সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

মণিজিঞ্জির সান্যাল

 

 বিদায় ডিপ্রেশন ( পর্ব- ৮ )  


         অবসাদ কাটাতে কিছু খাবারের ভূমিকা   

  কিছু খাবার  বন্ধুর মতো পাশে এসে দাঁড়ায় ।শুনলে অবাক লাগলেও কথাটা কিন্তু সত্যিই যে

অবসাদ বা ডিপ্রেশনের সময় কিছু খাবার বন্ধুর ভূমিকা পালন করে। শুনলে অবাক লাগলেও কথাটা কিন্তু সত্যিই। তাহলে একটু আলোচনা করা যাক এই বিষয়টি নিয়ে। আসলে মানুষের জীবনে যে কোনও সময় উঁকি দিতে পারে হতাশা বা ডিপ্রেশন। সে জন্য যে আপনাকে জীবনে ব্যর্থ হতে হবে তা নয় । সফল, স্বচ্ছন্দ জীবনেও ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। 

অনেক সময় লেখাপড়াতে অতিরিক্ত নাম্বারের প্রত্যাশা, কখনও কাজের চাপ, আবার কখনও ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন , দাম্পত্যে ছেদ ইত্যাদি  নানা কারণে মনের মধ্যে তৈরি হয় একটা যন্ত্রণা। ধীরে ধীরে এই যন্ত্রণায় প্রলেপ পড়তে থাকে। একটার ওপর আর একটা স্তর জমা পড়ে  মনের মধ্যে নিজেরই অজান্তে অবসাদের গাঢ় মেঘের সৃষ্টি হয় , যাকেই বলা হয় ডিপ্রেশন।

তাই উত্তেজনা কমিয়ে এমন কিছু খাবার গ্রহণ করা উচিত যা এই সময়ে আপনাকে সাহায্য করবে।

                 পৃথিবীর মধ্যে যে সব দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন, তার মধ্যে  প্রথম দিকেই রয়েছে ভারত। জনসংখ্যার ৬.৫% মানুষই ডিপ্রেশনের শিকার। কখনও লেখাপড়া, কখনও কাজের চাপ, আবার কখনও সম্পর্কের টানাপোড়েন এসব নানা কারণে হতে পারে ডিপ্রেশন। 

কোনো কোনো ক্ষেত্রে  ডিপ্রেশনের ওষুধ হতে পারে কিছু বিশেষ খাবার। আমাদের প্রকৃতির মধ্যে এমন কিছু জিনিস রয়েছে, সেগুলো নিয়মিত খেলে মন ভালো থাকে। এর ফলে কেটে যেতে পারে হতাশা। ডিপ্রেশনের সঙ্গে একাকীত্বের নিবিড় যোগ রয়েছে । 

 এক একজনের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের কারণ এক একরকম।  প্রথমেই দেখতে হবে মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার আছে কি না তা বোঝার জন্য দুটো মুখ্য উপসর্গ আছে। প্রথমত দেখতে হবে, এটা মনখারাপ নাকি ডিপ্রেশন?  মনখারাপ দু’-এক দিনে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু মনখারাপ যদি দু’সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হয়, তা হলে বুঝতে হবে তা ডিপ্রেশন দিকে এগোচ্ছে। আর একটা দিকও দেখতে হবে, তিনি সব কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কি না। হয়তো তিনি সিনেমা-সিরিজ দেখতে ভালোবাসেন, গান ভালোবাসেন, কিন্তু এখন সেটা আর ভালো লাগছে না। বা কেউ হয়তো রান্না করতে, খেতে ভালোবাসেন, সেটাও আর ভালো লাগছে না। এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ধীরে ধীরে অবসাদের দিকে এগিয়ে চলেছেন । তাহলে কি করবেন আপনি তাই তো ?

ডিপ্রেশন কাটাতে কাউন্সেলিং, নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে উপযুক্ত খাওয়া দাওয়া করাও অত্যন্ত জরুরি। খাওয়া দাওয়া নিয়মিত ভাবে না করলে হতাশা ও অবসাদ আরও বেশি করে গ্রাস করতে পারে।

          বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কম-বেশি আমরা সকলেই মনের অসুখে আক্রান্ত। কিন্তু হতাশা ও উদ্বেগ গভীর আকার নিলে তখন তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তির যেমন কাউন্সেলিং ও ওষুধের প্রয়োজন, তেমনই সঠিক খাওয়া-দাওয়া করাও অত্যন্ত জরুরি। কারণ কোনও কোনও খাবার মুড ভালো করে আবার কোনও খাবার মুড অফ করে দেয়।

 

রোজ সকালে এক গ্লাস ছাতু শরবত, সহজেই ঝরবে মেদ!

 

( ১ ) প্রথমেই বলা যাক হলুদ আর পাতিলেবুর কথা ।এক গবেষণা বলছে, ক্যানসার ও অ্যালজাইমারের মত ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতেও হলুদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্ট মৌল রয়েছে যা হতাশা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

 

( ২ ) এবারে আসা যাক ওটমিলের কথায়। ওটমিলে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরে সেরোটিন তৈরি করে। সেরোটিন মন ভাল করতে সাহায্য করে, শান্তি এনে দেয়।

 

( ৩ ) আপনি কি জানেন আমাদের মস্তিষ্কে ফ্যাটের পরিমাণ ৮০ শতাংশ। আখরোট মস্তিষ্কের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এই ফল মন ভাল করে, এর মধ্যে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কাজে সাহায্য করে।

 

( ৪ ) এছাড়া ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন। ফাইবার, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট- কী নেই! ডায়াবিটিসের রোগীদের রোজ ফল খাওয়া উচিত, এতে তাদের জিআই কম হয়। ফলে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।

যেমন আপেল , শুধু শরীরের নয়, মনের স্বাস্থ্যের জন্যও আপেল অত্যন্ত উপকারী। ডিপ্রেশন কাটাতে রোজ একটা করে আপেল অবশ্যই খাওয়া উচিত। আপেলের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা কোষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

( ৫ )    টমেটোতে আছে প্রচুর পরিমাণে 

আলফা-লিপোলিক অ্যাসিড এবং ফলিক অ্যাসিড। অবসাদ কাটাতে এই দুটির ভূমিকাই অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অবসাদে ভোগা মানুষদের এক তৃতীয়াংশের শরীরেই আলফা-লিপোলিক অ্যাসিড এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাব রয়েছে। তাই রোজ টমেটো খেতে ভুলবেন না।

 

( ৬ ) মন ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন কিন্তু মাস্ট। চিকেন, বিনস , সয়াবিন খেতে হবে । এগুলি আপনার মনকে সজাগ ও সতর্ক করে তুলবে এবং ঝিমিয়ে পড়া অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে তুলবে। খাদ্যতালিকায় রোজ প্রোটিন থাকলে অবসাদ গ্রাস করতে পারে না।

 

( ৭ ) এবারে যার কথা বলব শোনামাত্রই মন আপনার আনন্দে ভরে উঠবেই । চকোলেট ! কি চমকে গেলেন তো। আনন্দ লাগছে কিনা আগে বলুন। শুনেই যদি মন ভাল হয়ে যায় তাহলে বুঝতেই পারছেন মানসিক চাপ কমাতে চকোলেটের বিকল্প নেই। বিশেষ করে ডার্ক চকোলেট। এর মধ্যে থাকা ফিনাইলেথাইলামাইন মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে।

 

( ৮ ) এরপরে বলি পেঁয়াজের কথা । পেঁয়াজের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত কোষের মেরামতে সাহায্য করে। মনকে ভাল করতেও এর বিশেষ ভূমিকা আছে ।

 

( ৯ ) সম্ভব হলে কেশর রাখতে পারেন ডায়েটে। 

 

( ১০ )কিছু তেল আমাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। প্রাকৃতিক এসেনশিয়াল অয়েলও ডিপ্রেশন কাটাতে সাহায্য করে। যেমন ল্যাভেন্ডার । ৭-৮ ফোঁটা তেল মাথায় মালিশ করেই দেখুন না । মিষ্টি গন্ধে ডিপ্রেশন কেটে যাবে। খুব  ভাল ঘুম হবে ।

                      

( ১১ )  সবুজ শাকসব্জির গুনাগুনের কথা মোটামুটি সবাই জানেন। কোষকে এরা রোগমুক্ত করে, মেরামত করে মস্তিষ্ককে। সবুজ সবজি শরীরের পাশাপাশি মনের জন্যও অপরিহার্য। ক্যানসার এবং আরও নানা অসুখের থেকে রক্ষা করে সবুজ শাক সবজি। পালং শাক, পুঁই শাক, লেটুস পাতা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে । এগুলি মস্তিষ্কের কোষের উন্নতি ঘটায় এবং ডিপ্রেশনের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে।

 

( ১২ ) এছাড়াও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খেতে হবে । জিঙ্ক মস্তিষ্কের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। রক্তে জিঙ্কের পরিমাণ কমে গেলে চিন্তা, মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন বেড়ে যায়। অতএব খেতে হবে পালংশাক,  মাংস, ডিম, কাবুলি চানা ও বাদামের মত জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার ।

           ​অবসাদ কাটাতে এবারে জেনে নেওয়া প্রয়োজন কী কী খাবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে দুগ্ধজাত খাবার, চিনি, বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার, ক্যাফিন বর্জন করতে হবে। একেবারে এই সব খাবার ছাড়তে না পারলে সামান্য পরিমাণ খান। এগুলি আপনি কতটা পরিমাণ খাবেন, তা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করুন।

 

                      পর্ব - (৯)      

 

           অবসাদ কাটাতে ফুলের ভূমিকা

         

 

শুনলে অবাক হলেও পরীক্ষা করেই দেখুন জীবনের অবসাদ কাটাতে ফুলের কি অপরিসীম ভূমিকা।

অবসাদ, উৎকণ্ঠা দূরে রাখতে বাড়িতে অবশ্যই ফুল গাছ লাগাবেন। ফুলের সৌন্দর্য মনকে ভাল করে দেয়। যদি জায়গা না থাকে তাহলে দু তিনটে টবেই লাগানো যেতে পারে। বিশেষ করে জুঁই ফুল । এই জুঁই ফুল মনকে ভাল করে দেয়।  

ফুলের গাছ অক্সিজেনের জোগান দেয়৷ তাই বাড়িতে ফুলের গাছ আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে৷ জুঁই ফুল গাছ ঘরে লাগালে তার তো  বিশেষ  উপকার আছে।

জানেন কি জুঁই ফুলের সুগন্ধ আমাদের চিন্তা ভাবনাকে উন্নত করে৷ মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে৷ এই জুঁই ফুলের সুগন্ধ আমাদের মানসিক চাপ কাটিয়ে সুখী বা মন ভাল করা হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়৷ ফলে আমাদের খুশি থাকতে সাহায্য করে। পরিবারে সম্পর্কের উন্নতি হয়৷

 

জুইঁ ফুল তুলে ঘরে রাখলে এর সুগন্ধ আমাদের শরীরে হরমোন ব্যালান্স করে৷ তাই সুস্থ যৌনজীবনের জন্য উপকারি এই জুঁই ফুল। 

জুঁই ফুল জলে ভিজিয়ে রাখলে সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে সুগন্ধ৷ এই গন্ধ মানসিক অশান্তি কাটাতে সাহায্য করে । ফলে শোবার ঘরে জুঁই ফুল রাখলে ঘুম ভাল হবেই ।

বাড়িতে থাকা জুঁই ফুলের গাছ থেকে বানানো যেতে  পারেন জেসমিন টি ৷ এই চা খেলে নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত করে৷ অবসাদ, উৎকণ্ঠা দূর হয়৷   

 

                  পর্ব -- (১০ ) 

 

       অবসাদ কাটাতে প্রকৃতির অবদান

 

ডিপ্রেশনে ভুগছেন? মন ভালো করতে ঘুরে আসুন , প্রকৃতির মধ্যে কিংবা যেখানে আপনার মন চায় ।

ডিপ্রেশনের সঙ্গে একাকীত্বের নিবিড় যোগ রয়েছে। আমরা একা থাকলে অনেক সময়ই হতাশায় ভুগি। বেড়াতে গেলে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হয় । কতো অজানাকে জানা হয়, কতো অচেনাকে চেনা হয়, মনটা সজীব হয়ে ওঠে।

 সব সময় শহুরে জীবনে থাকতে থাকতে  আমাদের কাছে একঘেয়ে লাগতে পারে। এর থেকে ছুটি  নিয়ে প্রকৃতির মধ্যে ঘুরতে গেলে শরীর আর মন দুটোই ভাল হয়ে যায়। নেচার থেরাপি যে কাউকে  ডিপ্রেশন কাটিয়ে চনমনে করে তুলবে।

ডিপ্রেশনের একটা বড় কারণ ইনসমনিয়া। আপনার প্রতিদিনের একঘেয়ে রুটিন থেকে একটু অবসর প্রয়োজন। বাইরে কোথাও আরাম করে ঘুরে আসা উচিত। এতে পর্যাপ্ত  বিশ্রাম নেওয়া যায় এবং  ভালো ঘুম হয়।

 

ঘুরতে গেলে মন ভালো হবেই ।

সমীক্ষা বলছে পৃথিবীর মধ্যে যে সব দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন, তার মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে ভারত। জনসংখ্যার ৬.৫% মানুষই ডিপ্রেশনের শিকার।  ডিপ্রেশনের একটি দারুণ ওষুধ  হতে পারে এই ঘুরতে যাওয়া। নিজের চেনা গণ্ডীর বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়। এর ফলে কেটে যায় হতাশা বা অবসাদ। 

 বেড়াতে গেলে ভীষণরকম ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি হয়। এমন বেড়ানোও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। যেমন ট্রেকিং বা অন্য কোনও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট। এর ফলে এনডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ হয়। এই হরমোনের সক্রিয়তায় ডিপ্রেশন কাটে। মন ভালো হয়।

তাছাড়া বাইরে কোথাও যাওয়া মানে এই বিশাল পৃথিবীর অসীম সৌন্দর্যের সামনে আপনি উন্মুক্ত। সেখানে আপনার ব্যক্তিগত দুঃখ-সমস্যা সবই খুব ক্ষুদ্র মনে হবে। সমুদ্র বা পাহাড়ে সূর্যোদয় আপনাকে প্রকৃতির বিশালতার সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে। যার ফলে আপনি নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আসল মানুষটাকে খুঁজে পাবেন । তাই মন খারাপ হলে বা মনের গভীর অসুখ হলে অবশ্যই ঘরের বাইরে যান এবং সম্ভব হলে আশেপাশে যেখানে সবুজের হাতছানি সেখানে নিজেকে মেলে ধরুন।

ReplyForward

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ