গুচ্ছ কবিতা
শমন
১
তারপর রাত্রি হয়
বেবাক রক্তাক্ত হয় লুকিয়ে-রাখা
তোমার ব্যক্তিগত কণ্ঠ
তখন শরীর ঝেড়েঝুড়ে তুমি বের করে আনো
অসংখ্য জেব্রা-- সেই কবেকার সাদাকালো
ছবির ভেতর ঢুকে পড়ে তারা
কোনও এক অজানা ভয়ে
আরও বেশি দলবদ্ধ হয়
নদী পেরোতে পেরোতে তাদের বয়স বাড়ে
তোমার চোয়াল ক্রমশ দীর্ঘ হয়
দাঁত হয়ে ওঠে ধারালো আর অসমান
জলের ভেতর থেকে হঠাৎ একদিন জেগে ওঠে
তোমার উন্মুক্ত মুখ, অশ্রু গড়ায়
সারা জন্ম ধরে নদী পেরোতে পেরোতে
প্রতিটি জেব্রা ঢুকে পড়ে
তোমার উন্মুক্ত মুখের ভেতর
তারপর রাত্রি হয়
বেবাক রক্তাক্ত হয় লুকিয়ে-রাখা
তোমার ব্যক্তিগত কন্ঠ
তখন শরীর ঝেড়েঝুড়ে তুমি বের করে আনো
অসংখ্য জেব্রা...
২
কীভাবে ঘুমোবো আমি। দেয়াল না, দেয়ালের মতো কেউ চোখ উপড়িয়ে নিয়ে
যায় চিরহরিতের বনে। কীভাবে ঘুমোবো আমি
আঠার নরম ছায়া, সাবলীল, দেহের প্রবীণ খুলে জোড়া দেয়
কীভাবে ঘুমোবো। ওই চোখ ফেটে কাচের বাগান শুরু হল, হল খুব
ট্রেনের অধিক
ছেড়ে যাওয়া--খুঁটিনাটি, বেতের চেয়ার থেকে
রোদ এসে এইখানে বেলা ফেলে গেছে
কীভাবে ঘুমোবো আমি--
দেয়াল না, দেয়ালের মতো কেউ শরীরের চারপাশে গেঁথে দেয় জলের বলয়
৩
এত যে নতুন হল, এত যে পুরোনো সাকিন
দোয়াতে রাত্রি রেখে উড়ে যায় সাদা পাতা
যেনা-বা কণ্ঠে ভ'রে ঢেউ, একক দামাল তুমি
হাঙর ধরতে গেছ বহুদিন
অথচ নিখোঁজ দ্বীপ জল থেকে উঠে
পরেছে পশুর লোম, হাতেপায়ে ধারালো নখর
প্রতিশোধ নেবে বলে বাতাসে বাতাসে শুধু
তোমারই গন্ধ খুঁজে যায়
৪
জটিল স্নানের কাঁটা, বিঁধেছ দারুণ
অনেক শরীর হল। হল তার মেঘলা বয়স
বেপথু গমনপথে আমাদের নাভি পুঁতে
এসেছি সমাধিদেশে-- সাধনা জানি না তবু
দুপায়ের ফাঁক দিয়ে ঝরেছে যে মানবজীবন
তাকেই আঁজলে নিয়ে দেখেছি নিজের মুখ
ছলছল সাঁঝের শোণিত
জটিল স্নানের কাঁটা, তোমাকেই প্রেম বলে মানি
দু'পায়ে বিঁধেছ তাই, নিদারুণ। টুকরো আষাঢ় খেয়ে সজলতা এল, এল
খুব দেহের পচন
অনেক অনেকদিন পর এ-পথেই শোক যাবে
যাবে তার যাবতীয় ধ্বনি
তরল স্নানের কঁটা গড়াবে অনেদূর, যতদূর ছায়া ফেলে দেহপসারিণী
৫
আমাদের টেবিল জুড়ে পিঁপড়ের সাম্রাজ্য
বিপরীত দুই দিকে বসে আমরা দেখি
একাধিক দেশ তৈরি হচ্ছে আমাদের মাঝে
খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ আর প্রেম তৈরি হচ্ছে
খাবারের কণা ঘিরে
আমাদের টেবিলে এভাবে আসে ছয় ঋতু
আসে তুষার ও মরু
চেয়ার ছেড়ে কোনওদিন আমরা দিক পাল্টাইনি
আমরা দুই আগন্তুক, দু'প্রান্তে ব'সে কিছুতেই একটা টেবিল
পেরতে পারছি না
0 মন্তব্যসমূহ