সান্ধ্যবৈঠক
১
গান গুঁজে মা এক তারাকে
শোয়াচ্ছে
সুরের ফিনকি জিভে
মৃত বোঁটা মাকেও জাগায়
২
গানের আহত যোনি
শুশ্রূষা চাইছে
ফিরে আসা ডাকনাম
কিছুতেই দরজা পাচ্ছে না
৩
মাটির অনেক নিচে হাড়
নেভা সুরের কাঠামো
ইন্ধন দিচ্ছে গান
গলিত মাংসের নিচে
সান্ধ্যবৈঠক
৪
সা পর্যন্ত সকাল। কান
বেজে লাল হচ্ছে
মা কোমলের। দুই মৃত
দেহের মধ্যাহ্ন
কাচ কাটে মৃত দুই দেহের
ধৈবত
৫
গান তামার বরফ। তার
ঠোঁটে ভিক্ষে করছে অভিনয়
৬
বোবা আলো গানের ঝিঁঝিট
লম্বা হচ্ছে ছায়া নেভা
জিভে
৭
ডুবে যাওয়া গানের
হাঁসফাঁস
ঢেউ উপড়ে তুলছে লাল শ্বাসের
ঝিনুক
৮
বুনো লতাপাতা গানই
লিখছে। জিভের আলতো
ভাঙা সিপাহিশালার টং
রপ্ত করছে লাল সুরের
সারং
৯
গানের স্তনেও কুহু।
বোঁটার ভ্রুকুটি
যোনি ভ্রমের শালুক
ডাকনাম ঝুঁকে ঝুঁকে
ঠাওর করছে ভাঙা দেশ
১০
গান মুখে পিঁপড়ে ফিরছে
সূর্যাস্ত এমনই ছায়ানট।
আলের হিজাব
১১
গানের নৌকায় সাঁই
রাত্রি বোলাচ্ছে
ভোরের যকৃত ফুটে নদীর
আজান
১২
হত্যাও গানে বোজা
ধ্বনির ধাতব
সামান্য চাঁদের শীত
গুল্মের নিচে লাল
স্রোতের ধুনুরি
১৩
ফুরোনো চিঠির রং
মাংসবর্ষের
কীট আত্মসাৎ করছে ভাঙা
গানে
১৪
ঘুমোনো দরজার নিচে
লোহার পাণ্ডুলিপি
গুঁজে দিচ্ছে গানের
কাতান
১৫
আকাশ কোদাল। গাঁইতিসমেত
হাওয়া
শুশুকের মৃত জিভে হাঁপ
তোলে গানের কঙ্কাল
১৬
বালি খুঁড়ে ফেলছে
চাঁদের কুকুর
থাাবায় ব্যথার রাত।
গানের জখম
১৭
তবলার মণি থেকে সা
স্বরের পাগল
গান দুরভিসন্ধির ছেঁড়া
হাঁস
ভাঙা ঠোঁটে রেখার পূরবি
১৮
খুনে পিয়ানোয় মমি
নিজেকে বাজাচ্ছে
রিড সাদাকালো রাতের
লেগুন
১৯
গানের দোনলা থেকে পাখি
ছুড়ি
পাখির পেতল ওড়ে।
সিঁধকাটা লোহার আকাশ
২০
তোমার মৃত্যুর নিচে
দোনলা বন্দুক
মাথা রেখো। বাঁটে গানের
সামান্য
ঘুমিয়ে পড়ো না
--------------------------------------
ছবি ঋণ: গুগল
7 মন্তব্যসমূহ
খুব ভালো লাগলো সমীরণ দা | এখানে তুমি তোমার ভাবনাকে ছোট ছোট কবিতাংশ- এর মধ্যে দিয়ে যে নতুন ভাবে ট্রিটমেন্ট করেছো , সেটা খুব ভালো লাগলো | সমস্ত লেখা মিলিয়ে এক নতুন বাঁক বদলের স্বাদ পেলাম ۔۔۔ খুব ভালো লাগলো ❤
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনকথা ও সুর যে বাঁধা, বিবাহ যার হাতে, নির্মেদ শব্দক্ষেপণে তা পৌঁছে দিচ্ছে রাগ-রাগিনীর মধ্য দিয়ে আলো থেকে কালোগর্তে। গানমুখে যেন যাত্রা করছে এক নির্মম সত্য। এই গান আমি দুদিক দিয়েই ব্যবহার করতে চাইবো। সে কখনো প্রতীকদানায় ভেসে ওঠা সূক্ষ কোলাজ, কখনো ব্যথা বেদনার হোমাগ্নি। সে ঘুমোতে দ্যায় না, স্মরণ করায় এই তান বেজে উঠছে এক সত্যের আঁধারে। এই কলমের প্রতি আমার অসীম শ্রদ্ধা। সমীরণদা ভালোবাসা। সব্যসাচী হাজরা
উত্তরমুছুনআপনার লেখা পড়ে মুগ্ধ হই,অনুপ্রাণিত হয়।বার বার পড়ে গভীরের আলো খোঁজার চেষ্টা করি।খুব ভালো লাগলো এই গানের অপার।অনেক শ্রদ্ধা জানাই।
উত্তরমুছুনগান যে এত বৈচিত্র্য নিয়ে লেখায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে যেতে পারে ভাবা যায় না। শুরুতেই গান স্তনসুধা দিয়ে গেল। 'গান গুঁজে মা এক তারাকে শোয়াচ্ছে'... মারাত্মকভাবে শুরু হয়েছে সিরিজ়। ছোট-ছোট লেখা, অথচ পরিমিতিবোধ ঈর্ষণীয়। 'সা পর্যন্ত সকাল'। মন্দ্রসপ্তকের সা নাকি তারসপ্তকের জানা নেই, কিন্তু 'পর্যন্ত' শব্দটায় সকালের ব্যাপ্তি ধরা পড়ে গেল। আর 'গানের নৌকায় সাঁই রাত্রি বোলাচ্ছে'-র মতো উপশম মাখানো লাইন বিরল। সবচেয়ে ভাল লাগল যে ব্যাপারটা, 'গান' জন্মের চিহ্ন ধারণ করতে করতে শেষে মৃত্যুর দোসর হয়ে গেল যেন! কবিতা-সিরিজ় যে আসলে একটা পথ (হতেই হবে তেমন বাধ্যবাধকতা নেই যদিও), তা এই সিরিজ়ে অত্যন্ত স্পষ্ট। যতবার বিভিন্ন জড়পদার্থ এসেছে বসেছে গানের সঙ্গত দিতে, যেমন– 'তামার বরফ', ততবার 'গান'-কে বিমূর্ত থেকে মূর্ত হতে দেখলাম যেন। আপনার লেখা আমাদের কাছে সম্পদ। ভাল থাকুন। লেখায় থাকুন।
উত্তরমুছুনএ কবিতা বুঝি রাগ রাগিণী সাত স্বরের কাছে ঋণী। সময়ের ঘ্রাণ আসে পংক্তিতে পংক্তিতে। কিছু বোধে কিছু নির্বোধে কিছু ধরা দেয় কিছু অধরার কাছে তৃপ্তি এবং অতৃপ্তির সমাহার।
উত্তরমুছুন