ঘুণপোকা
১.
সদ্য খননকার্য সমাপ্ত করে যে রাখাল দাসের মতো পাথর খুঁড়ে খুঁড়ে
সিন্ধু খুঁজে আনে আমি তার নাম দিয়েছি অ-সভ্যতা। বৈরাগী সময়ের হিসেবে কখনও দেখা হবে
ঢিবির উপর বসে থাকা আদুরে ভেড়ার সাথে। হাসনুহানা ফুটেছে কোথাও। তোমাকে ছোঁয়ার
সুপ্ত ইচ্ছায় বিশ্বাসের জানালাগুলি খুলে দিয়েছি। তুমি রোদের মতো এসে বসো। খোদাই
করো তোমার অক্ষর ক্যালিগ্রাফির মতো সাদা খামে।
২.
ব্যথার অঙ্কুরোদগমে মৃত্যুভয় নেই। হিসাব ছাড়িয়ে গেছে। হিসাব ছড়িয়ে
গেছে। ব্যাঙাচির লেজের মতো অন্ধকার পেরিয়ে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগে ভুগে
নিজেকে কেমন অসহায় লাগে। হায় লেজ! তুমি থাকলে অসভ্য, না
থাকলে অসহায়!
৩.
উন্মাদ ঘড়ির কাঁটার নাচন দেখে নগ্ন নাভি। তোমার অসম্ভব বাঁকে বাঁকে
মগ্নতা আছে। আচ্ছন্নতা আছে। চুপ করে কথা কওয়া আছে। নিষিদ্ধ নকশা আছে। অন্যমনস্কতা
নিয়েই আমাদের পথচলা। ইতিহাসে পা ফেলে সিংহাসন লোভ আছে, লোপও
আছে। মরা গাছের বাগান আছে। ঘোলাটে চোখে খুচরো পয়সার ঝনঝনানি আছে।
৪.
সিদ্ধ পুরুষ খড়ম খুলে রাখে। বিলুপ্ত জড়ুলচিহ্ন দেখে স্বর্ণতন্তুর
মতো শাণিত আঁধার ঢেকে ফেলে ফাল্গুন মাসের স্নান। রাজপোশাকের ভীষণ অভাবে নগরে নাগর
বৃষ্টিফোঁটার মতো ঘুমিয়ে পড়ে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ভিজে গেছে অন্ধকার বেলুন। পঙ্গু
কুকুর ছমছম ভিজে গেছে। তোমার নোনতা জিভ চেটে চেটে খাচ্ছে উঠোনের মাটি।
৫.
কুয়াশার শব্দের মতো আমাদের নদীটি বয়ে যাচ্ছে আদিম উদ্যোগে। শিকারীর
ভ্রুণ অচেনা হয়ে উঠছে ক্রমশ। আসলে নিজের জন্য কিছুই নয়। নীরবতাও ভালো নয়। পুরানো
মদের মতো আমাদের ব্যথাদাগ। পঙ্গপালের জননচিহ্ন দেখে কবোষ্ণ মেয়ের কাছে তৃপ্তিতে
ঘুমিয়ে পড়ি।
৬.
মধুমতী বৃষ্টিস্নান সেরে স্রোতস্বিনী বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখে ঢেউ।
কোনোদিন মুখোমুখি বসা যাবে। রান্নাঘরের বেসামাল খিদে গতজন্মের প্রেমিকাকে মনে
পড়ায়। জিভে নিরাপত্তার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখি। ছায়াপথ গিলে খেয়ে বদহজম হয়েছে
কান্নার। পাঁকে জন্মানোর শোকে জন্মদিন ফিকে হয়ে গেছে। হে সংশয়, বিব্রত করো না। চুল তার চশমার অনেক উঁচুতে। যেখানে ঘুমের কলারটিউন বেজে
ওঠে। বিভ্রমে বিভ্রমে সেজে উঠছে নূপুর। বর্ণচোরা অনুভূতি খুব চেনা লাগেনি এখনও।
আটকে যাওয়া ফিতের গায়ে প্যায়ারের গন্ধ। ঘুণপোকা কুরে কুরে খায় কাঠুরে হৃদয়।
0 মন্তব্যসমূহ