শাদা
কাগজের মেয়ে
৬.
অথচ
বিশ্বাস করো, তোমার পাকাদ্যাখার দিন
চাঁদা
তুলে লুচি মাংস খেয়ে দিব্যি কাটিয়েছি ক্লাবে
ক্লাবের
বন্ধুরা কেউ কেউ গলা অবধি মদ খেয়ে
আমাকে
সান্ত্বনা দিয়েছিল--- এই বিরহের ভাগ
কে
নেবে তুমিই বলো! হে নাথ, তোমাকে প্রতিশোধে
যার
কাছে রেখে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি রাতে
তোমার
বিছানা থেকে তখন এমন বৃষ্টি পড়ে
যেন
মনে হয় আমি কেউ নই বাংলা কবিতার!
বিশ্বাস
করোনি বলে নিমন্ত্রণ পত্রে কবি লিখে
সম্মোধন
করে বলেছিলে, কেন যে কবিতা লেখ!
আমি
সানাইয়ের শব্দে সিঁদুরের ছন্দপতনের
ভোর
গুনে যাচ্ছি, তারা মুখ লাল করে বসে আছে
তুমি
নিঃস্ব --- এ কথা যে জেনে যাবে, তার বুকে জুঁই
ফুল
রেখে হাঁটু মুড়ে বসে গায়ত্রীর কথা বলো...
৭.
জোড়া
পাঁঠা বলি দিয়ে ফিরে আসছি বাড়ি, এই বুঝি
রাস্তা
আগলে ধরবে ন্যাংটা কালী, আমি আরও রক্ত দেব
প্রতিশ্রুতি
দিই, যারা কখনও রক্তের স্বাদ পায়নি
তারা
তো জানে না, জলে ডুবে মরা বাংলা কবিতার
খাতা
নিরুপায় হয়ে বাঁচতে চেয়েছিল, আমি তাকে
বাঁচাতে
পারিনি, তাই তাকে মাস-মাইনের হিসেব
লিখে
দিই, যেন তোমাকেও সন্তুষ্টির আরও কাছে
নিয়ে
গিয়ে বলি, আসছে শীতে পুরী ঘুরতে নিয়ে যাব
তোমাকে
উপমা করে কত সর্বনাশ যে করেছি
তার
থেকে মুক্তি চাইব--- ঐ শূন্যের আমি কেউ নই
বৈতরণী
পার করে এসে শাস্তি দাও উপমার
মেয়ে, আড়চোখে দ্যাখো,
কী সহজ সমুদ্রমন্থন!
যে
হাতে নৈবেদ্য সাজিয়েছি, সে হাতেই গলা কেটে
মারব
---এই শব্দবন্ধে কে বড় কবি না তলোয়ার?
৮.
সহজে
মেলে না, তবু সহজই তো তুমি! কে শুনেছে
তার
ব্রহ্মকমলের ফাঁকা ধ্বনি, ওগো বাঁশরিয়া
নিয়ে
চলো তার বাড়ি, নরম ধানের দুধ ঢেলে
তার
স্নান সারা দেখব, যেন তুমি ভিখারিনী সেজে
আমাকে
পরীক্ষা নিচ্ছ! আমার কাঠিন্য সুতো দিয়ে
বেঁধে
সাত পাকে যে ঘুরিয়ে নিচ্ছে,তাকে শাস্তি দাও
তার
প্রাণে প্রজাপতি ছেড়ে দিয়ে বলো, যে তোমাকে
লিখতে
চায়, তার গায়ে উড়ে গিয়ে বসো না কক্ষনো
আমি
প্রপিতামহের পোড়া অস্থি গঙ্গা থেকে তুলে
তোমার
শোবার ঘরে সাজিয়ে রেখেছি, তাই তুমি
সন্তানসম্ভবা!
আমি তার পিতা নই! অভিমানে
ভেঙে
ফেলি ছন্দ। বলো, তুমি শান্তি পেলে ঠাকুরদা?
সে যে
নিশুতির মায়া, জোছনার ঘাটে ধরা পড়ে
আবহমানকাল
বাংলা কবিতার সাজা ভোগ করছে
৯.
গোপন
যা কিছু পুঁতে রেখে হয়ে উঠি
শমীবৃক্ষ
এত যে
সে প্রাণ ভরে রেখে চলে গেল যুদ্ধজয়ে
কে
নেবে এখন তাকে! কাকে দেবে এ প্রাণের বোঝা!
ওগো
জরায়ুর ছিন্ন আলো, মাথা পেতে মেনে নাও
দেশভাগে
চেয়ে নাও, ক্ষুধার্ত শব্দের অপমান
যেন
তার চেয়ে বেশি সুখ আর কারো কাছে নেই
এমনই
তোমার সৈন্য, খোঁপা ভরে শব্দ নিয়ে গেল
আসলে
সে কোনোদিনই তো বাঁচতে শেখেনি কবিতায়
শুনুন
ধর্মাবতার, সব মিথ্যে, সব জালিয়াতি
আমাকে
ফাঁসানো হয় কবিতার গোপন শিকারে
আমাকে
বোঝানো হয় কোথাও ভাষার ধর্ম নেই
তাই
বালিকার নগ্ন দেহ খুঁড়ে কঙ্কাল চেয়েছি
কে
উদ্ধার করবে! কাকে দেব তার শিৎকারের ধ্বনি!
ছন্দ-দিনে
তার দেহ পুঁতে শমীবৃক্ষে জল ঢালি
১০.
নিয়তির
দিকে বাঁ-পা এগিয়ে যে ফিরে আসে, তাকে
আমি
লিখি, সে কেবল সহমর্মিতার আত্মা নয়
সেও যে
বাঁধনে সিদ্ধা--- এমনও তো নয়, পরিণীতা!
স্বভাবের
সাথে ঝগড়া করে যে শব্দের খিদে দাও
তার
কাছ থেকে বেঁচে ফিরব! এতটাও দুখি নই
আমি যে
নির্লিপ্ততার সাথে একা ঘর বাঁধতে চেয়ে
তোমার
পুরালৌকিক পথে পথে ঘুরে বেরিয়েছি
মনে
পড়ে, আমাদের শেষ কবে দ্যাখা হয়েছিল!
তুমি
যে স্বয়ং-সিদ্ধা নও--- লিখে দেব বুক ঠুকে
ফাঁস
করে দেব আমি তোমার সব দুর্নীতির দুঃখ
আমাকে
যে কাঁচা-হলুদের রং ভেবে গায়ে মেখে
অন্ধকারে
থাকো, কেউ জানে না কেমন তুমি আলো!
ভাবো, তুমি অসহায়!
অমরত্বে অমরত্বে মরো
অমিল
ছন্দের মতো আর আমরা কক্ষনও মিলব না
বন্ধুসুন্দর পাল
0 মন্তব্যসমূহ