অমরাবতীর সিন্ধু রাগ
তাহলে কবি হে কবির মতো করে বলো :
তুমি আকাশের কোন আড়ালে ছিলে বলো না ওগো বলো না
চুপি চুপি যেই রাত এলিয়ে আছে সে যে ছলনা ওগো ছলনা
ঘরের টবে শুধু ফুটেছো তা নয় ফুটেছ মনের কিনারে যেনো
খুশি আর হাসি বিন্দু বিন্দু ঝরে অবিরাম চোখে কেন
চেতনা ভরিয়ে তোমারি ঝরে যাওয়া টুপটাপ
চেতনা জাগিয়ে এই তো কাছে পাওয়া চুপচাপ
চুনকাঁকরের স্তর খুঁজে পেয়ে তোমরা আহ্লাদিত। চোখের নিহিত বোকেহ থেকে শুখো হল্কা। বাবা লিখেছিল বিষণ্ণতার চত্বর। আর পণ করে ফেলি মনে মনে কবিতা পুড়িয়ে পোড়া কবিতার মাটি হব। মাইক্রোলিথ সরঞ্জামের সঙ্গে তারাপতন জুড়ে গেছে জিওল আঠার বেলায়। জন্তুরা হাড় মেলে ধরে হাসছে। কঙ্কাল গীতি গীতিকবিতার আদরে মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। কবর ঠেলে কঙ্কালটি ছুটছে শক্তিসঙ্ঘের মঞ্চে।
'হেই আপনি কি গৌরের নিতাই?
হ্যাঁ বলুন
আপনি কি লরেলের হার্ডি?
হ্যারি পটারের রন?
উত্তমগ্রাম থেকে মধ্যমগ্রাম পৌঁছে যেতেন?
এখন বাতিল সৈনিক।
এই ইয়ারোবাড়ি লোনা জলে ডুবে ছিল ষাটটি বছর। স্বপ্নিল নৌকো থেকে কষ্টের জল ছেঁচে পৌঁছে যেতাম স্বপ্নের ভিতর। কালো ছোটো গ্রিলে প্রস্তরযুগের কুয়াশা। গোল গাড়িবারান্দার ধ্রুপদী সঙ্গীত। এখানেই রাঙা করতল, দোলায়িত রুমাল।
আরো কিছু রাত তুমি জাগতে যদি দেখতে গো কত তারা ( বিরিয়ানি সেন্টার) জ্বলছে। একটাই পিচ রাস্তার নিঃশ্বাস থানাসহ বুকে থৈ থৈ। অশ্রু ফোঁটায় এইচ টু ও এসে ধ্বংস করছে অশ্রুর পবিত্রতা। নিয়মিত চশমার কাঁচ বেয়ে পায়রারা উড়ে যায়। শুনলাম শিথিল বাতাসের ইন্দ্রধনু নাগতলায় থাকে। তাঁর হাত পা স্বর্ণকুমারীর হাঁড়িকাঠে বলি প্রদত্ত। আমি তো তাম্রকুমারী।
পূর্বজননী কণকলতা শিকড় মেলে ছিল ঘিভাতে মাংস ভাতে। তাঁর প্রবীরপুত্র প্রেমরতনধন গায় নাগতলায়। গভীরতম জাম গাছ আর চড়কডাঙার মাঠ শালিখপাখিদের আর চরতে দেয় না। সবুজ মাঠের ভূতেরা খালি হাসে স্কুলের কঙ্কালটিরও অনেক বয়স হল। ঝিল পাখিরা স্তব করে। বারান্দায় রুমাল শুকোয়। কালো বার্নিশ দরজার চির বদ্ধ সংলাপ। আবাল্যবন্ধুর কাজ ঠিকানা না রাখা। শুধু চিঠি ঝরে পড়ে বলাকার ডানা থেকে।
নক্ষত্রের মৃত্যুর পর অমরাবতীর ফুল সওগাত এল।
আঁছোয়া হাতের লেখা
আছোঁয়া আঙুল
বরষার জল পেয়ে জেগে
ওঠে লোমকূপ মূল।
মুঠো মুঠো পরিযায়ী পাখি বন্দী। শরবন ভেঙে তছনছ। লিলিপুটের মাংসে পেট ভরে কি? কানামাছিদের উৎপাতে খেলা লন্ডভন্ড। হোলী তছনছ। হেমা মালিনী কাঁচ ভাঙা পায়ে লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রী।
জোড়া স্তনের মাঝখান চিরে বেরিয়ে গিয়েছে মহিয়াড়ি রোড। প্রেস কলোনির আনাচে কানাচে অভিমানী রুমাল। আমানতী রুমাল। রুমাল ও বিড়ালের ল সম্পর্কিত মিল দেখে শিহরিত। সৌভাগ্য মাধ্বীস্নান করায় আমাকে। বেণীমাধবের মাধবীরূপ পেলাম বিভিন্ন কম্পাঙ্কে দুলে দুলে। সত্যিকারের শূন্যর পিছনে ধাওয়া করি। কলিংবেলের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কেমন যেন মহাজাগতিক স্পর্শ দেয় বুকে। সহজ রমণী হে মথুরানগরপতি কহে তুম গোকুল যাও। পরিযায়ী পাখির প্রেমিকা স্থানীয় বুলবুলি। তামামুদ্রার পাখি বিজিত লরেল পাতায় মুখ মুছে নেয়। দ্বিতল বাটিকায় সোনিয়া নামের ভাইঝি নাচ মুদ্রায় ভাঙে। কষ্টের দিকে পাশ ফিরে ঘুমোয় বালিকা বিদ্যালয়। আভাদি রেগে আছে। বীথিকাদি বুড়িগঙ্গা। শীলাবাদরধারার শীলা পিচ পথে ছুঁড়তে ছুঁড়তে পিছনে দৌড়োই। ঘুম ভাঙলে দেখব পরিযায়ী পাখিরা মাথার ভিতর স্বপ্ন সব ঠুকরে ঠুকরে মেরে রেখেছে।
নাহ্ কে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে । দেখাতে পারে না কেউ নূপুরচিহ্ন টিকলিচিহ্ন কবিতাঅভিজ্ঞান অথবা দশ কম্যান্ডমেন্টস। মঙ্গলের নভোশ্চারিনীর মতো হঠাৎ মনে জোয়ার নিজেকে হারানোর। হিসেবের চাঁদমালা গলায় বিদায় এসে পড়ে। 'তু অবসে পহলে সিতারোঁমে বস রহী থী কঁহি' -- হাঁটুতে থুতনি লাগিয়ে বসে থাকে। রাখীর খয়েরি চোখ ঝিলের পানকৌড়ি। খুব আভারী রয়ে যাই প্রকৃত বেকরার দিল ও বসন্তরোদনের ভিতর।
আগাছাদেশ বেড়েছে জলকমলের অসমাপ্ত মানচিত্র ধরে হাঁটতে হাঁটতে। সেই দেশ যার উত্তরে রাজা মরেছে বলে গ্রাম সুদ্ধ লোক কবরে যেত। যাবতীয় স্মৃতি এখন বদহজমের ছোঁয়া ঢেকুর। কথা তো বলি কখনো মনে মনে কখনো ময়ূরের পেখমে। জড়িয়ে যায় তোমার আঙুলে আমার কপালের চুল। ভুস করে ভেসে ওঠে মেট্রো মহল অথবা প্যারাডাইস। ততটুকুই অশ্রু যতটুকু আর্কিমিডিস দেখেছেন উঠছে পড়া জলে। বোকা ঝিল ততোধিক বোকা ঝিলের জলজ হায়াসিনথ। ফার্নের মুকুটপরা পরী আসার পর স্বপ্ন আর এগোয় নি।
0 মন্তব্যসমূহ