কবি ও গদ্যকার যশোধরা রায়চৌধুরীর ‘খণ্ডিতার বিশ্বদর্শন’ বইটি
পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেল তাঁরই লেখা এই কবিতাটার কথা-
সীমন্তিনী মডেল হতে চেয়েছিল
যশোধরা রায়চৌধুরী
সীমন্তিনী মডেল হতে চেয়েছিল
সীমন্তিনী মডেল হতে পারেনি।
ফুলেশ্বর স্টেশনের গায়ে
সীমন্তিনীর চুল লাইনের দাঁতে আটকে আছে।
চুন্নি আটকে থাকা সীমন্তিনী ট্রেনে লাইনের পর লাইন
লিখেছিল কালো নোটবুকে
নোটবুকে টুকেছিল র্যাম্প, নক্ষত্র, উদ্ভাস।
নোটবুকটি পুলিশ খুঁজছে
পাওয়া গেছে মা সতী সেলুনে
সীমন্তিনীর চুল নখ ঠোঁট ভুরু
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে
লিলুয়ার সোদপুরে নৈহাটি জংশনে
সীমন্তিনী মডেল হতে পারেনি।
ড্রামবিট ফুটলাইট ডানাওয়ালা চুমু
সীমন্তিনী চেয়েছিল আপাতত আকাশের আড়ালে আকাশ
সীমন্তিনীর টুকরো কামিজের মধ্য দিয়ে ফুলেশ্বরে গজিয়েছে ঘাস
সীমন্তিনী এভাবেই মাতিনি আইডল
সীমন্তিনী এভাবেই মাতঙ্গিনী, সতী।
খণ্ডিতাদের জগৎ এরকমই। ‘কাতরা কাতরা মিলতি হ্যায়...’ খানিক
মাতঙ্গিনী, খানিক সতী। খানিক আইডল বা অনেকটা idle। গৃহবধূদের গালভরা নাম হোমমেকার হলেও
শুনতে হয় তাদের এখনও... ‘কী করো সারাদিন! বসেই তো থাকো idle! কিংবা অর্থনৈতিকভাবে
স্বাধীন জাঁহাবাজ মহিলাদের গল্পগুলোও বিদঘুটে একপেশে। ইন্দ্রা নুয়িকেও নিজের মায়ের
কাছ থেকে শুনতে হয়েছে একপেশে মন্তব্য। হয় তুমি ডানাকাটা পরি, নয়তো ডানা মোচড়ানো জখম
বাঘিনি। কিন্তু সমগ্র যাপন থেকে সে ছিন্ন। হয় সে ক্যাটরিনা কাইফ আর নয় সে কাত্যায়নী
মা। নিত্য পুজো আর শীলা কি জওয়ানি। সিনেমার পর্দা থেকে রাজনীতির ময়দান মেয়েদের নিয়ে
চর্চিত সংলাপ, ভাষণের বুলি, তৈরি মিম, ফেসবুক পোস্ট দেখলেই বোঝা যায়, ‘কত সহজে যুগ
যুগ ধরে চলা প্রাচীন অসম্মানের নানা ইঙ্গিতবহ আখ্যানে তাদের অভিহিত করে পরীক্ষা নেওয়া
হচ্ছে ধৈর্যের’। ‘ঘরে ঢুকিয়ে রেপ করে দেওয়া হবে মা বোনেদের’, তারকা প্রার্থীদের ‘নগরের
নটী’ বলে দেওয়ার মতো স্পর্ধা কিংবা মেকাপ-বিহীন বাম প্রার্থীদের কাজের মহিলাদের সঙ্গে
তুলনা করে এখনকার বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নারীর প্রতি রোজের টিপ্পনী ও টিটকিরির
যে ধারাবাহিকতা বিদ্যমান, তার সঙ্গে পুরুষের নির্ধারিত সংজ্ঞায় নারীকে ফেলার অদম্য
চেষ্টাই পরিলক্ষিত হয়। হোয়াটস অ্যাপে ঘুরে বেড়ানো পুরুষী রসিকতাগুলোর দিকে চোখ দিলেই
লেখিকার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। মেয়েরা বেশি কথা বলে, তাদের পুরুষের থেকে কম বুদ্ধি,
তারা ঝগড়ায় পারদর্শী, বরকে দিয়ে ‘মেয়েলি’ কাজ করায় যেমন বাসন মাজা, কাপড় কাচা... বউয়ের
কথায় ওঠবোস করা পুরুষকে নিয়ে মজাক ওড়ানো, এইসবই বিষয়বস্তু সেসব রসিকতার। এইসব স্থূল
সেক্সিট রসিকতাগুলো মেয়েরাও মেয়েদের পাঠায়। মজা পায়। রাজনীতি, সমাজ সংস্কার, চলচ্চিত্র,
সাহিত্য সবটাই একদিকে হেলে রয়েছে যুগের পর যুগ আর সেখানে নারীর প্রবেশ ও উত্থান বাঁকা
চোখে দেখাটাই যেন দস্তুর। কোনো ছেলে যেকোনো কাজ ঠিক করে না পারলেই তো তাকে বলা হয়-
‘চুড়ি, চোলি, চুন্নি পরে ঘরে বসে থাক।’
‘খণ্ডিতার বিশ্বদর্শন’ বইটির পাতায় পাতায় ঘটে যাওয়া ঘটনা, টাটকা
উদাহরণ, স্থান, কাল, পাত্র উল্লেখ করে লেখিকা তুলে ধরেছেন সমাজের চোখে নারীর অবস্থান।
এই বইয়ের ব্যাপ্তি তুলনা করার ক্ষমতা আমার নেই। চারটি অধ্যায়, উনত্রিশটি প্রবন্ধ। এক
একটি প্রবন্ধ পাঠককে উন্মুক্ত দরজার সামনে দাঁড় করাবে আর তাদের মনের কুঠুরিতে সোনালি
আলো ঢুকে পড়বে এবং চারিয়ে যাবে মেপে দেওয়া দিগন্তের গণ্ডি তছনছ করে। চলচ্চিত্র, হিন্দি
গানের লিরিক্স, পর্নোগ্রাফি, সাহিত্য, রান্নাঘর, বিশ্বায়ন, বাজার, সর্বত্র খণ্ডিতাদের
পরিচয় ও অবস্থান ঠিক কিরকম কিংবা তার বিবর্তনের রূপরেখাকে কী অনায়াসে লেখিকা বিস্তার
করেছেন! নারীর চোখ বড়ো যুক্তিনীষ্ঠ চোখ, হোক সে খণ্ডিতা। পুরুষের চোখ তো খণ্ডিত নয়
কেবল দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাবনায় নানান গোলমেলে প্রকোষ্ঠ... একই চোখে নারীকে তারা মাতৃত্ব
দিয়ে মহান, ঋতু চলাকালীন অশুচি, অধিকার করার নামে ধর্ষণ করে অসতীর তকমা দিয়ে আস্তাকুঁড়ে
ফেলে দেয় - এই তো খণ্ড খণ্ড জীবন আমাদের।
চমকে উঠতে হয় যখন পর্নোগ্রাফিকে লেখিকা ‘কম্পিটিশন সাক্সেস
রিভিউ’ শীর্ষক বহুল জনপ্রিয় পত্রিকাটির সঙ্গে তুলনা করেন। তখন আমার মনে হয় যশোধরা রায়চৌধুরী
কেবল কবি নন, দার্শনিক। এখানে কিছুটা অংশের উল্লেখ করতেই হয়,
“ পত্রিকাটি দাবি করে যে সে সত্যিকারের আই এ এস-দের ঘরের খবর,
মনের খবর, অন্তরালের খবর’ ‘exclusively’ পরিবেশন করেছে। এটা সচরাচর হীনমন্যতায় আক্রান্ত
আই এ এস প্রার্থীদের মনের একধরনের উঁকিঝুঁকি প্রবণতাকে (voyeurist) তোল্লাই দেয়।
-পত্রিকাটি পাঠকের মনে একধরনের stimulus –এর কাজ করে, যাতে
সে উত্তেজিত হয়, আই এ এস পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করতে প্রস্তুত হয়, এবং সর্বদা মনে মনে
ভাবে যে ‘আমাকে এই পরীক্ষাটা ভালো করে দিতে হবে, আমাকে আই এ এস পেতেই হবে’ ইত্যাদি,
এবং তার ফলবশত সে অনেকসময়ই সফল হয়- অর্থাৎ মোদ্দা কথা, পত্রিকাটি যথেষ্ট কার্যকরী।
আমার মনে হয়েছে, বহুবার যে এই পত্রিকাটি যে-কোনো স্ট্যান্ডার্ড
পর্নোগ্রাফির সঙ্গে তুলনীয়।
আমার মনে হয়েছে, বহুবার যে এই পত্রিকাটি আমাদের মানে পাঠককে,
একটা খাদের ধারে ঠেলে দিচ্ছে।
... কম্পিটিশন সাকসেস রিভিউ আই এ এস ব্যাপারটিকে যতটা গুরুত্ব
দেয় পর্নোগ্রাফি ততটাই গুরুত্ব দেয় নারীর শরীর ও রতিক্রিয়াকে।” ছিটকে গেছি এই ব্যাখ্যার
জায়গাটা পড়ে। পর্নোগ্রাফি এক অবাস্তব এবং অবৈজ্ঞানিক জগৎ তৈরি করে যা পড়ে কিংবা দেখে
মানুষ মনে করে ‘প্রতিটা নারীই মানুষখেকো, ম্যাডোনা-মার্কা, উত্তপ্ত, শরীর থেকে পদ্ম-গন্ধ
বিকীর্ণকারী, অসম্ভব আকর্ষক”। রাজশেখর বসু, সমরেশ বসু, বুদ্ধেদেব বসুর বহু আলোচিত লেখার
অংশ এবং নারী শরীরের যে লার্জার আবেদন নির্মাণ করার প্রবণতা তা হল ‘অবলোকনে’র আধার।
এই অবলোকন অবাস্তব হলেও নির্মাণে ও বহুল ব্যবহারে ‘সত্যি’ হয়ে উঠেছে। পুরুষ কবির চোখে
নারীর নির্মাণ দশকে দশকে বদেলেছে। যেমন বদলেছে বিজ্ঞাপনের ভাষা, পণ্যায়নের চেহারা কিন্তু
মূল প্রতিপাদ্য ওই একই, ‘অবলোকন’। মহিলার ব্যক্তিপরিচয়ের থেকেও জোরদার হল তার শরীর,
মুখ, চামড়া। ফরসা হওয়ার ক্রীম, শ্যাম্পু, সাবান, পাওডার, কাজল, লিপ্সটিকের বিজ্ঞাপনে
শুধুই পুরুষের চোখে নারীর রূপ-সৌন্দর্যের যে সংজ্ঞা তাই সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা। যুগের
পর যুগ অতিবাহিত। ফরসা হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, মোহিনী রূপই তোমার সর্বস্ব, পহেলা দর্শনধারী...
এই বার্তাই বারেবারে বজ্র নির্ঘোষের মতো ফেটে পড়েছে বিজ্ঞাপনে।
নারীর শরীর তো ভোগ দখলেরই জিনিস। ক্ষমতা প্রদর্শনের বীজতলা।
‘রূপ তেরে মস্তানা’র মতো আপাত নিরীহ গানেও সেই বীজ লুকিয়ে, প্রছন্ন হুমকি, প্রেমিকের
ভুল টুল হয়ে যেতেই পারে এই মস্তানা রূপের আঁচে। লেখিকা মনে করিয়ে দেন ভারতবর্ষে নরম
কিংবা গরম প্রেমের গান মানেই শুধুই নারী শরীরের বর্ণনা। এই হল পুংকাঠামো আর এসব জনচেতনের
রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অ্যাসিড আক্রমণ, ধর্ষণ হল নারীকে তার ইচ্ছামতো ভোগদখল না করতে পারার
প্রতিশোধ নেওয়ার পন্থা। ‘গোটা পৃথিবীর সব প্রান্তে, সব যুগে সব সময়ে মেয়েদের শরীরের
ভেতর দিয়ে এফোঁড় ওঁফোড় হয়ে গেছে সব যুদ্ধ।” পাশা খেলায় বাজি সে, পরপুরুষ দ্বারা অপহরণের
মাশুল দিতে হয় তাকেই...অগ্নিপরীক্ষার দ্বারা নির্ধারিত হয় তার শুচিতা। পুরুষের চাওয়াটাই
সব... এই তো শেখানো হয় ভারতীয় সংস্কৃতিতেও। নারীও ব্যস্ত হয়ে থাকে আজীবন রূপ, যৌবনকে
অক্ষত রাখার প্রক্রিয়ায়, পরিশ্রমে।
কয়েক
যুগ আগেও বিবাহে উপহার দেওয়া হত সেইসব বই (‘শুভদৃষ্টি’, ‘নবীন সাথী’) যা পড়লে বিয়ের
পর তরলমতি, অল্পবুদ্ধি মেয়েরা গৃহকর্মে নিপুণা হয়ে উঠতে পারবে, পতির সেবায় সতীর পুণ্য
এই আপ্তবাক্যে বিশ্বাস রেখে মন দিয়ে সংসারধর্ম নির্বাহ করবে। এই বইগুলির মূল প্রতিপাদ্য
নীতিশিক্ষা হলেও জাতপাত (ব্রাহ্মণত্বের বহুল উল্লেখ), দরিদ্র-ধনী, যৌথ পরিবারকে ধরে
রাখার দায়ভার ও তাগিদ নারীরই উপর বর্তায় ইত্যাদি বিষয়ের ওপরই সমূহ গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে,
আবার পাঠকের মনোরঞ্জন যাতে ব্যাহত না হয় তার খেয়াল রেখে গল্পে বোনা হত পশ্চিমি ঘরানার
প্রেম। এরকম নির্দিষ্ট বা অন্যান্য বই উপহার দেওয়ার রেওয়াজ আর নেই, কিন্তু লেখিকা চান
‘শুভদৃষ্টি’ কিংবা ‘ভারত প্রেম কথা’ অবধি যে যুগ তার পর্যালোচনা হোক ঐতিহাসিকের প্রামাণ্য
যুক্তিসঙ্গতার নিরিখে।
কী ভীষণ ব্যক্তি পরিসরের গল্পগুলো সার্বিক রূপ নেয় যশোধরা রায়চৌধুরীর
লেখায় তা কি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব? এক একটা পর্ব পড়ছি আর না নড়েচড়ে চুপ করে থাকছি
কিচ্ছুক্ষণ। বিশ্বরূপ দর্শনকালে এরকমই হওয়ার কথা। কর্মরতা মেয়েরা ‘সামাল সামাল সামাল
সামাল ভাই রে’ জপতে জপতে একবুক অপরাধবোধ নিয়ে, এক মাথা চাপ নিয়ে হোঁচট খেতে খেতে লড়ে
যাচ্ছে ওই ‘মহানগর’ ছবির মাধবীর মতো। অফিস থেকে ফিরতে রাত হলে, ট্যুরে গেলে, অন্য শহরে
বদলি হয়ে গেলে স্বামী, সন্তান পরিবারের কাছে না থাকার অপরাধবোধ ছিন্ন করে তাদের প্রতিনিয়ত।
নিজের অভিজ্ঞতা যশোধরাকে শিখিয়েছে একদল পুরুষ কর্মীর বস হয়ে থাকাও যেন এক ‘অস্বাভাবিক’
ঘটনা। হংস মধ্যে বক হয়ে থাকার কারণেই অজান্তেই এক সচেতনতা লেখিকার মাথার মধ্যে তৈরি
করছে পরিস্থিতিগত চাপ। কত ঘটনা, অভিজ্ঞতা, অনুভব লেখিকা নিয়ে এসেছেন যা পড়তে পড়তে মনে
হবে এ তো খুব চেনা। নন্দিনী কাপুর, নলিনী সিং, অবনী তলপাড়ের ঘটনাগুলো জলন্ত প্রতিচ্ছবি
আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর নৈমিত্তিক জীবনের। এই বইয়ে তো ‘মি টু’, ‘ফ্রকে রক্তের
দাগ’, যৌন হেনস্থার নানা প্রসঙ্গ এসেছে। নিজের কথা লেখিকা যতবার বলেছেন মনে হয়েছে এ
যেন আমাদের নিজেদের গল্প। কান্না পেয়েছে, আনন্দ হয়েছে। প্রিয় লেখিকার সঙ্গে একাত্ম
হয়ে গেলে পাঠকের মন উদ্বেল হবেই।আমিও অংশ নিতে পারিনি কোনোদিন সেক্সিট জোকসে, পিরিয়ডস
নিয়ে ছেলেদের কিংবা মেয়েদের অশ্লীল ঠাট্টায়। ‘এগারো নয় তেরো’ শীর্ষক পর্বটি পড়ে চোখে
জল এসেছে। প্রথম পিরিয়ডস, অস্বস্তি, ভয়, ন্যাকড়া, অশুদ্ধ করে দেওয়ার অবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া,
তুমুল পেটে ব্যথা, ঢাকা চাপা দিয়ে স্বাভাবিক শারীরিক নিয়মকে অসহনীয় করে তোলার ট্যাবুকে
নোংরা পুঁটুলির মতো বয়ে নিয়ে চলি আমরা আর... বলতে নেই, জানান দিতে নেই, শেয়ার করতে
নেই... হাজার শেকলের নামান্তর ওই রক্তধারা যা প্রতি মাসে প্রত্যেক মেয়ের বুকের থেকেও
ঝরে। তারপর মধ্যবয়স। সেও কি নিরুপদ্রবে আসে? দ্বিধাহীন উচ্চারণে লেখিকা ব্যক্ত করেছেন
...
“আসলে মধ্যবয়স সত্য, আসলে হরিনাম সত্য,
আসলে সত্য মাধবরঙ্গ
সত্য জীবনে কিচ্ছুটি না থাকা
জীবনের সবচেয়ে মধ্যখানটায় ফোঁপরা হয়ে যাওয়া সত্য...
সত্য তোমার ও আমার সমস্ত মনোভার
আমাদের সমস্ত জটিল ও কুটিল অস্থির সময়
আসলে সত্য আমাদের সব রকমের হুংকার ও ইগোট্রিপ ...”
অননুকরণীয় ভঙ্গিতে, নদীর মতো বয়ে চলে তাঁর গদ্য। আমরা স্নাত
হই। আঁকড়ে থাকি। যেন এইরকম এক বন্ধুর খোঁজেই তো ছিলাম আমরা। আমাদের রান্নাঘর, আমাদের
ফ্যাশন, আমাদের রোজের বিবর্তন এমন যত্নে খুঁটিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি যে প্রতিটি পর্ব
নিয়ে একটি করে প্রতিক্রিয়া লেখা যায়। প্রচ্ছদটিও ভালো লেগেছে আমার। ভারি মানানসই। কেবল
ত্রুটি বলতে একটিই চোখে পড়েছে তা হল, দু একটি প্রবন্ধে তথ্যের বা ঘটনার পুনরাবৃত্তি
ঘটেছে। নিজেদের, মা, দিদিমাদের অভিজ্ঞতা, তাদের মুখ থেকে শোনা গল্পগুলো ঘিরে ধরে আমাকে,
মাকেও। মা এই বই উপুড় হয়ে পড়ছিল সারা দুপুর ধরে, আমাকে দেখেই বলে উঠল কত কত জায়গায়
মায়ের মনে হয়েছে এসব লেখায় মাও আছে... খণ্ড খণ্ড হয়ে থাকা আমাদের জুড়ে দেবে এই বই।
-------------
খণ্ডিতার বিশ্বদর্শন
প্রকাশক- সৃষ্টিসুখ
মূল্য- ২৯৯টাকা
2 মন্তব্যসমূহ
অতন্ত্য মেধাবী বিশ্লেষণ। উপলব্ধিকে এতো স্পষ্ট ও সুন্দর লিখেছো, মনে হচ্ছিল এরপর বইটা না পড়লেই নয়!
উত্তরমুছুনঅপূর্ব বিশ্লেষণ। বইটি 'টু-বাই' তালিকায় ছিলো, তোমার বিশ্লেষণ পড়ে এখনই কিনতে হবে মনে হচ্ছে।
উত্তরমুছুন