সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল




দু'টো কবিতা   


  
কৃষ্ণপক্ষ 
  
মাটির আলো কমে যাবার পর চোখ বন্ধ হতেই ধ্যানে গেলাম আমি ; ঘনঘোর বৃষ্টিপাতে কপালে ঠাণ্ডা বাতাস - নেমে আসে পাখির ডাক আর ফুলের পাঁপড়ি ,  শুনতে পাচ্ছি আমারই নিশ্বাসের শব্দ , টের পাচ্ছি বজ্রহীন বুকের ওঠানামা ,  মহাকাশের নক্ষত্র ছুটে আসছে চোখের ভিতর  - মুহূর্তে ধাক্কা খেয়ে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ফুলঝুরি ফুলঝুরি  - 

ইচ্ছে থাকলে আকাশ দেখা যায়  - উজ্জ্বল গ্রহরা ঘোরে বনবন , বিছিয়ে দেয় মাঠ  - তারই শরীর জুড়ে ধান রুয়ে দাদু বাবা কাকা  -   ঘাম গন্ধের সাথে  সূর্যকে ঘিরে রাখে ঝিঁঝিঁপথ ,  বাঁশপাতা কাঁপে - শেয়ালের ধূর্ততায় কেঁপে ওঠে ঝোপঝাড়           

মাটির ভিতর সুগোপন স্বদেশ রেখে কেন চলে যাও তোমরা  -  নাকি এ জল এ বৃক্ষ কেবলই  স্রোত  -  হিঞ্চা শাকের ক্ষেতে তোমাদের পালিয়ে যাওয়া আঁকছি দাদু  - তোমাদের  রোদে কাঁপছি ঠাকুমা -
কেমন মাঠ কমে আসছে আজ ! 
মুম্বাই থেকে ফিরে এসে ব্যাগ তৈরির কারনা করছে অমল কাকু । শরীরে ভাইরাস ,  সঙ্গম করছে - ছুঁ-কিৎকিৎ খেলছে  - আর গ্রাস করছে ,   মদন দাদু জমি বিক্রি করার পরে অন্ধকার থেকে বের হয়নি এক পক্ষকাল  -   পুঁইডাঁটা লতিয়ে লতিয়ে উঠে গেছে টালির চালায় ,  নদীচরে গড়ে ওঠা কারখানার ধোঁয়া ঢুকে পড়ে জানালায় ,  বিছানায় ছাই ,  চামড়ায় ছাই  - সমস্ত শরীরে চিমনির ক্ষত  - 
আমরা নন্দী ভৃঙ্গী সেকচকে গঙ্গার দোকানে বসি, গ্লাসে ঢালি কান্ট্রি  : রঙের পিঠে লাগাই ডানা  - হাঙ্গামা হাঙ্গামায় মুখ থুবড়ে পড়ি কপালেশ্বরীর কাদায়  
ঘোর কাটে না ,  কাটাতেও চাই না  
তবু সাঁকো তৈরি হয়  - পাতালে তার ভিত 
আমি রেলিং ধরে পার হতে থাকি  এপারের সন্ধে নামার শব্দে              


  
  অভিযাত্রা 


বনসাই সময়ের মেঘলা জানালায় বসে আছে একজোড়া শালিক। চকিত চাহনিতে দেখতে চায় আত্ম নিবেদনের অন্দরকাল। যদিও বাগানে একটিও চারাগাছ লাগানো হয়নি, মাটির সরসহীনে মৃত-ঘাসের গন্ধ
তারের জালে কালো আলকাতারায় পিছলায় রোদ- কয়েক গুচ্ছ চাকা গড়িয়ে যায় খালবিলের স্নিগ্ধতার উপর, সাত সমুদ্র সাতটি আকাশ দেখার জন্য দিয়েছি দে ছুট , ভেঙচি কাটতে কাটতে শালিক দুটো উড়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে ,গায়ে হাতে পায়ে ছুঁয়ে দিয়েছে রক্তপ্রবাহ । কাকের জনন নিয়ে ভাবতেই জানালা গলতে গলতে হয়ে যায় নদী, এ আকাশ ও আকাশ নদীগুলি হয়ে যায় সমুদ্দুর , বেনামি পূর্ণিমার ডায়াবেটিসে   সাঁঝরাত পিছলে জরুরী হয়ে ওঠে আত্মহত্যা - খুন করার অভিমুখ পাল্টে যায়-
কিছুতেই বোঝা যায় না কতটা পোশাক খুললে উলঙ্গ হওয়া যায়। আমি সময় সাক্ষী রেখে প্রত্যেক নদী ও মাঠের শব্দ শুনি; ঘাস পাতা ধুলোমাটির দেশে ছড়িয়ে থাকে প্লাসটিক চুড়ি , শাঁখা পলা আর জ্যৈষ্ঠা নক্ষত্রের ভূমি উৎসবে শরীর পোড়াই , সুদীর্ঘ রাত শেষে পড়ে থাকে আমারই ধানক্ষেত, কোথাও সন্ধ্যাহ্নিকে ঠাকুমার  মৃত্যুশয্যা - খুব কাছের শ্বাস মাটিময় ধারকের মতো অপেক্ষা করে মিশে যাওয়ার। কুন্দ ফুলের ঠোঁট চুইয়ে আসা ক্ষত আটকাতে পারিনি - অগুন্তি শাখাপ্রশাখার ভারে নত মস্তক,  দাঁড়িয়ে আছি চিরকাল , জানতে চাইনি কিভাবে মহব্বতের গান গায় অনিচ্ছুক ভিখারি--
জীবন এক জার্নি ; অভিযাত্রা । সেই শরীরে মাংসের ভেতর থরথর কেঁপে ওঠে স্খলন; মৃত্যুযন্ত্রণা - সত্য বই মিথ্যার মোরগ ঝুটি থেকে আকাশে লটকে থাকা চাঁদের ভাতপাখি, নাকি শ্বাস থেকে ঘুসের দূরত্বে মিশিং ডাইরির কোন কিনারা হবে না--
নিহত হতে চাই না কোনদিন। আমার যেটুকু মোরাম ছিল তাকে দীর্ঘশ্বাসের কাছে দাঁড় করিয়েছে কামুকের প্রচণ্ড চাকা। কাদাপায়ে পরজন্মের মাঠে জোয়াল কাঁধে হাঁটছি, জাগিয়ে রাখতে অনন্ত সূর্যকে- আর শরীর ঢালছি মাটিতেই : মায়ের স্নেহে--

জোড়া শালিক বসবে কবে ,  আমার শরীরে  




      লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল