সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

কৌশিক সেন

 


গুচ্ছ কবিতা

 মথুরানগরে


বুকে বুকে অন্তর্হিত হয় শোক।  হে নীলাম্বর, দ্যাখো যমুনার জলে সূর্যোদয় কি করুণ, অদূরে গোচারণভূমিতে নেমে আসছে ঝাঁঝালো অম্লের ঘনীভূত বর্ষণ।  অস্পষ্ট ছায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ধেনুঘ্রাণ।  এইতো সময়, খুঁজে নাও তোমার মোহনবাঁশি!

 সেই কবেকার স্তব্ধদ্বাপরের দিন! ফুলমান্ডি থেকে প্রতিধ্বনিত রাধিকাবিলাপ।  সূর্যের কিরণে জেগে ওঠে প্রসূতিকালীন উত্তাপ। কই, এখনও তো হলনা তা! এখনও তো স্পর্শকাতর মেঘ ভেসে যায় তেপান্তরের ওপর দিয়ে! গাঙুরের ফুটন্ত জল মিশে যায় ফেনিল যমুনায়!

 ও রাই, বুকে পাথর বেঁধে নাও আজ, এখনই! দমবন্ধ প্রকোষ্ঠে বন্দি রাখো বিরহ। গেরুয়া কাফতানে ঢেকে ফেলো বৈকালিক আঁধি। ফলিত সমুদ্রবিজ্ঞানকে রপ্ত করো নিষ্ঠুর নিলয়ে!

 এ শোক বড় ক্ষণস্থায়ী, তুমিও জেনে রেখো পার্থসখা।  প্রণয়াভ্যাসে প্লাবন নামে বৃন্দাবনে। সূর্যাস্তের রঙে সাধের কাচটিপে শৃঙ্গার সারে ব্রজের গোপিনীরা।  ব্যস্ত পথে পথে অকারণ বিকিকিনি, অচানক ময়ূরনৃত্য। এরপর কখনও দেবকীর গর্ভসঞ্চার হলে আমাকেও ডেকে নিও, ধাত্রীবিদ্যায় পারদর্শী আমিও!

 

ভাসান

 

ঈশ্বর বলতে যা যা জানি, সবই ধূসর তমিস্রার বুকে ভাসিয়ে দিলাম। ছিলাকাটা রোদ থেকে কলসভর্তি উচ্ছ্বাস মেঘানুসঙ্গের শমিত পুত্রকন্যাদল, গৃহস্থালি, দশকর্মা সকলই ভাসিয়ে দিই ধুলোর অলকানন্দায়। পাতার বুকে এঁকে রাখা গোলামচিহ্নকে ভেসে যেতে দেখি নিবিড় তরঙ্গে। লালনীল প্রজাপতির বিকেল যখন ঢেকে রাখি শীতের উত্তরীয়, আকাশের কুলুঙ্গি থেকে নামিয়ে এনেছিলাম সন্ন্যাসীর বেদমন্ত্র। তাওতো ভাসিয়ে দিয়েছি একদা!

 ও সুখ ঐশ্বর্যলিপির মত। মুঠোমুঠো ধান হেমন্তলক্ষ্মীর ঋতুময় কাপড়খানিতে বেঁধে ছুঁড়ে দিয়েছিলাম কুয়াশার নদীতে। কেউ দেখেনি! শরীর থেকে ঝুরঝুর ঝরে পরেছে মুসুরদানার মত বেদনা। শুক্লাদ্বাদশীতে একটু একটু করে লিখে রেখেছি চর্যাগান। ভেসে যাওয়া কবন্ধশরীরকে ডেকে শুধাইনি, তার অভিধানে কতগুলি শব্দ জমেছিল। জানতাম, দেবীপক্ষের একাদশীতে সমস্ত মৃন্ময়ীমুখ থেকে গলে পরে যাবে অকারণ শৃঙ্গারভার

 গোধূলির প্রবাহে কোনো সুখ নেই বলে অকারণ বেদনা খুজোনা সেখানে। লালনীল স্লেটে লিখে রেখো কিশোরীর বর্ণমালা।  তরঙ্গে কলহ আছে, কলরব আছে, কলতানও। পাখিদের আস্কারায় জেগে ওঠা সৌরদিন। হৃদয়ের ভেতর যেটুকু জ্ঞান, যেটুকু বোধি, সবটাই ঘাট পাড় হবে একদিন।  রক্তকরবীর শাখায় শাখায় পাপড়ি বিছাবে কেউ কেউ। মোহসূর্যের আলো যেদিন বড় কম পরবে, সেদিন তোমাকেও নিয়ে যাবো প্রতিমা ভাসানের শোভাযাত্রায়



আয়ুর্বেদ

 

তোমাদের ঐশ্বর্যের ভেতরে একটি অন্ধকার শেকড়ের সন্ধানে ছিলাম এতদিন। পাতায় পাতায় নিঃসঙ্গ আলোর জরিবুটি, মেঘে ঢাকা উপসংহার, লালচে বাতাবীর অভিমানে ভেসে গেছে বিষাদের নাম সংকীর্তন। নাড়িপথে রেখে আসা প্রমাদচূর্ণের নামকরণ করি যৌনতা। পাতার প্রতিটি অক্ষরেখায় অদেখা মৌবন বিছিয়ে দিয়ে গেছে সূর্যোদয়ের বালকেরা।  অসংলগ্ন বাতাসের সুরে সুরে ঘুম ভাঙে চরকের

 ভ্রম সংশোধন করো।  রাত্রির কোষাগারে একটিও ভূর্জপত্র জমা নাই আর! আয়ুরেখা ধরে হেঁটে যেতে যেতে একটাও পাখির পালক খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটিও সূর্যতপা সঙ্কেতপ্রলাপে নিরাময় সম্ভব নয় এই শেকড়বাকড়ের কিলবিল ম্যানগ্রোভে।  উজ্জ্বল পোশাকের ফুলপরীরা নেমে আসে পরাগরেণুর প্রমোদকাননে।  তাদেরকে বোলো, কোনো এক চওড়া নদীর পাড়ে আমরাই রেখে এসেছি অকারণ জড়িবুটির উত্তরাধিকার



আলিবাবা

 

বুড়ি ছুঁয়ে নেমে আসে সকালের আলো। বালিয়াড়ির শোক স্তিমিত হলে ডানায় ভর করে পালকের সোহাগ, অপরাহ্ণের চঞ্চলতা। ঝোলায় আশরাফী ভরে আমিও হয়ে উঠি কবেকার আলিবাবা!   

 রাতের কাছে কোনো দাবী ছিলনা কখনও। পদ্মপলাশ চুনি বসিয়ে রাখি হৃদয়ের জেন্দা আবেস্তায়। জহরতে আকীর্ণ করি অনাল গ্রন্থিগুলি। গোলাকার দুনিয়ার সকল জন্মই এক একটি মাজহাব যেন!

 শরীরে একটাও শালিখ ডেকে ওঠেনা আজ। সম্মোহনে ডেকে আনি নৃত্যপটীয়সী বাঁদিদের। আকাশ ভেঙে পড়ে খোজাদের সাম্রাজ্যে। স্বপ্নের আনাচে কানাচে গুঁজে দিই নিপুণ গুলামি

 রক্তের পিদিমে একটাও দস্যু মরেনা। প্রতিপদের চাঁদ ভেসে ওঠেনা জন্নতের বিকর্ষণে।  পল্লবিত ঈর্ষার শিকলে বেঁধে রাখি আজন্মলালিত কামনা।  আলোর ঘুঙুর পরে হেঁটে হেঁটে হই কালবেলা

 

  

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ