' এবং সইকথা ' - র জন্য মুক্তগদ্য (ধারাবাহিক)
প্রথম পর্ব
শীলা বিশ্বাস- এর আদেশ , ওর পত্রিকার জন্য একটা মুক্তগদ্য লিখে দিতে হবে।
আমি তো এই ধরনের আদেশের জন্য সারাদিন ফোনের রিংটোনের কাছে ঘুরঘুর করি। কেউ লিখতে আদেশ
করলেই লিখতে শুরু করি। এভাবেই এখনকার লেখাগুলো হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা লিখতে বলছেন , তাঁদের
সকলকে ধন্যবাদ। এই লেখায় কাগজ লাগে না , কলম লাগে না । লাগে ব্যক্তিগত তর্জনীটি। মান্যবর
শঙ্খ ঘোষের মতো আমার তর্জনীটিও ' নিঃশব্দের তর্জনী ' । বিনা
প্রতিবাদে আমাকে অনুসরণ করে চলে। আমি লিখে চলি । একটা শেষ করে অন্য আর একটা লেখায়।
এখন ' মুক্তগদ্য ' -কে ভালো করে বুঝে নিতে চাইছি। অর্থাৎ যে গদ্য মুক্ত
, সেই গদ্যই মুক্তগদ্য।
আর ' গদ্য ' এই বিশেষ্যটির বিশেষণ হল ' মুক্ত '।
গদ্য- র সন্ধান দিল অভিধান ।গদ্য শব্দটির অভিধানগত অর্থ হল : পদ্য নয় এমন
ভাষা , যে ভাষায় লোকে কথা বলে , লেখার স্বভাবিক ভাষা।
এবার খোলা মনে ' মুক্ত ' -কে দ্যাখা
যাক।
১. বদ্ধ অবস্থা থেকে ছাড়া পাওয়া ( খাঁচা থেকে )।
২. মোক্ষপ্রাপ্ত ( মুক্তপুরুষ)।
৩. উদার অকৃপণ ।
৪. খোলা, অবাধ ( মুক্তবায়ু , মুক্ত
আকাশ ) ।
৫. নিষ্কৃতিপ্রাপ্ত ( দায়মুক্ত
, ঋণমুক্ত ) ।
৬. পরিষ্কৃত (ধূলিমুক্ত ) ।
এছাড়াও অভিধান সন্ধান দিল-- মুক্তকচ্ছ , মুক্তকণ্ঠ , মুক্তকেশ , মুক্তছন্দ
, মুক্তপুরুষ , মুক্তবেণী , মুক্তহস্ত।
তাহলে কি অবশেষে মুক্তহস্তে লেখাকেই ' মুক্তগদ্য ' -র স্বীকৃতি দেবো ! খোলামনে
লেখাকে ' মুক্তগদ্য ' বলব না কেন ? আবার মুক্তকণ্ঠে লেখাকে মুক্তগদ্য বলতে অসুবিধা
কোথায় !
এখন তো আবার ' মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ' একটা চালু বিষয় হয়ে গেছে। তাদের জন্য
আলাদা সিলেবাসও তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে ' তোতাকাহিনি ' -র কোনো যোগসূত্র আছে কিনা
জানি না। রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্প ' তোতাকাহিনি ' যাঁদের পড়া নেই তাঁরা পড়ে নেবেন।
তবে একটা বিষয়ে আমি জোরের সঙ্গে ঘোষণা করতে পারি -- মুক্তকচ্ছ হওয়া চলবে
না কোনোভাবেই।
পূর্বাহ্ণে আমি লিখেছিলাম :
কবি কি মুদ্রণ প্রমাদে সেই আদি শাখামৃগ
মৃগকস্তুরির মতো গন্ধযুক্ত মুক্তকচ্ছ
নিজস্ব পায়ু সম্পর্কে সতর্কবিহীন উদাসীন
লিখেছিলাম খোলামনে। কিন্তু পালন করেছি কি ? এই একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার
চেষ্টা করি না। যা বলেছি নিজে বিবেচনাতেই বলেছি। যা করেছি নিজের পরামর্শ মতোই করেছি।
অন্য অনেকের , আমার মঙ্গলকামনায় সুপরামর্শগুলি সযত্নে এড়িয়ে চলেছি। এতবছর ধরে যা করে
এসেছি , যা ভেবে এসেছি , যা বলে এসেছি --- সেসব থেকে সরে আসব কেন ! কেন দশ বছর বা দশ
দিন আগের ' আমি ' -কে অস্বীকার করব !
এরকম করলে আজকের আমি-কে অস্বীকার করবে আগামীকালের আমি ! তাহলে তো আর ' আমিত্ব
' এই বোধটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।
অবশেষে আমি হারিয়ে যাবো। আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
যে আমি লিখেছিলাম :
জুতোর ফিতে বাঁধার সময় ছাড়া যে মানুষ নতজানু হয় তাকে করুণা করতে শেখো
তাহলে তো এই পঙ্ ক্তিটিই অসত্য হয়ে যাবে। আমি মুখ দ্যাখাবো কীভাবে ! আমাকে
চিরকাল মুখোশ ব্যবহার করতে হবে।
আমার একমাত্র লক্ষ্য হল , আমি যেরকম ছিলাম , যেরকম আছি , ঠিক সেরকমই থাকতে
চাই । আমি যে পরিমাণ জলে ডুব দিয়ে স্নান করে এসেছি , ঠিক ততটা জলেই স্নান করতে চাই।
এমনকী সাঁতারও কাটত চাই। আমি জানি আমার লুপ্তপদ আছে। সাঁতার কোনো প্রশ্ন হতে পারে না
কমরেড।
এই লেখাটিকে 'মুক্তগদ্য ' শিরোনামে দেগে দিলাম কেন , এর সহজ উত্তর হল
--- শীলা বিশ্বাস লিখতে বলেছিল বলেই , এই লেখা।