অন্য উদ্যান
রোলার স্কেটের রাস্তায়
খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে যায় এক
অশীতিপর বৃদ্ধা
তার নির্দ্বিধ টেনে-টেনে
চলার ভঙ্গিটি তিন মাত্রার
এক পা তারপর আর এক এবং শেষে
লাঠির শব্দ ঠক
চড়াই রাস্তার সম্পূর্ণটাই
এখন তার
আজ শুক্রবার, বাচ্চাগুলো
ইস্কুলে
এমন দুর্যোগপূর্ণ ভয়ঙ্কর
বৃষ্টি ঝরা দিন
নিত্যকার পায়চারি সমাপনে
রত এক প্রবীণা প্রাচীন
তার চারিপাশে ঝরে মরে যায়
গাছের পাতারা
বুড়ো-বিচ ন্যাড়া হয়, পাতা তার ঝরে পড়ে
কেঁপে
তবুও বাঁচার চেষ্টা এ
বৃদ্ধার প্রতি পদক্ষেপে।
ঝুলবারান্দা
ঝুলবারান্দার ধারে বসে থাকা
পায়রাটা
সামনে থেকে কত্তো ভারী, মোটাসোটা
পালকের তলায় ধুকপুক
কাছ থেকে দেখলে এরা অদ্ভুত
- বেখাপ্পা
মানুষের এলাকায় অল্পই
মানায়
আমাদের মাটির মাপকাঠিতে ঠিক
তাই
বাঁকা চোখে ওরা যতোই তাকাক না কেন
আমাদের সঙ্গে পরিচয় না
করলেও ওদের দিব্যি চলে যায়
শার্শির দিকে এক পা ফেলতে
না ফেলতেই,ও উড়ে পালায়।
যতই ছোটো হয়ে আসে ততই পরিচিত মনে হয় তাকে।
— ওই দূরে
প্রত্যেক প্রজাতিতে
প্রত্যেকের নিজস্ব স্থান
ঘটমান অতীত
কাগজের পৃষ্ঠায় হঠাৎ
দেখলাম তাকে
তার সুন্দর পরিচিত মুখ
ছায়াশরীর চকিতে অনুসরণ
করছে :
তার উদ্ভুট্টি পোশাক
ঢিলে-ঢালা
সিল্কের
অথবা খাঁটি উল দিয়ে বোনা
মেয়েটি পাগলের মতো
ভালোবাসত বুনটের কাজ, ভালোবাসা
স্বাধীনতা
অনেক প্রেমিক ছিল তার,
বাচ্চাও ছিল অনেক
যদিও অবিকল তারই মতো দেখতে
তবু এ ছবির পাদলিপি বলে না
:
শরীরের বঙ্কিম রেখা,
উচ্চতা, ঘন ভারী কেশগুচ্ছের সঠিক বৃত্তান্ত
সাদাসিধা, ভালো মনের মানুষ
সে
ছিল এতটাই সদাশয়
এবং সুন্দর
আমাদের সঙ্গে বারান্দায়
দেখা হত
গতকালও হয়েছে
আমরা কথা বলতাম প্রতিটি
সন্ধ্যায়
বিদায়ের
আগ পর্যন্ত
আজ কতকাল হল তাকে চিনি।
... তাকে চিনতাম
সৌন্দর্য
কিশোরীদের নতুন মুখের
বিস্ময়।
সবেমাত্র শৈশব ফুটে বার
হয়েছে, রং তাদের গোলাপ
অথবা লিলি – গাঢ় লাল আভায়
মূর্ত হয়ে উঠছে প্রতিটি অক্ষর
ঠোটের সুস্পষ্ট কারুশিল্প,
গালের বাঁকা রেখা ..
গ্রীষ্মের এক-বিকেলে মেট্রোরেলের
কামরায়।
কতকগুলো হতোদ্যম মানুষের
মুখের ভিড়ে তারা ঘামছিল,
বিকেল পাঁচটার যাত্রীদের
ক্লান্ত চোখ
উদ্ধত সৌন্দর্য, দূর্লভ, কী
একটা উদ্দেশ্যে
চাগাড় দিয়ে উঠছে – অন্ধের
হাতে গড়া
এক অবাক করা নশ্বর মাংসের
ফুল।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম
–অবিশ্বাসীর শেকড়ে
পূর্ণতার সাড়া জাগানোর
চেষ্টায়
অশাশ্বত অবয়ব হতো বা? ...
অলীক
আবেগ হেতু – সেইসব উপকথা
যেখান থেকে অমরত্ব
আবার সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে যখন
আমরা বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।
লুইজ অ্যারলাঁ (১৯২৫ ) কায়রোয় জন্ম। ছোটোবেলা কেটেছে বেলজিয়ামে। পড়াশুনো ব্রাসেলসে, ফ্লোরেন্স
বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৫ থেকে প্যারিসে বসবাস। ১৯৬৭ তে গালিমার’ থেকে প্রথম
কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ – ‘ল্য ভ্যারর্স কনত্রের’ ( উল্টোপিঠের
উৎরাই)। উল্লেখযোগ্য
কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে ‘কুলের দ্য ঔ এ! ক্রেইয়’ (১৯৮১) (সময় ও পেন্সিলের রং),
‘লামুর একজাকৎ’ (সঠিক প্রেম’) (১৯৯০)।
সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায়