নদী যখন নদীকে চুমো খায়
একটা নদী আর একটা নদীর কাছে
জল চাইতেই পারে,
নদীর সাথে নদীর মৈত্রী আছে বলেই
সে খরস্রোতা
বহমান
উত্তাল-ঊর্মিমুখর
ও হিন্দোলিত।
একটি নদীর উৎসধারা কোনখানে থাকে
নদী তা ভালো করেই জানে!
নদীতে নদীতে স্বাভাবিক সখ্য!
নদীর হিংসে নেই--আকচাআকচি করে না
ঈর্ষাপরায়ণ তো নয়!
হিংসালু হবে কীভাবে?
জলের ভেতর--হিংসার আগুন জ্বলতে পারে না!
হনুমান লাফাতে পারে না নদীতে
পঙ্গপাল ঝাঁপিয়ে পড়ে দখলও নিতে পারে না!
নদী এঁদোপুকুরও নয়-
নদীর জলপ্রবাহ নিয়ে
তালপুকুরও হয় চনমনে!
নদীতে নদীতে মৈত্রী হলে
জোয়ার ও দীপ্রগতি!
নদী যখন নদীকে চুমো খায়
তখন মাছেরা স্বচ্ছন্দ ও লাফায়
মাঝিরা মাঝপথে গিয়ে আরও প্রাণ পায়
নিজেদের ভাটিয়ালি গান গায়!
আমাদের আকাশটা
মেঘ আপনাআপনি সরে যায় না!
দু’হাত দিয়ে সরাতে হয়--
কোদালে মেঘ কোদাল দিয়ে
টুকরো টুকরো করতে হয়,
এমনি আকাশ আমাদের!
আপনাআপনি সরে যায়
দূরের আকাশের ঊর্ণামেঘ
কিংবা পেজামেঘ,
আমাদের সিঁদুরে মেঘ কপাল থেকে-
এমনি সরে না!
ঘনঘোর সময়ে ভূগর্ভস্থ মৃত্যু
যখন একটার পর একটা
শ্বাস নিয়ে উঠে আসে--
তখনই মহাপ্রলয়ের মেঘধ্বনি
কুহেলিকার ভেতর পড়তে হয়!
আমাদের আকাশটা--
আমাদেরই পরিষ্কার রাখতে হয় বলে,
বিজলী-বিদ্যুতে
আমাদেরও জাগতে হয়!
ডেঁয়োপিঁপড়ে
যেখানে যে জিনিস থাকার কথা
সেখানে তা নেই!
গোছানো টেবিল--
গুছিয়ে রাখে না কেউ!
জগের জায়গায় জগ নেই
গেলাসের জায়গায় গেলাস নেই,
বোতলের জায়গায় বোতল!
মধুর বোতলের ছিপি খুলে রাখা হয়েছে--
পিঁপড়ে ঊঠছে-- ডেঁয়োপিঁপড়ে!
উদারতার জায়গায় উদারতা আছে?
সহনশীলতার জায়গায় সহনশীলতা আছে?
যুক্তির
জায়গায় যুক্তি!
ফসল রক্ষকেরা গোলা অরক্ষিত রেখে
নর্তকীর নাচ দেখতে গেছে অমাবস্যা রাতে!
সুযোগ পেলেই কচুরিপানা পর্যন্ত
এক পুকুর থেকে আর
এক পুকুরে
টেনে নিয়ে যাওয়া হয় লগি দিয়ে!
শিমুল গাছে জড়ো হওয়া পাখিদের
কিচির-মিচির শব্দ যারা পছন্দ করে না,
তাদেরই আওয়াজ বেশি শোনা যায়!
তল্লাটের সবাইকে চিনি
এই তল্লাটের সবাইকে আমি চিনি
এর অলিগলি
এর
বাসাবাড়ি আমি চিনি!
এইখানে ক’টি আমগাছ আছে
ক’টি
লেবুগাছ-
তাও আমি জানি!
কে থাকে পাকাবাড়িতে--কে থাকে চালাঘরে?
মহল্লায় কে নতুন ডেরা তুললো?
তাও
জানা আছে!
আমাকে কী বলবে?
এখানকার লোকজন কেমন?
সবাইকে
চিনি!
বলতে এসো না!
কে ঘোড়ায় উঠে কেমন দৌড়াতে পারবে?
কে দৌড়ে দূরবর্তী পুকুরের জল থেকে
পদ্মফুল
তুলে আনতে পারবে?
কে পাঙ্গাস মাছের টুকরোর লোভে
আত্মহারা হয়ে পড়বে?
কে আগুন জ্বালিয়ে তাপ সৃষ্টি করতে পারবে?
তাও
জানা আছে!
চিনি বলে তারা আমার সম্মুখে
দাঁড়াতে
ইতস্তত করে-কাঁপে!
মাপে আবারও নিজেদের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ!
এদের কারও পরিচয় তুলে ধরবার জন্য-
আমার দু’হাতে লিফলেট তুলে দেওয়ার কোনো
প্রয়োজন নেই!
0 মন্তব্যসমূহ