সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য


সুন্দরী হুড্রু , ব্যাঙের ছাতা আর নিবুপানি




সাতশ ছেচল্লিশটা সিঁড়ি দেখে প্রথমেই পা একটু কেঁপে উঠল । কিন্তু  ঝর্ণার শব্দটা  চুম্বক শক্তির মত আকর্ষণ করে চলেছে , যার নাম হুড্রু সুবর্ণরেখা নদীর জল তিনশ বাইশ ফুট উচ্চতা থেকে নীচে তীব্র গতিতে আছড়ে পড়ছে । অদ্ভুত এক রোমাঞ্চে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম । সিঁড়ির  ধাপে ধাপে  জীবন সংগ্রামের ছবি প্রস্তুত , শুধু মোবাইলের ক্যমেরায় ফটো   নেওয়ার প্রতীক্ষা । বছর দশের মধ্যাই ওদের বয়েস হবে । তিন চারজন বসে আছে সামনে সুন্দর সুন্দর ফুলদানি ভর্তি ফুল । আমাদের সুসজ্জিত শোকেসে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব । ফুলগুলো এক প্রজাতির পাহাড়ি ছত্রাক  কচিকাঁচারা ব্যাঙের ছাতা বলে লাফাচ্ছে আধিবাসি বাচ্চাগুলো  পেটের ভাত যোগানে ব্যাস্ত। সেই  শুকিয়ে যাওয়া ছত্রাক বাঁশের ফুলদানিতে  মন দিয়ে লাগাচ্ছে  এছাড়াও কিছু বাচ্চা ধারাল ছুড়ির আঁচরে  সুন্দর বাঁশের ফুলও বানিয়ে দিচ্ছে । এরা মূলত  পাশের গ্রাম থেকে আসা আদিবাসী ।



 যখন  নামতে নামতে  লম্বা একটা জিব বেড়িয়ে আসছে তখন ঝর্ণার গর্জন আরও বেড়ে গেছে । যারা ওই পথেই ফিরে আসছে , আশ্বাস দিচ্ছে আর বেশী দূর নয় । অবস্থাটা হয়েগেছে কতদূর , আর কতদূর বল মা । পাথুরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নজরে পড়ছে ঝুপড়ি দোকান গুলোতে হাঁড়িয়া বিক্রি হচ্ছে । শহুরে বাবুদের ভিড় বেড়েছে । সবার একদিনের জন্য দলছুট হওয়ার ইচ্ছে জেগেছে । কিন্তু সামনে একি দেখছি !  দুরন্ত জলরাশি নিয়ে দুর্বার গতিতে পাথর দাপিয়ে সুবর্ণরেখা এগিয়ে চলেছে । এর টানেই বুঝি ছুটে আসা ।  অনেকটা তফাৎ রেখেই দাঁড়িয়ে আছি । ঝর্নার একদম কাছে যাওয়া মানা ।  চারিদিকে সাবধান বানী সাটান  বর্ষায়  আরও ভয়াবহ আকার ধারন করে । তবু  শিক্ষিত , সভ্য জাতির একটা বড় গুন কিছুতেই সে বারন শোনে না । যেখানে ফটো তোলা বারন , বিপদ সঙ্কেত , প্রবেশ নিষেধ সেখানে সে বীর সন্তান হয়ে ওঠে । আর সেলফি ভূত সবার ঘারেই ভর করেছে   পিছনে দুরন্ত ঝর্না তার সামনে একমুখ হাসি নিয়ে ভারত মাতার অবাধ্য বীর সন্তান ।
এবার উপরে ওঠার পালা এনার্জি ড্রিঙ্ক হাজির সিঁড়ির এক কোনায়  - নিবুপানি (লেবুজল) কাচের গ্লাসে ঠাণ্ডা পানীয় , এটাও একটা পরম প্রাপ্তি এই মুহূর্তে । কিন্তু বাঙ্গালী মাত্রই কি একটু বেশী স্বাস্থ্য সচেতন ? এক বাঙ্গালী সুগৃহিণী তখন ব্যস্ত দোকানদারকে পরামর্শ দিতে -গ্লাসগুলো সার্ফে ভালো করে পরিষ্কার করা উচিৎ ।  তার বালিকা মেয়ে মায়ের ভুল ধরিয়ে বলল ভিম বার । আদিবাসী দোকানদার হয়ত ভাবল ভিম কে কতবার এই সিঁড়ি ভেঙে নিয়ে আসবে তার দোকানে ! এর মধ্যে অনেকে আশেপাশে বসে পরেছে । নামার সময় পেট বোঝাই  দেশী মুরগীর মাংস ভাত এতক্ষনে কোন দেশে পৌঁছে গেছে কে জানে ? ওপরে উঠতেই গরম পকুরির গন্ধ ভেসে আসছে ।সদলবলে খেতে বসে পরলাম । সঙ্গে মাটির ভাঁড়ে চা ।

   ফেরা তো নয় ফেরা , পাহাড়ের গায়ে তখনও কমলা রঙের সূর্যটা নিদ্রা যাওয়ার জন্য হাই তুলছে ।দূরের পাহারের গায়ে রঙ বদলে যাচ্ছে । আকাশে শুরু হয়েছে রঙের খেলা । ওই গানটা খুব মনে পরছে – “আজ কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে আকাশ খেলে হোলি পিছনে পরে রইল সুন্দরী হুড্রুআদিবাসী সেই বাচ্চাগুল , আর লেবুজল না না নিবুপানি ।
অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য