সাতশ ছেচল্লিশটা সিঁড়ি দেখে প্রথমেই পা একটু কেঁপে উঠল । কিন্তু ঝর্ণার শব্দটা চুম্বক শক্তির মত আকর্ষণ করে চলেছে , যার নাম হুড্রু । সুবর্ণরেখা নদীর জল তিনশ বাইশ ফুট উচ্চতা থেকে নীচে তীব্র গতিতে আছড়ে পড়ছে । অদ্ভুত এক রোমাঞ্চে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম । সিঁড়ির ধাপে ধাপে জীবন সংগ্রামের ছবি প্রস্তুত , শুধু মোবাইলের ক্যমেরায় ফটো নেওয়ার প্রতীক্ষা । বছর দশের মধ্যাই ওদের বয়েস হবে । তিন চারজন বসে আছে সামনে সুন্দর সুন্দর ফুলদানি ভর্তি ফুল । আমাদের সুসজ্জিত শোকেসে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব । ফুলগুলো এক প্রজাতির পাহাড়ি ছত্রাক । কচিকাঁচারা ব্যাঙের ছাতা বলে লাফাচ্ছে ।আধিবাসি বাচ্চাগুলো পেটের ভাত যোগানে ব্যাস্ত। সেই শুকিয়ে যাওয়া ছত্রাক বাঁশের ফুলদানিতে মন দিয়ে লাগাচ্ছে । এছাড়াও কিছু বাচ্চা ধারাল ছুড়ির আঁচরে সুন্দর বাঁশের ফুলও বানিয়ে দিচ্ছে । এরা মূলত পাশের গ্রাম থেকে আসা আদিবাসী ।
এবার উপরে ওঠার
পালা । এনার্জি ড্রিঙ্ক হাজির সিঁড়ির এক কোনায় - নিবুপানি (লেবুজল) । কাচের গ্লাসে
ঠাণ্ডা পানীয় , এটাও একটা পরম প্রাপ্তি এই মুহূর্তে । কিন্তু
বাঙ্গালী মাত্রই কি একটু বেশী স্বাস্থ্য সচেতন ? এক বাঙ্গালী সুগৃহিণী তখন
ব্যস্ত দোকানদারকে পরামর্শ দিতে -গ্লাসগুলো সার্ফে ভালো করে পরিষ্কার করা উচিৎ ।
তার বালিকা মেয়ে মায়ের ভুল ধরিয়ে বলল – ভিম বার । আদিবাসী
দোকানদার হয়ত ভাবল ভিম কে কতবার এই সিঁড়ি ভেঙে নিয়ে আসবে তার দোকানে ! এর মধ্যে অনেকে
আশেপাশে বসে পরেছে । নামার সময় পেট বোঝাই দেশী মুরগীর মাংস ভাত এতক্ষনে কোন দেশে পৌঁছে গেছে
কে জানে ? ওপরে উঠতেই গরম পকুরির গন্ধ ভেসে আসছে ।সদলবলে খেতে বসে পরলাম । সঙ্গে মাটির
ভাঁড়ে চা ।
ফেরা তো নয় ফেরা , পাহাড়ের গায়ে তখনও কমলা রঙের সূর্যটা নিদ্রা যাওয়ার জন্য হাই তুলছে ।দূরের পাহারের গায়ে রঙ বদলে যাচ্ছে । আকাশে শুরু হয়েছে রঙের খেলা । ওই গানটা খুব মনে পরছে – “আজ কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে আকাশ খেলে হোলি” । পিছনে পরে রইল সুন্দরী হুড্রু । আদিবাসী সেই বাচ্চাগুল , আর লেবুজল – না না নিবুপানি ।