পাখিদের মুখের দিকে
চেয়ে
কোনো এক বৈষ্ণবী নারী
তার পুরুষের ঘর
ছেড়েছিল।
একতারা ভেসে গিয়েছিল
অজয়ের বানে।
এখন জীবাশ্মটুকু বর্ষার
আকুল আদরে ঘোরে,
বৈষ্ণবী, কাঁচা
শালপাতায় বেড়ে রাখে
আলোচালের ভাত!
পাখিদের দিকে ছুঁড়ে
ছুঁড়ে দেয়...
কোলাহল নয়,
পাখিদের মুখের দিকে
চেয়ে
বৈষ্ণবী একদিন
অন্নপূর্ণা সেজে
ঈশ্বরী পাটনির নৌকায়
বসেছিল...
এখন সুবর্ণ দেউটি ঘিরে
মানুষের ভিড়,
মানুষের বুকের ভেতর
উন্মাদ পাখি
মূক ও মুখর...
নৌকা ভেসে যায়
বৈষ্ণবী ছেড়ে আসে পুরুষ
ও পৃথিবীর ঘর...
লক্ষ্মী পুজোর আলপনার বাটিতে
খড়িমাটি পাহারা চায়
চোখের!
চোখ আগুনের উৎসাহ নিয়ে
প্রতিবেশী ঘরে
আরও বেশি কাঙাল হয়ে
ওঠে।
নৌকা ভেসে চলে,
অসহ্য কামিনীর গন্ধে
ভেসে চলে তৃষ্ণার্ত
যৌবন।
গলায় তুলসীকাঠের মালা,
বুক থেকে খসে পড়ছে পরম
ধূমকেতু-
লক্ষ বছর আগে ধূমকেতু
জাগানোর সাধনায়
চঞ্চল মাছের মত,
নড়েচড়ে উঠেছিল কেউ!
নদীর চরে চরে,
কুল বধূ মাথায় ঘোমটা
নিয়ে
রান্নাঘরে লুকিয়ে
রেখেছিল স্বামীদের।
বৈষ্ণবী যায়,
যাওয়ার আওয়াজে কোনো
শব্দ নেই।
কাঁধে তার বসে থাকে
ময়না,টিয়া,শালিকের ঝাঁক।
কলসি বেঁধে আত্মহত্যা
করেছিল ইছামতী বউ
সংসার তাকে পা ভর্তি
আলতা
আর সিঁথে ভর্তি সিঁদুর
দিয়েছিল মাত্র।
বৈষ্ণবী ইছামতী বউয়ের
দুঃখ আঁচলে তুলে নেয়!
বৈষ্ণবী বেহুলা নয়।
সিঁদুর উড়িয়ে দেয়
হাওয়ায়!
হাওয়া ভাবে এই হল
বিনম্র আবির!
অকালবসন্ত বুঝি এল।
পাখিদের মুখের দিকে
চেয়ে
বৈষ্ণবী একদিন ছেড়েছিল
পুরুষের ঘর!
দাঁড়ে টান পড়ে,
দাঁড় যায় সুন্দরের
দিকে!
সুন্দর মন!
বন্ধু, সুন্দর হাতে
চাঁপার বাউটি পরিয়ে,
নক্ষত্রদোষের রমণীকে
লাল পাতার গাছ দিয়ে
বরণ করে নিয়েছিল
শাশুড়ি।
সন্তানসম্ভবা রমণীর
গর্ভে এসে পড়েছিল
বকুল ফুল...
বৈষ্ণবী কাঁপা কাঁপা
হাতে
প্রসব করিয়েছিল মৃত
সন্তান...
উঠোনের একদিকে বকুল
ফুলের নামে পুঁতে দিয়েছিল দেহ!
পোঁতার নবম দিনে,
একটি নতুন সন্তান
মুখে তার কৃষ্ণের
গান
সবাই বলেছিল
কান্না
সেই নিয়ে টলমল পায়ে
বৈষ্ণবীর আঁচল টেনে ধরেছিল...
বৈষ্ণবী ভেসে যায়
নৌকায়,
অন্নপূর্ণা শরীর নিয়ে
চাঁদের আলোয়!
তার গর্ভেও একদিন
ক্লেদজ ছায়া
ঘিরে ধরেছিল!
যুবতী বয়সে যে ছায়া
দেখা যেত
রায়দীঘির পাড়ে...
সে ছায়ায় ডুবে গিয়েই
প্রথম ঠোঁটের ভুল করতে
শিখেছিল বৈষ্ণবী!
ঠোঁট পেয়েছিল পাখিদের
শিস
প্রত্যেকটি মিলনের সময়
সেই শিস দিত
পোষা পাখি!
ছোলা থাকলেও চেঁচিয়ে
ডাকত-
''দে, দে,
আরও ছোলা দে বাটি ভর্তি
করে...'
ধিক্কার নাকি
অহংকারে
বৈষ্ণবী ঘর ছেড়ে
রাস্তায় দাঁড়াল
আজন্ম বালিকা সে
কিংবা যুবতী!
কিংবা বৃদ্ধা
ঘরণী...
যৌবন মুখ থুবড়ে গাঢ়
রঙে ডুবে আসে...
ঈশ্বরী পাটনির
নিরুদ্দেশ বার্তায়
রুষ্ট অন্নপূর্ণা শাড়ি
ছেড়ে কোলাহলে ফিরে যায়!
বৈষ্ণবী ভাসে
বুকের ভেতর পাখিরা
মূক ও মুখর!
পুরুষেরা অধীর।
রটে গেছে,
আমৃত্যু পৃথিবীর
অক্ষরেখায়,
বৈষ্ণবীর অকুণ্ঠ
যাতায়াত...