সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

মন্দিরা ঘোষ




উত্তরাধিকার


সকলের ছোটো থাকার একটা মস্ত সুবিধা আছে।আর বাড়িতে অনেক সদস্য থাকলে তো কথায় নেই।
অনেকগুলো ভাইবোনের যৌথ পরিবারে অভাবের আলপিনে সবার চাহিদা ঝুলে থাকত।সবার জন্য না হলেও ছোটো
  হিসেবে আমার আলপিনের সংখ্যা কম ছিল।
না চাইতেই ইচ্ছে গুলো পূরণ হয়ে যেত।
অভাবের ছুরি কখনো আভিজাত্যের গলা কাটতে পারেনি।তাই সব মিলিয়ে জড়িয়ে মুড়িয়ে
  থাকার অপার আনন্দের ভুবন ছিল আমাদের।
বড্ড গর্ব করতাম দাদুকে নিয়ে।জমিদারি
  না থাকলেও মেজাজ আর আভিজাত্য সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তখনো। 
দাদুর পরিচয় পূর্বপুরুষ বর্ধমান মহারাজার দেওয়ান ছিলেন।পরবর্তীকালে, সাড়ে তিনশো/চারশো বছরের ইতিহাসে বংশলতিকার সূত্রে জানা যায় রাজা (জমিদার)পরমানন্দ রায়ের বংশধর,নাম বৈদ্যনাথ রায়।নিবাস কালিকাপুর।। অরিজিনাল  পরচাটি অজ্ঞাত কারণে হারিয়ে যায়।তাই নির্ভূল তথ্যের অভাব  আছে।সেই সময়ের দ্বাদশ মানের পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। ইংরেজি এবং সংস্কৃততে দক্ষ ছিলেন।

কোন স্বার্থপরতা দৈন্য
  ছুঁতে পারে নি  সেই সমুদ্রের মত অগাধ মানুষটিকে ।
আমার ছোট্ট চোখে মস্ত বড় মানুষটার
নিরন্তর অবসরের ছবিটুকুই আঁকা আছে কেননা ততদিনে দাদু নিজেকে সংসারের সংস্রব থেকে কিছুটা আলাদা করে নিয়েছেন। সংসার নিয়ে কোন মাথা ঘামাতেন না।দুই বাবা জ্যাঠার হাতে সব ছেড়ে নিশ্চিন্ত
  হয়ে থাকতেন।

রাস্তার ধারে খোলা জানালার পাশে ইজিচেয়ার পাতা, চারপাশে বইয়ের ভুবন;
মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকতেন সামনের পোড়ো সাতমহলা বাড়িগুলির দিকে, যেগুলি
  ইশারায়  অতীত ইতিহাসের জলছবি আঁকত !
জানলার একপাশে টেবিলে ঢাউস ফিলিপস
  রেডিও সাজানো।
বন্দেমাতরম শুনে দিন শুরু হোতো।
  পত্রিকার সংগ্রহে দেশ, অমৃত, পরিবর্তন, এ যুগের  তো ছিলই, ছিল প্রবাসী ভারতবর্ষ পূর্বাশা।এক খণ্ড রেক্সিন বাঁধানো।এছাড়া বেতার জগৎ,বসুমতী, আর্যশাস্ত্র,সোভিয়েত দেশ আরো কত বই!কলকাতা থেকে বই আনানো হতো
আর কিছু ডাক মারফত আসত।
সবচেয়ে আকর্ষণ
  ছিল আমার নতুন বছরের ক্যালেন্ডারে ।সোভিয়েত দেশের ক্যালেন্ডার আসত ডাকে,সেখানে সব সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার।
চেয়ে চেয়ে দেখতাম সরল চোখে,কি যে ভাল লাগত!মনেমনে একটা সম্পর্ক গড়তাম সেই দেশের মেয়েদের সাথে।
বছর শেষ হয়ে গেলে ক্যালেন্ডারের পাতাগুলি নিয়ে
  নতুন বইয়ে মলাট  দেবার প্রতিযোগিতা  চলত আট ভাইবোনে।

দাদুর অবসর ছিল বিচিত্র।মাছ ধরা, মাছের জাল বোনা, গাছের পরিচর্যা করা আর জঙ্গলে বনমুরগী শিকার ।সাথে পড়াশুনা তো ছিলই।মাঝে মাঝে নাতনিদের নিয়ে সাদা ধপধপে ধুতির ওপর ফুলের নকশা তুলে কাঁথা সেলাই করতেন,কখনো হরে কৃষ্ণ নাম লিখতেন নানা রঙের সূতো দিয়ে। ঝলমল করত সে সব কাজ। সর্বকণিষ্ঠা বলে আমার ভুমিকা বিশেষ থাকত না।অন্যরা আমাকে ঢ্যাঁড়শ বলে খ্যাপাতো।
দাদুর কতকগুলি বেশ মজার অভ্যেস ছিল,শিশু কালে মজাই লাগত ভারি!
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে সংস্কৃতে গীতার শ্লোক
  পাঠ করে  চায়ের সাথে মৌজ করে আফিম খেতেন,সাথে ক্যাপ্সট্যান সিগারেট  আর
তারপর একটি মোটা লাল বাঁধানো খাতায় ঠাকুরের নাম লিখে যেতেন।মুক্তোর মতো হাত লেখা।
স্নানের পর প্রণাম সেরে একবাটি পরিষ্কার
  সাদা ভাত পাখিদের উদ্দেশ্যে আলসেতে ছড়িয়ে দিয়ে  নিজে খেতে বসতেন।
সেই সময় গ্রামে অনেক ভিখারি ভিক্ষা করতে আসতো বাড়ি বাড়ি।খাবার আগে ভিখারি
  এলে তাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে দাদুকে খাবার দিলে সেদিন আর অন্ন গ্রহণ করতেন না।খুব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সাজিয়ে খাবার দিতে হতো।
রাত্তিরে কাঁসার
  থালার চারপাশে গুড় ছড়িয়ে রাজ্যের পিঁপড়েদের সাথে একত্রে ডিনার সারতেন দাদু।
পোশাকে খুব শৌখিন
  ছিলেন।বুকপকেটে সোনালি ফাউন্টেন পেন আর পকেট ঘড়ি সব সময়ের সঙ্গী। সাদা ফিনফিনে ধুতি। পাঞ্জাবিতে বিভিন্নতা থাকত।
বাড়িতে অতিথি
  এলে পুকুরে নিজেই নিজের তৈরি  জাল ফেলে মাছ ধরতেন।একটি  মজার ঘটনা  মনে এলো।
ছোটো
  একটি  পুকুরে,যাকে ডোবা বলে গ্রামীণ ভাষায়,বর্ষাকাল,টইটম্বুর জল।জামশেদপুর থেকে পিশিমা পিশেমশাই এসেছেন।মাছ ধরতে আমরা কচি কুচো ভাইবোন সাথী হয়েছি।দাদুর তখন বয়স ৭৮ হবে।পুকুরটি খাড়া ঢাল।গ্রীষ্মেই কাটা হয়েছে নতুন করে।জাল ঘোরাতে গিয়ে দাদু পুকুরে পড়ে যায় জাল সমেত এবং ডুবেও যান। আমরা প্রথমে হাসতে হাসতে তারপর  ভয় পেতে শুরু করি।দেখি দাদু জলের তলায়,এবং দু তিন মিনিট  হয়ে গ্যাছে উঠছে না।ভয় যখন কান্নার দিকে গড়াচ্ছে তখন দাদু উঠলেন।একহাতে চশমা, অন্য হাতে জালের দড়ি।ব্যাকুল হয়ে যখন জিজ্ঞাসা করছি, এতক্ষণ  জলের নিচে কী করছিলে!বল্লেন চশমা খুঁজছিলাম।

বিকেল হলেই সাজগোজ মানে ফুলবাবুটি সেজে বন্দুক হাতে শিকারে বেড়িয়ে পড়া।
মাঝে মাঝে আমরাও সঙ্গী হতাম যদিও
ছোট
  ছিলাম বলে বাদ পড়তাম আমি  বেশি।
দাদারাও দাদুর বারো বোরের বন্দুক টিতে
  বুনো খরগোশ এবং বেশ কিছু পরিযায়ী পাখি শিকার করে হাত পাকাতো, তখনও অবধি বন্য প্রাণী শিকারের উপর বিধিনিষেধ চালু হয়নি।

তখন ঐ অঞ্চলের যেসব বিয়ের বড় বড় অনুষ্ঠান হতো সেখানে দাদু বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ও উপস্থিত থাকতেন...সে এক অভিজ্ঞতা!আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে অন্তত
   দুজন দাদুর সাথে (কম করে হলেও দু দিনের জন্য) বিয়েবাড়িতে যাবার সৌভাগ্য হোতো। অবশ্যই বিশেষ ধরণের বাঁশের কাজ করা ছোতরী দিয়ে পরিবেষ্টিত গরুর গাড়ি করে, তাতে পাতা হোতো মোটা তুলোর তোশোক। তার উপরে অবশ্যই ধপধপে সাদা  বিছানার চাদর, মোটামোটা সাদা কভার লাগানো গোটা তিনেক পাশবালিশ/ তাকিয়া থাকতো যাতে গরুর গাড়ির ঝাঁকুনি না লাগে  ,আর সাথে অবশ্যই থাকতো ১২বোরের শটগান  আর দাদুর নিজের হাতে তৈরী করা লাল কাপড়ের থলিতে ৩০-৪০ টি তাজা কার্তুজ। সেটি সামলানোর দায়িত্ব পেয়ে বেশ বীরত্ব অনুভব করতাম আমরা।  বিয়েবাড়িতে পৌঁছানোর পর দাদুর পা দুটি ধুয়ে মুছিয়ে দিতেন বিয়েবাড়ির পুরুষও মহিলারা সমবেত ভাবে তারপর তারা দাদুকে পরম শ্রদ্ধা সহ বরণ করে বিশেষ ঘরে নিয়ে গিয়ে বসাতেন। আমরাও সেই আপ্যায়নের ভাগীদার হতাম।দাদু বিয়ে বাড়িতে বিশেষ করে অতিথি আপ্যায়ন ও রান্না বান্না খাওয়া দাওয়ার  সিস্টেমটা নিজে পরিচালনা করতেন বিশেষ অনুশাসনের  মধ্যে দিয়ে। দাদু নিজে অনুষ্ঠানের দিন কিছু খেতেন না , শুধু চিনি ছাড়া ফ্লেভার সহ বড় বড় পাতার লিকার চা সাথে সিগারেট। পরে অবশ্য মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর আগে সিগারেট এমন কি চা ও খেতেন না. ‌... গরম জল চায়ের মতো করে খেতেন আর সাথে আফিম এর খুব ছোট ছোট গুলি খেতেন কয়েক বার ...আর কোন নেশা ছিল না...
মনে আছে একবার নিমন্ত্রিত বিয়েবাড়িতে (আমি আর আমার জ্যাঠতুতো দাদা সঙ্গী ছিলাম)রান্নার যে প্রধান ঠাকুর তিনি খুব মদ খেয়ে ফেলেছিলেন এবং রান্না দাদুর মনের মতো হচ্ছিল না বলে রান্নার ঠাকুরকে প্রচণ্ডভাবে ঝার দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই অর্ধসমাপ্ত রান্না নিজে শেষ করেছিলেন অন্যান্য হেল্পারদের নিয়ে.. ঐ সময় দেখেছি দাদুর কাজেই প্রতি একাত্ম হওয়া।আসলে অতিথি আপ্যায়নের ব্যাপারে উনি খুব কড়া এবং সচেতন
  ছিলেন।কোনরকম ত্রুটি সহ্য করতে পারতেন না।বাড়িতেও সেই ধারা মেনে চলতে হতো মায়েদের।তাই বিয়েবাড়িতে নিজে নিমন্ত্রিত হয়েও বরযাত্রীর কোনো অবহেলা যাতে না হয়, তাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন গুরু দায়িত্ব।
বিয়েবাড়িতে গানবাজনা আর নাচের আসরে দাদু মধ্যমণি আর আমরা ঘিরে থাকতাম দাদুকে।এসব অভিজ্ঞতা
  ভোলার নয়।

মাঝে মাঝে মহাসমারোহে
  শিকারের মুরগী রান্না করে খাওয়াতেন সবাইকে।
রান্নার সরঞ্জাম আসত কলকাতা থেকে।
খাওয়া
  দাওয়ায় কোনো ভুলত্রুটি ক্ষমা করতেন না সহজে।
মহালয়ার দিন ভোরবেলা একসাথে দাদুর রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলায় মহালয়া শুনতে শুনতে ঘুম জড়ানো চোখ শরতের রঙে ভরে যেত। এক অন্যরকম বেঁচে থাকার স্বাদ,সম্পর্কের মিহি বুননে আষ্টেপৃষ্ঠে
  জড়ানো।

দাদুর একটি অন্য নামও ছিল, আমতলা বাবু ; আশেপাশের গ্রামের মানুষ সেই নামেই ডাকত।
নিজের হাতে তৈরী আম বাগানের নামটিও মানাসই
  বেশ -রাজার বাগান।
আম বাগানের নক্সা তাঁর মৃত্যুর পর দেখেছি ৬৪ চারা।নক্সাটি জরিপ বিশেষজ্ঞ অনুযায়ী স্বহস্তে বানানো।
কলম করা বত্রিশ রকমের আমগাছ,এক একটি গাছে তিন চার রকম জোড় কলমের ডাল ছিল।কত রকমের স্বাদ সব,আর শুধুই কি আম! সফেদা,গোলাপজাম,জলপাই,লিচু,
দারচিনি কত যে গাছ!
  বাগানে লাগানোর জন্য বেশির ভাগ চারাগাছ কোলকাতার গ্লোব নার্শারি পাঠিয়ে দিত।
ফুলের বাগানে চাঁপা জুঁইয়ের
  মাঝে ম্যাগনোলিয়া গ্লান্ডিফ্লোরা মাথা উঁচিয়ে স্বকীয়তা প্রমাণ করত।
বাগানে একটি
  মাটির বাড়ি ছিল।বাগানবাড়ি।দুপাশে ঝাউয়ের সারি।রজনীগন্ধা আর বেলী পথ পেতে দিত।
সেবার আটাত্তরের বন্যায় বাড়িটি ভেঙে যায়।
  ফুলগাছগুলিও মরে যায়।বাগানটিও ক্ষতিগ্রস্ত  হয়। তারপর থেকে আমৃত্যু দাদু আর রাজার বাগানে যান নি।
অসম্ভব
  ভালো আমের আচার করতেন যেটি প্রিজারভেটিভ ছাড়াই পাঁচবছর রাখা থাকতো সুদৃশ্য বয়ামে।আর সেই আচার চুড়ি করে খেতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়লে রক্ষে ছিল না সেদিন আমাদের।
দাদুর কাছে গল্প শুনেছি,
  রবি ঠাকুরকে নিজের হাতে তৈরী আমের আচার দিয়ে ছিলেন,
গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলনে ঠাকুমাকে
চরকাও কাটিয়ে ছিলেন।

ঠাকুমা গৌরীবালা রায় ছিলেন বোলপুরের এম পি শরদীশ রায়ের পিসতুতো বোন। দুটি চোখ অপারেশনের পর ঠাকুমা আর দৃষ্টি
  ফিরে পাননি।আমায় ঠাকুমা দ্যাখেন নি।সব নাতি নাতনিদের ভেতর আমি ছোটো ছিলাম বলে অনেক আদর আবদার আমার ভাগ্যে জুটত যা অন্যদের ঈর্ষার কারণ হত।সেরকমই
রাত্রিরে ঠাকুমার কোল ঘেঁসে গল্পে রূপকথার
  রাজ্যে পাড়ি জমানো আমার প্রিয় অভ্যেস ছিল।কল্পনার জগৎ হয়ত ঠাকুমাই আমাকে বুনতে শিখিয়েছিলেন।
ঠাকুমার গল্প আর একদিন বলব।

দাদু সম্মন্ধে একটি
  স্মৃতিচারণ  এখানে কোট আনকোট তুলে দিলাম।সম্পর্কে উনি আমার জামাইবাবু।কবি সমরেশ মন্ডল।
উনি লিখছেন জনৈক এক বন্ধুকে-
"আমার বউ ভাতের দিন উনি আমাদের বাড়ি এসেছিলেন, খাওয়া দাওয়া ইত্যকার আয়োজন মনে থাকার কথা নয় কিন্তু কবি বন্ধুদের ত্রুটি যাতে না হয় তার জন্য ঢালাও "আসব'"-র ব্যবস্থা ছিল।ফল যা হবার তাই হলো। জমিদার বাবুর দামী তসরের পাঞ্জাবির পকেট থেকে লণ্ডন ফেরৎ নাতির দেওয়া বিলিতি সিগারেটের প্যাকেট ওদের হাতে অপূর্ব দক্ষতায় চুরি হয়ে গেল।
‌নীলোৎপল তখন পোর্টেট বানাচ্ছে। ইচ্ছা করে বিকৃত করে।
সদ্য সীমন্তিনী আমাকে ডাকতে এলো।কী ব্যাপার?
খাবার রেডি।দাদু বলছেন, খাবেন না।
আমি গেলাম। সামনে এসে বললাম, চলুন। উনি মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই সঙ্গে উৎকন্ঠিত নাতনিরা।
না উনি সহজ ভাবে আমার সঙ্গে এসে খেতে বসলেন।দাদুর খেতে বসার পর ও আমার বান্ধবীদের নাম করে যাচ্ছিল সোমনাথ।
ছোট শ্যালিকা(মন্দিরা) নেহাত ছোট সে থাকলো দিদির সঙ্গে। বাকিরা চলে যাচ্ছে।‌বন্ধুদের তারস্বরে কান্নার ধ্বনি।এ সব কারনে আমার CR
  ভালো ছিল না।

দুই। যাবার সময় সবাই হেতমপুর রাজবাড়ী দেখতে ঢুকলেও উনি নামেননি। কালিকাপুরের জমিদারির অ্যাসেট নাকি হেতমপুরের রাজা দের থেকে বেশি। পানাগড়ের পুরো এরোড্রোমের মালিক ছিলেন তাঁরা।
পরে অবশ্য খুব সহজভাবে আমাকে চিঠি লিখতেন।"

মনে আছে,তেমন কিছু না বুঝলেও আমি উল্লেখিত ঘটনায় দাদুকে নিয়ে ঠাট্টা বা মজা
  করাটা মেনে নিতে পারিনি।এই ছোট্ট মনে রাগ হয়েছিল খুব।বিশেষ  করে কার্টুন আঁকাটা।

সরকারি
  ভাবে বিরুডিহার(পানাগড়) এই জমি অধিগ্রহণ  হওয়া এরোড্রোমের কারণে, দাদু মেনে নিতে পারেন নি।সেই বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে দাদু কমলালেবুর বাগান ও অন্যান্য ফলের বাগান করেছিলেন।সে সমস্ত সরকারি  ঘরে চলে যাওয়ায় দাদু সে সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে শুনেছি।
চিরকালই দাদুকে নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ ছিল না।অর্থের প্রাচুর্য ছিল না ঠিকই তবে আভিজাত্যের অহংকারে আমরা নিজেরাও নিজেদেরকে
  সম্পদশালী মনে করতাম।
সংসারে থেকেও দেখেছি দাদুকে সাধক জীবন যাপন করতে।নিজের
  মতাদর্শ , ধর্মবিশ্বাস কারো ওপরে চাপিয়ে দেন নি।
ধর্মীয়
  বই, গাছপালা,নিজস্ব শখের ভেতরেই শেষ জীবনকে বেঁধে রেখেছিলেন।কোনো বৈষয়িক বিষয়ে মাথা ঘামাতে দেখিনি।
সংসারে থেকে নিজেকে কিভাবে বিযুক্ত
রেখেছিলেন দাদু ভাবলে অবাক লাগে!
এখন ভাবি, ভাবতে ভাবতে লজ্জাবোধ হয়;
আমরা যেন সব ঐতিহ্য
  ভুলে বেঁচে আছি কায়ক্লেশে!
এখন আমরা গাড়ি চাপি,এসি ঘরে ঘুমায়
তবুও
  অভাবের আলপিন পিছু ছাড়েনি আমাদের।
গ্রহণে বর্জনে বড় হয়েছি কিন্তু কিছুই নিতে পারিনি শুধু অক্ষম উত্তরাধিকারের চাদর গায়ে জড়িয়ে রেখেছি।
মাঝে মাঝে পা ফেলে মেপে আসি সেই গভীর ধূলোর সরলরেখা!
 



মন্দিরা  ঘোষ