এক আশ্চর্য যুবকের মতো দ্বীপ,যার মুখ উজ্বল সবুজ তুলিতে আঁকা। বুকের নিবিড়ে লক্ষ লক্ষ বনজ পাতার সুবাস। আমি সেই নিবিড়ের মাঝে একা একা বসে চারিপাশের থৈ থৈ সবুজ
দেখছি।আসন্ন হেমন্তে বৃক্ষের স্তনবৃন্ত থেকে গড়িয়ে পড়ছে আনন্দ-শিশির,হরেক রকম পতঙ্গ অনবরত উড়ছে। ছোট্ট টুকরো পাহাড় ও ঝর্ণার সঙ্গমে
নেমে আাসছে বিচিত্র শব্দ যা কান পেতে
শুনলে মনে হবে ঈশ্বরের হাসি। ঈশ্বর কি এভাবেই হাসেন?
দ্বীপের চতুর্দিকের জলে খেলা করছে রঙ বেরঙের রঙিন
মাছ, তাদের পুচ্ছের ঝাপটায় এক মহাজাগতিক সংগীত শোনা
যাচ্ছে। সহসা চোখ আটকে গেল হাজার হাজার নুয়ে পড়া ফল গাছের দিকে।
বেদানা,আপেলের লাল টুসটুসে শরীর আমার সৌন্দর্য পিপাসু মনকে মুচড়ে জিহ্বার লোভী স্বাদকোরক কে গিয়ে তুললো।
শুদ্ধ অবস্থান থেকে পৌশাচিক অবস্থায় পৌঁছে মুহূর্তে বৃক্ষ হৃদয়কে ফাটিয়ে ছিঁড়ে নিলাম কতকগুলো আপেল সন্তানের প্রাণ। দ্বীপের আকাশ ভীত কম্পিত আঁধারে ঢেকে গেল...। কানের কাছে
ফিস ফিস শব্দ -
তুমি সমস্ত নিয়ম ভুলে গেলে! ক্রোধ,মোহ,লোভ কিছুই না ত্যাগ করে
এই দ্বীপে প্রবেশ করেছ! এর জন্য শাস্তি
পেতে হবে। অভিশাপগ্রস্ত হরিণী হয়ে সারাজীবন এই দ্বীপে ঘুরে
বেড়াও।
হঠাৎ স্বপ্নটা ভেঙে গেল।দেখি এক নির্জন বাবলা
বনের ভিতর শুয়ে আছি।-ওই যে দূরে
হরিণেরা ঘাস খাচ্ছে। কোথা গেল সেই সুরম্য দ্বীপ!একি আমার হাত,পা!শরীরের মখমলে
মসৃণ চিত্রল লোম! গায়ে লুটিয়ে পড়ছে ঝাঁক,ঝাঁ ক লাল ফড়িং!
হা ঈশ্বর আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম
তেতলার ঘরের বিছানায়,এ কোন জাদু
জালের বিপাকে পড়লাম! আমার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে চলেছে অতীতের নদী,আর সেই নদীর
তীরে দাঁড়িয়ে এক অখুশির সন্ন্যাসী
বক।অদূরে একটি গাছের ডালে একটি কৃষ্ণপ্রতিম ফিঙে পক্ষীবিলাস আচরণে লেজ দুলিয়ে ডেকেই চলেছে, তা দেখে ক্ষুব্ধ
হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছি কি কটা অসভ্য
হায়না ফ্যাক ফ্যাক করে হাসতে হাসতে ছুটে আসছে,আমিও চার ঠ্যাং এ ঝোঁপ ঝাড়ের
বুক চিরে ছুটতে ছুটতে এসে পৌঁছে যাই এক আগুন পাহাড়ের
কোলে। সে এক
বিস্ময়কর পাহাড়, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চারিদিকে দাউদাউ আত্মশুদ্ধির আগুন জ্বলছে। দলে দলে পশুপাখিরা সেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে,আশ্চর্য ! কোথায় মাংস পোড়া গন্ধ!কোথায় মৃত্যু চিৎকার! আকাশে বাতাসে মৃদু শান্তির সৌরভ। আরো বিস্মিত হতে হয় এক সুবর্ণডানার
পাখির ব্যবহার দেখে,এমন পাখি জীবনে দেখিনি , অদ্ভুত স্বরে ডাকছে আর পাহাড় টিকে
বেস্টন করে চক্রাকার ঘুরছে।ভালো করে কান পেতে শুনলে বোঝা যাবে,যেন ডেকে চলেছে - ব্রহ্ম,ব্রহ্ম...!আমিও কিছু না ভেবে সেই
আগুনে দিলাম ঝাঁপ...
কোথায় আগুন!কোথায় পাহাড়! পূর্ব মানবী শরীরে বসে আছি এক প্রাচীন চন্দন
গাছের নীচে।গাছের বাকল চুঁইয়ে নামছে অপরাহ্নের আলো, দূরে নদীর বুক থেকে ভেসে আসছে বৃদ্ধ মাঝির ভাঙা গলার গান- "মাঝি বায়া যাওরে অকুল দরিয়ার মাঝে..."
আকাশের এ প্রান্ত থেকে
ও প্রান্তে নীল-কমলা মিশ্রিত পালকের আল্পনা আঁকা চলছে,সমস্ত শরীর , মন,প্রাণ শুদ্ধ
বাতাসে ভরে উঠছে,বুঝে উঠতে পারছি না এসব কি
চলছে,সব কি মায়া,নাকি কোনো পরাজাগতিক স্বপ! উঠে দাঁড়াতে যেতেই নির্দিষ্ট শারীরিক ছন্দে দুলে উঠলাম আমি। এক হাতের মুঠো
খসে পড়ে যাচ্ছে সবুজ শ্যাওলা মাটি,অন্য হাতে মুঠো চেপে ধরা অজানা ঘাস -গুচ্ছ।হঠাৎ উদর যন্ত্র মোচড় দিয়ে ওঠে,খিদেয় চোখ ধোঁয়া ধোঁয়া। সত্যি আমি এতক্ষণ স্বপ্নে বিভোর ছিলাম।দিব্যি বসে আছি ফুটপাতের এক চাউমিনের দোকানে
প্লেট ভর্তি ধোঁয়া ছড়ানো চাউমিন এর প্লেট সামনে
দেখেই গা গুলিয়ে উঠলো।কিচ্ছু
ভালো লাগছেনা খেতে।আমার যে এখন কচি
থোপা থোপা নরম দূর্বা ঘাস,জলে ভেজা কলমি লতা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছেটা মর্মে মর্মে শিহরণ তুলতেই দিনেদুপুরে ভোজবাজির মতো সমগ্র শহরটাএক ব্রম্ভ অরণ্যে পরিণত হলো,আর মানুষজন সব
অসামান্য সুন্দর পশুপাখি। চারিদিকে লক্ষ লক্ষ গাছ,মাথার উপর হাসি খুশি আাকাশ,আহ্লাদী নদী বয়ে চলেছে। যে যার নিজস্ব
জীবন ধারায় ব্যস্ত।সমস্ত কামনা, বাসনা পেরিয়ে একটি বাদামি হরিণী একমনে ঘাস খেয়ে চলেছে দিনরাত।
0 মন্তব্যসমূহ