১)
টিথারিং থেমে গেছে। এখন শান্ত রাত। জানলা খুলে ফেলছে চড়া পারদ। এসময় চাঁদ
জাগে। তার গায়ের কলঙ্কে এসে বসে আঁকাবাকা মথ।
যাদের বাড়িতে জরির পর্দা হাওয়ায় ওড়ে তারা, এসময় পরিদের নাচ দেখে।
২)
সুস্বাগতম শ্বেদবিন্দু। সরীসৃপের মতো নেমে এস, কাঁধ পেরিয়ে উন্মুক্ত উপত্যকায়।
সেখানে শীত মৃত এখন। হরিদ্রাভ তৃণ বেহালার সুরে কাঁপছে দক্ষিণের বারান্দায় বসে। দূরে
আকাশে এলোচুল, পলাশ-কপোল।
ডিজে বাজছে পরিদের বাগানে।
৩)
হলুদ ট্যাক্সির আড়ালে অন্ধকার নড়ে। আয়নায় বিহারি চালকের চঞ্চল আড়চোখ। ফুরিয়ে
যাচ্ছে মিটার, রাস্তায় পিচ গলে ডুবে যায় ঝড়সন্ধ্যার অজস্র দাগ। অঙ্কে কাঁচা ছিল যারা,
তাদের উত্তর মিলে যাচ্ছে, বসন্তপঞ্চমীর কাকজ্যোৎস্নায়। হুসেনের ঘোড়ার পিঠে এই মাত্র
উঠে বসেছে হলুদ রঙের এক পরি।
৪)
আটপৌরে ঘোমটার আড়ালে, শাল-পিয়ালের গায়ে পড়া কাঁচা রোদ ঝলমল করে। তির্যক
লজ্জা উঁচুনিচু হয়। এখন তাকে জাবনা ও আমানি নিয়ে নেমে পড়তে হবে মোরামের চোরা পথে। নিস্তারহীন
খিদে তাড়া করেছে তাকে আজীবন। এইসব ঘটনা সে গল্প করে কৃষ্ণচূড়া গাছটির সাথে। তুলসী তলায়
শাঁখ বাজে ভক্তিভরে। কৃষক ফসল ফলায় যখন, তখন সে খোঁজ পায় বসন্ত বউরির উষ্ণ বাসায় ঝলমল
করে রিক্ত আলো। দেখে তার কৃষ্ণচূড়ায় উড়ে এসে বসেছে অসংখ্য পরি। যার ভিতর পুংকেশর চক্র,
গুটানো পাপড়ির আড়ালে।
৫)
দুপুরের ফাঁকা মাঠ হু হু করে। রেডিওতে বেজে ওঠে রাগ বিলাবল। স্নান ফুটে ওঠে
অতুল, একা বিহঙ্গে। জল নিদাঘ মেটায়। দিগভ্রান্ত পথে রাখাল বালক, বাঁশিতে এঁকে দেয় ক্ষত
দাগ। ধুলো ওড়ে দিগন্ত জুড়ে। সীমানায় আলতো পড়ে থাকে সরু দাগ। পরিদের ডানায় স্তব্ধ কাঁপে
উড়ান।
৬)
আবারও সেই ঢেউ তোলা হাওয়া। সংজ্ঞাহীন অনুভূতি। আমি ব্যক্ত করতে পারিনা কোথায়
গিয়ে ধাক্কা মারে অভিঘাত। রংগুলো কীভাবে যেন ঘুম এনে দেয় চোখের পাতায়। পাখির ডাক, ভোরের
কুয়াশা, বাতাসের গন্ধ সবই ম্যাজিকাল করে, কারা যেন পাঠিয়ে দেয় বুকের খাঁচায়। আর আমি
খুঁজতে থাকি উত্তর। দিশা হারাই। দেখি একটা পরি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আমার পাশে। আর আমি
মাঝি হয়ে নদীর বুকে ভাসাতে থাকি সামান্য পানসি।
0 মন্তব্যসমূহ