কবিতা ভাবনা
কবিতা ভাবনা কি তার নিয়ে তো ভুরি ভুরি সংজ্ঞাদান আন্দোলন গ্ৰন্থলেখা সারা পৃথিবী জুড়ে অহরহ চলছে।
বাঙলা সাহিত্য তার ব্যতিক্রমী নয়। আগে তো সৃষ্টি তারপর তত্ত্ব । আর এই সর্জন একদিনেই
হয় না। সমাজের নিয়ম রীতি হালচাল পারিবারিক দায়বদ্ধতা ইত্যাদির পাকে বিপাকে পড়ে
কবিমানুষের স্ফূর্তি তার নিজস্ব পরিমন্ডল তৈরি করে নেয়। কমবেশি সব কবিরই সংগ্ৰামময়
ও বিষাদময় জীবন থাকে। আর কবিতায় থাকে বাস্তব ও অবাস্তবের মিহি কারুকার্য। কবির দৃষ্টিভঙ্গির
মেটাবোলিজম একটু অন্যরকমের। অবশ্য সাহিত্যিক ও শিল্পী মাত্রই একথা প্রযোজ্য হতে পারে।
কবিদের মধ্যে মন্ত্র বা ভিসন যা মনের ভিতর মননের ভিতর বিদ্যুৎ শিখা জ্বালায়। আমি তো
তেলহলুদের হাত মুছে মাথায় আসা বাক্যবন্ধটি লিখে ফেলার চেষ্টা করি। একক শব্দ অ্যামিবা
শক্তিতে বহুধাবিভক্ত হয়। একে প্লুরালিজম অফ মেনি সাইডেড পয়েন্ট অফ ভিউ হিসেবে আখ্যায়িত
করা যায়। কবি শিল্পীরা একটা তাগিদ থেকে লেখেন। হিরন্ময় আবরণ উন্মোচনের তাগিদে লিখতে
গিয়ে কবিরা নিজেরাই কখোনো আবরণ টেনে নেন তা জানেন না। এখানেই অজানা এক রসায়ন কাজ
করে। তাকে আমরা যাদু বলি। মেধার যাদু। আর তখনই রীতিরাত্মা কাব্যস্য কথাটি চিরকালের
গুরুত্ব নিয়ে চলে আসে। কবির স্বাধীনতা এমন এক জিনিস যা সমাজের পাঠক ও মহাকালের বিপরীত
দিকে ঠেলে দিতে পারে কবিকে। আমরা কবিরা ভাষা ও ধ্বনির সম্মোহন যে যার নিজের মতো করে
উপলব্ধি করি। পূর্বজ সাহিত্য থেকে এবং জীবন থেকেও প্রজ্ঞা আহরণ করতে হবে। ব্যক্তিগত
দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমষ্টি গত দৃষ্টিভঙ্গিতে সবাইকেই আনাগোনা করতে হয়। আমিও এর ব্যতিক্রমী
না।
বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে একটু বেশি নাটক উপন্যাস
গল্প পড়া হয়ে গেছে। মনের জমি প্রস্তুত ছিল। কিন্তু কখনো সেভাবে চাষ করা হয় নি। বাংলা
কবিতার এক সমৃদ্ধময় সময়ে আমি প্রবেশ করেছি লেখালেখির জগতে। কবিতা লেখাকে কোনো ঐশী
প্রেরণা বলে ভাবি না। মানবমনের প্রকৃতিতে আছে গূঢ়ান্বেষন প্রবৃত্তি। অসম্ভব শক্তিশালী
চেতনা ও ভাষার ঊর্ণণাভজাল নিজেরাই তৈরি করি। আবার কবিতা নিয়ে ভাবতে বসলে সামনে বহুস্বরিক
রাস্তা হাজির হয়। মাতৃভাষার এই শব্দভাণ্ডারের বিবিধ রতন নিয়ে কাজকারবার। দেরিতে কবিতা
চেনার ফলে মাথায় চাপ রয়ে যায় হংসমিবম্বুমধ্যাৎ কি করে দ্রুত নিজেকে আপডেটেড করে
নেব। কোনো পত্রিকায় কবিতা লিখিনি কখনো। একেবারে প্রথম দফায় প্রধানত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের
অনুমতিক্রমে ধারাবাহিক কবিতার জগতে ' দেবযানীর স্বীকারোক্তি ' নামে কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে কৃত্তিবাস প্রকাশনার
মাধ্যমে। পরবর্তীতে প্রভাত রায়চৌধুরী, বারীন ঘোষাল, সমীর রায়চৌধুরী , মলয় রায়চৌধুরী
ও আশির দশকের ভাষাবদলের কবিরা এবং তথাকথিত নতুন কবিতা ও কবিতা ক্যাম্পাসের কবিদের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কবিতারীতির শৈল্পিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই।
তাহলেও নববই ,শূন্যদশক ও প্রথমদশকের কবিদের কবিতা দ্বারাও আমি অনুপ্রাণিত। শূন্য দশকের অমিতাভ প্রহরাজ, অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল ঘোষ, অনুপম মুখোপাধ্যায় আমার প্রিয় কবি। আমিও তো শূন্য দশকের।
তাহলেও নববই ,শূন্যদশক ও প্রথমদশকের কবিদের কবিতা দ্বারাও আমি অনুপ্রাণিত। শূন্য দশকের অমিতাভ প্রহরাজ, অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল ঘোষ, অনুপম মুখোপাধ্যায় আমার প্রিয় কবি। আমিও তো শূন্য দশকের।
শুধু শব্দের জাগলারিতে কবিতায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জীবনমথিত
কিছু উচ্চারণের পাশে বসতে চাই। বাংলা কবিতায় নতুন ভাবে বলার সময় ফুরিয়ে যায় নি।
চেতনায় ঘা না দিলে তা কবিতাই নয়। বিস্ময়ে তাই জাগে , জাগে আমার প্রাণ --- রবীন্দ্রনাথের
এই বোধটি সম্বল করে আমার যাত্রা। রান্নার জগতে অনবরত ইনফিউশন চলছে। ফুড চ্যানেলগুলোতে
চোখে পড়ে তা। শূন্য দশকের কবি হিসেবে পুরোনো ও নতুনের মিশ্রণটাই পেতে চাই। তবে ভাবনার
ও দৃষ্টিভঙ্গির নতুনত্ব কবিতায় থাকা উচিত। সূক্ষ্ম শব্দশৈলী যদি জলতরঙ্গ বাজায় বুকে
সে জলতরঙ্গর প্রতি উদাসীন থাকতে পারব না। যে ভাষারীতি দিয়ে দেবযানীর স্বীকারোক্তি
লেখা হয়েছে সেই প্রকাশমূর্ছনা পরবর্তী কবিতার বইগুলোতে নেই। কবিতার শরীর ও মন উভয়কেই
সমান সম্মান দিতে চেষ্টা করেছি। রয়ে গেছি কল্পনা শক্তির কাছে ভিখারি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
ও বিজ্ঞাননির্ভর শব্দ মোমমসৃণতায় প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি। পোস্টমর্ডান টেকনোলজির
কবিতা যা নিয়ে সমীর রায়চৌধুরী কাজ করেছেন তার ছায়াপাত অবশ্যই আছে আমার কবিতায়।
সত্যি বলতে কি কবিতায় এমন কিছু আছে যা অ্যান্টি পোয়েট্রির ছোঁয়াও এনে দেবে। আমাকে পরীক্ষানিরীক্ষামূলক
কবিতার ধারায় ফেলা হয়েছে। তাই হোক আমরা শূন্য দশকের ব্যতিক্রমী কবিরা না হয় ছিন্ন খঞ্জনার নূপুরের মতো বেজে গেলাম।
পৃথিবীর জলবায়ু ও রাজনৈতিক সামাজিক ইতিহাস মতো বদলেছে কবিতা শিল্পও ততোটাই বদলেছে। কবিতায় স্পষ্টতা কখনো কাম্য নয়। সেই অধরা মাধুরী আর মাধবীমূলকতায় রাখতে হবে কবিতাকে। স্বদেশ সেনের স্বদেশে নিজেকে কখনো বিজাতীয় ভাবা উচিত কী?
কবিতায় বহুরকম তত্ত্বের সামগ্ৰিক ব্যবহার থেকে নিজস্ব ভাবস্ফূর্তি ও লিখনশৈলী তৈরি করা শ্রমসাধ্য। আমি তো এখনো তাই হাফলিট আলো। ডিজিটাল যুগের সঙ্গে কবিতাকে আপডেটেড করে রাখতে চাই। সমাজ ও প্রকৃতিতে যা যা আছে দেখলাম আর তাই বসিয়ে দিলাম খাতায় তাতে তথাকথিত ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করা যায় না। তাই কবিতা একধরণের ব্যাসকূট। নিজের ইউটোপিয়ার জগৎকে ফুটিয়ে তোলার কাজ সব কবিদের করতেই হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয় নি। এটা করতে গেলে গ্ৰাফিক্স ডিজাইনার এর মতো শব্দ , অভিজ্ঞতা ও আবেগকে কাটছাঁট করে কবিতাকে সাজিয়ে তুলতে হবে। তাদেরকে অনেকে জনপ্রিয়তাহীন কবি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। আঁদ্রে জিদের বলা একটা বাণী একটু তুলে দি -- ' Man cannot discover new oceans unless he has the courage to loss sight of the shore'
ব্যক্তি থেকে সমষ্টির দিকে তাকিয়ে , বহুস্বরিকতা ও ম্যাজিক রিয়ালিজমকে সঙ্গী করে আমার পথচলা। স্পেনের সাহিত্যের চমকপ্রদ ঐ যাদু বাস্তবতা যেন আমাকে ধরে রাখে , নিঃশ্বাস নিতে শেখায়।
পৃথিবীর জলবায়ু ও রাজনৈতিক সামাজিক ইতিহাস মতো বদলেছে কবিতা শিল্পও ততোটাই বদলেছে। কবিতায় স্পষ্টতা কখনো কাম্য নয়। সেই অধরা মাধুরী আর মাধবীমূলকতায় রাখতে হবে কবিতাকে। স্বদেশ সেনের স্বদেশে নিজেকে কখনো বিজাতীয় ভাবা উচিত কী?
কবিতায় বহুরকম তত্ত্বের সামগ্ৰিক ব্যবহার থেকে নিজস্ব ভাবস্ফূর্তি ও লিখনশৈলী তৈরি করা শ্রমসাধ্য। আমি তো এখনো তাই হাফলিট আলো। ডিজিটাল যুগের সঙ্গে কবিতাকে আপডেটেড করে রাখতে চাই। সমাজ ও প্রকৃতিতে যা যা আছে দেখলাম আর তাই বসিয়ে দিলাম খাতায় তাতে তথাকথিত ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করা যায় না। তাই কবিতা একধরণের ব্যাসকূট। নিজের ইউটোপিয়ার জগৎকে ফুটিয়ে তোলার কাজ সব কবিদের করতেই হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয় নি। এটা করতে গেলে গ্ৰাফিক্স ডিজাইনার এর মতো শব্দ , অভিজ্ঞতা ও আবেগকে কাটছাঁট করে কবিতাকে সাজিয়ে তুলতে হবে। তাদেরকে অনেকে জনপ্রিয়তাহীন কবি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। আঁদ্রে জিদের বলা একটা বাণী একটু তুলে দি -- ' Man cannot discover new oceans unless he has the courage to loss sight of the shore'
ব্যক্তি থেকে সমষ্টির দিকে তাকিয়ে , বহুস্বরিকতা ও ম্যাজিক রিয়ালিজমকে সঙ্গী করে আমার পথচলা। স্পেনের সাহিত্যের চমকপ্রদ ঐ যাদু বাস্তবতা যেন আমাকে ধরে রাখে , নিঃশ্বাস নিতে শেখায়।