অরূপ
মানে কি নিরাকার ঈশ্বর? অরূপ মানে কি রূপহীন? না, তা তো নয়। এই বইটা পড়তে
পড়তে কিছুক্ষণ আগে বুঝে উঠতে চেষ্টা করছিলাম, তার অতীত দিনগুলোকে! তিনি ছুটন্ত এক সত্ত্বা। বড়ই গতিময়! তিনি মোটেই নিরাকার নন। বরং ভীষণ ভাবেই রক্ত মাংসের একজন মানবীয়
ব্যক্তিত্ব! কে বলেছে তিনি অরূপ, রূপহীন?
দীপ্ত চোখে
তিনি একজন রূপবান
মানুষ, যিনি দেশের মাটিতে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ আনার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ফেলে আসা
সত্তরের দশকে এই মানুষটিই জীবনের বাঁধাধরা গন্ডীকে অতিক্রম করে আরো অন্য ধরণের
কিছু একটা আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। একজন পারদর্শী নায়কের
মতো তিনি স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে ছুটে বেড়িয়েছেন।
আত্মকথামূলক লেখাটিতে এই নায়কের অনেকগুলো নাম আছে। যেমন তার একটা নাম ‘এনভার
হোজা’! স্বপ্ন আর বাস্তবের এই অক্লান্ত নায়কের কথা বলতে গিয়ে তাকে আমি হোজা-দা
হিসেবেই সম্বোধন করলাম।
তার
লিখিত ‘আত্মগোপনে অন্তরিনে সত্তর দশক’ বইটি সম্পর্কে হোজা দা লিখেছেন, ‘নদিয়া- মুর্শিদাবাদ – বীরভূম – সাঁওতাল
পরগণা অঞ্চলের যে জনজীবন বা কৃষক জীবন আমি সচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি তাদের বিপ্লবী
লড়াইয়ে অংশ নিয়ে, তাদের জীবনের সঙ্গে মিশে যা কিছু উপলব্ধি করেছি তারই বহির্প্রকাশ
তারই স্মৃতিকথা বহন করছে এ গ্রন্থ যার শুরু পঞ্চাশ বছর আগে। সেই মহান কালখন্ডের
ইতিহাস স্মরণের অক্ষম প্রচেষ্টা এটা। তবুও তা এক অনালোচিত ইতিহাসের সত্য উদঘাটনের
প্রচেষ্টা যা পাঠককে শিহরিত করবে।’
হোজা
দা তার লিখিত বইটি শুরু এমনি
ভাবেই করেছেন – ‘এ গ্রন্থ নিছক আত্মকথন নয়। ছয়ের দশকের খাদ্য আন্দোলন এবং সাতের
দশকে নকশালবাড়ি আন্দোলন যেভাবে দেখেছি, প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকেছি তারই স্মৃতি
বর্ণন।’
হোজা
দার জন্ম ১৯৫১ সালের ৫ই মার্চ। তার বাবার নাম অনাদি কুমার চন্দ্র। তিনি তার চার -
পাঁচ বছর সময়কার গ্রাম বাংলার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বড় আন্তরিক। সেই
সময়কার জীবন আমাদের অনেকের জীবনের সাথে আশ্চর্য রকম মিলে মিশে যায়। যেমন :- একটা
ল্যাম্পের চারপাশে গোল হয়ে বসে বাড়ির ছোটরা সুর করে পড়তাম, আমরা উঁচু ক্লাসের
দাদাদের কাছ থেকে হাফ দামে বই কিনতাম। বাড়িতে কখনো ডিম রান্না হলে সূতো দিয়ে কেটে
সেটাকে ভাগ করে খেতাম। এ যেন সে সময়কার ভাঙাচোরা গ্রামীন জীবনের একটা বহু পরিচিত
দৃশ্যসমূহ – যা মরমিয়া কলমে হোজাদা তুলে এনেছেন তার লেখায়।
তার
নাম অরূপ চন্দ্র। তার লেখায় জানতে পারি ‘এনভার হোজা’ সে সময়কার আলবেনিয়া
কম্যুনিষ্ট পার্টির নেতা। অনেকেই সে সময়ে তাকে হোজাদা নামে ডাকতো। তার এই
নাম বিবর্তনের আগে ও পরে অনেক কথা, অনেক রোমাঞ্চকর
অধ্যায়, সময়েয় বহুরূপী ইতিহাস লুকিয়ে আছে।
১৯৭০ সালের কথা। হোজাদা ও কয়েক জন মিলে নকশাল বাড়ির সমর্থনে
বহরমপুর থেকে একটা পত্রিকা বের করেন – সে পত্রিকা পুলিশ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা হয়।
হোজাদাদের উদ্যোগে সম্ভ্রান্ত মানুষদের বাড়ী থেকে
রোমাঞ্চকর ভাবে বন্দুক লুঠ করা হয়েছে। কারণ তারা চেয়েছিলো গ্রাম গ্রামান্তরে দরিদ্র কৃষকদের
মধ্যে গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তুলতে। কখনো বহরমপুর, কখনো বীরভূ্ম, যাদরপুর- কোলকাতা, সাঁওতাল পরগনা – এরকম বিভিন্ন
অঞ্চলে তিনি ঘুরে
বেরিয়েছেন। নাম পালটে আত্মগোপন করে থেকেছেন। কতাদিন অনাহারে অভুক্ত থেকেছেন! তখন তিনি তো আর একা
নন! তারা অনেকে মিলে একটা
প্রজন্ম – যেমন তপা(তপন ভাট্টাচার্য), শুক্রাচার্য্য মুখার্জি, অনন্ত
ভাট্টাচার্য্য, প্রদীপ ভড়, দেবব্রত বাগচি …… এমনি অসংখ্য মানুষ ও চরিত্র। আমার মতো
অনেকেই হয়তো এই সব মানুষদের কথা শুনি নি, জানলেও তেমন ভাবে জানি না! সত্তর দশকে নকশালবাড়ি
রাজনীতি করার অপরাধে হোজাদা বারবার জেলে গেছেন! তার লেখায় পাই অনেক মহিলা কমরেডদের কথা;
তাদের মধ্যে কয়েকজন মহামায়া চক্রবর্তী (ভট্টাচার্য), রুণা সিংহ রায় (চন্দ্র), কাজল
ভাট্টাচার্য (সরকার), এরকম আরো অনেকে।
হোজাদার লেখায় জানতে পারি, ১৯৭১ সালে বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে ৯ জন তরুণের হত্যাকান্ডের কথা-
কারণ প্রশাসনের চোখে তারা বিপ্লবী রাজনীতির মানুষ! তার বইটিতে উঠে এসেছে নামী-অনামী অসংখ্য মানুষ। তিনি লিখেছেন চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, বিনোদ মিশ্র, অসীম
চ্যাটার্জী, মহাদেব মুখার্জী, পান্নালাল দাশগুপ্ত, দীপংকর
চক্রবর্তী (অনীক-সম্পাদক), সুব্রত দত্ত (জহর), জর্জ ফার্ণান্ডেজ, জহরলাল, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ রাজনৈতিক মানুষদের কথা। কারো
কারো বিরুদ্ধে তিনি তীব্র ভাবে উগরে দিয়েছেন সমালোচনা। নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণ অনুযায়ী তিনি আমাদের জানাতে চেয়েছেন পরিচিত কিছু নেতাদের বিচ্যুতি। কোথাও কোনো রাখ ঢাকের ব্যাপার নেই
– হোজা দা সরাসরি লিখে গেছেন তার উপলব্ধি, নিজের বিচারের আলোয় বিশ্লেষণ করতে
চেয়েছেন ফেলে আসা সত্তর দশককে।
আমার হিসেবে আজকালকার গাড়ি-ঘোড়া চড়া নেতাদের
মতো হোজাদা তত বড়ো একজন স্বঘোষিত নেতা ছিলেন না। কিন্ত সামাজিক ভাবে
জড়িয়ে ছিলেন অত্যন্ত নীচু তলার মানুষদের কাছে, যাপন করতে চেয়েছেন
সর্বহারা মানুষের জীবন। মানুষের সুখ দুখের ভাগ নিতে আজকের শহুরে রাজনৈতিক নেতারা
কার-ড্রাইভ করে প্রত্যন্ত গ্রামে আসেন, ভোটের আগে দান-খয়রাতি করে তড়িঘড়ি বিদায় নেন। প্রকৃত অর্থে তৃণমূল, সহায়-সম্বলহীন মানুষদের আমরা
কতটুকু দেখেছি? কতটুকু জেনেছি তাদের কথা? হোজাদার যাপিত জীবনে সহায়-সম্বলহীন ও বিভিন্ন অসহায় দরিদ্র মানুষেরা কতখানি নিকট-বাস্তব ছিল, তার পরিচয় দিতে আলোচ্য বইটির লেখার থেকে সামান্য কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি-
‘সাঁওতাপাড়ায়
কাশেমের বাড়ি গেলাম। কাশেম দরিদ্র ভূমিহীন কৃষক।… কাশেমের বাড়িতেই থেকে গেলাম।
কিন্তু এই সময়ে গোটা এলাকায় কৃষকেরা চূড়ান্ত অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।
অধিকাংশ জমিই এক ফসলা। এই সময় সবাই তালের তাড়ি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। পুরুষ মহিলা
শিশু সকলেই। আমি তাড়ি খাবনা, জানিয়ে দিলাম। সুতরাং তিন দিন জল ছাড়া কিছুই খাওয়া
হলো না। কাশেম বললো, হোজাদা মরে যাবেন, একটু খান। তৃতীয় দিন আর থাকতে পারলাম না।
গ্লাসে চুমুক দিলাম। একটা তীব্র ঝাঁঝালো ঝাল তরল গলা দিয়ে নামতে লাগলো। ছোট কাঁচের
গ্লাসের আধা গ্লাস খেয়ে আর পারলাম না। বমি হয়ে যাবে ভেবে শুয়ে পড়লাম। অনাহারের কি
তীব্র জ্বালা আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক বছরের পর বছর অনুভব করে তা টের পেলাম।’
কিংবা
নলহাটির গ্রাম বুজুং-এর দৈনন্দিন জীবনের বর্ণনায় উঠে আসে এই চিত্র-
‘ঠিক
এমন সময়ে খবর এলো, রেল লাইনে একটা গরু কাটা পড়েছে। অচিন সহ সকলেই কাস্তে নিয়ে
দৌড়ালো। নিখিল বলল, ওরা মাংস কেটে আনতে গেল। আজ মহানন্দে খাবে। এই আদিবাসীরা গরুর
মাংস খায়। দুপুরে গরুর মাংস আর ভাত।’
বিপ্লবী
আন্দোলনের মানুষ হোজাদা একজন কাব্যিক ব্যক্তিত্ব। তার লেখায় বাস্তব জীবন আর কবিতা
কি সুন্দর উঠে আসে। আদিবাসী অঞ্চল, সেখানকার এক
পূর্ণিমার রাতের বর্ণনা তিনি দিচ্ছেন! এই লেখা পাঠকের জানিয়ে দেয় হোজাদা একজন লড়াকু মানুষই শুধু নন। তিনি
বড়ো মাপের কবি। - ‘ সন্ধ্যা হলেই অচিনের বাড়ির উঠোনে জড়ো হলো পাড়ার
আদিবাসী তরুণীরা এবং যুবকেরা সঙ্গে হাঁড়িয়া আর মাদল। তারা অর্ধবৃত্তাকারে গোল হয়ে
দাঁড়ালো, একদিকে মেয়েরা উলটো দিকে ছেলেরা। শুরু হলো নাচ আর মাদলের বোল। মাথার উপরে
পূর্ণিমার চাঁদ। ……… এক মোহময় পরিবেশ। মেয়েরা পরস্পরের কোমর ধরে হাঁটু ভেঙে ভেঙে
নাচছে। হাঁটু পর্যন্ত পরা শাড়ি ঝলকে উঠছে নাচের তালে তালে, হাসির ছন্দে ছন্দে।
ছেলেদের মাদলের তাল আর কোমর দুলিয়ে আগিয়ে পিছিয়ে ছন্দ তোলা – এই মোহিনী পরিবেশে
বিপ্লবের গান। এখন আমার আর নিখিলের সত্ত্বায় উন্মাদনা জাগাচ্ছে। জোৎস্নায় ভেসে
যাচ্ছে সারা উঠান। এক মায়াবী অন্তর্লোকে ভাসছি। ...… ওরা দৌড়ে আমাদের কাছে এসে আমাকে আর নিখিলকে
হাত ধরে টানতে টানতে ওদের লাইনে নিয়ে গেলো। আমরা হতভম্ব। ওরা বললো ‘সাথি, লাচ,
মোদের সাথে’ বলেই কোমর জড়িয়ে ধরলো। এক অনির্বচনীয় অনুভূতিতে মায়াময় জ্যোৎস্নালোকে
এই নৃত্যদেবীদের মাঝে আমি বিবশ হয়ে গেলাম; যন্ত্রের মতো পা দুটো আর কোমর দুলতে
থাকলো, যে দেবীর কোমরে আমার হাত সেখানে বিদ্যুতের ঝলকানি উঠছে বারবার। এই স্বপ্নময়
রাত যেন হাঠাৎই স্তব্ধ হলো। ওরা হাঁড়িয়া পানে ব্যস্ত হয়ে উঠলো।’
হোজা
দা তখন পেপ্টিক আলসারে আক্রান্ত। চিকিৎসা চলছে। একটা শেল্টারে আত্মগোপন করে আছেন।
সামান্য কিছুটা সুস্থ হতেই শীর্ণ শরীরে নতুন উদ্যমে পথে নামছেন,
তাদের আন্দোলনকে সংঘটিত করতে হবে।
অন্তরে অদ্ভুত অনুপ্রেরণা; হোজা দার কথায় ‘যে স্বপ্ন দেখে না এবং অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে
পারে না, সে বিপ্লবী হতে পারে না।’
হোজা দার বিবরণে এসেছে, বিভিন্ন ডাক্তার
চিকিৎসকদের কথা, যারা নানা ভাবে অসুস্থ বিপন্ন বিপ্লবী রাজনৈতিক মানুষগুলোকে
সাহায্য করেছেন। এটা পড়তে পড়তে মনে পড়লো তেভাগা আন্দোলন খ্যাত রাঙা ডাক্তার, -
বিলাসপুরের ডাঃ পূর্ণেন্দু ঘোষের নাম।
হোজাদার এই লেখা গ্রন্থে বেরিয়ে এসেছে
চাঞ্চল্যকর বহু কথা। কি ভাবে তখন জেল ভেঙে পালানোর চেষ্টা হতো, কি করে সশস্ত্র
পুলিশের কাছ থেকে রাইফেল দখল করা হতো, কি ভাবে কি নানা উপাদান ও মশল্লা মিশিয়ে সেসব দিনে
হাত-বোমা তৈরী হতো, কি ভাবে একেক জন রজনৈতিক কর্মী পুলিশের হাতে অ্যারেস্ট হয়ে জেল
বন্দী হতো ......... ! বড়ো রোমাঞ্চকর,
খুব কষ্টকর সেসব অধ্যায়! আরেক দিনের
কথা- একটা ছয়ঘরার রিভলবার ছোট্ট একটা ফোলিও ব্যাগে নিয়ে ট্রেনের সীটে বসে সফর
করছিলেন হোজা দা। তার সেই ব্যাগ সমেত রিভলবার ট্রেনের মধ্যেই হাফিস হয়ে যায় – আরেক নাটকীয় কান্ডের বর্ণনা উঠে আরে তার লেখায়।
সত্তর দশকে এসব ক্রিয়া কান্ডের সাথে যুক্ত
ছিলো যারা, তাদের মুখোমুখি হবার সুযোগ এই প্রজন্মের অনেকেই হয় নি। হোজা দা এই
সময়ের বিভিন্ন কর্মকান্ডের অংশীদার হিসেবে নিজেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হাজির
করিয়েছেন। তার অনুজদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, অতীত দিনের সেই সব মানুষদের সাথে,
যারা সত্তরের দশকে বিপ্লবী কাজকর্মে উদ্বুদ্ধ ও সক্রিয় ছিল।
তার লেখায় এসেছে নকশাল আন্দোলনের নানা
তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, এসেছে সত্তর দশকের এই আন্দোলনের ব্যর্থতার কথা। যেমন সেসময়ে
অনেক নকশালপন্থী নেতা চাইতেন চীনের পথেই ভারতবর্ষের বিপ্লব সংগঠিত
হোক। সেক্ষেত্রে হোজাদার দেয়া বিশ্লেষণে ‘চিনা পার্টির বক্তব্য ভারতীয় ব্যবস্থায়
অচল। আমিও মনে করি চিনের বাস্তব অবস্থা আর ভারতীয় অবস্থা বহুক্ষেত্রে আলাদা।’
তার আত্মজীবনীমূলক বইটিতে ১৯৭৪ এর সুদীর্ঘ
রেল ধর্মঘটের কথা হোজা দা লিখেছেন। রেল ধর্মঘটের সময়েও তার ভূমিকা ছিল সক্রিয়!
তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি বাস্তবের মধ্যে
ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এমনি ভাবেই এক রোমাঞ্চকর সময়ের রূপময় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি উঠে
এসেছেন। ফেলে আসা সত্তর দশকের সেইসব উত্তাল ও টালমাটাল সময়ের তিনি এক জীবন্ত প্রতিনিধি।
পরবর্তী
সময়ে তিনি অবশ্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে লেখা ও ইতিহাস অনুসন্ধানে মনোনিবেশ
করেন। ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা ও মুর্শিদাবাদের শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে সমীক্ষা
মূলক গ্রন্থ লিখেছেন। তিনি বহরমপুর
থেকে ‘বাসভূমি’ নামে একটা বিষয়ভিত্তিক পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন। কবিতা লেখার
অভ্যাস তো ছাত্র জীবন থেকেই ছিল। তিনি লিখেছেন আরো অনেক কবিতা, সেগুলো বিভিন্ন
কাব্যগ্রন্থাকারে সংকলিত হয়েছে। তার
নিজস্ব লেখা উপন্যাস- ঝড়ের বৃত্তে প্রকাশিত হয় ১৯৮৭-এ। তার নিজস্ব লেখা বেশ কয়েকটি
গ্রন্থ আছে। সম্পাদনা করেছেন ছয়টি বইএর।
কয়েকদিন আগে ডাক বাহিত হয়ে ‘আত্মগোপনে অন্তরিনে সত্তর দশক’ বইটি যখন আমার হাতে এলো, তখন
ভেবেছিলাম এই বইটা কবি, সাংস্কৃতিক কর্মী, সামাজিক ও মানবতাবাদী মানুষ অরূপ
চন্দ্রদার একটা ঘরোয়া ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ। তার পরে বইটি পড়তে পড়তে আমি তন্ময় হয়ে
যাই, রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি। সমাজ, ইতিহাস, দর্শণ, রাজনীতি এসব মিলিয়ে এটা একটা বিশাল
মাপের লেখা। এখানে নকশাল বাড়ি রাজনীতির কিছু তত্বগত বিষয়ও উঠে এসেছে। সেসব তাত্বিক
বিশ্লেষণে আমি যাবো না, কারণ সেসব বিষয়ে আমার ততটা জ্ঞান নেই। তবুও বলবো, হোজাদার
এই বইটি একটা অনবদ্য সৃষ্টি! এই বইটিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার নিজের জীবনের
অনেকগুলো বছরকে খরচ করে। সামাজিক এক যুদ্ধক্ষেত্রে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থেকে তিনি তার চিন্তা ভাবনাকে শানিত করেছেন। ঘরে
বসে একবার পড়ে নিয়ে এই বইটি যথাযথ সমালোচনা
করা তাই যে কোনো মানুষের পক্ষে অসম্ভবেরই মতো! তবুও
এই বইটা পড়ে আমার যে প্রতিক্রিয়া হলো, তার সামান্য কিছুটা তুলে ধরেছি। হোজা
দা’র উদ্ধৃতি তুলে দেখিয়েছি, তার চোখে দেখা সত্তর দশকের কিছু তীব্র অনুভব ও
বেদনাদীর্ণ রক্তাক্ত সময়ের ছবি!
এই হোজা দা ওরফে অরূপ চন্দ্রদার সাথে আমার
প্রথম দেখা ও পরিচয় হয় ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে কাঁচরাপাড়াতে পীযূষ বাকচি আয়োজিত
‘নীলাঞ্জনা সাহিত্য উৎসবে’। তারপরে তারই আমন্ত্রণে ২০১৮র মে-মাসে আমি ও আমার ভাই
সৌমেন্দ্র গেলাম বহরমপুরে, ‘বাসভূমি’ আয়োজিত বিশেষ উৎসব ও সাহিত্য সম্মেলনে। প্রথম পরিচয়ের খুব অল্প সময়ের
মধ্যেই তিনি আমাদের আপনজন হয়ে গেলেন। বহরমপুরে দুদিনের থাকাকালীন স্বল্প সময়ে
জন্যে তার বাড়িতে যাই। তার পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ পরিচয় হয়। তখনো জানতাম না,
অরূপ দা’র এই বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন। কামনা করি, আমাদের কাহিনীর নায়ক হোজা দা,
আমাদের প্রিয় অরূপ চন্দ্র-দার অনাগত জীবনও সুন্দর হোক। তিনি
এমনিই সৃষ্টিশীল থাকুন। সমাজের হিতাকাঙ্খায় নিবেদিতপ্রাণ, সমাজ-কল্যানকামী মানুষ, রূপময় এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার নাম সবার
অন্তরে লিখিত থাকুক! আমার
বিশ্বাস, সময়ের প্রকৃত ইতিহাস, তাকে অনেক অনেক দিন মনে রাখবে!
আত্মগোপনে অন্তরিনে সত্তর দশক – অরূপ চন্দ্র
বাসভূমি পত্রিকা প্রকাশনা।
বিনিময়- 275/-
4 মন্তব্যসমূহ
অসাধারণ লাগলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে।
উত্তরমুছুনআলোচনা পড়ে মুগ্ধ হলাম। এবার মূল বইটি সংগ্রহ করে পড়তেই হবে। সমরকে শুভেচ্ছা জানাই এই সুন্দর আলোচনার জন্য।
উত্তরমুছুনকাজল সেন
মুছুন