গুচ্ছ কবিতা
কীভাবে বেচবো সূর্য?
এক।
বেচা রা
কীভাবে বেচবো সূর্য আর জন্মসূত্র? নীল দরজা আর মাতৃযোনি?
কৃষ্ণ বলিলেন – মোবাইলে ছবি তোলো আর ওয়েলেক্স – ব্যাস – কলকাতা ডায়মণ্ডহারবার
রানাঘাট তিব্বত – সিধে রাস্তা, সোয়া ঘন্টা – মনে রাখবে, আমার ভাগবৎ অনুপ্রেরণাই ট্রেডমার্ক।
স্যরি মধুবাবু,
আমি শৈশবে ফিরতে চাই। বিনাশর্তে। গীতাটিতা ছাড়াই।
দুই।
ওং শান্তি
তুমি ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙবে নাকি হাই তুলবে – সেটা ঠিক করার তুমি কে?
আগে দাঁতমাজা নাকি পটি – ব্রেকফাস্টে টোস্ট নাকি ওমলেট – অফিস যাবার পথে দেখা হলে জীবনদাকে
হাই নাকি ভালো আছেন তো – আদৌ মুখ তুলে হাসি বিনিময় করবে কিনা – ফেরার পথে কোন দোকান
থেকে বাজার করবে – কোন ব্র্যাণ্ডের বিস্কুট – ডিনারে কাতলা না মাগুর – বউ আদরের সাপ্তাহিক
ডেট ও স্টাইলের রুটিন
এ সবের কোনো কিছুই ঠিক করার এক্তিয়ার তোমার নেই – তুমি শুধু একটি শান্তিপ্রিয়
ভোটার কার্ড, ডেমোক্র্যাসির ডেমো
ক্র্যাস করবো
আমি
আর আমার সিণ্ডিকেট
তিন।
নীল বিদ্রোহ
কতোবার তোকে বলেছি আকাশ – নীল চোখ দেখাস না – সহ্য করতে পারিনা – স্বপ্ন
দেখে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজেকে সত্যিই সুনীলের মতো গাণ্ডুগাণ্ডু লাগে – এমনিতেই
দেশে এখন কেউ আর ওসব দেখেটেখে না – দিনরাত ড্যাঙডেঙিয়ে নীলউৎসব
অনেক মানুষকে একসাথে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলো যারা, ঠাণ্ডাঘরের এসিহাওয়ায়
ঠেস দিয়ে ঘুমোচ্ছে –মানুষ আর স্বপ্ন দেখেনা, ঢপের চপ খায় – হজমও করে নিমেষে – আবার
খায় - চপ এখন নীল, ঢপ এখন শিল্প –
এখন নীল আর স্বপ্নের রঙ নয় – শহর সাজছে বিষনীলে – সেতু থেকে আবাসন, সংস্কৃতি
থেকে রাজনীতি জুড়ে সাড়ম্বর নীলচাষ – নারীও ঊরুসন্ধির দরজায় লাগিয়েছে নীল রঙ – স্বপ্ন
না বিষ?
আয় আকাশ, আমার পুরুষদণ্ডের ওপর প্রজাপতি হয়ে এসে বোস – আর একবার দরজা ভেঙে
শুরু করি নীলবিদ্রোহ
চার।
এসো আকাশ আঁকি ফের
এক নক্ষত্রনির্দেশ এলো – ধর্ষণ উপভোগ করো, নয়তো চিৎকার করো। অন্য এক নক্ষত্রের
নির্দেশ – ঘরে ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে ‘রেপ্’। চাঁদ বললেন – শরীর থাকলে জ্বর হয়, ধর্ষণও।
ভারতবর্ষের আকাশের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র মদাড়ম্বরে রাজস্থানের জঙ্গলে কৃষ্ণসার আর
মুম্বাইয়ের ফুটপাথে কঙ্কালসার শিকার করলেন। হাততালি দিয়ে উঠলেন সপ্তর্ষির এক ঋষিগায়ক
– ফুটপাথে রাত্রিবাস করে একমাত্র চতুষ্পদী সারমেয়, মানুষ নৈব নৈব
আমরা চুপ। নাঢেউ পুকুর।
অথচ আকাশটা আঁকার সময়ে আমরাই গোল চাঁদ আর তারার ফুটকি দিয়ে সাজিয়েছিলাম।
এখন এইসব অসভ্য চাঁদ তারাদের ছিঁড়ে কুটিকুটি করে নতুন আকাশ আঁকতে ক’মিনিট
সময় লাগবে আমাদের?
------------------------------------------------
পাঁচ।
বি ফর্ বিজিনেস
ইদানিং মোমবাতি আর গামছা শিল্পের রমরমা – যে কোনো রহস্যমৃত্যুতে অবশ্য নয়
– এঙ্কাউন্টারে আভিজাত্যের নীলরক্তের গন্ধ না থাকলে যে পাব্লিক খায়না – টিআরপিও না
– সম্ভ্রান্ত আততায়ীদের সঙ্গে থাকে অস্ত্র ও গামছা – মিডিয়ার সামনে গামছামুখে বুকের
ছাতি রেডরোড – গামছা থাকে থানার লকারেও – কখনো এলিতেলি মুখ ঢেকে ভিআইপি গ্রেপ্তার দেখালে
পদোন্নতির টুপাইস বদলির চান্স –
মোমবাতি আবার ওসব চুনোপুটি রিটেইলে বিশ্বাসী নয় - হোলসেল – তেমন তেমন মৃত্যু
হলে ঝটকায় হাজার হাজার
ঘরে ঘরে ক্ষুদ্রশিল্প – সরকারী উৎসাহ ও সহজ কিস্তিতে ব্যাঙ্কঋণ – স্যটাস্যট
আগামী পাঁচ বছরে বাঙলা থেকে বেকারি হাওয়া – হুঁ হুঁ বাওয়া, আমার সিণ্ডিকেট ব্রেন নিয়ে
আর কোনো কথা হবে না
ছয়।
মুদ্রামায়া
যুদ্ধের দুটিমাত্র পিঠ – ধাতু মুদ্রা – মাথা-লেজ, হার আর জিত – রক্তপান
আর চুম্বনশৃংগার – একে ফর্টিসেভেন আর রবীন্দ্রসঙ্গীত - ত্রিসিংহমুখিস্তম্ভ চক্র – যাকে
তুমি জয় বলে জানো – নিতান্তই ভুল।
স্তম্ভ মানে স্থবিরতা, ইতিহাস - সমাপ্তি, মৃত্যু, দাড়ি। অন্যপিঠে দেখো
– সংখ্যা – গণিত – মুদ্রামান – তোমার অর্জন – জয়।
জয় তো উড়ানমুক্তি – মুঠোবন্দী মস্ত আকাশ –
মাটি আর আকাশ – মাঝখানে অনর্থক দিকশূন্য কুয়াশার স্তর – সম্পর্কের ধুলোমেঘ
মায়া – শুদুমুদু বাড়িয়ে কী লাভ? ধুয়ে জল খাবে?
মায়া নয়, মুদ্রায় এসো।
যুদ্ধে এসো
--------------------------------------
ছবি ঋণ: গুগল
38 মন্তব্যসমূহ
ভালো লাগলো
উত্তরমুছুনধন্যবাদ.
মুছুনরচনা দুরন্ত ... শুধুই কি পঠিতব্য ? প্রকৃতিতে প্রভাব দেখবো কোন ক্ষণে ?
উত্তরমুছুনঅপেক্ষা। প্রস্তুতির।
মুছুনধন্যবাদ
ছয়ে ছক্কা হাঁকালে দাদা। দুরন্ত রচনা। কাকে ছেড়ে কাকে ধরি? আমি তো পেশায় বেচুরাম। সূর্য বেচার idea টা নিলাম দাদা।
উত্তরমুছুনচিন্তা একটাই। দেশের পোধানমন্ত্রি মন্ত্রী জানতে পারলে সেও ছাড়বে না। আজ পিতৃদিবশে, জন্মসূত্র আর মাতৃযোনী বিস্মৃত।
চার নম্বর, এসো, আকাশ আঁকি ফের ও খুব ভাল লাগল। ।
তোমার সব কবিতাই আমার ভালো লাগে, নতুন করে বলার কিছু নেই। 🙏🙏🙏🙏
ধন্যবাদ
মুছুনভালো লাগল। কিন্তু আশা না ফুরিল।
উত্তরমুছুনবিদ্রোহী রূপের মাঝে ক্ষণিকের আপোসের ছায়া যেন দেখলাম (হয়ত আমার অমার্জিত মনের ভুল- তাই যেন হয়)। কবি, তোর কাছে ভেঙে ফেলার আর্জি রইল।
শেষে আবার বলি ভালো লেগেছে। প্রদীপ ।
আপোষ নয়, বরং হতাশা বলা যায়।
মুছুনEktu onyo dhoroner kobita. Bhalo laglo
উত্তরমুছুনহ্যাঁ, সবই তো ভাঙছে, কবিতার শরীরও...
মুছুনবৈশিষ্ট্যপূর্ণ কাব্যশৈলী। অসাধারণ কাব্যগুচ্ছ!
উত্তরমুছুন- মানস
ধন্যবাদ কবি
মুছুনদারুণ, পল্লবদা । যথারীতি, দারুণ !
উত্তরমুছুনচারটেই অসাধারণ। এই আঙ্গিকে আগে তোর কবিতা দেখিনি।
উত্তরমুছুনধন্যবাদান্তে... 🙏🙏
মুছুনবিদ্রোহ নীল হোক বা লাল,
উত্তরমুছুনবিদ্রোহটা জরুরী
না হলে সমাজটা
বদ্ধ জলাশয়
যুদ্ধে এসো...
মুছুন👍👍👍
দুর্দান্ত !!! নিজস্বতায় ভরপুর আঙ্গিক, মুগ্ধ দাদা 🙏🙏
উত্তরমুছুনধন্যবাদ এলা, শুভেচ্ছা... ❤❤
মুছুনদুর্দান্ত! প্রথম তিনটি কবিতা তো অসাধারণ লাগলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ কবি 🙏🙏
মুছুনভিন্ন ধারার লেখা। সবগুলিই ভালো কবিতা কিন্তু ছয় সংখ্যক কবিতাটির কথা আমি বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই। খুব ভালো লেগেছে পড়তে ।
উত্তরমুছুনকে লিখলেন, জানিনা....
মুছুনধন্যবাদ 🙏🙏
পড়তে অনেকবার মনে হয়েছে , এসময়ের বলবার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলে দিলেন। ছয় সংখ্যক কবিতাটির কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হচ্ছে। খুব ভালো লেখা।
উত্তরমুছুনতোমার মন্তব্যে স্নানশুদ্ধি হয়... 🙏🙏
মুছুনপ্রতিটি কবিতাই সুন্দর।
উত্তরমুছুনধন্যবাদান্তে... 🙏🙏
মুছুনএই ঝরঝরে সপাট বহুবর্ণ কলমিয়ানা অনেক অনেক দিন পরে "হঠাৎ আলোর ঝলকানি" দিলো ।
উত্তরমুছুনকেয়াব্বাৎ কেয়াব্বাৎ 👌🙏✒️❤️✊🌿🌿
ধন্যবাদান্তে.... 🙏🙏
মুছুনআপনার সবকটি কবিতাই অনবদ্য,আজকে আমরা যেই সমাজে দাড়িয়ে আছি তার প্রতিচ্ছবি পুরো কবিতায় তুলে ধরেছেন। - পুষ্পিতা 🙏
উত্তরমুছুনধন্যবাদান্তে.... ❤❤❤
মুছুনধন্যবাদান্তে পুষ্পিতা... ❤❤❤
মুছুনপল্লব দা, নিজস্ব ভঙ্গিমায়!! খুব উপভোগ করলাম।
উত্তরমুছুনধন্যবাদান্তে রূমঝুম... ❤❤❤
মুছুনতোর লেখা আগেও পড়েছি। যথারীতি ভাল হয়েছে। ধারও আছে। চালিয়ে যাও ভাই। ভাল থাকিস।
উত্তরমুছুনধন্যবাদান্তে... ❤❤❤
মুছুনপ্রতিটি কবিতা সমাজ সচেতনতার ফসল। পাঠককে সমৃদ্ধ করে। খুব ভালো লাগলো ।
উত্তরমুছুনধন্যবাদান্তে... ❤❤❤
মুছুন