আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ‘হাসি’ প্র্যাকটিস করতো রঞ্জনা। সেই কোন ছোটবেলা থেকে।
দার্শনিক বাবা শিখিয়েছিল, হাসতে পারলে
সবকিছুই জয় করতে পারবে। বাবার কথা অমান্য করে নি। কিন্তু হাসা কি অত সহজ! একমাত্র
ধারাবাহিক অভ্যাসেই তা সম্ভব।
হাসতে হাসতেই বড় হয়ে উঠল রঞ্জনা। বাবার শেখানো মন্ত্রে
জয়ীও হতে লাগল। সেই জয় রঞ্জনার হাসি আরও বাড়িয়ে দিল।
অবশেষে এল ওর জীবনের বহু অপেক্ষার সেই দিন। যে দিনটার জন্য
কত কিছুই না করেছে।
আজন্ম অভ্যাসে রপ্ত করা সাজানো হাসি নিয়ে ধীর পদক্ষেপে
মঞ্চে উঠে আসে রঞ্জনা।
কিন্তু চরম মুহুর্তে হাসতে পারে না!
কানায় কানায় পূর্ণ দর্শকরা বিস্মিত। হতবাক। এও কী সম্ভব! যে
হাসির জোরে এতদূর পৌঁছেছে মেয়েটি, হাসতে হাসতে সিঁড়ি বেয়ে মঞ্চেও উঠেছে,
সেই মেয়ের ঠোঁট থেকে হাসি উধাও!
রঞ্জনা নিজের বাবাকে ডেকে নেয় মঞ্চে। দুই হাতে তালি দিয়ে।
এক অন্যধারার তালি যা ওর জীবনের ভবিতব্য হতে পারতো। কিন্তু ওর দার্শনিক বাবা তা
হতে দেয় নি। নিজের সন্তান ‘তৃতীয়লিঙ্গ’ জানার
পরেই ওকে বুকে টেনে নিয়েছিল। বলেছিল, জীবনে কক্ষনো কাঁদবি
না। বুক ফেটে গেলেও। সব ব্যথা- বেদনা-যন্ত্রণাকে অক্ষরে অক্ষরে সাজিয়ে তুলবি
ডায়েরীর পাতা জুড়ে।
সেইসব ডায়েরী আজ
উপন্যাস হয়ে পাঠকের ঘরে ঘরে।
বর্ষসেরা সাহিত্যিকের পুরস্কার নিতে গিয়ে বাবার বুকে মুখ
গুঁজে দেয় রঞ্জনা। দুচোখের কোণে জমে ওঠা জল লুকোতে।
সঞ্জয় গায়েন