॥ বিছুটি জীবনে ও
বিজ্ঞানে ॥
বিছুটি। এ শব্দটা শুনলে বা বললে হাত পা শির শির করে। নামটা শুনলেই জ্বলুনি। "জলবিছুটি"
নামটা শুনলেই গোটা সারা গায়ে হাতে যন্ত্রণা চুলকানি। "গায়ে জলবিছুটি
লাগিয়ে দেওয়া" এই শব্দ শোনেনি এমন কেউ আছে বলে তো মনে হয় না।
আসলে এই বিছুটি শব্দটার সঙ্গে প্রত্যেকের জীবনে কোনও না কোনও
অনুসঙ্গ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে- স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কেউ না কেউ গ্রামে
গঞ্জে যাতায়াতের সময় বনে- জঙ্গলে হাত রেখে বিছুটির দেখা পায় নি এটা মানতে কস্ট হয়। অবশ্য যদি সে
প্রকৃতির ষ্পর্শ পেয়ে থাকে। যদি সে তুলোয় - পালকে - বাক্সে মোড়া নাগরিক জীবন
কাটিয়ে থাকে- তার কথা আলাদা। বিছুটি তে হাত রাখেনি এ কথা
বুকে হাত রেখে বলতে পারবে না কেউ। আর এই দংশন যে একবার খেয়েছে সে সারা জীবন মনে রাখবে। ভুলবে না কোন দিনই।
শুধু মানুষ কেন গরু- বাছুর- ছাগল এমনকি গিনিপিগ- হরিণ -হাতি ও এর হাত থেকে রেহাই পায়নি।
বিছুটি নিয়ে হাজার রকম গাল গল্প রূপকথা সাহিত্যে বিজ্ঞানে- প্রাত্যহিক জীবনে ছড়িয়ে আছে।
কিন্ন্তু বিছুটি নিয়ে প্রকৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনও পর্যন্ত
সঠিক ভাবে অমিল। এখনও তেমনভাবে গবেষণায়
জানা গেল না - বিছুটির মধ্যে কোন রসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরে
এই অসম্ভব জুলুনি সৃষ্টি করে। এখনও পর্যন্ত জানাই গেল না ! বিছুটি
দংশনের প্রতিষেধক বা প্রতিকার কী ই বা হতে পারে -এখনও জানা গেল না।
গাছ কেনই বা ওই সমস্ত
বিষাক্ত রসায়নিক পদার্থ রেখে দিল তার শরীরে
? কেবলমাত্র অভিযোজন
না অন্য কিছু! এই একবিংশ শতাব্দীর প্রায় প্রথম ভাগ শেষ করে ফেললাম। এখনও জানতে পারলাম না।
গাছের মধ্যে যে বিষ আছে সেই একই রসায়নিক বিষ কি ভাবে আমাদের অর্থাত্ মনুষের শরীরে আছে সেটা ভেবেই কুল কিনারা পাই
না । এখন প্রশ্ন- উদ্ভিদে
প্রাণীতে আদৌ কোনও তফাত আছে তো! অর্থাত্ কি না ‘রাজার ঘরে যে ধন আছে আমার ঘরেও সে ধন
আছে’ এ কথা তো গাছ গলা বাড়িয়ে বলতেই পারে! ‘মানুষের শরীরে যে রাসায়নিক আছে আমার শরীরেও ঠিক সেই সেই রাসায়নিক আছে !’
যাই হোক বিছুটি নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষনের আগে আমার জীবনের একটা অভিজ্ঞতার
কথা বলে বিছুটির কথা শুরু করব।
তখন পড়ি ক্লাস ফাইভ
কিংবা সিক্স এ। নতুন স্কুল। ভর্তি হয়েছি সবে। স্কুলে একটা নিয়ম ছিল- বছরের এপ্রিল মাসের পয়লা তারিখ এপ্রিল ফুল বানানো। মাসের পয়লা গিয়ে শুনলাম
ও দিন নাকি বোকা বানাতে হয়। সবাইকে এপ্রিল ফুল করতে হয়। আমরা গাঁ গঞ্জের স্কুলে পড়তাম। সেই উনিশশো আশি সাল নাগাদ। ওই যুগে শিক্ষকদের ভয়ে আমরা থরহরিকম্প! অভিভাকদের ভয়ে থরহরি কম্প । শিক্ষকদের
অপমান করা বা মুখে মুখে তর্ক করা কিম্বা বন্ধুর মতো মেলামেশা! সাহস! ভাবতেই পারতাম
না। তা সত্ত্বেও শিক্ষকদের
আমরা কী ভাবে এপ্রিল ফুল করতাম তার একটা কথা বলি। আমরা করতাম কি -স্কুলের মাস্টারমশাই বসবার
জন্য যে চেয়ার থাকতো -ওই চেয়ারের চারটে পায়ার নীচে কাচের মার্বেল গুলি আস্তে করে আটকে
রাখতাম শিক্ষক মশাই যেই বসতে যাচ্ছেন একটু
চেয়ারটা নড়ে উঠত। হড়াত করে শব্দ উঠতো। অমনি হাসির রোল। এমন কিছুই না ভেবে দেখলে । কিন্তু
এই ছোট একটা ঘটনাতেই আমাদের আনন্দ। স্যর অস্বস্তিতে থাকলেন। আমরা "এপ্রিল ফুল"
বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। আমাদের আনন্দ নির্ভেজাল
এবং বিশুদ্ধ। স্যর কটমট করে তাকাতেন। এই পর্যন্ত।
আবার কখনও কখনও চেয়ার এর চেয়ারের পিঠে দিকটায় কালি
দিয়ে উল্টো করে নিব পেন
দিয়ে লিখে রাখতাম "এপ্রিল ফুল"। কিংবা "আজ ক্লাস করব না স্যার"।
এই সমস্ত কথা উল্টো
করে লিখে রাখতাম । তখন তো আজকালকার দিনের মতো ডট পেন ছিল না। লিখতাম কিন্তু স্যার ক্লাসে ঢুকতে ঢুকতে
কালি শুকিয়ে যেত। আবার প্রলেপ। দরজার কাছে একজন থাকত যে জানান দিতো " এই স্যার
এসেছেন "বলে । টাটকা কালির দাগ। স্যার যেই কি না চেয়ারে বসবেন ঠেস দিয়ে- অমনি পিঠে এপ্রিল ফুল কিংবা আজ ক্লাস
করব না ইত্যাদি কথা ফুটে উঠছে। আসলে লেখা গুলো পড়া ই যেতো না । শুধু এক দলা কালি স্যারের জামা কিম্বা ধুতি তে লেগে থাকতো । এতেই আমাদের আনন্দ। স্টাফরুমে গিয়ে একবার যখন বুঝতে পারলেন
এই রকম অবস্থা তখন রাগে গরগর করতে তার পরের দিন আমাদের কপালে যথেষ্ট শাস্তি
জুটত । যাই হোক স্যর তো বোকা
বনেছেন । সব স্যরদের করতাম না । যাঁরা পিঠের উপর সপাসপ
বেতের বাড়ি ফেলতেন তাঁদের উপর খুব রাগ ছিল। তাঁদের আমরা এই বোকা বানাতাম। এপ্রিল ফুল ।
অমর পাত্র নামে আমার এক বন্ধু ছিল
। ক্লাস সিক্সে পড়ি। তখন অমর একদিন একটা পাতা নিয়ে এসে বলল আমি আজ একটা পাতা নিয়ে এসেছি।
কেউ বললে "বিছুটি"। কেউ বললে "নেগুস্"। স্রেফ চেয়ারের হাতলে পাতাগুলোকে
বেশ করে ঘসে দিলো । টেবিলের উপর- ডাস্টারের
উপরে -চকের উপরে ভাল করে মাখিয়ে দিল পাতাটা। ভালো করে ঘষে দেবার সময় ওই দেখলাম অমরেন্দ্র
পাতাটিকে একটা কাগজের উপর ধরে আছে। তারপর অসাবধানে আমার হাত পড়ে গেল। তারপর সে কি জ্বলুনি ! টপ টপ করে করে জল পড়ছে। ইতিমধ্যে স্যর এলেন । আরাম করে বসলেন। দিব্যি চক নিলেন।
ডাস্টার নিলেন। লিখলেন। হাতলে হাত রাখলেন। টেবিলে হাত রাখলেন। কই তেমন কিছু তো হল না । গোটা ক্লাস
বোকা! গোটা ক্লাস বোকা বনে গেল। অথচ আমরা যাঁরা এই বিছুটি পাতা ঘষে দেবার দলে ছিলাম
যারা গেম প্লান করেছিলাম আমরা মরে গেলাম ! বুঝতেই পারলাম না যারা লাগালাম তাদের হাত
কেন জ্বলল! আর যার উদ্দেশ্য সেই মাস্টারমশাই চেয়ার টেবিলে এত ঘষাঘষি করার পর কেন কিছু হল না! যাই হোক পরের বছর অমরেন্দ্র
একটা নতুন বুদ্ধি করল। ওই বিছুটি পাতা নিয়ে
বোতলের মধ্যে ঢুকিয়ে জল
দিয়ে আচ্ছা করে ঝাঁকাতে লাগল । তার পরে ওই জল বিছুটি জল গুলো চেয়ারের উপর আস্তে করে দিয়ে রাখল এবং এক সময় ওই
জল শুকিয়ে গেল। স্যর এলেন ধুতি কিছুটা
পা থেকে তুললেন হাতের জামা টানলেন । আয়েস করে বসলেন ।
তার পরে শুরু হল
সেই আকাঙ্খিত সার্কাস! সেই লম্ফঝম্ফ! মরে গেলাম রে! মরে গেলাম রে ! ওরে কি ছিল! চুলকাতে চুলকাতে
কেঁদে ফেললেন। শাপশাপান্ত করতে থাকলেন স্যার
। কে করেছিস? বল! তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে থাকলেন। আর নাকের জলে চোখের জলে। সেদিন আমাদের বেশ মজা হয়েছিল। কিন্তু স্টাফ রুমে ফিরে যাওয়ার পর কমপ্লেন করলেন প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের
কাছে। তার পরে! নাই বা লিখলাম ! গোটা
ক্লাসের উপর গোটা দশেক বেত ভেঙেছিল। সেদিন স্যারের কী নাচ দেখেছিলাম! তার পরের দিন আমরা গোটা ক্লাস নেচে নিলাম! হেডস্যারের
বেতের জবাবে যে নাচন নাচলাম তার ব্যথা থাকলো সপ্তাহ খানেক ! তার কাছে বিছুটির ব্যথা
তো কোন ছার! বিছুটি ব্যথা যদি এক হয়ে থাকে সারের প্রহার অন্তত একশত হবে। ওই দাগ মেলাতে অনেক দিন লেগেছিল! তা সত্ত্বেও অমর কিন্তু এসে বলেছিল
দেখলি তো স্যারকে নাচিয়ে ছাড়লাম! এপ্রিল ফুল বানিয়ে ছাড়লাম তো! এ রকম হরেক রকম অভিজ্ঞতা
আমার ব্যক্তিগত জীবনে কিছু টিকে আছে।
যে কোনও জলে জঙ্গলে ঢুকবার সময় আমার
বিছুটিতে আতঙ্ক ছিল। এর পরে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার সময় বিভিন্ন
প্রাণীর আচরণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রায়ই বিছুটির কামড় খেতে হতো! বন্ধু উত্তম একাটা শামুক নিয়ে গবেষণা করতো ॥ রাত জাগতে
হত । বনে বাদাড়ে ঢুকতে হত । একে
ছিল মশা। তার পর ছিল বিছুটি
দংশন । তার পর সোনালির মশার লার্ভার ধরতে হত । জলে জঙ্গলে যেতেই হত! আর সবসময় ভয় করতাম সেই বিছুটি কে
। দংশন খাইনি খুব কম দিন ছিলো । জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে প্রত্যেক দিন বাড়ি ফেরা ! যাই
হোক একসময় অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছিল !
এর পর বেঙ্গালুরুর
আইআইএসসি তে যখন রাঘবেন্দ্র গাডাক্কার
স্যর এবং রমন সুকুমারের অধীনে কাজ করতে যাই তখন আমাকে হাতি নিয়ে কাজ করতে হতো! জঙ্গলে! মধুমালাই জঙ্গলে! প্রায় ঢুকতে হত এবং প্রায়শই এই বিছুটিরএই
দংশনে কাঁদতে হত! একদিন এক ল্যাবমেট
বললেন তামাক পাতাকে এক রাতে জলে ভিজিয়ে ওই জল যদি গোটা গায়ে হাতে মেখে নেওয়া যায় তাহলে
এই বিছুটি কিছুতেই কাজ করতে
পারবে না! এক দিন তো করেই দেখি ! ওমা তাই তো ! তামাক পাতার জল সারা গায়ে ভাল করে মাখবার পর বিছুটি পাতা ঘাঁটলেও তেমন কোনও যন্ত্রণা হলো না । শুধু তাই নয়। জঙ্গলে
কাজ করবার সময় বর্ষাকালে প্রচুর জোঁকের উত্পাত! তামাক পাতার জল গায়ে মেখে নিলে জোঁক তেমন করে আর গায়ে উঠবার সাহস পেত না । কেন? তার বৈজ্ঞানিক কারণ আজও পর্যন্ত জেনে
উঠতে পারিনি! এর পর এই হাতি নিয়ে
কাজ আমি উত্তরবঙ্গে করেছি বহু দিন! একই টেকনিক প্রয়োগ করবার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু কী তাজ্জব! উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে
যে বিছুটি পাতা আছে সেটাকে প্রতিরোধ করবার জন্য যখন তামাক পাতার জল গোটা সারা গায়ে
হাতে মুখে মেখে গেছি তখন দেখলেম এখানকার বিছুটি পাতা তামাক পাতার জলের কাছে হার মানল না! যতই তামাক পাতা মাখি না কেন বিছুটি
আমাদের কাঁদিয়ে ছেড়েছে! যদিও এখানে তামাক
পাতার রস জোঁকের হাত থেকে খানিক রেহাই দিয়েছে । সেদিন থেকে আমার চিন্তা বেঙ্গালুরুর
পাতার রস বিছুটিকে প্রতিরোধ করতে পারল কিন্তু উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে জলদাপাড়ার এবং কোচবিহারের
অরণ্যের বিছুটি আমাকে চোখের জল থেকে রেহাই দিতে পারল না । কেন? এই উত্তর আজও খুঁজে চলেছি! আসলে এত দিন গবেষণা করবার
পর বুঝেছি একেই বলে প্রজাতি বৈচিত্র! বা একেই বলেএকেই বলে জিন বৈচিত্র! একই প্রজাতির জীব বিভিন্ন ভৌগোলিক
অবস্থানে থাকলে তার রাসায়নিক গতি প্রকৃতি পাল্টে দিতেই পারে। একে আমি জিন বৈচিত্র বলে
মনে করি । যাই হোক এর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য জিন্সের জামা ও প্যান্ট! চোখের চশমা নিয়ে পায়ে বুট পরে জঙ্গলে বেরোনোর রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল । অন্তত
বিছুটির হাত থেকে বাঁচবার জন্য!
বিছুটি এই গাছটি
ইউফরবিয়েসি গোত্রের অন্তর্গত । গোটা পৃথিবী জুড়ে
এর বিস্তার। অনেক প্রজাতি আছে। তবে মূল প্রজাতি হল ইউফরবিয়া ডাইউইকা। এই ডাইউইকা প্রজাতির অন্তর্গত অন্তত
ছ'টি উপ প্রজাতি আছে গোটা পৃথিবী জুড়ে। এটি
পাওয়া যায় এশিয়া -আমেরিকা -আফ্রিকা- ব্রিটেন -অস্ট্রেলিয়া। বিভিন্ন জায়গায় প্রত্যেকটি
প্রজাতির উদ্ভিদের পাতায় এবং তার কাণ্ডের অসংখ্য সূঁচের মতো রোম আছে। এগুলিকে দংশক রোম বলে। এই গাছটিকে সাধারণত ইংরেজিতে নিটল প্লান্ট আর বাংলায় বিছুটি গাছ বলে। যদিও অনেক
উপ প্রজাতি আছে তবে সমস্ত উপ প্রজাতির দেহে দংশন রোম থাকে না। সাধারণত এই রোম থাকে সেই সমস্ত উদ্ভিদে যারা
কি না ভেজা মাটিতে জন্মায় । কিন্তু যারা শুকনো মাটিতে জন্মায় তাদের বিষ আর রোম থাকে না। আর যদিও বা থাকে তাদের রোমে
ওই রকম প্রচণ্ড জ্বলুনি অনুভব করা যায় না। যাই হোক গোটা পৃথিবী জুড়ে এর বিস্তার
থাকলেও আজও পর্যন্ত এদের সম্পর্কে খুব বেশি যে গবেষণা হয়েছে তা বলা যায় না। আজও আমরা কিন্তু বিছুটি নিয়ে যথেষ্ট অন্ধকারেই আছি। অথচ জীববৈচিত্র নিয়ে গবেষণা করতে
গিয়ে জলে জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে
গত কুড়ি বছর। আগে যে পরিমাণ বিছুটি গাছের দেখা মিলত এখন কিন্তু
বিছুটি গাছের সংখ্যা এক শ ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে । অর্থাত্ দারুণ ভাবে অতি দ্রুত ভাবে
বিছুটি গাছের বংশ লোপ পাচ্ছে। কেন লোপ পাচ্ছে কোন কারণে লোপ পাচ্ছে এটা নিয়ে গবেষণা করা দরকার আছে । বিছুটি
গাছের ভাল গুণ গুলো আমাদের চোখে আসেনা। দরকার আছে। এর ওষুধি গুণগুলো মনে রাখবার মতো!
এখনও পরিবেশে যথেষ্ট পরিমাণ বিছুটি
গাছ আছে । কিন্তু খুব বেশি দিন লাগবে না এই বিছুটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে। তাই আমাদের গবেষণা এবং সংরক্ষণ দুটোর
দিকেই নজর রাখতে হবে।
বনে জঙ্গলে যখন আমরা ঢুকি তখন আমরা দেখতে পাই রোম । ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা
যাবে এই বিছুটি গাছের পাতায় এবং কাণ্ডে অসংখ্য লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সাদ রোম গুলো একেকটি
কোষ দিয়ে তৈরি। প্রতিটা ছোট্ট ছোট্ট কাচের টিউবের বা নালির মতো দেখতে । ইঞ্জেকশন দেওয়ার
সময় যখন কাঁচের অম্পল দেখি ডাক্তারবাবু যখন ওই কাঁচের টিউব ভেঙে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জে টেনে নেন! তেমনি দেখতে দংশন রোম গুলো কে! ওরা আমদের শরীরের সংস্পর্শে এলে কাঁচের ডগা
গুলো ভাঙ্গে। তখন ওই রোমের অগ্রভাগ যা কিনা
বালি কিম্বা সিলিকা নির্মিত সেগুলো ভেঙে যায়। এর ফলে সামনের দিকটি বড্ড ধারালো
হয়ে উঠে। তার পর ওই ভাঙা সূচালো ডগা আমাদের চামড়ার ভেতরে ঢুকে যায়। তার পর ওই রোমের মধ্যে থাকা হরেক রকম রসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরের মধ্যে ঢুকে
পড়ে। আর প্রত্যেকটি রসায়নিক পদার্থ আমাদের বিভিন্ন রকম বিক্রিয়া করে। অস্বস্তির কারণ হয়। চামড়া ফুলে উঠে। লাল হয়ে যায়। জ্বালা
করে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। এবং এই অস্বস্তি কারও ঘন্টা দুয়েক কারও ক্ষেত্রে দু এক দিন পর্যন্ত থেকে
যায়। ব্যক্তি বিশেষের কারুর কারুর তেমন জ্বালা যন্ত্রনা হলেও কারুর কারুর এত তীব্র পরিমাণ
হয় যে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে। ছোট্ট ইঁদুর খরগোশ গিনিপিগ এমনকি হরিণ ছানার আকছার মৃত্যু
দেখা যেতে পারে। মূলত যখন শ্বাসনালিতে ঢুকে যায় তখন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা যায় । তীব্র
ছটপট করে। হাত পা ছুড়তে থাকে। পশু পাখিগুলো। এবং তারপর একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়ে।
পাতায় এবং কাণ্ডের
গায়ে অসংখ্য দংশন রোম আমদের শরীর সংস্পর্শে এলে সামনের দিকটি ভেঙে যায় । আমাদের ত্বকের মধ্যে প্রবেশ
করে। তার পর ওই রোমের মধ্যে থাকা তরল বিষ আমাদের শরীরে আসে। কী আছে? যা আমার আমাদের শরীরের চুলকুনি জ্বলুনি যন্ত্রণা ফোলা লাল হয়ে যাওয়ার
জন্য দায়ী!
এত দিন জানা ছিল ওই পদার্থটি হলো ফার্মিক অ্যাসিড । যা
নাকি পিঁপড়েদের শরীরে থাকে। যারা কামড়ালে আমাদের শরীরের হুবহু একই রকমের লক্ষণ ফুটে
উঠে! তার পরে জানা গেল ফর্মিক অ্যাসিড শুধু নয়! এর সঙ্গেএর সঙ্গে পাওয়া গেল সেরটেনিন
। হিসটামিন । এবং কখনও কখনও পাওয়া গেল প্রচুর পরিমাণে অক্সালিক অ্যাসিড । এই ফরমিক
অ্যাসিড গুলি ই আমাদের শরীরে জ্বালা এবং যন্ত্রণার জন্য দায়ী বলে এত দিন ভাবা হত ।
ফরমিক এসিড এই রাসায়নিকটি
সাধারণত পাওয়া যায় পিঁপড়ের মধ্যে পিঁপড়ে কামড়ালে ফুলে যায়। এই ফরমিক এসিড প্রচুর প্রচুর
পরিমাণে থাকে এবং ওই ফরমিক এসিড যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। কিন্ন্তু এই বিছুটির মধ্যে যে
পরিমাণ ফরমিক এসিডের সন্ধান পাওয়া গেল তার পরিমাণ নেহাতই অল্প! আর ওই অল্প পরিমান ফার্মিক
এসিড দিয়ে আমাদের শরীরে এত দ্রুত জ্বালা যন্ত্রণা এবং ফোলা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। তাহলে?
এখন প্রশ্ন দংশন
রোমের এই জ্বালা এবং যন্ত্রণার প্রকৃত কারণটাই বা কী!
কিন্তু গবেষণায় জানা গেল ওই বিছুটি রোমে যে পরিমাণ ফরমিক অ্যাসিড আছে ওই
পরিমাণ অ্যাসিড আমদের শরীরে ঢুকলে আদৌ কোনও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না। ওই পরিমাণ ফরমিক
অ্যাসিড কৃত্রিম ভাবে ঢুকিয়ে
দেখা গেছে কোনও ভাবেই আমাদের ওইরকম লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে না।
তার পরের তথ্য হল
অক্সালিক অ্যাসিড। ওই অক্সালিক এসিড আমাদের শরীরে ঢুকলে যন্ত্রণা এবং লালচে হওয়ার লক্ষণ
ফুটে ওঠে । সেখানেও বিপত্তি। যে পরিমাণ অক্সালিক এসিড ও ওই লক্ষণ প্রকাশ করবার পক্ষে
দরকার তা আদৌ থাকে না । তাহলে! অ্যাসিড তত্ত্ব বাজারে টিকল না । কোনও অ্যাসিড সে ফরমিক
হোক আর মিথনইক অ্যাসিড হোক! কোন অ্যাসিড এককভাবে বা যৌথভাবে ওই লক্ষণ প্রকাশ করতে সমর্থ নয়।
তাহলে এখন প্রশ্ন বিছুটি ত্বকে প্রবেশ করলে কী এমন কি আসে যাতে করে মুহূর্তের মধ্যে
আমাদের যন্ত্রণা শুরু হয়! গায়ে স্পর্শ করা এবং যন্ত্রণা করার মধ্যে সময় তো মাত্র তিরিশ
থেকে চল্লিশ সেকেন্ড! এ ত্রিশ থেকে চল্লিশ সেকেন্ডের মধ্যে কী বা কোন ধরনের পদার্থ থাকতে পারে যা আমাদের একেবারে
প্রাণঘাতী সমস্যার সৃষ্টি করে!
এ বার আসা যাক আধুনিক গবেষণায় । আধুনিক
গবেষণায় জানা গেছে ওই রসের মধ্যে আছে এমন কিছু রাসায়নিক যা শুনলে আমরা অবাকই হব! ওই রাসায়নিক গুলোও পাওয়া যায় সাধারণত
মানুষের শরীরে। আর এই রাসায়নিকগুলি সদ্য আবিষ্কার করা গেছে। ওই বিছুটি গাছের পাতার
রোমে ওই পদার্থগুলো হলো হিস্টামিন। সেরোটোনিন এবং অ্যাসিটাইলকোলিন । তিনটি পদার্থের কারসাজিতে
আমাদের শরীরে যন্ত্রণা । যন্ত্রণা জ্বলুনি এবং ফুলে যাওয়া!
হিস্টামিন হল এক
ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেগুলো আমাদের রক্তের এবং রক্তরসে থাকে। এই হিস্টামিন আমাদের রক্তে থাকা ইয়োসিনফিল
নামক শ্বেতরক্ত কণিকা থেকে নিঃসৃত হয় এবং এটি আমাদের অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। কোনও
জায়গা হঠাত্ করে ফুলে যাওয়া লাল হয়ে যাওয়া এবং যন্ত্রণার জন্য দায়ী । আর ওই পদার্থ
হিস্টামিন প্রচুর পরিমানে থাকে বিছুটি রোমের মধ্যে।
এর পর সেরোটোনিন।
সেরোটোনিন এক ধরনের রসায়নিক। এটাকে কেউ কেউ স্থানীয় হরমোন বলে থাকে। সেরোটোনিনের আরও একটি অন্য নাম আছে। একে সুখী হরমোন বা হরমোন অফ হ্যাপিনেস
ও বলা হয়ে থাকে। এই সেরোটোনিন আমাদের আনন্দ এই অনুভূতির সৃষ্টি করে। কিন্তু তারও একটা মাত্রা থাকা দরকার।
এই সেরোটোনিন কিন্তু আমার যন্ত্রণা এবং ব্যথা এই দুটো অনুভূতি সৃষ্টি করে থাকে। দংশন রোমের মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে সেরোটোনিন থাকায় অতি দ্রুত এটি আমাদের শরীরে যন্ত্রণা বোধকে জাগিয়ে তোলে।
এর পর তৃতীয় রাসায়নিক
অ্যাসিটাইলকোলিন। এটি হল এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার । আমাদের শরীরের স্নায়ু থাকে।
একটি স্নায়ুকোষের শুরু আর একটির শেষ। এই অঞ্চলকে বলে সাইন্যাপস্। এখানে দুটি স্নায়ুকোষ জোড়া থাকে না
বা স্পর্শ করে না। ফাঁকা। দুটি কোষের মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে। এক কোষ থেকে অন্য
কোষে এই স্নায়ু উদ্দীপনা আসতে গেলে অ্যাসিটাইলকোলিন নামক রসায়নিক পদার্থ ওই ফাঁকা জায়গায়
সাঁতরে আসে । উদ্দীপনা জোগায়। আর এই বিছুটি পাতার সেই অ্যাসিটাইল কোলিন নামক পদার্থ থাকায় অতি দ্রুত এই যন্ত্রণার বোধ এক কোষ
থেকে অন্য কোষ হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যাসিটাইল কোলিন এই যন্ত্রণা বোধ সৃষ্টির
জন্য দায়ী। হিস্টামিন ফোলানোর জন্য দায়ী এবং সেরোটোনিন যন্ত্রণার সৃষ্টির জন্য দায়ী।
তাই দেখা গেল কোন
একটা নির্দিষ্ট রসায়নিক পদার্থ এই বিছুটির যন্ত্রণার জন্য দায়ী আদৌ নয় । এই যন্ত্রণা
বোধের জন্য অনেক ধরনের পদার্থ একসঙ্গে মিলে অন্য রকম কাজকর্ম করে। এক দিকে হিস্টামিন একদিকে দিকে সেরোটোনিন
এবং তার সঙ্গে অ্যাসিটাইলকোলিন নামক রাসায়নিক যখন একসঙ্গে জোড়ে তার সঙ্গে হরেক রকম
এসিড মূলত মিথানো য়িক অ্যাসিড ফরমিকঅ্যাসিড এবং তাঁর সঙ্গে যদি অব স্য লিক অ্যাসিড
আসে সমস্ত রাসায়ানিক একসঙ্গে মিলে তীব্র যন্ত্রণা এবং সঙ্গে ইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করে। এটি কোন নির্দিষ্ট রাসায়নিকের নির্দিষ্ট
কাজ তো নয়!
বিভিন্ন দেশে এমন
কিছু কিছু গাছপালার সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলো মোটামুটি ওই বিছুটি গাছের পাশেই জন্মায়।
যেগুলি বিছুটি পাতার এই যন্ত্রণা বোধকে কমিয়ে দেয়। ওই রকম একটি গাছের নাম হলো ডক প্ল্যান্ট বা ডক গাছ। এই গাছের পাতা যদি বিছুটি আক্রান্ত জায়গা
ঘষে দেওয়া যায় ভাল করে কিছু ক্ষণের মধ্যেই
ওই যন্ত্রণা কমে যেতে পারে। কিন্তু সত্যিই কি যন্ত্রণা কমে! এটাও প্রশ্ন রেখে যায় তো বটেই। কারণ
দেখা গেছে সমস্ত ডক প্ল্যান্ট এই যন্ত্রণা প্রশমনে কাজ দেয় না। আর সব্বার শরীরেও কাজে
দেয় না। সব বয়সী গাছ এই ধরনের রসায়নকে প্রশমিত করতে পারে না। এখন প্রশ্ন ডক গাছের মধ্যে
কি এমন কি পদার্থ আছে যে বিছুটি পদার্থগুলোকে সম্পূর্ণভাবে প্রশমিত করে দিল? আসলে সম্পূর্ণ প্রশমিত হয় না । জ্বালা
যন্ত্রণা কিছুটা কমে এই পর্যন্ত।
এখন প্রশ্ন- যে পদার্থগুলো
- হিস্টামিন সেরেটনিন এবং অ্যাসিটাইলকোলিন
-মানুষের শরীরে পাওয়া যায়- সেই পদার্থগুলো নাকি উদ্ভিদেও পাওয়া যায়! তাহলে উদ্ভিদ ও
প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য ? এই বয়সে এসে মনে
হয় সত্যি উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে কোনও পার্থক্য করেননি এই স্রষ্টা। এই ঈশ্বর যখন একই জায়গা থেকে আমাদের
তৈরি করলেন আমাদের মধ্যে অনেক মিল তো থাকবেই । আসলে এটা গেল বিবর্তনগত ভাবনা । আবার
অভিযোজনগত কারণ বললে যে সমস্ত উদ্ভিদকে যেসমস্ত উদ্ভিদ কে তৃণভোজী প্রাণীরা অনায়াসে
খাবে বলে স্থির করে রেখেছে -গাছই বা খেতে দেবে কেন? তাদের তো প্রতিরোধ এবং লড়াই জারি
করার শক্তি থাকা দরকার! তাই এই গাছগুলো
প্রতিরোধ বা লড়াই করবার জন্য তাঁদের দেহে এমন ধরনের রসায়নিক পদার্থ তৈরি করে রেখেছে
যেগুলো আমরা আপত্কালীন তৈরি করি এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করি । যন্ত্রণা বোধের সৃষ্টি
করে। প্রকৃতির এ এক সাম্যবাদের
খেলা। ক্রিয়েটর উদ্ভিদ এবং প্রাণীকে
প্রতিষ্ঠা করবার জন্য একই মেকানিজম বা ব্যবস্থাপনা রেখে দিয়েছেণ তার শরীরের মধ্যে ।
আমাদের শরীরে যন্ত্রণার যে যে কারণ তৈরি হয় - গাছ ও পদার্থগুলো রেখে নিজেকে বাঁচবার
কলাকৌশল করায়ত্ত করে।
এখন প্রশ্ন হল এই
ডক উদ্ভিদের নির্যাস কেন এই প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে ?কেউ কেউ বলেন এই ডগ উদ্ভিদের রসে যে পদার্থ
আছে এটি হল তীব্র ক্ষার । এই তীব্র ক্ষারধর্মের
জন্য অ্যাসিড গুলি প্রশমিত হয়ে যায় এবং জ্বালা যন্ত্রণা কমে যায় কিন্তু এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভাবে গ্রহণ
করা সম্ভব নয় । কারণ উদ্ভিদের মধ্যে যদি তীব্র ক্ষার পদার্থ থাকত আহলে সাবান প্রয়োগে এমনকি চুন লাগিয়ে আমরা আক্রান্ত জায়গা থেকে স্বস্তি
বা আরাম পেতে পারতাম। কিন্ন্তু পরীক্ষামূলক
ভাবে প্রমাণ করে দেখা গেল সাবান বা ক্ষার বা চুন প্রয়োগ করে আমরা কিছুতেই এই জুলুমের
হাত থেকে রক্ষা পায়নি সম্পূর্ণ ভাবে! তাহলে
এবার উদ্ভিদের নির্যাস কেবলমাত্র ক্ষার জাতীয় পদার্থ আছে ? এই তথ্য ঠিক নয়। আসল তথ্য লুকিয়ে
আছে অন্য কোনও জায়গায় অন্য কোনও খানে।
পরীক্ষায় প্রমাণ
করা গেছে ডাক উদ্ভিদের নির্যাস পাওয়া যায় এন্টি হিস্টামিন নামক এক পদার্থ যেটি হিস্টামিন
কে নষ্ট করে। এই অ্যান্টি হিস্টামিন
নামক রাসাযনিক পদার্থ হিস্টামিন পদার্থটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে এবং যন্ত্রণার সৃষ্টি
হতে দেয় না। আর তার সঙ্গে ওই জায়গাটাকে ইনফ্লামেশন বা ফুলে উঠতে আদৌ দেবে না। তাই এন্টি
হিস্টামিন ধর্ম এই ডাক উদ্ভিদের নির্যাসের মধ্যে নিশ্চিত ভাবে আছে!
কিন্তু বর্তমানে
অ্যান্টি হিস্টামিন তত্ত্ব আবার নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। আজ পর্যন্ত কেউ
প্রমাণ করতে পারল না । ডাক প্ল্যান্টের রাসায়নিকের মধ্যে অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয়
কোনও পদার্থ আছে? এ পর্যন্ত একটি মাত্র পদার্থ খুঁজে পাওয়া গেছে । কেউ তার আন্টি হিস্টামিন ধর্ম আজ পর্যন্ত আবিষ্কার
করা যায়নি- এ পর্যন্ ।অনেক অনেক বিজ্ঞানী এটা নিয়ে কাজ করছেন। সবাই বলছেণ অ্যান্টি
হিস্টামিন ধর্ম আছে কিন্তু আজ ও কেউ কিচ্ছুটি প্রমাণ করতে পারলেন না সবই একটি পেপারের কপি। তার কপ । তাই অ্যান্টিহিস্টামিন প্রপার্টি
প্রমাণ করতে এখনও ঢের রাস্তা যেতে হবে। অনেক প্রমাণ এবং তথ্যের বাকি। মনে হয় না এটা প্রমাণ করা সহজ।
অনেকে আবার এই বিছুটির
এই বিষ লাগলে কেলামাইন নামক রাসায়নিক পদার্থটি প্রয়োগ করে থাকেন। এতে নাকি জ্বালা এবং
যন্ত্রণা ফোলা সবই কমে! কিন্তু এটা কি আদৌ
সত্যি! দেখে নেওয়া যাক কেলামাইন এর মধ্যে কী আছে। এর মধ্যে আছে অনেকটা পরিমাণ জিংক
অক্সাইড এবং অনেকটা পরিমাণ আয়রন। এ ছাড়া কেলামাইনের মধ্যে তেমন আর কিছু নেই। এই দুটি কিছুতেই
আমাদের শরীরের জ্বালা যন্ত্রণায় ফোলার ভাব কমাতে পারে না। তাই যারা দাবি করছেন যে কেলামাইন
যন্ত্রণা কমায়- এই তথ্যটি সর্বাংশে ভুল। কিছুটা পরিমাণে জ্বালা যন্ত্রণা কমায় হয়তো!
তাই কেউ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এই ব্যবহার কতটা যুক্তিসম্মত সেটা নিয়ে প্রশ্ন তো
থেকেই যায়।
আরেকটি পদ্ধতিতে
এই বিছুটি যন্ত্রণা কমানোর উপায় আছে - বলে থাকেন অনেকে । যদি ওই আক্রান্ত স্থানে প্রস্রাব
করা যায় তাহলে কিছুটা যন্ত্রণা
কমে! এর কোনও বৈজ্ঞানিক
ভিত্তি নেই। তবে গরম প্রস্রাব
কিছুটা যন্ত্রণা কমাতে পারে যেমন গরম সেঁক করে থাকে।
অনেকে বলেন প্যান্টিন
লিফ বা প্যান্টিন গাছের পাতা তার নির্যাস -সেও নাকি যন্ত্রণা খানিক কমায় । তবে এর পিছনেও
তেমন কোনো শক্তপোক্ত যুক্তি বা কারণ আমাদের পক্ষে নেই।
তাহলে এখন কি এখন
উপায়! প্রচণ্ড জ্বালা যন্ত্রণা এবং ফোলা তৈরি হয় তা আমরা কিভাবে কমাতে পারি ? এর চিকিত্সা
হল যদি আমরা ওই জায়গায় অ্যান্টিহিস্টামিন কোনো
মলম এবং তাঁর সঙ্গে কোন একটা অ্যান্টি স্টেরয়েড পদার্থ প্রয়োগ করতে পারি যা কি না হিস্টামিন
কে অতি দ্রুত ধ্বংস করে দেবে। তাই এন্টি হিস্টামিন এবং অ্যান্টি কর্টিকোস্টেরয়েড এই
দুটো পদার্থকে মিশিয়ে দিতে কোনও ক্রিম বা লোশন বানানো যায় সেটা ক্ষণিক আমাদের আরাম
দেবে। নিস্তার দেবে । তবে সম্পূর্ণ নয়। কারণ ওই অ্যাসিটাইলকোলিন এবং সেরোটোনিন তো
নষ্ট করা গেলই না।
এর পরে কোনও কোনও
বিছুটির মধ্যে মধ্যে টারটারিক এসিড এর সন্ধান পাওয়া গেছে। আর টারটারিক এসিড যত বেশি
থাকবে এই ব্যথা তত দীর্ঘস্থায়ী হবে। কোনও কোনও ব্যথা এক ঘণ্টা থাকে। কোন কোন ব্যথা
এক দু দিন পর্যন্ত থেকে যায়। সুতরাং এই টর্টরিক অ্যাসিডের হাত থেকে যে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে তা কেবলমাত্র ঈশ্বর
ই জানেন!
তাই পরে এ বারে যখন
আপনার জঙ্গলে যাবেন -না জেনে যখন বিছুটির গায়ে হাত দেবেন- যখন প্রচণ্ড জ্বালা যন্ত্রণায়
আপনারা চটপট করবেন তখন আপনার মনে হলে ডাক প্ল্যান্টের পাতা ঘষতে পারেন । আমার মনে হয়
এটি সম্পূর্ণ মানসিক ভাবে আপনাকে সান্তনা দিতে। পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনার জ্বালা
এবং যন্ত্রণা এটা কমাতেই পারবে না। সঙ্গে আপনারা অ্যান্টিহিস্টামিন ক্রিম রাখুন । অ্যান্টি
করটিকয়েড ক্রিম রাখুন। আর তার পর কেলামাইন জাতীয় কোনও লোশন প্রয়োগ করুন। তাতে তেমন ক্ষতি নেই কিছুটা যন্ত্রণা আপনাকে সহ্য করতেই
হবে।
তাই কোনও জলা বা জংলা জায়গায় যখন আমরা বেড়াতে যাব এবং বিছুটি আছে আমরা নিশ্চিত
জানি - তখন ব্যাগের মধ্যে কেন কেলামাইন লোশন থাকবে না ? কেনই বা অ্যান্টি হিস্টমিন লোশন থাকবে
না ? আর কেনই বা অ্যান্টিক
করটিকোস্টেরোয়েড থাকবে না! এই তিনটি লোশন থাকলে আমরা নিরাপদে
মোকাবিলা করতে পারি বিছুটি গাছকে। তার বিষকে । আমাদের কাছে তো বিষহরি আছ ! বিজ্ঞান।
বিষহরি - বিজ্ঞান॥
শুভময় দাস