [দুহাতে মুখ চেপে কান্নায় ডুকরে ওঠে।] হায় ঈশ্বর! 

 

[ মঞ্চের ডানদিক থেকে ভারতমাতার প্রবেশ]

 

ভারতমাতা – চিন্তা কোর না সত্যবতী। তুমি আমি কেউ কিচ্ছু নই। সব নিয়তি। প্রত্যেকটা যুগের নিজের নিজের করে আলাদা কিছু নিয়তি আছে। যা ঘটার তা ঘটবেই। 

 

সত্যবতী – [কান্না ভেজা গলায়] আপনি কে মাতা? আপনার কথায় বুকের ভেতরটা যেন একটু শান্ত হল। 

 

ভারতমাতা – আমি কেউ নই। আবার আমি তোমাদের সবার সাথেই আছি। ধরে নাও আমি দেশমাতা। কিম্বা এই পৃথিবী। মাটির উপরে যুগ যুগ ধরে কতই না অত্যাচার চলছে। তবুও তো আমি সহ্য করে আছি। এ বড়ো ভয়ঙ্কর সময়। সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াও সত্যবতী। দ্বাপর যুগের সমাপ্তি ঘনিয়ে এলো বলে। 

 

[ সত্যবতী খুব ভয় ভয় চোখে ভারতমাতার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই দৃশ্যে দুজনেই ফ্রিজ হয়ে যায়। মঞ্চের আলো নিভে যায়। ]

 

চতুর্থ দৃশ্য

 

[ কোনও রাগপ্রধান গানের সুর ভেসে আসছে। একটা চেয়ারে ভানুমতী বসে। সাইড থেকে একটা সিংগল লাইট ভানুমতীকে ফোকাস করে আছে। চেয়ারে বসে ভানুমতী একটু একটু করে দুলছে। তার শারীরিক আচরণেই বোঝা যাচ্ছে সে খুব অস্থির চিত্য। সুবচনীর প্রবেশ। তার পিছন পিছন দ্রৌপদী আর সুভদ্রার প্রবেশ। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাড লাইট জ্বলে ওঠে। ]

 

সুবচনী – রানিমা এনারা এসেছেন। 

 

[ ভানুমতী ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে। বসে বসেই দ্রৌপদীর আপাদমস্তক একবার দেখে। দ্রৌপদী এগিয়ে এসে বলে ]

 

দ্রৌপদী – ভানুমতী, এ হল আমাদের তৃতীয় পাণ্ডবের কনিষ্ঠতম পত্নী সুভদ্রা। 

 

[ হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায় ভানুমতী। খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলে ]

 

ভানুমতী – কনিষ্ঠতম বোলো না। কনিষ্ঠতম বোলো না। এরপরেও তোমাদের তৃতীয় পাণ্ডব কোনও রমণীর প্রেমে পড়ে যেতে পারেন। বিবাহ করে নিতে পারেন। আর স্বয়ং ভগবান যেখানে তার সখা তাহলে আর অসুবিধা কি। 

 

সুভদ্রা – না না এমনটা কখনই হবে না। আর কৃষ্ণ আমার দাদা। তিনি কখনই এমনটা হতে দেবেন না। 

 

ভানুমতী ( সুভদ্রার দিকে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে) – তুমি তো ভারি বাচাল মেয়ে। বড়োরা যখন কথা বলে তার মাঝে কথা বলতে নেই এটা বুঝি গোয়ালার ঘরে শিখে আসো নি? 

 

দ্রৌপদী ( চমকে উঠে ) – ভানুমতী! 

 

ভানুমতী ( হাত তুলে দ্রৌপদীকে থামতে বলে সুভদ্রার উদ্দেশ্যে বলে যায়) – শোন সুভদ্রা, এই যে তোমার জ্যেষ্ঠা দ্রৌপদী যে কিনা সর্বগুণে গুণান্বিত, রূপে তিলোত্তমা সেও ভেবেছিল অর্জুনের জীবনে সে ছাড়া আর কোনও নারী আসবে না। কিন্তু এসেছে। নাগকন্যা বিধবা উলুপি, রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা, তারপর তুমি। 

 

[ দ্রৌপদী আর সুভদ্রা পরস্পরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে। হঠাৎ ভানুমতী গম্ভীর গলায় ডাক দেয় ]

 

ভানুমতী – সুবচনী, সুভদ্রাকে মাতা গান্ধারীর কাছে নিয়ে যাও। দ্রৌপদীর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। 

 

[ ভানুমতী নিজের গলা থেকে একটা হার খুলে সুভদ্রাকে পরিয়ে দেয় ]

 

সুবচনী – আসুন রানি। 

 

[ সুবচনী সুভদ্রাকে নিয়ে মঞ্চের মাঝখানের দরজা দিয়ে ভেতরে চলে যায় ]

 

ভানুমতী ( গম্ভীর গলায় ) – বোসো দ্রৌপদী। 

 

[ উল্টোদিকের মুখোমুখি চেয়ারে আরাম করে ভানুমতী বসে। ]

 

ভানুমতী – তারপর বল দ্রৌপদী, তোমার এখন কোন স্বামীসঙ্গসুখ চলছে? 

 

দ্রৌপদী – ছিঃ ভানুমতী, তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না? এতো রুক্ষ্ম স্বভাবের কেন তুমি? 

 

ভানুমতী [ দপ করে জ্বলে ওঠার মতো উঠে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে বলে ] – তোমাদের জন্য। 

 

[ দ্রৌপদীও উঠে দাঁড়ায়। ]

 

দ্রৌপদী [ বিস্ময়ের সঙ্গে ] – আমাদের জন্য! 

 

ভানুমতী – হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের জন্য। যেদিন আমি দুর্যোধনের স্ত্রী হয়ে এই কুরুকুলে পা রেখেছি সেদিন থেকে আমি শুনে যাচ্ছি আমার স্বামী দুর্যোধন অত্যন্ত খারাপ একজন মানুষ। অথচ দেখো স্বয়ম্বর সভায় তুমি যখন মহারাজ কর্ণকে সূতপুত্র বলে বিবাহ করতে অস্বীকার করলে আমার স্বামী তাকে রাজ্যদান করে সেই অপমান থেকে বাঁচায়। আচ্ছা দ্রৌপদী তুমি নাকি সতী। পঞ্চসতীর এক সতী। তাহলে মনে মনে তুমি কর্ণকে কামনা করেছিলে কেন? যে কিনা তোমার ভাষায় ছিল সূতপুত্র কর্ণ। 

 

[ দ্রৌপদী দুহাতে কান চেপে ধরে। ]

 

দ্রৌপদী – দোহাই তোমার ভানুমতী। থামো। এসব বোলো না আর। 

 

ভানুমতী – উঁহু। আমিতো বলবোই দ্রৌপদী। অনেক অনেক বছর আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি। স্বয়ং মহাভারত রচয়িতা ব্যাসদেব তার লেখনীতে আমাকে নিয়ে খুব সামান্য কথা লিখেছেন। তাহলে আমার নিজের কথা আমাকেই তো বলতে হবে। আমি। আমরা। সব মেয়েদের আমাদের কথা আমাদেরকেই বলতে হবে। দুর্যোধন অসম্ভব খারাপ মানুষ, তাই না দ্রৌপদী? ইন্দ্রপ্রস্থে ময়দানব তোমাদের যে প্রাসাদ তৈরি করেছিল তা মহারাজ দেখতে গিয়ে ফটিককে জল ভেবে পড়ে গিয়েছিলেন। তুমি খিলখিল করে হেসে উঠে তাকে নিয়ে তামাসা করেছিলে। তোমার দুই বালক স্বামী নকুল আর সহদেবকে ডেকে দেখিয়েওছিলে। 

 

দ্রৌপদী – মার্জনা চাইছি তারজন্য। 

 

ভানুমতী – যুদ্ধের দামামা বেজে যাওয়ার পরে মার্জনা চাইছ দ্রুপদ কন্যা? মহাভারতের খলনায়ক আমার স্বামী দুর্যোধন কোনও পাশা খেলায় কিন্তু আমাকে বন্ধক রাখেন নি। কিন্তু তোমার জ্যেষ্ঠ স্বামী ধর্মের পুত্র ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির তোমাকে বন্ধক রেখেছিল। আর তোমার বাকি স্বামীরা, বীর যোদ্ধারা সবাই বসে বসে দেখেছিল। 

 

দ্রৌপদী [ কেঁদে উঠে ] – চুপ করো। চুপ করো ভানুমতী। আমি আর সেই লাঞ্ছনার কথা শুনতে চাই না। 

 

ভানুমতী – কি করবো বল দ্রৌপদী। আমিও তো ভুলতে পারছি না। সেদিনের সেই ঘটনার পরে দুর্যোধন তোমাকে ঊরু দেখিয়ে কোলে বসতে বলেছিল বলে ভীম প্রতিজ্ঞা করেছে দুর্যোধনের ঊরু ভঙ্গ করবে। যে কোনও দিন যে কোনও সময় আমি তার মৃত্যুসংবাদ পাবো। আমি যদি বলি তোমার মনে খল প্রবৃত্তি আছে বলে ঊরু দেখানোকে তুমি খারাপ ইঙ্গিত ভেবে নিয়েছ। কনিষ্ঠা ভগিনীকে বড়ো ভাই কোলে নিতে পারে। এ প্রথা আমাদের দেশে আছে। 

 

দ্রৌপদী – ভানুমতী, আমার শরীর খারাপ লাগছে। 

ভানুমতী – লাগুক। তবুও তোমাকে শুনতে হবে। তোমার সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় থাকবে। আর আমি বিধবা হবো যখন তখন সত্যটা তো আমি তোমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবোই দ্রৌপদী। শোন দ্রৌপদী তোমার পঞ্চ স্বামীর একজনও শুধু তোমাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। যুধিষ্ঠিরের অন্য স্ত্রীর নাম দেবিকা। ভীমের হিরিম্বা। আর অর্জুনের কথা … [ খিল খিল করে হাসি ] আর তোমার সেই বালক স্বামী দুজন। তাদেরও দ্বিতীয় স্ত্রী আছে। নকুলের করেণুমতী, সহদেবের বিজয়া। কিন্তু দুর্যোধনের এই ভানুমতী ভিন্ন অন্য কোনও স্ত্রী নেই। 

 

[ দ্রৌপদী দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে চেয়ারে বসে পড়ে। আর অন্য চেয়ারটি ধরে ভানুমতী অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ায়। তার মুখের ভেতর রাগ দুঃখ ঘৃণা সব কিছুর একটা মিশ্রিত অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। দুপাশের দিক থেকে দুজনের মুখের উপর ফ্লাড লাইট বন্ধ হয়ে গিয়ে দুরকম লাইট পড়ে। আলো দুটো একসময় আসতে আসতে কমতে কমতে বন্ধ হয়ে যায়। ]

 

পঞ্চম দৃশ্য

 

[ মঞ্চের ঠিক সামনে একটা বেবি লাইট থাকবে। সেই আলোটা জ্বলে উঠলে দেখা যাবে গান্ধারী একটা চেয়ারে বসে। মঞ্চের বামদিক থেকে ভানুমতী প্রবেশ করে। একটু কাছে আসতেই গান্ধারী বলে ওঠে … ]

 

গান্ধারী – এসো ভানুমতী। 

 

ভানুমতী – আপনি চোখে না দেখেও যে আসে তাকে চিনতে পারেন কি করে মাতা? 

 

গান্ধারী – গন্ধে। প্রত্যেকটা মানুষের গায়ের গন্ধ আলাদা আলাদা। কোনও মানুষের গায়ে ভালোবাসার গন্ধ বেশি। কারও গায়ে হিংসার। 

 

ভানুমতী – মাতা। আপনি কি আপনার পুত্র দুর্যোধনের গায়ে শুধু হিংসার গন্ধই পেতেন?

 

গান্ধারী [ একটু জোরে ] – ভানুমতী! এসব কি বলছ তুমি? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল? 

ভানুমতী – না মাতা। মাথা মনে হয় আগে খারাপ ছিল। কিন্তু এখন অনেক ঠিক হয়ে গেছে। সবাই যখন আমার স্বামীকে খারাপ বলতো আমার মনে সংশয় হতো। তিনি কি সত্যিই খারাপ? কিন্তু ক্রমশ মানুষটাকে দেখতে দেখতে এখন বুঝতে পেরেছি সমগ্র মহাভারতে তার মতো অসহায় মানুষ আর কেউ নেই। 

 

গান্ধারী – আজকের যুদ্ধ শেষ হতে আর কত দেরি পুত্রী? 

 

ভানুমতী – আর কিছুক্ষণের মধ্যে। আজ সেইদিন যেদিন বাহুবলী ভীম আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্রের ঊরু ভঙ্গ করবে। আপনার চোখ বস্ত্রে বাঁধা আছে। তাই আপনাকে মৃত পুত্রের মুখ দেখতে হবে না। কিন্তু আমাকে যে দেখতে হবে মাতা। আমার মৃত স্বামীর মুখ।  

 

গান্ধারী – উঃ। চুপ করো। চুপ করো ভানুমতী। এমন পাষাণ কথা বের হয় কি করে? 

 

ভানুমতী – মার্জনা করবেন মাতা। আজ আমি যদি আপনাকে বলি আপনার সন্তানদের ভিতরে সমস্ত রকম হিংসা, কপটতার মূলে আপনি? 

 

গান্ধারী [ উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে যায়। আবার বসে পড়ে। ] – তোমার মাথা দেখছি সত্যিই খারাপ হয়ে গেছে। 

 

ভানুমতী – আপনি রাজমহিষী হিসাবে কোনও সুখ পাননি। অন্ধ স্বামীর সেবা করেই সারাজীবন কেটে গেছে। তাই চেয়েছিলেন রাজমাতা হতে। কিন্তু মাতা কুন্তী আপনার আগে পুত্র প্রসব করায় সে বাসনাও জলাঞ্জলি যায়। তখন রাগে দুঃখে আক্রোশে আপনি গর্ভপাত ঘটাতে চান। আপনি কি জানতেন না মাতা সন্তান গর্ভে ধারণ করে এ ধরনের আচরণ মায়ের শোভা পায় না। তাই আপনার ভেতরকার সমস্ত খারাপ গুণ আপনিই আপনার সন্তানদের ভেতর চালিত করে দিয়েছেন। তখন …।

 

[ নেপথ্যে শোনা যাবে – মহারাজ দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ হয়ে গেছে – ৩-৪ বার ]

গান্ধারী – ঐ শোন ভানুমতী। কারা যেন কি বলছে। 

 

ভানুমতী – মাতা ওরা বলছে আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র আর নেই। ঐ ভীম তাকে হত্যা করেছে।  

 

গান্ধারী – না না এ হতে পারে না। [ উঠে দাঁড়িয়ে ] তুমি আমাকে যুদ্ধ প্রাঙ্গণে নিয়ে চলো। 

 

[ ভানুমতী এসে গান্ধারীকে ধরে ফেলে। মাঝের দরজা দিয়ে ঢুকে যায়। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়। ]

 

ষষ্ঠ দৃশ্য

 

[ সবাই কালো চাদর দিয়ে মাথা মুখ ঢেকে শুধু চোখদুটো বার করে মঞ্চের ডানদিক থেকে চারজন বাঁদিকে আর বাঁদিক থেকে চারজন ডানদিকে দুহাত তুলে চীৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটোছুটি করে। এই সময় পুরোটাই দুপাশ থেকে কাটলাইট ব্যবহার হবে। এদিক ওদিক তিনবার হবে। তারপর সকলে চারজন বাঁদিক দিয়ে চারজন ডানদিক দিয়ে চলে যাওয়ার পরে কাটলাইট বন্ধ হয়ে গিয়ে মঞ্চের মাঝখানে দুপাশ থেকে ফোকাস লাইট পড়বে। তাতে দেখা যাবে ভানুমতী পড়ে রয়েছে। এবং সে একবার তীব্র আর্তনাদ করে কেঁদে উঠবে। কান্না থেমে গেলে মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যাবে। আর নেপথ্যে মহাভারতের কথা অমৃত সমান গানটা দু-তিনবার হবে। ]    

               

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. অন্যরকম ভাবনার ফসল। নাটকীয়তা জমজমাট। খুব ভালো লাগলো। লেখিকাকে শ্রদ্ধা জানাই।

    উত্তরমুছুন