বিকার
দুই বছর বহুমারীর
আতঙ্কে প্রায় গৃহবন্দী হয়ে আছেন অনেকেই। তার মধ্যে অনেকেই অধৈর্য হয়ে আশ্রয় খুঁজতে
আসছেন সোসাল মিডিয়ায়।রুচিবোধ অনুসারে খুঁজে নিচ্ছেন বন্ধু বান্ধব। কেউ বা ছোটোবেলার
পরিচিত মুখগুলোর সন্ধান পেয়ে মেতে উঠছেন এক অনাবিল আনন্দে। চয়নবাবু বছর কয়েক আগে অবসর
নিয়েছেন সরকারি চাকরি থেকে। সোসাল মিডিয়ার নেশাটা একদা ভীষণ হয়ে কেটেও গেছে। কিন্তু
রিটায়ারমেন্টের পরে তিনি একটু অলস আর ঘরকুনো হয়ে গেছেন। যাও বা দোকান বাজার ছাড়া একটু
আধটু চেনা পরিচিতদের বাড়িতে যাওয়ার, আড্ডা দেওয়ার অভ্যাস ছিল, তাও গেল এই বিশেষ পরিস্থিতিতে
একদমই ওলোট পালোট হয়ে। আবারও ডুব দিলেন নেটের বিচিত্র জগতে। বয়সটা ঈষৎ বিপজ্জনক, পৌরুষের
অক্ষমতায় আগেই বেশ অকালে আক্রান্ত হয়েছিলেন চয়নবাবু এখন সেই অকালে চলে যাওয়া চাহিদা
তার মনে ফিরে আসতে লাগল। সেই কোন কালে প্রায় একযুগের ছোটো মনীষার সঙ্গে সম্বন্ধ করে
বিয়ে। মেয়ে দিব্যি বড়ো হয়ে গেছে। নিজের বৃত্তে ব্যস্ত। মনীষাও কর্মরতা এবং এখনও বেশ
আকর্ষনীয়া। কিন্তু চয়নবাবুর দাম্পত্য জীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে দীর্ঘদিন। বারবার অপমানিত
হয়ে মনীষা আর তাকে মোটেই প্রত্যাশা করেন না। নিজের কাজকর্ম আর সন্তানকে নিয়েই তার সময়
কাটে।কিন্তু স্বামীর স্বভাবের আচমকা কিছু পরিবর্তন চোখ এড়ায় নি মনীষার। একটা বয়সে কন্যা
সন্তান মায়ের খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। ইতস্তত করে মনীষা একদিন মেয়ের কাছে মন খুললেন।
দেখা গেল ঈশা দিব্যি লক্ষ্য করেছে সবটাই। মাঝে মধ্যে বাবা মায়ের ফোন নিয়ে কাজ করে ও।
পড়াশোনা এবং নিজের নাচের কিছু কিছু ভিডিও শেয়ার করার জন্য একদিন বাবার মোবাইলে কাজ
করতে গিয়ে কিছু কুৎসিত নোংরা চ্যাট চোখে পড়েছিল ওর। মায়ের জন্য অসম্ভব মনখারাপ তো ছিলই
আজ মায়ের সঙ্গে কথা বলে ওর খুব ইচ্ছে করছে এমন বিকৃত আচরণের শাস্তি দিতে। মনীষা মেয়েকে
বোঝান এটা বিগতযৌবন পুরুষের এক রকমের মানসিক অসুস্থতা। কিন্তু তার বোঝানো, রাগ,অভিযোগ,
পরামর্শ কোনোটাই গুরুত্ব পায় না চয়নবাবুর কাছে। তিনি এখন সদর্পে এই জঘন্য কাজ করে চলেন। কখনো
সকালে, কখনও ভর দুপুরে, কখনো বা মধ্যরাতে। মাঝে মাঝে স্ত্রী আর সন্তানের সঙ্গে কথাকাটাকাটি,অশান্তি
চলতে থাকে। স্ত্রী বারংবার ইন্টারনেট ক্রাইমের ব্যাপারে সতর্ক করা সত্ত্বেও নিজেকে
এই নিষিদ্ধ আনন্দ থেকে নিবৃত্ত করতে পারেন না চয়নবাবু। দেশ বিদেশের একাধিক কম বয়সী মেয়ের(?)
সঙ্গে সেক্স চ্যাট চলে তাঁর। বাড়ির কেউ আপত্তি তুললে তাদেরকে অনায়াসে তিনি চোর বলে
দেন,চুপিচুপি তার চ্যাট দেখার জন্য।মনীষার রীতিমতো পড়াশোনার অভ্যাস আছে। আর মেয়ে তো
এখনকার যুগোপযোগী। সে জানে অনেক বিকৃতমনস্ক পুরুষও ছদ্ম প্রোফাইলের আড়ালে বয়স্কদের
নিয়ে এমন খেলা চালায়। লজ্জায়, অপমানে উত্যক্ত হয়ে মনীষার চেখের নীচে কালিমা গভীর হয়,
তার অনেক বড়ো বন্ধুবৃত্ত। যদি পরিচিত কেউ জানতে পারে একবার! কী জঘন্য ব্যাপার হবে তাহলে!
সবসময়ে হাসিখুশি মায়ের শুকনো মুখ দেখতে দেখতে মাথায় খুন চেপে যায় ঈশার। অনেক দ্বিধা
কাটিয়ে একটা ফেক প্রোফাইল খোলে ঈশা। বেছে নেয় অচেনা একজনের গা দেখানো ছবি প্রোফাইল
পিকচার হিসেবে। অজস্র অজানা বদরুচির মানুষ হাঁ হাঁ করে বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠায়। ঈশা
কিন্তু অপেক্ষা করে থাকে। অবশেষে দুদিনের মাথায় রিকোয়েস্ট এল চয়নবাবুর কাছ থেকে। দাঁতে
দাঁত চেপে বাবার ন্যাকাবোকা কমেন্ট সহ্য করে ঈশা।তারপর চয়নবাবু সোজা সেক্স চ্যাটে চলে
যেতেই। ঈশা ইনবক্সে নিজের পরিচয় দিয়ে দেয়। আর বাবার এই যৌনবিকৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
জানায়। এতদিনে চয়নবাবুর বিকৃত মনে একটা ধাক্কা এসে লাগল সপাটে। সত্যি তো মেয়ের চেয়েও
কম বয়সীদের সঙ্গে এ কী করেছেন তিনি এতদিন ধরে! লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় তার। স্ত্রী
আর কন্যার চোখে কত নেমে গেছেন তিনি। হ্যাঁ প্রথম যৌবনে অনেককিছুই পান নি তিনি চাহিদা
মতো। বিয়েও করেছেন শেষ যৌবনে। তবে কী মনীষাই ঠিক ধরেছেন এটা তার মনের রোগ? মা আর মেয়ে
এখন তার দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে নিজেদের মতো আনন্দে আছে। নিজেকে আজ খুব একা লাগছে
চয়নবাবুর। তবে না,জীবন শেষ করে ওদের উপর আর অবিচার তিনি করবেন না। বরং ফিরে আসবেন সব
শক্তি সংহত করে। আসবেনই।
0 মন্তব্যসমূহ