সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

তৈমুর খান


 গুচ্ছ কবিতা 


 
যাঃ শালা 



কারা লাফাচ্ছে আর কারা লাফাচ্ছে না 
অনুভব করতে করতে ভোর হয়ে গেল
বিছানাপত্র গুটিয়ে কাজে বাহির হও
সারাদিন আত্মনিবেদন
এক ঘন্টা ছুটি পেলে সব হা-হুতাশগুলির
সঙ্গে 
বসে চা পান করো


মেয়ে বড় হচ্ছে, মেয়ে রেপ্  হচ্ছে 
অথবা মেয়ের শ্লীলতাহানি
বিপজ্জনক যুগ


ফিরতে ফিরতে রাত্রি 
চাঁদ উঠল কী উঠল না 
কারা জিতল 
কাদের ঘরের ছাদে সত্যি সত্যি নক্ষত্র জ্বলছে
সেসবের ভ্রুক্ষেপ নেই 
থালার একপাশে ধানক্ষেত 
অন্যপাশে ঢেঁকিশাকের লতা
মাঝখানে দিব্যি খেলে বেড়াচ্ছে শুঁটকি মাছ


অন্ধকারে করে লাফাচ্ছে 
আর কারা  লাফাচ্ছে না 
অনুভব করতে করতে ভোর হয়ে গেল  




  
জীবন বৃত্তান্ত



 পাশ ফিরে ঘুমোলাম হেমন্তকালের বিছানায়
 কুয়াশায় জীবনবৃত্তান্ত মিশে গেল
 শরীরে শীতের স্পর্শ


 কারা এত সাপ পুষে রেখেছে আমার জন্য?
এতসব আমার ঘুমের ভিতরে ঢুকে যায় 
আর ক্ষতবিক্ষত করে সারারাত


আমি তো  সাপুড়ে নই 
বাঁচার প্রলাপ শুধু জাগে
কখনো হাঁটুমুড়ে কখনো হামাগুড়ি দিয়ে বাঁচি


 হেমন্তের রাত পার হয়
 সকাল আসে না তবুও
 জীবন বৃত্তান্ত মিশে যায় কুয়াশায়



 
আরোগ্যের পথে



তোমাদের পরামর্শ মতো 
আরোগ্যের পথে রোজ হাঁটি


হেঁটে হেঁটে কতদূর যেতে পারি আর 
সেই তো রেললাইন 
যেখানে অঞ্জনা  সেন 
প্রত্যহ জীবিত হয় মৃত্যুর পর


তার সঙ্গে দেখা হয় 
কথা হয়--- অনেক প্রাচীন কথা
আমি এখন নতুন প্রেমিক তার !



বাউল



এপারে ওপারে মুহুর্মুহু যুদ্ধের সংকেত আসে
ভোরের পাখিগুলি থাকবে কোথায় ?
বৃক্ষদের দম বন্ধ হয়ে আসে
নদীও কি তবে রক্তের নদী হবে ?


এই মাটির কাছে বসেছি আজ 
হৃদয়ে বাউল কাঁদে
মানুষেরে ডেকে ডেকে ফেরে 
বাউল মানেনা কাঁটাতার



একাকী



পথে কারও সঙ্গে দেখা হয়নি 
নিজের সঙ্গেই হেঁটেছি সারাক্ষণ


 হাঁটতে হাঁটতে 
      একাকী শূন্যের ভেতর 
                         চলে গেছি


 যেখানে শুধু আমারই নির্বিকার উত্তরণ
                        স্তব্ধতার আলোড়ন তোলে



 
রক্তের অক্ষর সব আমাদের


রোজ রাত হত্যার রাত
রোজ দিন হত্যার দিন
রক্তের কাছে ফিরে আসি 
রক্ত থেকে উঠে আসে কার আর্তনাদ?


 আর্তনাদ ভাষা পায় 
 সেইসব ভাষাপাখি 
পরিক্রমা করে যাই আমাদের দিগন্ত আকাশ
 ইতিহাসে ঘুমায় মৃত্যুর কলরব


 অশ্রু আর বেদনার নদী
 সভ্যতা পার হয় দেখি
 এ কোন্ লীলা তার ? দুই পাশে রক্তহিম
 মানুষের মুণ্ড আর  ধড়
 ঘুম ভেঙে আবার দাঁড়ায়


হে চিৎকার, হে অনন্ত চিৎকার 
রক্তে কি বাজাও বাঁশি ?
আরো কাছে রাখো হাত ,আমরা তো স্পর্শ অভিলাষী 
মানুষের কাছাকাছি বেঁচে থাকি রক্তের অক্ষর সব
আমাদের বিশ্বাসে ফিরে আসে ঘর ।




জন্মান্তর



এই আলো গৌরব আনেনি 
ধ্বংসের প্রাচুর্যের তীরে
বসে আছি
আত্মঘ্রাণ  ফিরে ফিরে আসে 
উজ্জীবন পাই তার কাছে
নক্ষত্রের ঝরা ফুলে সাজাই বাসর 
জন্মান্তর এইখানে হাসে



 বিপুল বৈশাখ



 প্রতিটি বৈশাখ নতুন বৈশাখের দিকে হাঁটে
  আমাদের বেঁচে থাকা জন্মান্তর পায় 
 নিজস্ব জানালা খুলি যুগের আকাশে       
 যদিও বিরামহীন ঝড় বিচ্ছিন্ন স্বভাবে বয়ে যায়    


 নতুন প্রেরণা এসে এখানে বাসা বাঁধে
 হিয়ার নতুন গানে গুনগুন  ওড়ে
 গর্জনে আকাশ ছায়
 তবু তো নতুন বৃষ্টি ঝরে


 তোমার পরশ রাখি 
গোপনে সজীব আলো বিছিয়ে দেয়  রাগ
 বৈরাগ্যে যাব না বলে
 ধুলোর বসনে ঢাকি বিপুল বৈশাখ


আজ সব পঙতি দোলে 
শব্দের দোলনায় নৈঃশব্দ্য দোল খায়
কোন্ ইচ্ছার বাঁশি বেজে উঠে বুকে 
কান পেতে থাকি এই ভোরের নিরালায় ।




ঠিকানা



 সব ঠিকানাই একদিন ঠিকানাবিহীন হতে পারে 
আমরা স্বপ্নের ভেতর ঠিকানা খুঁজে খুঁজে 
ক্লান্ত হই


কারা নিমন্ত্রণ পাঠায় এত  ? 
সব পথ নির্দেশ হারিয়ে গেলে 
নির্বেদ সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামে
অন্ধকারের ছবি আঁকে ময়ূরপাখার গান
নাচের মুদ্রাগুলি মনের উঠোনে পড়ে থাকে


 ঠিকানা কি কোথাও থাকে ?
 বাউলপাড়ার সংকেতে
 ঘোরাফেরা করে সব জলীয় মাছ
 তাদের সাঁতারে  ঢেউ ওঠে
 ঢেউ কি ভেজাতে পারে জলের বিষাদ ?


 ঠিকানা হারায় সব ঘর 
 ঘরে ঘরে ঠিকানাবিহীন মানুষ কাঁদে
 প্রগাঢ় উৎখাত সমাচার 
 কার কাছে কে শুনতে চায় ?



১০
শোনো



নিজে নিজে বিখ্যাত হয়ে উঠি 
নিজের সামনে দাঁড়াই
বক্তৃতা করি সভামঞ্চ  ছাড়াই


 শোনো
হরিতকী ফুল কুড়িয়ে পেয়েছি 
কাঙাল বনে, মাধুরীলতার কাছে
বিজ্ঞাপন নেই উগ্র বায়ুর কাছে 
শীতল ছায়ার মুগ্ধ আলিঙ্গনে


নৈশব্দ্যের জাদুতে শহর কাঁপে  
আমি সেই কম্পন থেকে 
আলো খুঁজে পাই
হৃৎপিণ্ড সেঁকি আলোর তাপে


 কত গান ,কত প্রান্ত জুড়ে
 মেঘ এলে মনের গহনে
 ময়ূর খেলা করে

তৈমুর খান