গুচ্ছ কবিতা
(১)
কানামাছি
“কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ”
চলে আজীবন, প্রেমে অপ্রেমে।
আপ্রাণ চেষ্টা দুদিকেই,- ধরার, ধরা না দেওয়ার।
তবে এ খেলায় শিকার জানে শিকারীর গতিবিধি!
খুঁজে না পাওয়ার কষ্ট সে বুঝতেই চায়না।
অমন ইন্দ্রিয়াতীত মন জানাজানির ক্ষমতা আমার নেই যে!
চোখের বাঁধন খুলে একদিন দেখি,-
কৈশোর গেছে অজান্তেই,
তুমি হয়েছ অনতিক্রম্য দূরত্ব।
শিকার কৈশোরের, শিকার যৌবনের,
অধিকার কৈশোরের, অধিকার যৌবনের,
এক হয় কজনের?
শুনেছি প্রেম দূরত্ব বোঝে না!
তুমি বুঝলে কি করে? তুমি কি অপ্রেম?
প্রৌঢ়তার এক উদ্বিগ্ন মুহূর্তে মুখে ওড়না ছুঁইয়ে গিয়েছিলো
যে-
যৌবনের হিসেব বুঝিয়ে গেলো সে-ই, এই বার্ধক্যে।
বুঝলাম, প্রমেয় প্রেমের পরিমিতি।
(২)
শোকনদীর শাখা-প্রশাখা
কিছু দুঃখ গলা ফাটিয়ে জানানোর মতো।
যা লোকে জানলে ক্ষতিতো নেইই,
তদুপরি সহানুভূতি পেলে থাকে সম্ভাবনা দুঃখ ক্ষয় হওয়ার।
কিছু কথা, কিছু কষ্ট কাউকে যায়না বলা,
নিজের মাকেও না।
দৈনিক বাধ্যতামূলক অপ্রয়োজনীয় কথার ফাঁকে-
কোনও এক দুর্বল মুহূর্তে মা বলবে তার মাকে,
একে অন্যকে দিব্যি দেওয়াবে, কাউকে না বলার জন্য,
তবু গলে গলে যাবে সমবেদনা,
একক আসনের নিঃশব্দযানে, সমব্যথী আত্মীয়রা হবে সরব।
নিভৃতচারী দুঃখের ঠিকানা জানাজানি হলে বেশি অসহায় লাগে।
সব বিষাদ সহমর্মিতা চায়না,- তা ওরা বোঝেনা।
বন্ধু, বলো কি দরকার তার? অসহায়তার?
এমনিই শোকনদী কোরো পারাপার।
(৩)
জঙ্গলের মধ্যযুগ
গাছের ডালে পাতার আড়ালে একটি চিতা, চুপ।
তীক্ষ্ণ সজাগ দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করছে সবকিছু।
দূরে চিতল হরিণ সঙ্গমের ইচ্ছেয় হরিণীর পিছু নিয়েছে।
হরিণীর বোধহয় মর্জি নেই!
ধরা দিচ্ছে না।
দেখে চিতারও সঙ্গমের ইচ্ছে হলনা যে তা নয়, তবে-
আগে তো কিছু খেতে হবে!
আহা! চিন্তা করলেই যদি সামনেই কাঁচামাংস হাজির হতো,
চিতা ভাবে- ছুটতে কি হতো এতো!
সামনের ঝাড় ফানুস গাছে এলো একটি বেবুন,
মকরন্দ পান করে ফানুস-ফুলটিকে দিল ফেলে।
হরিণী খেতে এলো সেই ফুল, জঙ্গলের খাদ্য-শৃঙ্খল।
বোঝা গেলো- কামক্ষুধা নয়, ক্ষুধাই বেশি ভয়ঙ্কর।
চিতল আর চিতার ব্যবধান যখন মাত্র কুড়ি ফুটের তখন-
দায়ী কে- চিতল, চিতা না ক্ষুধা?
অপেক্ষার সীমা
এক অপেক্ষা উপেক্ষার,
আরেক যত্নের।
এক অপেক্ষা উত্তরের,
আরেক প্রশ্নের।
যে আমি সাময়িক, যে আমি আশুপাতী,
যদি বুঝি প্রত্যুক্তির আলেখ্য তুমিই,-
তবেই না বসন্তের অনুবৃত্তি অবেক্ষণীয়।
দীর্ঘসূত্রতার ভুল অশান্তহৃদয় ভাঙবে কতবার?
তোমার সম্মতির অপেক্ষায় নইলে-
ধরবে চুলে পাক,
হব হতবাক।
0 মন্তব্যসমূহ