ছায়াছন্ন বাড়িটার কোনায় কোনায় লুকিয়ে আছে কান্না। গাছে গাছে বিষণ্ণতা
চুইয়ে নামছে। লেবুগাছের ঝোপে যেন কত কথা জমে আছে। জমে আছে অনেক কৈফিয়ত।
শ্রীতমা মাথা ঝাঁকিয়ে সব ঝেড়ে ফেলতে চাইল। ভাবনাগুলো উড়িয়ে দিতে চাইল
ঝিরঝিরে বাতাসে। কেন যেন মনে হল, কীসের কৈফিয়ত! কীসের বিষাদ! ও তো কোনদিনও
একাকীত্বকে ভয় পায় নি! বরং একা থাকাটা ওর কাছে ছিল মুক্তির উপায়, স্বেচ্ছাচারিতার
খোলা আকাশ।
তাহলে আজ কেন মনে হচ্ছে ভুল, সব ভুল।
“চাকরি পেয়েছিস। এবার একটা টু-রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নে। আমি আর তোর
বাবা তাহলে মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারব।” মা।
চমকে উঠল শ্রীতমা। ঠিক ঠিক। ও উড়িয়ে দিয়েছিল মার ইচ্ছেকে, “না না।
টু-রুমের ফ্ল্যাটের কত ভাড়া জান! আমি এখনকার মত ওয়ানরুমই নেব। পরে দেখব।”
দেখেছিল মা বাবার শুকনো মুখ। তখন ও লিভ ইনে ছিল আবেশের সঙ্গে। তার
দুবছরের মাথায় মার মৃত্যু। বাবা একটা কথাও কোনদিন বলেন নি। শুধু দুচোখে ছিল তীব্র
বিষাদ। শ্রীতমা বলেছিল, “কটা দিন সময় দাও বাবা। একটা টু- রুম ফ্ল্যাট ঠিক খুঁজে
নেব।”
বাবা গভীর চোখে তাকিয়েছিল, “বিয়ে করবি না?”
এবারও চমকে উঠেছিল। উত্তর দিতে পারেনি। কারণ তখন ওর ব্রেকআপ হয়ে
গেছে। ওর ফ্ল্যাটে তখন প্রায় রোজই বসত নেশার আসর। পাঁচ ছজন বন্ধু মিলে সে এক আদিম
উল্লাস।
বাবার মৃত্যুর খবর
দিয়েছিল পাশের বাড়ির বিভাসদা।
কত বছর যেন! হ্যাঁ, তাও
হয়ে গেল বারো বছর। এখন চল্লিশের শ্রীতমা যেন সত্তরের অভিজ্ঞতালব্ধ নারী। জীবনের
হিসেব নিকেশের ওপারে এক ব্রাত্য মানুষ। অনেকই দেখল এ জীবনে। কিন্তু বাবা মায়ের মত
এমন আত্মজন দ্বিতীয়টি পেল না। সৌন্দর্য যেতে যেতেও কিছু রয়ে গেছে। নেই জীবনের
উল্লাস। বড় একঘেয়ে! বড় নিষ্প্রাণ! বরং মা বাবার স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ির সমস্ত বিষাদ
যেন এ জীবনে সবচেয়ে বড় পাওনা।
0 মন্তব্যসমূহ