সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

রিতা মিত্র:ভ্রমণ:শ্রীকরণি মাতা মন্দির

 


শ্রীকরণি মাতা মন্দির


 

রাজস্থানের প্রসিদ্ধ মন্দির গুলির মধ্যে করণি মাতা মন্দির উল্লেখযোগ্য। এটি বিকানের জেলায় পড়ে। শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। 

  আমরা একটা অটো বুক করে মন্দির দর্শনে বেরোলাম। দলের সদস্য সাড়ে চারজন। মানে চারজন প্রাপ্ত বয়স্ক ও একটি শিশু। শহরের অলিগলি পেরিয়ে এবার আমাদের অটো খোলা প্রান্তরে। চারিদিকে মরুময় জমি। মাইলের পর মাইল। কিছু বাবলা গাছ ও কিছু অন্যান্য ঝোপ জাতীয় গাছ দেখা যায়। ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। কিছু ছাগল ঝোপের মাথায় উঠে পড়েছে। ছাগলের ছাগলামি একেই বলে হয়তো। 

পাশ দিয়ে রেললাইন চলে গেছে। কাছের স্টেশনের নাম 'দেশনোক'। বিকানের আশার সময় ট্রেন থেকে এই স্টেশনটি চোখে পড়েছিল। 

গাড়িও দাঁড়িয়ে ছিল মিনিট দশেক। ইচ্ছে করলে ট্রেনে করেও বিকানের ফেরা যেতে পারে। 

অটো মন্দির থেকে দূরে দাঁড় করিয়ে হেঁটে এলাম  মন্দিরের কাছে। কিন্তু প্রবেশ করা ধৈর্য্য ব্যাপার লম্বা লাইন তাও শক্ত লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি জিকজেক পথ মহিলা ও পুরুষ আলাদা আলাদা লাইন। 

এই নবরাত্রির সময় বলে হয়তো এত ভীড়। নাকি সারা বছর ধরে এমন ভীড় থাকে  কে জানে।রঙিন চাঁদোয়া দিয়ে পু্রো প্রাঙ্গন ঢাকা।  সোনালি রুপালি চিকিমিকি ঝালর গুলো হাওয়া উঠছে আর তাতে রোদ পড়ে আরো চিকমিক করছে। খেলনা, বেলুন আরো নানান জিনিসের পসরা চারিদিকে। এত লোক এই মরুর বুকে কোথায় বাস করে। আশ্চর্য লাগে। 

মিঠু আমাদের ভ্রমণ সঙ্গি কায়দা করে এগিয়ে গেল আমিও পিছু নিলাম। ভগবান মাফ করবেন। যা লাইন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আমরা দূর অঞ্চল থেকে এসেছি । 

  এই করণি মাতা মন্দির আসলে ইন্দুরের মন্দির। প্রায় কুড়ি হাজার কালো, ধূসর ইন্দুরের বসবাস এই মন্দিরে। 

পা রাখার জায়গায় নেই। পায়ের উপর দিয়ে পোঁ পোঁ করে ছুটছে ইন্দুরগুলো। 

কয়েক জন আমাদের মতো বহিরাগত মহিলা ই আই উ শব্দ করতেই লোকাল মহিলারা হাসাহাসি শুরু করলেন। কয়েকজন আবার বললেন চুপ করে লাইন ধরে এগোতে এখানকার ইন্দুর নাকি কোনো ক্ষতি করে না। 

তবে আপনাকে খুব সাবধানে পা ফেলে হাঁটতে হবে। যদি আপনার পা ইঁদুরের ঘাড়ে পড়ে আর তার প্রাণান্ত হয় তাহলে সাজা পেতে হবে। 

সাজা হল নিরেট রুপো দিয়ে ইঁদুর গড়ে মন্দিরে দান দিতে হবে। এটাই সেখানকার বিধি। 

ইঁদুরকে এখানে কাব্বাস বলে। খুব জাগ্রত দেবী বলে মনে করেন এখানকার মানুষ তাই দূর দুরান্ত থেকে পুজো দিতে আসেন। 

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকের হাতে পুজোর ডালা। এখানে দেবীকে মদ উৎসর্গ করা হয়। তাই অনেকের হাতে বিলিতি মদের বোতল আছে লক্ষ্য করলাম। 

 আমরা প্রায় এক পাক ঘুরে দেবী মূর্তির সামনে আসলাম। 

 মন্দিরটি খুব বড়ো নয় বিংশ শতাব্দীতে মহারাজা গঙ্গা সিংহ মন্দির নির্মাণ করেন। তোরণ দ্বার নিরেট রুপোর। প্যানেল দরজা। দরজার উপর নানান দেবদেবীর মূর্তি উৎকীর্ণ করা আছে। 

মন্দিরের গর্ভগৃহে করণি মাতার মূর্তি। বেদির উপরে রুপোর বেশ বড়ো আকারের একটি ইঁদুরের মূর্তি। সকলে ভক্তি ভরে পূজো দিচ্ছে আমরাও মাতার চরণে মাথা ঠেকালাম। 

 মন্দির নিয়ে কিংবদন্তি এই যে -- -করণি মাতার সৎ ছেলে কপি সরবরে জল খেতে গিয়ে ডুবে যান। যমরাজের কাছে করণি মাতা পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে প্রার্থনা করেন। যমরাজ রাজি হলেন কিন্তু মৃত ছেলে ও আরো অন্যান্য ছেলের প্রাণ ফিরিয়ে দিলেও তাদের ইঁদুরে রুপান্তরিত করেন। সেই ইঁদুরেরা মন্দিরে আশ্রয় প্রাপ্ত। 

 আরেকটি মতে --- কুড়ি হাজার সেনা যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ভয়ে পালিয়ে দেশনোক নামক এই প্রান্তে আশ্রয় নেয়। করণি মাতা রেগে তাদের শাস্তি দেন এবং ইঁদুরের রুপান্তরিত করেন। 

 এখানে  দু চারটে সাদা ইঁদুর আছে। তার দর্শন পেলাম। 

লোক মতে এনারা করণি মাতা ও তার ছেলেপিলে। 

মন্দির দর্শন করে বাইরে বেরোতেই ভিখারিদের উৎপাত। পারে তো হাইজ্যাক করে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্যবতী কতগুলো মহিলা ছেঁকে ধরে আবদার কুড়ি টাকা করে দিতেই হবে। সে পারে তো ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে টাকা বার করে নেয়। মিঠু বলে উঠলো ' হামলোগ ঘুমনে আয়ে হ্যাঁ, প্যায়সা খতম হো গয়া। আপলোগ হামলোগ কো দশ দশ রুপিয়া দিজিয়ে'। 

দূর থেকে অটো ড্রাইভর এই তামাশা দেখে এগিয়ে এলো। লোকাল ভাষায় কত কীযে বলল বুঝলাম না। তবে ভিখিরি গুলো সরে গেল। আমি যেহেতু হিন্দি বুঝি তাই কিছু টা আন্দাজ করলাম যে ড্রাইভর তাদের বলছে যে এরা আমাদের অতিথি। এরা এলে আমাদের রোজগার হয় আর তোমরা এমন অসভ্যতা করছ। অতিথিরা যা ভালো মনে দেবেন সেটাই নাও। এমন আচরণ করলে আমাদের জাতের আমাদের রাজ্যের বদনাম হবে। 

এরমধ্যে একটা নেঙটোপোঁদা বাচ্চা ছেলে কাপড় ধরে টানতে লাগল। বললাম ক্যায়া চাহিয়ে? তেনার আব্দার আইস্ক্রিম কিনে দিতে হবে। দশ টাকার একটা দিলাম কিনে। খুব খুশি। কিন্তু মুশকিল হল তাকে দেখে  এবার যে বানর সেনা ধেয়ে আসছে। কতজনকে দিতে পারা যায়? তাই আটোতে উঠে পগারপার। 

 


রিতা মিত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ