১ ॥ এই ঘরে ২ টি দরজা আছে। ১ টি দরজা দিয়ে বাইরে যাওয়া যায় এবং বাইরে থেকে
ভেতরে ঢোকাও যায়। অন্য দরজাটি বাথরুমের।
২ ॥ এই ঘরে ১ টি জানলা আছে। ওর অবস্থান উত্তর দিকে। জানলাটি বেশ বড়ো। জানলায়
ঘষা-কাচ। ওই কাচ ভেদ করে কোনো দৃশ্য ঢুকতে পারে না।
৩ ॥ এই ঘরে ৪ টি থেমে থাকা পাখা যেমন আছে তেমনি ঘর ঠান্ডা করার ১ টি যন্ত্রও আছে , তবে সেটিও বন্ধ অবস্থায়।
৪ ॥ এই বেড থেকে কোনো পাখিডাক শোনা যায় না। এমনকী কোনো পুষ্পগন্ধও পাওয়া
যায় না। পরিবর্তে বেশ কিছু রিংটোন শোনা যায়।
৫ ॥ এই ঘরে চাদরের রং সাদা। বেডগুলিও সাদা।
৬ ॥ এই অবস্থাই যাঁরা আমার দ্যাখাশোনা করেন তাঁদের পোশাকের রং সাদা ।
এই বিবরণ থেকে মনে হতে পারে এটি কোনো রহস্য-কাহিনির সূচনা । যাঁরা মনে করবেন
তাঁদের হতাশ হতে হবে। অনেকেই জানেন আমার কোনো রহস্য নেই। বাইরে নেই। ভেতরেও নেই। রহস্য
থাকলে একটা ব্লাকবোর্ড থাকত । একটা ইজেল থাকত। আর থাকত কয়েকটি তুলি কিংবা ব্রাশ । আর
তুলি এবং ব্রাশের প্রয়োজনে অনেক রং থাকত। রহস্যকাহিনির লেখকরা রঙিন ছবি আঁকতে পছন্দ
করেন । আর ভূতের গল্প শোনা পছন্দ করে যারা তাদের কথায় চন্দ্রবিন্দু থাকে না। অথচ এতদিন ধরে জেনে এসেছি ভূতেদের কথ্যভাষায় চন্দ্রবিন্দুর
প্রাধান্য। ঠিক যেমন কাকেরা আ-কারান্ত শব্দ ব্যবহারে পারদর্শী। আবার চড়ুইরা ই- কারান্ত।
পটলডাঙার ঘরে যারা আমার ঘুম ভাঙায় যে পারাবতেরা তাঁদের ভাষায় অন্তে ' ম ' পরিলক্ষিত
হয়
পুনশ্চ ॥
এই ঘরে একটাও আয়না নেই। নিজেকে কতদিন দেখিনি। এখান থেকে যখন বাড়ি ফিরব,
তা যে বাড়িতেই হোক সেই বাড়িতে আয়না থাকবেই। এটা বলার জন্য অভিধানের সাহায্য নিতে হবে
না। আমরা প্রতিদিন যত কথা বলি সেই কথাগুলি বলার জন্য অভিধান কি আমাকে সাহায্য করে।
কথা বলার জন্য অভিধান লাগে না। কথা লেখার জন্য
লাগে।
তাহলে কি বলাকথা এবং লেখাকথা-র
মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য থেকেই যাচ্ছে।
আরো একটা কথা এই যে লেখাটা লিখছি সেই লেখায় অভিধান ব্যবহৃত হচ্ছে না। কারণ
এই ঘরে কোনো অভিধান নেই। অভিধানের বিকল্পে আছে অনেকগুলি পর্দা। পর্দাগুলির শরীরে মুদ্রিত
আছে আলপনা। আর আলপনার সঙ্গে যুক্ত থাকে উপাসনা। এসব বহুকাল আগের পাঠ্য পুস্তকে মুদ্রিত
আছে।
অথচ কোনো বিগ্রহ নেই। বিগ্রহ না থাকার কারণে যেসব উপলক্ষ খালি চোখে দ্যাখা
সম্ভব সবটা দেখে নিতে হবে। ভিস্তিওয়ালার জল দেবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। জলই একমাত্র
উপকরণ যা দিয়ে যাবতীয়কে ধুয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে কোনো কিছু ধোবার আগে লক্ষ রাখতে হবে
কোনো সৃজনকর্ম মুছে যাচ্ছে কিনা! বুদ্ধকাল থেকে যে সৌরভ আমাকে ঘিরে রেখেছে , তাকে মুছে
ফেলতে যাব কেন ! কিংবা প্রাক্ ইতিহাস পর্বের ধুলো। এইসব ধুলোবালির সংসারে নিজেকে স্থির
রাখতে হবে। দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম
হলেই শীতকাল ফুরিয়ে যাবে। 30 নং বেড থেকে শোনা যাবে বসন্ত ।
কোকিল ডেকে উঠবে
0 মন্তব্যসমূহ