পৃথিবীর প্রাচীন পুঁথির উপর ঢলে পড়ছে
জোৎস্নার জন্ডিস । রক্ত বমিতে ভেসে যাওয়া হলুদ ক্ষেত , বিষ ছিটানো মাটি ফুঁড়ে
বেরিয়ে আসে তক্ষক। ঝড়ো হাওয়ায় লোকাল ট্রেনের পেন্টোগ্রাফের হাত
ভাঙা। মস্তিষ্কের ওভারহেড তার ছেঁড়া, পায়ের চাক্কা স্থির। স্থানু রেললাইনের ওপর
দৃষ্টিকটু মল ও উদ্বায়ী পেচ্ছাপ। ট্রেনের কামরায় আধা ঘুমন্ত
প্রৌঢ়ের ব্যক্তিগত থলির ভেতর নেতিয়ে পড়ে ব্যর্থ রমনী সঙ্গম। ভীড়ের ভেতর যুবতীর মাই-ছোঁয়া
ইলেক্ট্রিক শক আচমকাই ফিরে যায় হলদেটে বাল্বের দিকে। সফরের জানালায় দিগন্তব্যাপী
জমির শস্যহীন আকুলতা। শুকনো ন্যাড়া গাছে ঝুলে থাকে ফাঁসির রজ্জু। খরা চৌচির জমির
ফাটলে ফাটলে আটকে আছে মৃত দিনমজুরের বেওয়ারিশ আত্মা। বাতিল যুবশক্তির আবদ্ধ
খোঁয়াড়ে উড়ে এসে পড়ে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের ডানা ভাঙা লেফাফা। কড়কড়ে ছাপা নোটের
শরীরে লেগে থাকে বেশ্যার নিরাময়হীন হাসি, দিশাহীন বীর্য স্ক্ষলনের নোংরা ছাপ।
বুলেট ট্রেনের মতো গতিময় দেশ, তার দখল হয়ে যাওয়া ভূমিতে বসে যায় কর্ণের রথের চাকা।
চলমান সফরের গোপন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাচীন পুঁথির সন্ত্রাস আবহমান
শকটের জানালায় ক্লান্ত রোদ, শস্যের বিষাদময় মৃত্যু, অনাবশ্যক সংবাদের পুনরাবৃত্তি
আর ঝুরো কার্বণের গন্ধ। টার্মিনাল স্টেশনের সময়কে উলটে দিয়ে আকাশের সভাগারে উড়াল
দেয় ধূর্ত বণিক আর পঙ্গু বুদ্ধিজীবির দল। কোথায় যাবার ছিলো , কোথায় এলাম ?
সাইকেল সমাজের জন্যে
আজকাল হামেশাই পা’দুটো
সাইকেলে প্যাডেল করে
কারণ উষ্ণায়ণের দিনে
মোটরযানের ফ্রেম থেকে খুলে
আসছে সমস্ত চাকা
আজকাল হামেশাই পা’দুটো
সাইকেলে প্যাডেল করে
কারণ পৃথিবীর ছাতা ছিঁড়ে
সূর্যের চোখ রাঙানি
উড়ে আসছে ধূলি ঝড়,
যাত্রীবিক্ষোভে বন্ধ লোকাল ট্রেন
আজকাল হামেশাই পা’দুটো
সাইকেলে প্যাডেল করে
কারণ সমস্ত জ্বালানী-ইন্ধন
ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসতে থাকলে
মুখ থুবড়ে পড়বে সভ্যতার
সামঞ্জস্যহীন বিলাস,
তখন এ পা দু’টো ছাড়া অন্য
কিছু আর জ্বালানোর থাকবে না
আজকাল হামেশাই পা’দুটো
সাইকেলে প্যাডেল করে
তোমরাও একটু পা চালিয়ে ভাই
আজকেই শহর থেকে গ্রামকে
দেখতে যাবার দিন
শহরের স্লেটে মোটরযান
সরীসৃপদের হর্ণ, লাগাতার কাটাকুটি
সবসময়ে ভাল্লাগে না,
একটু আস্তে সুস্থে পা
চালিয়ে ভাই
সমরেন্দ্র বিশ্বাস