গৃহকর্মে ও সন্তানপালনের ভূমিকায় নারীর বন্দী-দশা
নতুন খবর নয় । নারীকে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার একটি সংস্কৃতি পরিবার, সমাজ
ও রাষ্ট্রে আছেই । ঘর গোছানো, রান্না, সন্তান জন্ম এবং
সন্তানের লালন-পালন নারীর একান্তই নিজস্ব কর্তব্য । পেশা যা-ই হোক,
পেশাগতভাবে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার,
বিমানচালিকা, বা ব্যবসায়ী যা-ই হোক, নারী
একজন গৃহিণী অর্থাৎ গৃহের সব কাজ তার ।
পুরাণ সাহিত্য প্রাচীন পৃথিবীর একট জীবন্ত ইতিহাস ।
পুরাণের প্রায় সব কাহিনিতেই রয়েছে ধর্ম এবং রাষ্ট্রশাসনের মধ্য দিয়ে সমাজ-জীবনে
নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা । পুরাণের
মূলকথা ভালোর সঙ্গে মন্দের, ধর্মের
সঙ্গে অধর্মের চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ, এবং পরিশেষে
অবধারিতভাবেই মন্দের বা দুষ্টের দমন ও ভালোর, মানে
শিষ্টের, অর্থাৎ ন্যায়ের জয় । দেবতার সঙ্গে অসুরের, মানুষের
সঙ্গে দানবের চিরকালীন বিরোধ একটা প্রধান বিষয় ।
অন্যভাবে বলা চলে, পুরাণ-সাহিত্য
যে কোনো জাতির প্রাচীন ইতিহাস যা বিভিন্ন বয়ানে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন
ব্যক্তি দ্বারা গ্রন্থিত, যার মাধ্যমে আমরা সেই অঞ্চলের আদিম জনগোষ্ঠীর জীবনের
স্বরূপ বুঝতে চেষ্টা করতে পারি । যদিও
ইতিহাস বলছে, সমাজ ও সংসারে নারী কখনোই পুরুষের সমান অধিকার পায়
নি । মাতৃতান্ত্রিক সমাজেও দেখা গেছে, অধিকাংশ
ক্ষেত্রে মায়ের ভাই সংসার পরিচালনা করতেন । সম্পত্তির ব্যবস্থাপত্রে,
গ্রামসভা ইত্যাদিতে মহিলারা অংশ নিতেন না ।
কিন্তু বৈদিক যুগে নারীর যজ্ঞে,
উপবীত ধারণে, শাস্ত্র পঠন পাঠনে অধিকার ছিল । সেই অধিকার কেমন করে
হারিয়ে গেল, তা সমাজনীতি ও ধর্মনীতির বিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত
বিষয় । সিন্ধু সভ্যতার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সমাজে বর্ণভেদ ও স্তরভেদ ঘটে । মূলত আর্য
ও প্রাক-আর্যদের সংমিশ্রণে এই পরিবর্তন হয় । পরবর্তী সময়ে যাকে হিন্দু সভ্যতা বলে
অভিহিত করা শুরু হয় ।
তারও আগের কথা বলতে গেলে,এককালে খাদ্যের
জন্য মানুষকে শিকারের ওপর নির্ভর করতে হত । দল বেঁধে পুরুষ শিকারে বেরোত । মেয়েরা
থাকত ঘরে, গৃহস্থালি নিয়ে । পরবর্তী সময় কৃষিনির্ভর
সমাজব্যবস্থায় সমাজে মাতৃতান্ত্রিক রূপ এল । তারপর বাণিজ্যের প্রসার আর বাজার
বাড়ার সময় । সেইসঙ্গে যুদ্ধ আর লুঠতরাজ
সমাজে নিয়ম হয়ে উঠল । নারীর অবগুণ্ঠনের সেই শুরু । সুরক্ষাজনিত কারণেই । দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে আবার ঘোমটা খুলে ফেলে মেয়েদের বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কাজ করা
শুরু হল । বহুদিন পর্যন্ত বাইরের যে কর্মজগতে পুরুষ-আধিপত্য,
সেখানে মেয়েদের প্রবেশ ও প্রসার সমাজের গঠনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এল । নারীর
ক্ষমতায়নের এটুকু ইতিহাস আমরা সবাই জানি ।
কিন্তু সেই পুরোনো যুগেও আদি খৃষ্টীয় সমাজে নারী পুরোহিতের
প্রচলন ছিল । ফ্রান্সের ইতিহাসে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত তার প্রমাণ পাওয়া গেছে ।
যিশুর দোহাই দিয়ে পরবর্তী খ্রিস্টান সমাজ পিতৃতান্ত্রিকতার পথ ধরে । পার্সি সমাজের
জোরাথ্রুস্টার ধর্ম থেকে পিতৃতন্ত্র প্রবেশ করে ইহুদী ধর্মে,
সেখান থেকে খৃষ্টানদের মধ্যে ও অবশেষে মুসলিম সমাজে । মুসলমান সমাজ ছিল
মাতৃকেন্দ্রিক, সাড়ে তিনশ’রও বেশি
দেবীমূর্তির পুজো হত । মহম্মদের আবির্ভাবের পর সমাজে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা শুরু
হয় এবং ধীরে ধীরে নারীর অবস্থান সমাজের নিচে নেমে আসে ।
সাংখ্য দর্শনে সৃষ্টির উৎস সম্পর্কে পুরুষ ও প্রকৃতি
শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । পুরুষ ও নারী নয় কিন্তু । নরের
প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, তার অধস্তন ও সেবিকা বোঝানোর জন্যই কী নারী শব্দটির
সৃষ্টি? নারী হবে তার স্বামীর একান্ত ভোগ্যা, নারীর
সতীত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পুরুষ একাধিক নারী ভোগ করতে পারবে, কিন্তু
নারীর সে অধিকার নেই । পুরুষের প্রয়োজনে নারীর রমণী, জায়া, জননী
ছাড়াও কুলটা, পতিতা, বেশ্যা, গণিকা নানা নামে
পরিচিতি ।
পুরাণে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে পৌরাণিক, প্রাচ্য
ও পাশ্চাত্য সভ্যতার ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলে । শক্তির, বলা
ভালো মাতৃশক্তি এবং দেবীশক্তির আরাধনার কথা পাওয়া যায় না এমন পৌরাণিক গাথা বিরল ।
হিন্দু ধর্মে তেত্রিশকোটি দেবতার মাঝে দেবী দুর্গা বা
কালী শক্তিকে বর্ণনা করবার আলাদা কোনো প্রয়োজন হয় না । শক্তির
প্রতীক দেবী দুর্গা অশুভ শক্তি ও অসুর বিনাশিনী । সংহারী রূপে দেবী কালী অসুর ও
অশুভ শক্তির বিনাশ করেন । প্রাচীন ভারতে গোত্র ও কৌম সমাজে নারীর অধিকার ও
স্বাধীনতা ছিল পুরুষের চেয়ে বেশি । মহামায়া বা দেবীর প্রাধান্যের কারণেই হয়ত
নারীকে প্রাধান্য দেওয়া হত । দেবী দুর্গা-কালী নয় শুধু, শিক্ষা-শিল্প-কৃষ্টি-ধনসম্পদের জন্যে
দেবী সরস্বতী এবং লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা হয় । কোনো দেবতার নয় । গ্রিসেও বিভিন্ন
দেবী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় । গ্রিক পৌরাণিক সাহিত্যেও নারীর মর্যাদা লক্ষ করা
যায় । হিন্দু ধর্মের মতোই বৌদ্ধরাও দেবীর উপাসনা করতেন ।
বৈদিক সাহিত্য যেমন সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ
ও সূত্র সাহিত্যে নারীকে দেবী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে । প্রখ্যাত মুনি-ঋষিদের
সঙ্গেই অপালা-ঘোষা-লোপামুদ্রা-গার্গী-মৈত্রেয়ী এমন বিদুষীদের যথাযোগ্য সম্মান
জানানো হয়েছে । ঋকবেদে নারী দেবতা হচ্ছেন ঊষা । মহাকাব্য রামায়ণে সীতা এবং মহাভারতে দ্রৌপদীর মধ্যে দিয়ে তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষের নারীর অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ছবি ফুটে
ওঠে । রামায়ণের রাণীরা, কৈকেয়ী বা মন্দোদরী কিংবা মহাভারতের মহারাণীরা, কুন্তী এবং গান্ধারী একটি চালিকা
শক্তি ছিলেন । প্রাচ্যের ‘পঞ্চকন্যা’ বলে প্রসিদ্ধ যে-পাঁচজন পুরাণের নারী,
তাঁরা অহল্যা, কুন্তী, দ্রৌপদী, তারা
ও মন্দোদরী । আদি ও মধ্যযুগের
সমাজব্যবস্থায় ও মূল্যবোধে নারীর অবস্থা ও অবস্থানের চিত্র বোঝার জন্য এর চেয়ে
ভালো উদাহরণ হয় না ।
আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবতাদের । অনার্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের, তাঁদের পুজো হত আদ্যাশক্তির প্রতীক রূপে ।
মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের গঠন, দায়িত্ববোধ
ও উর্বরতা শক্তির সমন্বয়ের কথা বিবেচনা করে অনার্য সমাজে গড়ে উঠে মাতৃপ্রধান দেবী
সংস্কৃতির ধারণা । ভারতে অবশ্য মাতৃরূপে দেবী সংস্কৃতির ধারণা অতি প্রাচীন । প্রায়
বাইশহাজার বছর পূর্বে ভারতের প্যালিওলিথিক জনগোষ্ঠী থেকেই দেবী পূজা প্রচলিত ।
হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা তথা সিন্ধু সভ্যতায় এসে তা আরও বিস্তৃত হয় ।
দেবী হলেন শক্তির রূপ, তিনি পরব্রহ্ম । শাক্ত মতে, কালী বিশ্বসৃষ্টির আদি কারণ । অন্যান্য দেব-দেবী মানুষের
মঙ্গলার্থে তাঁরই বিভিন্ন রূপে প্রকাশ । মহাভারত অনুসারে, দুর্গা বিবেচিত হন কালী-শক্তির আরেক রূপে । মা দুর্গা সাধারণের কাছে দেবী দুর্গা, মহামায়া, মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহাসরস্বতী, শ্রীচন্ডী
প্রভৃতি নামে পরিচিত । সর্বশক্তি স্বরূপিনী আদ্যাশক্তি হলেন এই মা দুর্গা । তাঁর
দুর্গা নামটির মধ্যেই অসুর শক্তি নাশের পরিচয় ।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, দুর্গাপূজার
প্রথম প্রবর্তক কৃষ্ণ, দ্বিতীয় বার দুর্গাপূজা করেন
স্বয়ং ব্রহ্মা আর তৃতীয়বার দুর্গাপূজার আয়োজন করেন মহাদেব । আবার দেবীভাগবতপুরাণ
অনুসারে, ব্রহ্মার মানস পুত্র মনু
ক্ষীরোধ সাগরের তীরে দুর্গার আরাধনা করে বর লাভে সফল হন ।
গ্রিক পুরাণে ভারতীয় পুরাণের মতোই অগুনতি গল্পের
সম্ভার । গ্রিক পুরাণ অনুসারে স্বর্গের দেবতা হলেন জিউস । তাঁর আগে ছিল টাইট্যানদের রাজত্ব । ভারতীয় পুরাণে মহর্ষি কাশ্যপের স্ত্রী অদিতির থেকে
দ্বাদশ আদিত্যের জন্ম । ঠিক তেমনই ইউরেনাস আর গায়ার থেকে প্রথম দ্বাদশ টাইট্যানের
জন্ম । ইউরেনাস এখন একটি গ্রহের নাম হলেও তখন সম্পূর্ণ আকাশ বলেই ধরা হত । গায়া
হলেন ধরিত্রী মাতা । দ্বাদশ টাইট্যানের মধ্যে নারী ছিলেন ছ’জন ।
এক, নেমোসিন
(Mnemosyne) । স্মৃতির আদি দেবী এবং মিউজ বা ইন্সপিরেশনের নয় দেবীর জননী।
দুই, থিয়া (Theia) । ভাই
হাইপেরিওনের সঙ্গে সঙ্গমের ফলে জন্ম দিয়েছেন হেলিওস (Helios),
সেলেন (Selene) এবং ইওস (Eos) । এঁরা
হলেন সুর্য, চন্দ্র ও সন্ধ্যা ।
তিন, টেথিস
(Theia) । সব
নদীর মাতা । ভাই ওশেনাসকে বিবাহ করে তিনি অসংখ্য নদী দেবতার জন্ম দিয়েছেন । এঁর
কন্যাদের ওশিয়ানিড (Oceanid) বলা হয়
। তাঁরা বিভিন্ন জলাশয়ের দেবী ছিলেন ।
চার, ফিবি (Phoebe)। চাঁদের
সম্পর্কিত, এবং ভবিষ্যৎবাণীর আদি দেবী ।
পাঁচ, রিয়া (Rhea)। সব
অলিম্পিয়ান দেবতাদের মা । ভাই ক্রোনোসকে বিবাহ করে জন্ম দিয়েছিলেন ছয়জন পরবর্তী
যুগের দেবতার । হেস্টিয়া, ডিমেটর
এবং হেরা কন্যা এবং হেডিস, পোসেইডন
এবং জিউস এঁর পুত্র।
ছয়, থেমিস
(Themis)। আইন কানুনের দেবী । আইনের প্রতীক যে ন্যায়ের
দাঁড়িপাল্লা, সেটি এঁরই প্রতীক । ন্যায়, আইন, রীতি, পরম্পরা ইত্যাদির দেবী
হলেন ইনি । পরে জিউসের সঙ্গে সঙ্গমের ফলে হোরাই নামে এক সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, যিনি ঋতু এবং সময়ের দেবী
। হোরাইয়ের নাম থেকেই ইংরেজি আওয়ার (Hour) বা ঘন্টার সৃষ্টি ।
গ্রিক
পুরাণের বিখ্যাত তিন দেবী হেরা, এথেনা আর আফ্রোদিতি । হেরা জন্ম ও নরনারীর মিলনের দেবী। জিউসের স্ত্রী এবং সহোদরা
হেরাকে রোমান উপকথায় হেরাকে জুনো নামে ডাকা হয় ।
এথেনা
যুদ্ধ আর শিল্পকলার দেবী। শিরোস্ত্রান
পরিহিত দেবী এথেনা প্রিয় শহর এথেন্স। তাঁর বৃক্ষ হল জলপাই আর পাখি পেঁচা । এথেনা হলেন কুমারী দেবী ।
গ্রিক সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া দেবী
আফ্রোদিতি প্রেমের দেবী । গ্রিক ভাষায় আফ্রোস শব্দের অর্থ ফেনিল ঢেউ । রোমান
পুরানে দেবী আফ্রোদিতির নাম ভেনাস ।
এছাড়া আছেন আর্টেমিস ।
গ্রিক পুরাণের দেবীদের মধ্যে অন্যতম প্রধান দেবী আর্টেমিস । প্রাক-গ্রিকযুগ থেকেই
তাঁর উপাসনা প্রচলিত ছিল । তিনি অরণ্যদেবী, বারোজন
অলিম্পিয়ানদের অন্যতম, শিকারী দেবী,
কুমারী মেয়েদের রক্ষাকর্ত্রী । সন্তান প্রসবে সহায়ক দেবী হিসেবেও তাঁর পুজো হয় ।
আর্টেমিসের মতই বনবিবি বা বনদেবী বা বনদুর্গা বা ব্যাঘ্রদেবী বা বনচণ্ডী, তিনি
একইসঙ্গে হিন্দু ধর্মের দেবী এবং বনবাসী মুসলমানদের পীরানি । সুন্দরবন
অঞ্চলের লোকায়ত দেবী মধু সংগ্রাহক, কাঠুরে, মৎসজীবী মানুষের
দেবী । গবেষকদের মতে তিনি হিন্দু দেবী বনদুর্গা, বনচণ্ডী,বনষষ্ঠী
বা বিশালাক্ষী । ইসলামিক প্রভাবে বনবিবি হয়েছেন ।
আর একজন হলেন ওলাইচণ্ডী,
হিন্দু লৌকিক দেবী । ওলাবিবি বা বিবিমা নামেও পরিচিত । ইনি কলেরার দেবী এবং অসুর ময়ের পত্নী
। বাংলাদেশ এবং
পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মাবলম্বীর কাছেই এই দেবী সম্মানীয়া । বাংলায়
তাঁর ছয় বোন । ‘সাতবিবি’ নামে পরিচিত এই সাত দেবী আসলে হিন্দু
সপ্তমাতৃকা ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, বৈষ্ণবী, বারাহী, ইন্দ্রাণীর
রূপান্তর । ভারতে এই সাত দেবীর পূজা যে সুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে, তার
প্রমাণ অধুনা পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশের অন্তর্গত সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদারো-র
টেরাকোটা সিলমোহরে দেখা যায় । সিলমোহরে সাতজন নারীকে একসঙ্গে দণ্ডায়মান অবস্থায়
দেখা যায় ।
দুর্গাপূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য কুমারী পূজা । দেবী
পুরাণে কুমারী পূজার সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে । গ্রিক দেবী আর্টেমিসের মতই কুমারী মেয়েদের রক্ষয়িত্রী
।
প্রাক্-ইসলামি আরবে ধর্মবিশ্বাসগুলির মধ্যে ছিল স্থানীয় আরব
বহু-দেববাদ । প্রাচীন সেমিটিক কিছু ধর্ম,
খ্রিস্ট ধর্ম, ইহুদী ধর্ম এবং জরথ্রুষ্টবাদ, বেশ কিছু ইরানী ধর্ম । আরব বহুদেববাদ ধর্মের ভিত্তি
ছিল বিভিন্ন দেব-দেবী ও অতিলৌকিক সত্ত্বার পুজো । হুবাল ও দেবী আল-লাত, আল-উজ্জা, মানাত প্রধান দেব-দেবী । পুজো
হত মক্কার কাবা, বিভিন্ন স্থানীয় উপাসনাস্থল ও মন্দিরে । তীর্থযাত্রা, ভবিষ্যৎ-কথন, আনুষ্ঠানিক বলিদান ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানের প্রথা ছিল ।
মক্কার আরব্যপুরাণে তিন প্রধান দেবী ছিলেন লাত, উজ্জা ও মানাত । এঁদের
প্রত্যেকের মূর্তি-সহ মন্দির ছিল। আল-লাত ছিলেন পাতালের দেবী । আল-উজ্জা,এই
আরবী শব্দটির অর্থ সর্বশক্তিময়ী । আল-উজ্জা ছিলেন আরবের উর্বরতার দেবী । দেবী আর্টেমিসের
মতই যুদ্ধে রক্ষা ও জয়ের জন্য তাঁর উপাসনা করা হত । আল-মানাত ছিলেন সৌভাগ্যের দেবী ।
একইভাবে ব্যাবিলনের পুরাণ অনুসারে দেবী ইনানা প্রাচীন
মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের প্রধান দেবী । প্রেম, সৌন্দর্য, যৌনতা, যুদ্ধ, ন্যায়বিচার
ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দেবী ।
প্রথমে সুমের অঞ্চলে তাঁর পূজার প্রচলন হয় । পরবর্তী সময়ে আক্কাদীয়, ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয়রা ইশতার নামে তাঁর পূজা করত । ইনানা পরিচিত
ছিলেন ‘স্বর্গের রাণী’ নামে ।
আর প্রাক-ব্রোঞ্জ যুগে, খ্রিস্টজন্মের হাজার দেড়-দুই বছর আগের মেসোপটেমিয়াতে অমিত
ক্ষমতা একত্র করছেন অসুর-রাজারা তাদের অ্যাসিরিয়া সাম্রাজ্যে । মোষের পিঠে আসীন
সেই অ্যাসিরিয়ার অসুরনগরীর অসুরদেবের থান রক্ষা করছে সেদিনের সেই সেমিট-দ্রাবিড়
কৌমলোককে । সেইখানে দেখা যায়,
অসুরের আরাধনা পাচ্ছেন সিংহারূঢ়া দেবী ইশতার । ইশতার ছিলেন
মেসোপটেমিয়ার আদি সনাতন ধর্মের একজন অন্যতম দেবী ।
একজন দেবী,সিংহ ও
মহিষ, মানুষের সংস্কৃতির
ইতিহাসে এই প্রতীক ভারতীয় সভ্যতায় দেবী দুর্গা । একইসঙ্গে খ্রীস্টপূর্ব
৩৫০০ থেকে ২৩০০ পর্যন্ত মেসোপটেমিয়ায় উন্নত এক সভ্যতা ছিল । সুমেরু, আসিরিয়া ও আক্কাদ ছিল
ব্যাবিলনের অংশ । এটি মেসোপটেমিয় সভ্যতা । ব্যাবিলন নামটি
এসেছে সুমেরিয়ান থেকে,
আক্কাদীয় ভাষায় Bab-Ilu, এই
শব্দটির অর্থ হল ‘ঈশ্বরের
দরজা’ । হিব্রু
বাইবেলে নামটি Babel, যার
ব্যাখ্যা Book of Genesis-এ
দেওয়া হয়েছে এর অর্থ ‘বিভ্রান্তি’ ।
সুমেরিয়ান পুরাণে উপাস্য ছিলেন দেবী ইশতার। মাতৃদেবী। আদিম সুমেরিয়া, ব্যাবিলনিয়া, ফিনিসিয়াতে মাতৃদেবীর
পূজা প্রচলিত ছিল। নারীর গর্ভধারণকে মনে করা হত বিশেষ দৈবী ক্ষমতার প্রকাশ ।
সেদিনের মেসোপটেমিয়ার লোকেরা তখনকারই চলতি সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের ডাকত ‘মেলুহা’
বলে । এই ‘মেলুহা’দের রাজ্যপাটের ভিতরেও কোথাও পুজো পেত হিংলাজ, কোথাও আবার সিলমোহরে, মুদ্রায় খচিত ছিল
সিংহ-মহিষ ইত্যাদি পশু-অবয়ব, আবার
কোথাও চাঁদ-সূর্য-গাছগাছালি ইত্যাদি প্রকৃতির চিত্র-সমাহার ।
ধর্ম,সমাজ, রাষ্ট্র ছিল
মাতৃতান্ত্রিক । সন্তানের পরিচয় নির্ধারিত
হত মায়ের নামে ও গোষ্ঠির নামে । আকাশের বজ্র বিদ্যুৎ, ঝড়, নদী, সমুদ্র ইত্যাদি প্রাকৃতিক
শক্তি যেমন মানুষকে বিষ্ময়াবিষ্ট করতো ঠিক তেমনি নতুন শিশুর জন্ম বা নারীর প্রজনন
ক্ষমতাও মানুষকে অবাক করত ।
পুরাণের ক্ষমতাময়ী দেবীদের কথায় ফিরে আসি ।
আনুন্নাকি ছিলেন প্রাচীন সুমেরীয়, আক্কাদীয়,
আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় পুরাণে উল্লিখিত একটি দেবমণ্ডলী । আনুন্নাকির সংখ্যা কত ছিল এবং তাঁরা কি ভূমিকা পালন
করতেন, সেই বিবরণ প্রায়শই পরস্পর-বিরোধী । আক্কাদীয়-উত্তর
যুগে রচিত প্রাচীনতম সুমেরীয় সাহিত্যকর্মে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী, আনুন্নাকি
ছিলেন দেবমণ্ডলীর সর্বাপেক্ষা অধিক শক্তিশালী দেবদেবী, ‘আন’ আর ‘কি’-র
সন্তান । তাঁরা স্বর্গের দেবতা ও পৃথিবীর দেবী ।
পুরনো ব্যাবিলনীয় যুগে আবার মনে করা হত আনুন্নাকি
হলেন প্রেতলোকের দেবদেবী
।আরব্য পুরাণে দেবী আল-লাতের মত । সেই
যুগে স্বর্গের দেবদেবীগণ পরিচিত ছিলেন ‘ইগিগি’ নামে
। গবেষকদের মতে, আনুন্নাকি ছিলেন দেবতাদের সবচেয়ে আদিতম প্রজন্ম ।
এইভাবেই পৃথিবীর আদিম মানব
সমাজসমূহে উপাস্য ছিল নারী-শক্তি ।
মায়া সভ্যতায় পুরাণ কাহিনীতে আছে, এক নারী নেমে এল আকাশ থেকে । সেই নারী পৃথিবীতে জন্ম দিল
প্রথম মানব-সন্তান এবং সৃষ্টি করল নানা রকম শস্যবীজ । প্রকৃতিপূজা সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মাচরণ । এই প্রকৃতিপূজার
একটা পর্যায়ে এসেছে বিভিন্ন রূপের বা শক্তির উপাসনা । এবং কিছু সার্বজনীন দেবী ।
প্রাক-আর্য সমস্ত আদিবাসী সমাজ ছিল সর্বপ্রাণবাদী (animist) । বিশ্বাস ছিল যে, প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুর মধ্যে
আত্মা বিদ্যমান । আদিকাল থেকেই বন-জঙ্গল, গাছ, নদী, পাহাড়-পর্বত তাদের
দেবদেবী,
‘টোটেম’ বা ধর্মীয় প্রতীক । এমনকি তাদের
গোত্রনামগুলো এই গাছপালা ফল ফুল থেকে নেওয়া ।
প্রসঙ্গত শারদীয়া
দুর্গাপুজোয় যে ‘নবপত্রিকা’ স্থাপন করা হয়, তা এই গাছপুজো । কলা, ডালিম, ধান, হলুদ, মান, কচু, বেল, অশোক আর জয়ন্তী । এই গাছের ডাল
দিয়ে নবপত্রিকা । মন্ত্র-উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে এ গাছগুলো আর গাছ থাকে না, এক একজন দেবী হয়ে ওঠেন । কলা হন
ব্রাহ্মণী, ডালিম হন রক্তদন্তিকা, কচু হন কালিকা, অশোক হয়ে ওঠেন শোকরহিতা, বেল হন শিবা, ধান লক্ষ্মী, মান চামুণ্ডা, জয়ন্তী কার্ত্তিকী আর হলুদ হয়ে
ওঠেন দেবী দুর্গা ।
প্রাচীন সুমেরীয় বা ব্যাবিলনীয় অঞ্চলের মানুষদের মধ্যেও এমন
প্রকৃতি-পুজোর প্রচলন ছিল । ধর্মীয় দেবতাদের নাম ছিল ‘আন’ (আকাশ), ‘মাকি’ (পৃথিবী), ‘এনলিল’ (বাতাস) এবং ‘এনকি’ (সমুদ্র)। বিশ্বাস ছিল যে, এই দেবতারাই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের নিয়ন্ত্রক । ইরাকের একটি প্রাচীন
সভ্যতার নামও ছিল ব্যাবিলন, যাদের
ছিল সূর্যদেবতা ‘বেল’ ।
জাপানী পুরাণেও এই প্রকৃতির বস্তু উপাসনার প্রচলন ছিল
। জাপানের সৃষ্টি আখ্যান দেবদেবীদের জন্ম (কামিমি) এবং জমির
জন্ম (কুনিয়ামি) দিয়ে শুরু । দেবদেবীদের প্রথম প্রজন্মের আবির্ভাব আদিম তেল থেকে
। ত্রয়ী দেবতা, যাঁরা পরবর্তী সাতটি প্রজন্মের
দেবতাদের জন্ম দিয়েছিলেন । ইজানাগি,
ইজানামি এবং নাগিনাটা । জাপানী পুরাণ অনুসারে, ইজানাগি ও নাগিনাটা আদিম জলে ডুবিয়ে জাপানি দ্বীপপুঞ্জের প্রথম দ্বীপপুঞ্জ
তৈরি করেছিলেন । ইজানাগির প্রথম জাপানি দ্বীপ
ওনোগোরো তৈরির মিথটিকে জাপানি পুরাণে ফ্যালোসেন্ট্রিজমের প্রাথমিক উদাহরণ হিসাবে
ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
কামি নামে পরিচিত জাপানী দেবদেবীরা অনন্যভাবে অসংখ্য এবং ক্ষমতা এবং মাপে
বিভিন্ন রকম। তাঁরা সবাই দেবতাদের আদি ত্রয়ীর বংশধর ।
বৈদিক যুগ থেকেই দেবী
দুর্গা আরাধনার নানা নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় । আবার বৌদ্ধযুগেও মহাযান
অবলোকিতেশ্বর কোয়াননের মধ্যে একটি দেবীমূর্তির পূজা হয় । জাপানী ভাষায় তাঁর নাম ‘চনষ্টী’, এই চনষ্টী সংস্কৃত ‘চণ্ডী’ শব্দের অনুরূপ । কেবল নামের
সাদৃশ্যে নয়, দেবীপুজার অপরিহার্য অঙ্গ
চাঁদমালার ব্যবহারও বৌদ্ধপ্রভাবের নিদর্শন ।
সেসময় ব্যাবিলনের মানুষ বেশ উন্নত ছিল । সর্বজনপ্রিয় দেবী
ইশতার, ফসলের দেবী । এবং তাঁর
সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে যে
মূলত সভ্যতা কৃষিভিত্তিক ছিল ।
প্রাচীন আন্নুনাকির পর মৃতের কোনো দেবী ছিল না । বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির রূপক দেবতার কল্পনা
ছিল, এবং ইশরাত এবং শামস
প্রধান দেবতা ।
সুমেরিয় সমাজ ব্যৱস্থায় ও ধর্মে দেবী ইশতার-এর উল্লেখ
পাওয়া যায় । গবেষকরা মনে করেন, ইশতার-এরই অন্য নাম ইনানা
। ইশতার সুমেরিয় রাজধানী উরুক নগরে মহা সমারোহে পূজিত হতে থাকেন । পরে ইশতার
ব্যাবিলনের অন্যতম দেবীতে উন্নীত হন । ব্যাবিলন
নগর এবং দেবী ইশতার ছিলেন অভিন্ন ।
আর অসীম শক্তির প্রতীক হিসেবে সুজলা সুফলা পৃথিবী ছিলেন
বহুযুগের পূজিতা দেবী । ভারত, মেস্কিকো, জার্মানি ও গ্রীসে পৃথিবী
দেবীর আরাধনা হত । পৃথিবী শস্য ও প্রজনন শক্তির প্রতীক ছিলেন ।
বেদে পৃথিবীর পাশেই ছিলেন অদিতি । দিতি মানে বন্ধন । অদিতি
মানে অবন্ধন, অনন্ত । অদিতি প্রথমে
আদিত্যগণের মা, পরে দেবগণের মা । ঋক্ বেদে অদিতি পৃথিবীও
বটে। বেদের পরের যুগে অদিতি দক্ষের মা, আবার দক্ষের মেয়েও ।
কালিকা পুরাণে আছে যে পৃথিবী দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে জনক
রাজার কাছে গিয়েছিলেন । অনেক পুরাণেই মহাশক্তির সাথে পৃথিবী দেবীকে মিশিয়ে দেওয়া
হয়েছে । চণ্ডীতে আছে “মহীস্বরূপেণ যতঃ স্থিতাসি”। বেদে পৃথিবী মধুমতী, মধুব্রতা, মধুদুঘা । তৈত্তিরীয়
ব্রাহ্মণে পৃথিবী “সরঘা”, মানে
মধুমক্ষিকা । চণ্ডীতে মহাশক্তি হলেন ভ্রামরী । আবার শাকম্ভরীও বটে । মিল অনেক । এই
ভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন দেবী অন্নপূর্ণা । দেবীশক্তি দুর্গার অনেক নাম, অনেক রূপ । বঙ্গদেশে তিনি
দুর্গা, কাশ্মীরে ও দাক্ষিণাত্যে
অম্বা ও অম্বিকা,
গুজরাটে রুদ্রাণী ও হিঙ্গলা,
কান্যকুব্জে কল্যাণী,
মিথিলায় উমা, তামিলনাড়ুতে কন্যাকুমারী
। শাক্ত ভক্তদের কাছে তিনি যোগমায়া,
বৈষ্ণবদের কাছে বিষ্ণুমায়া, আর
পৌরাণিক সাহিত্যে মায়া ।
উমা শব্দের উৎস সন্ধানে গবেষকরা ব্যাবিলনীয় ‘উম্মু’ বা
‘উম্ম’ শব্দের সঙ্গে সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছেন। ‘উম্ম’ শব্দের অর্থ ‘মা’ । উমা-র আরও
একটি অর্থ হল, ‘উ’ শব্দের অর্থ শিব এবং
‘মা’ শব্দের অর্থ লক্ষ্মী । মধ্যপ্রাচ্যের পর্বতবাসিনী সিংহবাহিনী ইশতার দেবীর
সঙ্গে এই দেবী উমার মিল আছে । ক্রিট দ্বীপে সন্ধান পাওয়া যায় পর্বত-দেবীর ।
পর্বতের উপরে অস্ত্র হাতে দেবী, দুই
পাশে সিংহ । মধ্য প্রাচ্যের পর্বতবাসিনী সিংহবাহিনী ইশতার দেবীর সঙ্গেও উমার মিল
আছে । বেদে পার্বতী মানে পর্বত সম্পর্কিত । শতপথ ব্রাহ্মণে পর্বত-স্বরূপা ।
চণ্ডীতে পার্বতী পর্বতবাসিনী ।
এই পার্বতী উমার ধারাই হল মহাদেবী পূজার প্রাচীনতম ধারা । প্রাচীন ব্যাবিলনবাসী
যেমন মনে করত ইশতারই সেই আদি প্রথম শক্তি । কেবল মানুষ নয়, দেবী ইশতার পশুপাখির জন্যও উর্বরতা বৃদ্ধি করেন ।
দেবী ইশতার-এর বাবা চন্দ্রদেব, মা আনতুম, ভাই
সূর্যদেব শামস ও বোন পাতালের রাণী ইরিশকিগাল । দেবী ইশতার-এর বাহন সিংহ, দেবী সিংহের পিঠে চড়ে
যুদ্ধ করতেন, হাতে ধনুক ও তূণ ভর্তি
তীর । প্রতীক অস্টকোণ তারকা, গ্রহ শুক্র এবং সংখ্যা পনেরো । কখন
তিনি দশভুজা, কখনো
চতুর্ভূজা । কখনো তিনি সর্প ও বল্লম বা ত্রিশূলধারিণী । কি অপরূপ মিল আমাদের দেবী
দুর্গার সঙ্গে ।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার দেবী ইশতার-এর ধারণা থেকেই পরবর্তী সময়ে গ্রিক
যৌনতার দেবী আফ্রোদিতি, রোমান
সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস, ফ্রিজিয়ার প্রকৃতি দেবী
সিবিলিও, ফিনিশিয়দের স্বর্গের
রানী আসতারতে-এর আবির্ভাব ।
মিশরীয় পুরাণে সূর্য-দেবতা রা, রহস্যময়
দেবতা আমুন, এবং মাতৃ দেবী আইসিস । প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের অন্যতম
প্রধান দেবী হাথোর । আকাশের দেবী হাথোর
ছিলেন আকাশ-দেবতা হোরাস এবং সূর্যদেবতা রা-এর মা । দেবী
হাথোরকে মিশরে ফ্যারাও-দের প্রতীকী মাতা বলে মানা হত । কিছু দেবীকে রা-এর চোখ
অর্থাৎ রা-এর নারী প্রতিমূর্তি চক্ষুদেবী হিসেবে উপাসনা করা হত, হাথোর
তাঁদেরও অন্যতম ছিলেন । প্রাচীন মিশরে বহু ক্ষেত্রেই হাথোর এক গো-রূপিণী দেবী । এই রূপটি
ছিল তাঁর মাতৃত্ব ও স্বর্গীয় সত্ত্বার প্রতীক। অবশ্য হাথোরের যে রূপটি সর্বাধিক
পরিচিত, সেটি গোরুর শিং ও সৌর চাকতি-সংবলিত শিরস্ত্রাণ
পরিহিত এক নারী । এছাড়া সিংহী, গোখরো সাপ ও সাইকামোর গাছকেও দেবী হাথোরের প্রতীক মনে
করা হত ।
অনেকটা হিন্দুধর্মে দেবী জগদ্ধাত্রীর রূপ ।
জগদ্ধাত্রীকে বলা হয় জগতের ধারণকর্ত্রী। ব্যাপক অর্থে দুর্গা, কালীসহ
সকল শাক্ত দেবীই জগদ্ধাত্রী রূপে পরিচিত। উপনিষদে জগদ্ধাত্রীকে বলা হয়েছে উমা
হৈমবতী । পুরাণের জগদ্ধাত্রী সিংহের স্কন্ধে বসে আছেন ।
সালঙ্করা দেবীর গলায় ঝুলছে নাগযজ্ঞোপবীত । চারটি হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, ধনু ও
বাণ । দেবী সত্ত্বগুণের প্রতীক, তাই প্রভাতের সূর্যের মতো তাঁর গাত্রবর্ণ কমলা রঙের ।
ভারতীয় সভ্যতায় দেবী
সরস্বতী যেমন । কখনো নদীমাতৃক সভ্যতায় নিহিত বহমান নদী । আবার জ্ঞানচর্চার অঙ্গনে
তিনি সমস্ত জ্ঞানের আকর, সঙ্গীতে শ্রেষ্ঠা । শ্বেতপদ্মের ওপর স্নিগ্ধ প্রখর মেধাবী
নারী । ঋক্বেদের দেবীসূক্তে বা দশম মণ্ডলের ১২৫ সূক্তে
অম্ভৃণ-তনয়া বাক্ দেবীর আদিশ্লোক উচ্চারণ করছেন ।
আশ্চর্য এই যে, এই দেবী শ্রমণদেরও । বৌদ্ধ সংস্কৃতির হাত ধরে সরস্বতী
গিয়ে পৌঁছেছেন চিনে । সেখানে
তিনি মঞ্জুশ্রী নামে পূজিত । মঞ্জুশ্রী বিদ্যার দেবতা । অবশ্য বৌদ্ধধর্মে মহাযান
শাখায় মঞ্জুশ্রী একজন পুরুষ দেবতা । বুদ্ধের তেরোজন অবতারের অন্যতম ।
চিন,
তিব্বত, রেঙ্গুন থেকে গোটা
এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল মঞ্জুশ্রী আরাধনা । বৌদ্ধদের হাত ধরে ভারতীয় সরস্বতী
গিয়েছেন জাপানেও । সেখানে তিনি দেবী । নাম বেঞ্জাইতেন । জাপানে বেঞ্জাইতেন এসেছেন
ষষ্ঠ শতাব্দীতে । পদ্মাসনা দেবী যা কিছু বহমান তার দেবী । জলের ধারা, নদী, সঙ্গীত, সুর, জ্ঞান আর কাব্যের দেবী ।
বৌদ্ধদের দ্বারা পূজিতা দেবী বেঞ্জাইতেন জাপানের প্রাচীন সনাতন ধর্ম শিনটো
ধর্মগ্রন্থেও সমানভাবে সম্মান পেয়েছেন ।
পৃথিবীর যেখানেই মূর্তিপুজোর প্রচলন ছিল সেখানেই জ্ঞানের
দেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে । এবং অধিকাংশ
সভ্যতায় তিনি নারী । নারীশক্তি । মিশরীয় সভ্যতার নেইথ, শেসাথ্
এবং ইসিস্, সুমেরিয়ান
সভ্যতার নিসাবা, জাপানী
সভ্যতার বেঞ্জাইতেন, রোম সভ্যতার প্রভিদেন্তিয়া এবং মিনার্ভা, ইট্রাসানিয়ান
সভ্যতার মিনার্ভা, নোস্টিক
সভ্যতার সোফিয়া, গ্রিক সভ্যতার এথেনা, পার্সিয়ান
সভ্যতার আনহিতা, নরসে সভ্যতার সাগা, ভর, স্নোত্রা
এবং গেফ্জন, ভারতীয় সভ্যতায় দেবী সরস্বতী । এঁরা
প্রত্যেকেই জ্ঞানের দেবী ।
শিল্পকলার দেবী ।
নারীর ক্ষমতায়নের অর্থ সিদ্ধান্ত গ্রহণের
প্রক্রিয়ার নারীকে একে গ্রহণ করা এবং তাঁদের অনুমতি দেওয়া । ক্ষমতায়ন হল একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির নিজের জীবন, সমাজ
এবং নিজের সম্প্রদায়ে ক্ষমতা সৃষ্টি করে । লিঙ্গ
সমতা এবং ক্ষমতায়ন না থাকলে দেশে ন্যায়বিচার হতে পারে না এবং সামাজিক পরিবর্তন
ঘটে না । সমাজের উন্নয়নে নারীদের সমানভাবে অন্তর্ভুক্ত না করলে সমাজের বাস্তবিক
উন্নতি ঘটে না ।
ইতিহাসের সত্য এই যে, প্রাচীন
ভারতের আরণ্যক সভ্যতার যুগে আমরা যে সমস্ত জ্ঞানজ্যোতি বিভাসিতা মহীয়সী মহিলাদের
বেদমন্ত্ররচয়িত্রীরূপে দেখতে পাই, তাঁদের নারী-ক্ষমতায়নের অগ্রদূত বলা যেতেই পারে ।
ঋগ্বেদের যুগে সাতাশ জন ঋষিকবির নাম ও পরিচয় পাওয়া যায় । ঘোষা, গোধা, বিশ্ববারা, অপালা, উপনিষৎ, নিষৎ, জুহু, অদিতি, ইন্দ্রাণী, ইন্দ্রমাতা, সরমা, রোমশা, উর্বশী, লোপামুদ্রা, নদীগণ, যমী, নারী, শাশ্বতী, শ্রী, লাক্ষা, সর্পরাজ্ঞী, বাক্, শ্রদ্ধা, মেধা, দক্ষিণা, সূর্যা, সাবিত্রী
।
এই তালিকার বাইরেও শচী, বসুত্রুজায়া
প্রভৃতি নারীর রচিত বেদমন্ত্র ঋগ্বেদে এবং অন্যান্য বেদে পাওয়া যায় । ঋগ্বেদের
দেবীসূক্তের রচয়িত্রী অম্ভৃণঋষিকন্যা বাক্ নিজেকে ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্মবোধে
স্বর্গমর্ত্যের অধিষ্ঠাত্রী বলে অপূর্ব ওজস্বিনী ভাষায় ঘোষণা করেছেন । সূর্যকন্যা
সূর্যা, দেবমাতা অদিতি, কুক্কুরমাতা
সরমা, ইন্দ্রপত্নী ইন্দ্রাণী সাপেদের রাণী সর্পরাজ্ঞী কিংবা
কক্ষীবান-কন্যা ঘোষা, অত্রিকন্যা অপালা, বৃহস্পতিকন্যা
রোমশা, অগস্ত্যপত্নী বিদর্ভরাজকন্যা লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা, শাশ্বতী
এবং গোধানাম্নী বিভিন্ন ঋষিপত্নী এবং ঋষিকন্যার রচনা পড়ে এটুকু বেশ বোঝা যায় যে, ‘সা
বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে' কথাটা
সেদিনের ভারতবর্ষ বিশ্বাস করত ।
এমনকি বৈদিক যুগে এবং পৌরাণিক যুগের প্রথমদিকে মেয়েদের পুরুষদের
মতোই বাল্যে ব্রহ্মচর্য পালন করে পতি লাভ করতে হত ।
পৌরাণিক যুগের শুরুর দিকে বিদেহরাজ জনকের রাজসভায়, সে যুগের সেই সর্বশ্রেষ্ঠ
ধর্মমহাসভায় ভারতবিখ্যাত ঋষি ও পণ্ডিতমহামণ্ডলীর মধ্যে বালব্রহ্মচারিণী
ক্ষত্রিয়া নারী সুলভা রাজর্ষি ধর্মধ্বজের সঙ্গে দার্শনিক বিচারে প্রবৃত্তা
হয়েছিলেন । এই সুলভা একাকিনী পৃথিবী পরিভ্রমণ করেছিলেন, সর্ববেদ-পারঙ্গমা এবং যোগসিদ্ধা ছিলেন ।
ঐতিহাসিক সত্য এই যে, বৌদ্ধধর্মে
‘থেরীগাথা’ নামক
গাথা-সংগ্রহে প্রথম যুগের তিয়াত্তর জন থেরীর রচনা পাওয়া যায় । তাঁদের মধ্যে
পূর্ণা, ভিষ্যা, ধীরা, মিত্র, ভদ্রা, উপশমা, মুক্তা, ধর্মদণ্ডা, বিশাখা, সুমনা, উত্তরা, ধার্ম, সঙ্ঘা, জয়ন্তী, আঢ্য
কাশী (বা অর্ধকাশী) চিত্রা, মিত্রিকা, অভয়া, শ্যামা, উত্তমা, দন্তিকা, শুক্লা, শৈলা, সোমা, কপিলা, বিমলা, সিংহা, নন্দা, মিত্রকালী, বকুল, সোনা, চন্দ্রা, পটাচারা, বাশিষ্ঠী, ক্ষেমা, সুজাতা, অনুপমা, মহাপ্রজাবতী
গৌতমী, গুপ্তা, বিজয়া, চালা, উপচালা, বৃদ্ধমাতা, কৃশা
গোতমী, উৎপলবর্ণা, পূর্ণিমা, অম্বপালী, রোহিণী, চম্পা, সুন্দরী, শুভ্রা, ঋষিদাসী, সুমেধা
উল্লেখযোগ্য । ‘থেরী’ অর্থে স্থবিরা বৌদ্ধ তপস্বিনী, এঁদের
মধ্যে অনেকে বুদ্ধদেবের জীবিতকালেই গাথা রচনা করেছিলেন ।
থেরী-গাথা ছাড়াও হীনযান বৌদ্ধদের জাতকগুলিতে
পালিভাষায় এবং মহাযানী বৌদ্ধদের বোধিসত্ত্বাবদান-মালা ও জাতকমালার সংস্কৃত ভাষায়
আমরা সেযুগের বহু মহীয়সী নারীর পরিচয় পাই । তাঁদের মধ্যে কাশীরাজ কৃকীর কন্যা
মালিনী এবং কুমার কাশ্যপের মায়ের নাম উল্লেখযোগ্য।
প্রাচীন যুগের বিদুষী নারী, যথা অর্থে
ক্ষমতাময়ীদের কথা অন্যান্য দেশের ইতিহাসেও আছে । আজ থেকে পাঁচ ছ’হাজার বছর আগে
মিশরের নারী পুরোহিতরা সুপণ্ডিত এবং ভবিষ্যদ্বক্তা বলে বিখ্যাত ছিলেন । বহু সহস্র
বৎসর ধরে মিশরে এই পুরোহিতদের প্রাধান্য অক্ষুন্ন ছিল ।
খৃষ্টের আড়াইহাজার বছর আগে আসিরিয়া সম্রাজ্ঞী
সেমিরাসিস রূপে গুণে বীর্যে এবং পাণ্ডিত্যে অতুলনীয়া ছিলেন ।
খৃষ্টের প্রায় তেরোশ’ বছর আগে এশিয়া
মাইনরে ইলিয়াম নগরে বহু বিদুষী নারী ছিলেন, তন্মধ্যে
রাজা প্রিয়ামের কন্যা কাসতা ভবিষ্যদ্বক্তারূপে বিখ্যাত ছিলেন । গ্রীসদেশে নারী
পুরোহিত, সন্ত্রান্তবংশীয়া নারী এবং গণিকাদের মধ্যে বিদ্যা
এবং কলাচর্চা ভারতবর্ষের মতোই প্রবল ছিল । পেরিক্লিসের প্রিয়তমা অস্পেসিয়া তাঁর
পাণ্ডিত্য, সৌন্দর্যবোধ এবং একনিষ্ঠ প্রেম পেরিক্লিসের প্রেরণার
উৎস ছিলেন । এথেন্সের চরম গৌরবের দিনে শিল্পে স্থাপত্যে তার চরম উন্নতি ঘটেছিল
নারীর প্রভাবে । খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ‘সাফো’ নাম্নী এক
বিদুষী ছন্দের প্রবর্তন করে বিখ্যাত হন ।
খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া নগর ছিল
পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার
জ্ঞানতীর্থ। শেষ স্বাধীন সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রার সময়ে আমরা মিশরদেশের পরিপূর্ণ
দীপ্তির এক নারীকে দেখতে পাই ।
প্রাগৈতিহাসিক চীনের নারীতন্ত্র সমাজ সভ্যতাবৃদ্ধির
সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছিল, সেখানে দীর্ঘকাল
পর্যন্ত মেয়েরা রাজসভার সভাসদ
এবং রাজপুরুষদের দায়িত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হতেন, তার
প্রমাণ আছে ।
প্রাচীন কালে যে সব বিদুষী আরব নারীদের পরিচয় পাওয়া
যায় তাদের মধ্যে পালমিরার রাণী পূর্বদেশের সম্রাজ্ঞী জেনোবিয়ার নাম সব চেয়ে
উল্লেখযোগ্য ।
তুর্কী নারী লেখিকাদের মধ্যে পঞ্চদশ শতাব্দীতে জয়নাব
ও মিহরী খ্যাতি লাভ করেছিলেন ।
এমন আরো কত উদাহরণ যে দেওয়া যায়!
পুরাণের নারী-শক্তির কথা বলতে গিয়ে এই যে ঐতিহাসিক
নারীদের কথা চলে এল, তা অপ্রাসঙ্গিক নয় ।
বিভিন্ন দেশের পুরাণে দেব-দেবীদের আবির্ভাব-উপাখ্যানের
কাহিনী যেমনভাবে লেখা আছে, আজকের
বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ তাকে অবাস্তব কল্পকাহিনী মনে করতেই পারে । কিন্তু গবেষকরা মনে
করেন যে, পুরাণকাহিনীর প্রধান
উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক সত্যতা প্রচার ছিল না । বরং এই পুরাণ সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং আধ্যাত্মিক
তাত্পর্য নিয়ে ভবিষ্যতের মানুষের কাছে একটা দলিল । আর ইতিহাসের নারীদের যে
প্রামাণ্য দলিল, তা থেকে পৌরাণিক নারীদের
ক্ষমতার সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
পৌরাণিক আখ্যানে দেবীশক্তির আধারে নারীশক্তি বা উইমেন
এমপাওয়ারমেণ্টের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল দশমহাবিদ্যা । মহাভাগবতে সতী থেকে দুর্গা
বিবর্তনের দশটি রূপ । এই দশমহাবিদ্যা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা,
ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা । এই মহাবিদ্যারা
নিজ নিজ গুণে সমৃদ্ধি লাভ করেছেন,
পুজিতা হয়েছেন ।
সংস্কৃত ‘মহা’ শব্দের অর্থ মহান এবং ‘বিদ্যা’ শব্দের অর্থ জ্ঞান । দশমহাবিদ্যার প্রতিটি রূপের আলাদা
শক্তি প্রমাণ করে যে পুরুষ-শক্তির চেয়ে নারীশক্তি ক্ষমতাশালী । শুভঙ্করী এবং
ভয়ঙ্করীও বটে । সংহার থেকে সৃষ্টি,
মানবজীবনে নারী-শক্তির ভূমিকা অপরিসীম ।
পুরাণের সংগ্রাম কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমাদের
অন্তর্জগতের নিরন্তর শুভ-অশুভ সংগ্রামের কথা । ‘দানব’ কারা? তারা
লোভ, ভীরুতা, স্বার্থপরতা,
সঙ্কীর্ণতা । আর ‘দেব’? আমাদের অন্তরের শুভ শক্তি । ‘দেবী’শক্তি
তেমনই নারীর জাগরণের সত্য, নারীর প্রকৃত ক্ষমতার বৃত্তান্ত, যাকে
অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করা যায় না ।
মাতৃশক্তি শুধু
মানব-সন্তানের পথ-নির্দেশের
কাজ করে নি, তা বহু সময়ই
যুগ-নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে । আজ তাই পুরাণের নারীচরিত্রদের নবরূপে, ভিন্ন
দৃষ্টিভঙ্গিতে সমকালীন সমাজের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নারীর-শক্তির অন্তর্নিহিত দর্শন
অনুধাবনের সময় এসেছে, যার আবেদন মানুষের জীবনে সর্বজনীন, চিরন্তন
।
-----------------------
তথ্যসূত্র:
বিভিন্ন পুরাণ
উদ্বোধন পত্রিকা
পশ্চিমবঙ্গের লোকসংস্কৃতি – ড: সুধীররঞ্জন দাস
বাংলার বনদেবতা – ড: সুহৃদকুমার ভৌমিক
রামায়ণ কৃত্তিবাস বিরচিত - হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়
সম্পাদিত ও ড: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখিত ভূমিকা সম্বলিত, সাহিত্য
সংসদ কলকাতা, ১৯৫৭ সংস্করণ
Religion
and Folklore of Northern India - W. Crooke
হিন্দু সভ্যতার
নৃতাত্ত্বিক ভাষা – ড: অতুল সুর
বঙ্গসংস্কৃতিতে
প্রাক-বৈদিক প্রভাব – শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে
দেবী দুর্গা – স্বামী
আত্মবোধানন্দ
সাহিত্যে নারী: স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
প্রাচীন কথা – ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী
ইন্টারনেটে উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন পাতা
0 মন্তব্যসমূহ