হাত
বোনের বাড়ি
থেকে ফিরছি ট্রেনে।
আকাশে সাদা
বরফের মতো মেঘ। মাঠভরা সবুজ ধান। কোথাও কোথাও গাঁদা ফুলের খেত। মাঠে কেউ ঘাস
নিড়ান দিচ্ছে।কেউ স্প্রে মেশিনে ওসুধ দিচ্ছে। কোথাও খালের পাড়ে গোছা গোছা
কাশফুল। সেদিকে তাকিয়ে মন ভালো হয়ে যাচ্ছে। বাবা আমি পাশাপাশি। বাবা ফসল দেখছে
আমি আকাশ। বাবা মাটি দেখছে আমি বীজের অঙ্কুরের শব্দ শোনার প্রতীক্ষায়।
হকার
চা--কফি----চা---কফি--করে হেঁকে গেল। কারুর হুঁশ নেই।
এমন সময়
দড়ির মতো শুকনো বৃদ্ধা ,হাত
পাতল বাবার কাছে। বাবা তাকে দুটাকা দিল। তারপর ঝলসানো কচুপাতার মতো শিশু এলো। তাকে
দুটাকা দিল। অতঃপর, অন্ধ বাউল এলো। খোঁড়া যুবক এলো। অগ্নি
দগ্ধ কিশোরীর হাতও এসে পড়ল বাবার সামনে। পকেটে হাত দিতে দিতে একসময় বিল শামুকের
চাকতির মতো ঝনঝন আওয়াজটা বাবা আর পকেটের ভেতর শুনতে পেল না।
পাশের দামী
স্যুট বুট পরা লোকগুলো কোনোদিকে না তাকিয়ে চা চানা চপ ঘুগনি খাওয়ায় ব্যস্ত।তারা
কোনো হাত দেখছে না। খিদে দেখছে না।দেখছে না কোনো দরিদ্রতা অভাব কিংবা অসহায়তা।
এমন সময়
বাবা আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো।সে চাউনির ভেতর আমি দেখতে পেলাম,মাঠভর্তি ধান হতে চায় ক্ষুধার্ত মানুষের চোখে।
গন্তব্যে
পৌঁছোনো অব্দি আরো অনেক হাত--
ছাই রঙের--শব
রঙের--পর্ণমোচি বৃক্ষের মতো। বাবার পকেটে বাড়ন্ত ঝনঝন শব্দ।
এইবার কেমন
অবুঝ বালকের মতো ফিকে হেসে বলল, এখনও মানুষের এতো খিদে! এতো কান্না!
শেষে আমি
একটা কথা বললাম, রুগ্ন
মৃত পঙ্গু যেমন তেমন হোক শুধু হাতটা দ্যাখো বাবা, বাড়ানোটা
দেখো না।
কেন কি আমরা
তো হাতশূন্য হয়েই জন্মেছি--