অপেক্ষার
সবটাই আমি
নিতান্তই এক
বেয়াকুবের মতো এই পথের ধারে দাঁড়িয়ে আছি। ঠিক এমন ভাবে স্তব্ধ হয়ে রয়েছি যেন এই
গ্রামীণ রাস্তার সাথে আমার দীর্ঘদিনের প্রেম। কাছাকাছি একটা খেঁজুর গাছ, কাঁটা ঝোপ, ছায়া নেই কোথাও।
দুপাশের নিচু ধানজমি, ফসল কেটে নেওয়ার পরে শুষ্ক, ফেটে চৌচির। রাস্তার ধারে অগভীর খাল, শুকিয়ে কালো
পাঁক বুকে নিয়ে শুয়ে আছে। অনেক দূরে দিগন্তের দিকে শ্যামলিমা, ধাঁধার মতো দেখায়। অন্ধকার হলে এই মাঠ ইঁদুর, সাপ ও নিশাচর পাখির
থাবায়। আসলে এই সমগ্র ছবিটা নিয়েই আমি। যে নৌকা আমায় এখানে রেখে গেছিলো, বলেছিল হয় সে নতুবা মৌসুমী বাতাস আসবে একদিন। অপেক্ষায় কেটে গেল বহুকাল।
সেই নৌকা ফেরেনি আজও এবং মৌসুমী বায়ু।
খোঁজ
ধর একটা
বর্ষা তোমার অসুস্থতার ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে। মেঘে ঢাকা আকাশ, বাইরে রিমঝিম বৃষ্টি, কখনো
বাড়ছে আবার কমছে। অথচ তোমার একটুও ভেজা হল না। বাইরে প্যাচপেচে ভাদ্রের গরম।
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে লবণের কেলাস। কিন্তু তোমার ঘরের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রিত। তুমি টেরই
পেলে না এসব বদল। আমাদের ক্রান্তীয় মৌসুমী দেশের পাখিরা এরমধ্যে বাসা বানালো,
ভালোবেসে ফুটিয়ে তুলল ডিম, ছানাদের বড় করে
দিব্যি উড়তে শেখালো। তবু এত ব্যস্ততা ছুঁতে পারলো না তোমায়। তারপর একদিন তুমি
কিছুটা সুস্থ, দোতলার ব্যালকনিতে বসে চা খেতে খেতে সকাল
দেখলে। তোমার বউ তোমাকে ধরে ধরে নিয়ে এসে বসালো। তার চোখে উদ্বেগ লেগে আছে,
জমানো ঘুম। ছেলে - মেয়ে খোঁজ নিয়ে গেল তোমার। ডাক্তার ফিট
সার্টিফিকেট লিখে অফিসে যাওয়ার অনুমতি দিলেন ফের। অথচ তুমি তখনো শরতের পুজো পুজো
দিনে একটা গোটা বর্ষাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছ!
রাজদীপ ভট্টাচার্য