সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

কৌশিক সেন:গুচ্ছ কবিতা

 


গুচ্ছ কবিতা


বাতিল কবিতা থেকে...

 

 অবশেষে ধুলো ঝেড়ে রাখি পুরোনো কবিতার খাতার।  ধুলো ওড়ে সূর্যালোকে।  রামধনু রঙের দানারা উড়ে যায় আধভেজানো দরোজার দিকে, অস্পষ্ট হয়ে আসে অক্ষরের গোঙানি

 

রূপোলী আস্তিনে ঢেকে আছে সোঁদা গন্ধ।  আশেপাশে স্তনভাঙা পরী, উড়ে যাবে যাবে করে উড়ে যায়নি কোনোদিন।  অক্ষরের সুবাসে বুঁদ হয়ে পড়ে থেকেছে বহুকাল। 

 

কুহকিনী বুঝি!  ঠুনকো ফুলদানীতে রেখে গিয়েছিল গন্ধবকুলের ছায়া,  পোকায় কেটে দেওয়া গতরে কিলবিল অক্ষরের কারিকুরি।  নদী বুঝি!  নইলে উপত্যকায় এমন নির্মম সভ্যতা কেন!

 

বহুদিন হয়ে গেল, পৌষপার্বণে শঙ্খ বাজেনা আর।  দোয়াতে মন্বন্তর এলে কলম ডুবিয়ে রেখেছি ধ্যানের নিসর্গে।  অশ্রুমোচনে শান্তি নেই যেন!  মেঘের আড়ালে কুশপুতুল দহন করেছি তবে!

 

নিক্তিতে মেপে রাখা স্মৃতি।  যাচাই করে দেখেছি, নতুন বিবরে আলো পরে কিনা!  পিপাসার উর্ধে যদি কোনো আকুতি থাকে, তাই দাও নাহয়!  ধুলোর ভিতর থেকে বেছে বেছে তুলে রাখি বেগুনী প্রজাপতিদের!

 

আবার লিখবো তবে।  খেরোখাতায় কলম ঘষে ঘষে প্রস্তুত করবো নির্ভার লেখনী।  কোরকে পাপড়ি মেলবে রক্তগোলাপ।  কোকনদে ভরিয়ে তুলতে হবে পরিত্যক্ত উদ্ধারণপুরের ঘাট

 

ধমনীতে সামান্যই রক্ত আর।  তাই ভরে নেব দোয়াতে।  দাহ্যতায় ভরে উঠবে বাদামী পাতারা।  দরজাটা পুরোপুরি খুলে দিই বরং।  ধুলিকণা মিলিয়ে যাক সাতটি তারার সুরধ্বনিতে







হোলটাইমার কবি

 

ভিতরে ভিতরে এক ঘুরঘুট্টে লোক ঘুরে বেড়ায়

আয়তাকার ঘরের ভিতর আতঙ্ক

আয়তাকার ঘরের ভিতর কান্না

বেরালের মিউমিউ, মার্বেল চোখ

কালো, নাকি সাদা

হুলো, নাকি মেনী!

 

ভিতরে ভিতরে একটা জলের কল খোলা

ভিজে যায় হলঘর

 

ঘুরঘুট্টে লোকটা দিনরাত মুড়ি খোলা রাখে

জলকাদায় মিশে যায় বেড়ালের শীৎকার!

 

উত্তর কবিতা

 

পৃথিবীর সমস্ত কবিতা শেষ হয়ে গেলে

এঁটো থালায় পড়ে থাকে দুএক দানা অন্ন

খুঁটে নিও,

ক্ষুন্নিবৃত্তির দুএক দানা মন্বন্তর,

অহল্যার দেশ থেকে বয়ে আনা

বাজপাখির স্বপ্ন

খুঁটে নিও,

হেলায় হারানো দুএক দানা প্রত্নধন,

আতসকাচে পড়ে নিও

মৌর্যসাম্রাজ্যের পতনের কারণ

 

দেখবে, একদিন কোনো এক চিরহেমন্তের দেশে

কবিতা নয়, অন্য কিছু লেখা হবে,

অলৌকিকতর...

 

অন্তর্বাসিনী

 

তোকে রেখেছি।  চাপচাপ রক্তের আঙিনায়

সাধ করে সিলিংফ্যান থেকে ঝুলে পরেছি

গোখরোর ফাঁসে।  বলেছি, এই আমার শাপমুক্তি!

 

অমৃতের কলস উল্টে গেছে বুঝি!  সুবাসে

চেটে নিই গন্ধরাজ অভিমান, গোপনে

গভীর অন্ধকারে।  তোর পাশাপাশি দাঁড়াবো বলে

 

বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছি বুঝি।  রাজার ঘর

থেকে চুরি করে এনেছি রত্নহার।  লণ্ঠনের 

ভাঙাকাচে লিখে রেখেছি দুর্বোধ্য কবিতা

 

জানি, একদিন পড়বেই।  জ্বলে যাওয়া অক্ষর

বিছিয়ে দিবি তোর গোলাপি জিভে।  পর্দার 

আড়ালে দাঁড়িয়ে অট্টহাস্যে ফেটে পড়বি তুই!



বারোয়ারী

 

চাঁদা তোলা শেষ। চাঁদের আলোয় দেখি

মোহনার সম্ভোগসেতু।  কামুক অট্টালিকার চোখ,

ফাঁদ পাতে কালিদহ ঘ্রাণ

 

কেঁদে ওঠে বেড়ালও।  মনুষ্যেতর এ জীবন,

দ্বাদশী পৃথিবীর ঘুম ভাঙতে ভাঙতে শুনি

পরমান্নে ভরে গেছে স্বপ্নাকাশ

 

ফাঁক করো পাদুটি। দীপ জ্বেলে দিই কুলুঙ্গিতে

মোহনায় কোনো শোক নেই, দ্বিধা নেই

অমৃতবেদীতে নেই কোনো রশ্মিকিরণ!

 

ফুটে আছে ফুল।  আয়ু ফুরিয়ে গেলে

গুঞ্জাফুলে গেঁথে রেখো আলো। ওষ্ঠাধারে

কম্পন তীব্র হওয়া চায়, সাধিকাকে বলে রেখেছি

 

 

 

 


কৌশিক সেন


 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ