সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

যুগান্তর মিত্র





আত্মহত্যার স্বরলিপি

  

  
অনেক বছর আগের ঘটনা আজ এমন এক পরিস্থিতিতে উঠে এল যে আমি তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। আচমকাই ঘটে গেল। সম্পূর্ণ ঘটনাটাই চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমি যেন সেইসময়টায় ফিরে গেলাম।
অনেকদিন আগে এক সকালে ঘুম থেকে উঠে সবেমাত্র খবরের কাগজ খুলে বসেছি। দাদার ছোট্ট ছেলেটা এসে বলল, কাকাই, কাকাই। বিট্টু সুইসাইট করেছে। 
আমি বললাম, কোন বিট্টু ?
~ আরে, আমাদের বিট্টু গো। ফর্সা বিট্টু।
ফর্সা বিট্টু মানে আর-এক বিট্টু আছে, যে বাপনের সঙ্গেই ক্লাশ টু-তে পড়ে। গায়ের রঙ চাপা। বুঝতে পারলাম ও ব্রতীনের কথা বলছে। আবার বুঝলামও না। সুইসাইট মানে যে সুইসাইড বোঝাতে চেয়েছে, বাপনের ভাষায় তা বুঝলাম। কিন্তু বিট্টুর আত্মহত্যার ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। সত্যি কিনা কে জানে !
বৌদিকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম ঘটনাটা সত্যি। অনেকেই নাকি দেখে এসেছে। বৌদির দেখতে যেতে ইচ্ছে হয়নি। "জলজ্যান্ত ছেলেটাকে সবসময় দেখতাম। এখন এই অবস্থায় আর দেখতে চাই না গো। ওর ঐ মুখটাই মনে থেকে যাক।" বৌদি যুক্তি দেয় না-দেখতে যাওয়ার সপক্ষে।
অমন তরতাজা ছেলে বিট্টু আত্মহত্যাই বা করতে যাবে কেন ? এসব ভেবে কোনও কূলকিনারা পাইনি। বিট্টু আমাদের পাড়ারই ছেলে। আমাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ি পরে ওদের বাড়ি। আমার চাইতে বেশ কয়েক বছরের ছোট। আমাকে দাদা বলে ডাকে। তাতে অবশ্য ভাইপো বাপনের আটকায় না। ও বিট্টু বলেই ডাকে। ওর এই এক স্বভাব। বড়রা যে যা বলে ডাকবে, বাপনও তাই বলেই ডাকবে। বোসবাবু, মাস্টারমশাই,  হরিকাকা, ভোলা মুখুজ্জে এসব ওর মুখ থেকে অনবরত শোনা যায়। এমনকি ওর বাবাকে বড়দা আর মাকে বৌদি বলেও ডাকত। অনেক বলেকয়ে ওদুটো ছাড়ানো গেছে।
বিট্টু অসম্ভব মেধাবী আর চৌকশ ছিল। অন্তত আমার তাই মনে হত। অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট অবশ্য তেমন মারকাটারি ছিল না কোনওদিনই। তবু মনে হত একটু ভাল গাইড পেলে বিট্টু চমকে দেওয়ার মতোই রেজাল্ট করত। সেই বিট্টু আত্মহত্যা করেছে শুনে আমার ভেতরে এক আকাশ মেঘ গুড়গুড় করে উঠল।
বিট্টু ছিল একটা অদ্ভুত ছেলে। এমন সব কথা বলত যে মানে বুঝতে পারতাম না সবসময়। মাঝে মাঝে রাস্তায় দেখা হত। স্কুল, ক্লাব আর বাড়ি, এটুকুই ছিল আমার ঘোরাফেরা। ক্বচিত কোনও সাহিত্যসভায় যেতাম। এখনও সেইরকমই। এর বাইরে পাড়ায় কারও বাড়িতে যাওয়া বা কারও সঙ্গে মেলামেশা করি না সেভাবে। কখনও-সখনও কবিতা বা গল্প লিখে দেখাতে আসত আমার কাছে। ও পড়ে যেত আর আমি মন দিয়ে শুনতাম। দু-একটা পরামর্শ দিতাম।

হয়তো বেশ কয়েকদিন বাদে দেখা হল। ওকে জিজ্ঞাসা করতাম, কেমন আছিস ? অন্যরকম জবাব দিত। একটু যেন অন্যমনস্ক ভাবে কথা বলত। “ভালোই আছি। সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছি। কিন্তু বুঝলে অনীকদা, ঠিক জায়গায় পৌঁছতে পারছি না। ছাদে ওঠার অনেকগুলো সিঁড়ি তো !”
কোন কথার কোন জবাব ! প্রথম প্রথম অবাক হতাম। পরে বুঝতাম ওর উত্তরগুলো ওরকমই। কোনও মানে নেই। কিংবা হয়তো মানে আছে, গভীর কোনও মানে। আমিই বুঝতে পারছি না ঠিকঠাক। যেমন সেদিন বুঝতে পারিনি ওর আত্মহত্যার ব্যাপারটা। এখনও কি বুঝতে পারি ঠিকঠাক !

তাড়াতড়ি ছুটে গিয়েছিলাম বিট্টুদের বাড়িতে। দেখলাম প্রচণ্ড ভিড়। প্রচুর লোক জড়ো হয়েছে বাড়ির ভেতরে ও বাইরে। পুলিশের গাড়িও এসে গেছে ততক্ষণে। বিট্টুর বৃদ্ধ বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বাভাবিকভাবেই। বেশি বয়সের সন্তান বিট্টু। নয়নের মণি ছিল ওঁদের। আমার ভেতর থেকেও একটা দলা পাকানো কান্না উঠে এল।

আশ্চর্য ! এত কাণ্ড হয়ে গেল, তবু আমি টের পেলাম না ? অনেক রাতে ঘুমাই। পড়াশোনা আর লেখালেখি নিয়ে থাকি বলে রাত হয়ে যায় ঘুমোতে ঘুমোতে।  সকালে উঠতে তাই দেরি হয়। তা বলে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, আর আমি তার কিছুই জানতে পারলাম না ! আমার ঘরের একটা জানালা রাস্তার দিকেনিশ্চিতভাবেই রাস্তা দিয়ে অনেক লোক যাতায়াত করেছে। তারা কথাবার্তাও বলেছে। এমন একটা বিষয় নিয়ে জোরে জোরে কথাবার্তা বলাটাই  স্বাভাবিক। তার কিছুই কানে এল না আমার ? আজকাল বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি কি ? নিজের চারপাশে কি একটা গণ্ডী টেনে রেখেছি ? সেই গণ্ডী ভেদ করে নিজস্ব জগতের বাইরের কোনওকিছুই প্রবেশ করতে পারছে না !
স্কুলে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম হেডমাস্টার মশাইকে। সেইসময় সেকেন্ড টার্মিনাল পরীক্ষা চলছিল আগের স্কুলে। রিজার্ভের কাউকে দিয়ে যেন গার্ডটা দেওয়ার ব্যবস্থা করে নেন সেকথা জানিয়ে দিয়েছিলাম তাঁকে। এসব ফেলে যাওয়াটা ভালো দেখায় না।
নিজের ভাবনাচিন্তার ওপর নিজেরই নিয়ন্ত্রণ থাকে না অনেক সময়। তা না-হলে ভালো দেখায় কিনা ভাবব কেন ? আমার স্নেহের প্রশ্রয় তো বিট্টু কম পেত না ! কবিতা, গল্প লিখত। মাঝে মাঝেই আমাকে শোনাত। আমার বিশ্বাস ছিল বিট্টু একদিন অনেক বড় হবে। কবি বা লেখক হিসাবে বেশ নাম করবে। তার মৃত্যুতে শোক, দুঃখ, যন্ত্রণার বদলে বড় হয়ে উঠল অন্যকিছু ? 

অদ্ভুত ভাষায় সুইসাইডাল নোট লিখে গিয়েছিল বিট্টু। আজও স্পষ্ট মনে করতে পারি। “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। কিছুই পারলাম না। কিচ্ছু না। বেঁচে থেকে কী লাভ ? তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। কিংবা ঠিক কাকে যে দায়ী করা যায় বুঝতে পারছি না। যারা বেঁচে রইল তারা সবাই ভালো থাকুক। ভালো থাকার চেষ্টা করুক অন্তত।”
বিট্টু ওরফে ব্রতীনের কাটাছেঁড়া করা শরীরটা মর্গ থেকে ফিরে এল বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার মুখে। আমিও অন্যদের সঙ্গে শশ্মানে গেলাম।
ব্রতীনের শরীর যত না কাটাছেঁড়া হয়েছে, তার চাইতে অনেক বেশি কাটাছেঁড়া হয়েছে ওর সুইসাইডাল নোট নিয়ে। নানা জনে নানা মতামত দিয়েছে। নানারকম ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছে এর মধ্যে। কেউ বলেছে, নিশ্চয়ই কোনও বাজে পাল্লায় পড়েছিল সে। না-হলে কাকে দায়ী করতে চেয়েও পারল না ? কারও মতে বিট্টু কোনও ব্যাপারে ফেঁসে গিয়েছিল নিশ্চিত। তাই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। সেটা ঢাকতে এছাড়া আর কোনও পথ ছিল না তার।
কেউ কেউ অবশ্য অন্য ব্যাখ্যাও দিয়েছে। লেখক হতে চেয়েছিল ব্রতীন মজুমদার। ব্যর্থ হয়ে, হতাশ হয়ে, মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছে সে। তা না-হলে মাত্রই মাস ছয়েক হল চাকরি পেয়েছে। তবুও মরতে যাবে কেন ?
সবাই দেখলাম যে যার মতো মৃত্যুরহস্যের সমাধান খুঁজে পেয়েছে। কেবল আমিই কোনও কারণ খুঁজে পেলাম না। কত রাতে ঘুম ভেঙে গেলে একা একা প্রশ্ন করেছি নিকষ অন্ধকারকে, তুই মরতে গেলি কেন বিট্টু ? কী হয়েছিল তোর ? কী করতে গিয়েও পারিসনি বিট্টু ? কিন্তু উত্তর দেবে কে ? সে তো সব ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু একবার, মাত্রই একবার স্বপ্নে দেখা দিয়েছিল বিট্টু। তখনও একই প্রশ্ন করেছি, যে প্রশ্ন আমাকে বারবার নির্ঘুম রাত ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার প্রশ্ন শুনে বিট্টুর মুখটা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল। শুধু বলেছিল, ছাড়ো তো ওসব। আমি মরিনি। ব্রতীনরা মরে না কখনও। তোমার বেঁচে থাকা আর আমার না-থাকা এক সরলরেখায় আছে। ভেবে দেখো।

স্বপ্নেও আমি যে কীভাবে এইসব প্রশ্ন করেছিলাম কে জানে ! বিট্টুর আত্মহত্যার মতোই এসবও আমার কাছে রহস্যময়। কিন্তু আমার বেঁচে থাকা আর বিট্টুর মরে যাওয়া যে একই সরলরেখায় তা বুঝতে পারি। ভেবে ভেবে এর একটা মানে খুঁজে পেয়েছি। বোঝাতে পারি না কাউকে সেই মানে। নিজেকেও কি ঠিকঠাক বোঝানো যায় ! শুধু বুঝতে পারি কথাটা ঠিক।

পঁচিশ বছর আগের ঘটনাগুলো কেমন যেন সারি সারি এসে যাচ্ছে আমার সামনে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের মরা লাইটের মতো চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে যেন গুঁড়ো গুঁড়ো স্মৃতি।

(২)

সরস্বতী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক হিসাবে এসেছি বছর দুয়েক হয়ে গেল। তবু মাঝে মাঝেই আমার নামে শুনতে হয় নতুন হেডমাস্টার শব্দটা। তাই আমি যে এখানে নতুন এসেছি, পুরানো হইনি, সে কথাটা বিশ্বাস করতেও শিখেছি মনে মনে।
টিফিন আওয়ার্সে মলি দিদিমণি এলেন আমার ঘরে। সাধারণত মলি আমার কাছে আসেন না। নিজের মতোই থাকেন। আর ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো নিয়েই কাটিয়ে দেন। ছাত্রছাত্রীরা তাঁর পাঠদানে খুশি, এমন খবরও পাই। তবু স্কুল সংক্রান্ত কোনও ব্যাপারে আমার কাছে এলে স্যার বলে সম্বোধন করেন এবং অল্পকথায় কাজ মিটিয়ে চলেও যান। অন্য অনেকের মতো এটা-সেটা নানা বিষয়ে মন্তব্য করেন না বা কারও সম্পর্কে কোনও অভিযোগ বা প্রসংশা করতেও দেখিনি তাঁকে।
আমি এতদিন ভেবেছিলাম মলি বোধহয় বিধবা। তাঁর পোশাক বা নিজস্ব গণ্ডীতে আবদ্ধ থাকা দেখে আমি এমনটাই ভেবে নিয়েছিলাম। সাদা খোলের কিংবা হালকা রঙের শাড়িই পরতেই দেখেছি সবসময়। আজই জানলাম মলি অবিবাহিতা।
আমার অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করার পর ইশারায় তাঁকে বসতে বললাম।

~ একটা কথা ছিল স্যার।
~ বলুন।
~ আপনাকে একটা দায়িত্ব নিতে হবে স্যার।
খানিকটা গম্ভীর তাঁর কণ্ঠ। আমি একটু অবাকই হলাম। এইভাবে তো মলি দিদিমণি কখনও কথা বলেন না ! কীসের দায়িত্ব নিতে বলছেন, এই বিষয়েটা যেমন কৌতূহলের হয়ে উঠল, মলির এমন ভাষ্যে কথা বলাও আমার কাছে কম বিস্ময়ের মনে হল না।
~ বলুন, কী দায়িত্ব নিতে হবে ?
একতাড়া কাগজ একটা প্যাকেট থেকে বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। আমি খেয়াল করলাম, মলি এই প্রথম আমার চোখে চোখ রেখে কথা বললেন।
~ এটা একটা পাণ্ডুলিপি স্যার। আমি এটা ছাপতে চাই। এ ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাইছি।
আমার বিস্ময় আরও বেড়ে গেল। সংশয় ধরে রেখেই জিজ্ঞাসা করলাম, কীরকম সাহায্য চাইছেন বলুন ?
~ আপনি এই পাণ্ডুলিপিটা পড়ে একটা নামকরণ করে দিন স্যার।
~ পাণ্ডুলিপি? কবিতার ?
~ না। ডাইরি।
~ কার লেখা ? আপনার ? ততক্ষণে আমি কাগজগুলোর লেখায় চোখ রেখেছি। বুঝতে পারছি এটা মলিরই হাতের লেখা। আমি ওনার হাতের লেখা চিনি।
~ হাতের লেখাটা আমারই স্যার, তবে লেখাগুলো আমার নয়। একজনের ডাইরি থেকে পাণ্ডুলিপিটা তৈরি করেছি।

আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। কার ডাইরি থেকে কী ছাপতে চান কে জানে ! আমাকেই বা এসবের দায়িত্ব দিচ্ছেন কেন, তাও বুঝতে পারছি না। অনেকদিন ধরে লেখালেখি নিয়ে আছি। নানা পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপা হয়। খুব যে নামডাক হয়েছে তা নয়। তবে সামান্য পরিচিতি বেড়েছে। কিন্তু এত লোক থাকতে আমাকে বেছে নেওয়ার মানে কী ? বিষ্ণুবাবুও তো আছেন। তিনিও আমার মতোই লেখালেখি করেন অনেকদিন থেকে।
~ কার ডাইরি বলুন তো ? চোখ সরু করে আমি জানতে চাই।
~ ব্রতীন মজুমদারের।
শুধু এইটুকু কথা। তারপর চুপচাপ। ব্রতীন মজুমদার। এই নামটা আমাকে বহুদিন আগের সময়কালে আছড়ে ফেলল। কতদিন হবে বিট্টু আত্মহত্যা করেছে ? আর এতদিন বাদেই বা তার ডাইরি কোথা থেকে আবিষ্কার হল? বিট্টুর সঙ্গে মলি দেবনাথেরই বা সম্পর্ক কী ? সব কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল। আশ্চর্য ! ব্রতীন মজুমদার নাম বলাতে ঐ একটা মুখই মনে পড়ল কেন ? অন্য কারও নামও তো হতে পারে ! এই নামে শুধু বিট্টুকেই বুঝতে হবে আমাকে ? সংশয় নিয়ে জানতে চাইলাম, কোন ব্রতীন ?
~ ব্রতীন মজুমদার স্যার, বিট্টু। আপনার পাড়ার ছেলে ছিল। আপনার বিশেষ পরিচিত. আমি জানি।
~ আমার পরিচিত ছিল আপনি জানলেন কীকরে ?
~ কিছুদিন আগে বিট্টুর চিঠিপত্র পড়ছিলাম। তখনই আপনার নামটা পেলাম। আগেও এই নামটা ওর মুখে অনেক শুনেছি। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর আপনার ঠিকানা জানার পর বুঝলাম আপনিই সেই মানুষ।
এতক্ষণে অনেকটা স্পষ্ট হল। তবু আরও জিজ্ঞাসা রয়ে গেল। নাকি আর কোনও জিজ্ঞাসাই অবকাশ নেই !
~ কিছু মনে করবেন না। আপনি বিট্টুকে চিনলেন কীকরে ?
একটুক্ষণ মাথা নীচু করে আবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন মলি। সেও অল্পক্ষণই। দেয়ালের দিকে মুখ করে বললেন, আমি ব্রতীনকে ভালোবাসতাম। এখনও বাসি। একদিন ব্রতীন আমাকে ডাইরিটা দিয়ে বলল, এটা রাখো। তোমার কাছেই থাক। কখন যে কী হয়ে যায় আমার ! তখন আমি কিছুই বুঝিনি। বুঝতে চাইনি। কিন্তু সেদিন রাতেই…

কথা থামল মলির। গলার স্বর একটুও কাঁপল না। শুধু চোখের পাতা ভিজে গেল দেখলাম। এই অবস্থায় ঠিক কী করা উচিত আমি জানি না। মলির দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছু সময়। তারপর আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল কয়েকটা শব্দ।
~ আমাকে এই দায়িত্ব কেন দিচ্ছেন মলি ? আমি কি এর নামকরণের যোগ্য ?
~ হ্যাঁ, আপনিই যোগ্য। কেননা বিট্টু লিখেছে কেউ তাকে বোঝে না। শুধু আপনিই একমাত্র বুঝতেন ওকে।

মলির মুখে একথা শুনে আমি স্তম্ভিত। আমি বুঝতাম বিট্টুকে ? কিন্তু আমিও যে বুঝতাম না ওকে। ভুল বুঝেছিল বিট্টু।
~ এতদিন বাদে এসব ছাপতে চাইছেন কেন ?
~ জানি না। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস। তারপর নীরবতা নীরবতা নীরবতা।
এবার কী প্রশ্ন করব, কী বলা উচিত বুঝতে পারছি না। চুপ করে থাকা ছাড়া এই মুহূর্তে আমার আর কিছুই করার নেই যেন। এর মধ্যেই টিফিন টাইম শেষের ঘণ্টা পড়ল। মলিকে এবার ক্লাশে যেতে হবে। মলি তাই উঠে পড়তে চাইছেন। তাই দাঁড়িয়ে পড়লেন।
~ বিট্টুর পঁচিশতম মৃত্যুবার্ষিকী এগিয়ে এল। মাত্র মাস চারেক বাকি। এর মধ্যেই ছাপার কাজ রেডি করে রাখতে চাই। ওর ভাবনাচিন্তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। আমি আর একা বইতে পারছি না অনীকদা।
এই প্রথম আমাকে দাদা বলে সম্বোধন করলেন মলি। এই প্রথম মলি আমার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় 'আসছি স্যার' বলে গেলেন না। আর এই প্রথম মলি আমাকে ঘোর অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিলেন।
২৫ বছর ! এতদিন হয়ে গেল ? ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী ! কেন এতদিন অন্ধকারে মিশে থাকা বিট্টুকে এভাবে টেনে আনলেন মলি ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তার কথা। স্মৃতির পলেস্তারায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিল বিট্টু। বহুদিন অন্ধকারে বিট্টুর মুখ দেখি না আমি। বহুদিন ওকে প্রশ্ন করি না, তুই কেন মরতে গেলি বিট্টু ? কীসের এত যন্ত্রণা ছিল তোর যে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হল ?
বিট্টু ! বিট্টু ! বিট্টু ! একটামাত্র নামই মাথার মধ্যে ঘুরতে শুরু করল। আর কিচ্ছু নয়। তারপর থেকে আর কোনও কাজ করতে পারিনি আমি। একটা ঘোরের মধ্যে সময় বয়ে চলেছে যেন। গোল গোল কাচের পেপার ওয়েটগুলো যেন বিট্টুর কাটা মুণ্ড। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আর সেই হাসিটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে টেবিল থেকে মেঝেতে। মেঝে থেকে সারা ঘরে। ছড়িয়ে পড়ছে আমার সারা গায়ে। মাথার ভেতরেও।

(৩)

স্কুল থেকে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেছেন কয়েকজন মাস্টার মশাই মিলে। একমাত্র দিদিমণি ছিলেন মলি। হঠাৎই মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। স্কুলের কাছাকাছি কোনও ডাক্তারখানায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কেউ কেউ। আমিই রাজি হইনি। এমনকি একাই চলে আসতে পারব বললেও একা ছাড়তে চাননি কেউ। আমার স্ত্রীকে মাঝরাস্তা থেকে ফোনে জানালাম আমার শরীর খারাপের কথা। আমাদের পরিচিত বিমান ডাক্তারকে খবর দিতে বলে দিয়েছিলাম। বাড়ি ফেরার পর ডাক্তার এসে বলে গেলেন এমন কিছু নয়। বোধহয় গরমে এসব হয়েছে। প্রেশার সামান্য বেশি। দিন দুই রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
কিছু সময় বাদে স্কুলের সবাই ফিরে গেছেন। মলিও যাওয়ার সময় খুব নীচু গলায় বলে গেলেন, বেশি টেনশন করবেন না অনীকদা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি ধীরেসুস্থে নামটা নিয়ে ভাবুন।

মলি ধীরেসুস্থে নাম ভাবার কথা বললেও আমি জানি ভাবতে আমাকে হবেই। বিট্টুর ডাইরির ভাবনাটা আমাকে ছাড়বে না। তাই পরদিন সকালেই ডাইরিটা খুলে বসলাম। একটার পর একটা পাতা খুলে পড়ে যাচ্ছি আর আমার চোখের সামনে বিস্ময়ের জগৎ খুলে চলেছে। এসব ভাবনা মাথায় আসত বিট্টুর ? ও কি নারীবাদী ছিল ? আরও খানিকটা পড়ার পর বুঝলাম বিট্টু ঠিক নারীবাদী বা পুরুষবাদী নয়, ও আসলে ছিল মানবতাবাদী। কিংবা হয়তো অন্যরকম ছিল। একদম অন্যরকম।

"আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বোধহয়। এমনকি মলিও। সেদিন বাবা বললেন, আমি নাকি অকারণে যাকে-তাকে অপমান করছি। পূর্বপুরুষদের ভুলভ্রান্তি নিয়ে একটু বেশিই মাথা ঘামাচ্ছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা যদি সমাজের উপর নানা প্রথা চাপিয়ে দেন, তার সমালোচনা করব না ? এতে অপমান করা হয় ? আমাদের গোটা সভ্যতার ইতিহাসই তো অপমানের পাহাড় দিয়ে গড়া। তার বেলা ? "

বিট্টুর ডাইরির পাতায় আমি এসব লেখা আবিষ্কার করি। পরের পৃষ্ঠায় বিট্টু লিখেছে, "বাল্যবিবাহ, সতীদাহ কি অপমান নয় ? নারীত্বের চরম অপমান। স্বামী মারা গেলে বিধবা স্ত্রীকে জোর করে নানা আচার মানতে বাধ্য করা হয় কেন ? এসব তো মেয়েরাই মেনে নিয়েছে। নাকি মানতে বাধ্য হয়েছে ? একসময় মানতে মানতে এগুলোকেই সত্য বলে মনে করছে ? শুভকাজে বিধবাদের থাকতে দেওয়া হয় না। কেন তার অধিকার থাকবে না ? এসব কি নারীত্বের অপমান নয় ?"
পাতা উল্টে যাচ্ছি একটার পর একটা। নানা ভাবনাচিন্তার কথকতা। পার্টিতন্ত্রের হাতে গণতন্ত্রের কবর খোঁড়া, দলবাজি, সরকারি কর্মীদে ঘুষ নেওয়া, শ্লথগতির সরকারি কাজ, রাজনৈতিক দাদাগিরি, সামাজিক দাদাগিরি, ধর্মীয় সন্ত্রাস, তালাক প্রথা। কতকিছু নিয়ে ভাবত বিট্টু ? এই উন্মাদ সময় কি তরুণ প্রজন্মকে হতাশাই দেয় শুধু ? আর তার জন্য এক তরুণকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় সমাজ-সভ্যতা ? ভেবে কোনও কূলকিনারা পাই না আমি।
একটা পৃষ্ঠায় বিট্টু লিখেছে, "মলির মেশোমশাইয়ের নাকি বারাসাতে একটা বাগানবাড়ি ছিল। সেটা বিক্রি করে দিয়েছে। কত গাছ কাটা গেল ! সারা পৃথিবীতে সভ্যতা রচনা করার জন্য কত বনভূমি কেটে ফেলেছে মানুষ। একদিন কি মানুষকে অক্সিজেন কিনে শ্বাসপ্রশ্বাস চালাতে হবে ? ভৌমজল তুলে নিচ্ছে যেভাবে, জলও তো পাওয়া যাবে না সেভাবে ভবিষ্যতে। আমরা তো আমাদেরই কবর খুঁড়ে চলেছি।"

গাছাপালা আর জলের সমস্যা তো এখন চোখের সামনে বড় হয়ে উঠেছে। অথচ বিট্টু কতদিন আগে এসব ভেবে গেছে !

বিট্টূর বেশ কয়েকটা কবিতাও পড়লাম। অসাধারণ সেইসব কবিতা। তবে হতাশার চিহ্নই বেশি। একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওকে, হ্যাঁ রে বিট্টু। তোর লেখায় এত হতাশা থাকে কেন ? কবিতাই লিখিস আর গল্প, সবেতেই হতাশা থাকে কেন ? আশার কথাও তো লিখতে হয়।
~ কীভাবে আশার কথা লিখব অনীকদা ? আশা কোথায় বলো ? শুকনো রুটি চিবিয়ে কি বিরিয়ানির চোঁয়া ঢেকুর তোলা যায় ? এ যারা পারবে তারা লিখুক। আমি পারব না দাদা।"
এরপর আর কথা বাড়াইনি। ওর কথার জবাবে কী বলা উচিত ভেবে উঠতে পারিনি। বিট্টু সম্ভবত আমার কথায় বিরক্ত হয়েছিল। তাই আর কিছু না বলে আচমকা চলে গিয়েছিল আমাদের বাড়ি থেকেই ?

বিট্টুর লেখা গল্প আছে দুটো। দুটোই বেশ ভালো। দুদিন বাড়িতে বসে এসব পড়ছি আর স্ত্রীর নানা কথা শুনতে হচ্ছে।
~ কী সারাদিন মুখ বুজে পড়েই চলেছ, বুঝি না বাপু। ডাক্তারবাবু তোমাকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন। তুমি কী সব কাজগপত্র নিয়ে পড়ে আছো !
~ তেমন কিছু নয়। এই লেখাগুলো একটু পড়া দরকার, বুঝলে।
মুখ বেজার করে স্ত্রী চলে যায় আমার সামনে থেকে। ছেলেও আমাকে সতর্ক করেছে কয়েকবার।
~ চুপচাপ চোখবুজে শুয়ে থাকলেও ভালো বিশ্রাম হয় বাবা। রেস্ট মানে রেস্ট। চোখ, মাথা, সারা শরীরের রেস্ট।

আমি তো আর কাউকে বোঝাতেই পারছি না কী সাঙ্ঘাতিক এক ঘোরের মধ্যে আছি। অমোঘ এক টানে লেখাগুলো আমাকে টানছে। আর নানা ভাবনার বুদবুদ্ ছড়িয়ে দিচ্ছে মনের গহনে।
ভেবেছি এই সপ্তাহে আর স্কুলে যাব না।দুদিন কাটিয়ে একেবারে সোমবার যাব। মলি ফোন করলে ওকে ডেকে নেবো। নিজে থেকে ওকে ফোন করতে ইচ্ছে করছে না। শুক্রবার বিকেলেই মলির ফোন এল। ইতিমধ্যে আমি একটা নাম ঠিক করে রেখেছি।
~ কেমন আছেন ?
~ খানিকটা ভালো আছি। ইচ্ছে হচ্ছিল মলিকে বলি, সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছি মলি, কিন্তু বিশ্বাস করুন, ছাদে পৌঁছতে পারছি না।
~ সাবধানে থাকবেন। টেনশন করবেন না অনীকদা।
~ আমি ঠিক আছি মলি। আমার জন্য ভাববেন না।
আমি ভাবলাম এবার হয়তো কোনও নাম ভেবেছি কিনা জিজ্ঞাসা করবে মলি। কিন্তু নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল, তাহলে রাখছি স্যার। এবার আর অনীকদা নয়। স্যার !
আমি নিজেই বললাম, একটা নাম ভেবেছি মলি।
~ কী নাম ? মলির গলায় উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল।
~ প্রতিবাদী যুবকের কণ্ঠ। নামটা কেমন মলি ?
~ প্রতিবাদী যুবকের কণ্ঠ ? তা যা ভালো বুঝবেন দেবেন।
মলির কণ্ঠে কেমন যেন শান্ত জলস্রোত। একটু আগের সেই উষ্ণতা হারিয়ে গেছে।  তাহলে কি নামটা পছন্দ হয়নি ?
~ নামটা কি ভালো লাগল না?
~ না না, ঠিক আছে। তবু বলছি, অন্যরকম কিছু ভাবা যায় না ?
অন্যরকম ? আর কী ভাবব মলি ?আমি তো ভাবনাচিন্তার কোনও তল খুঁজে পাচ্ছি না! আপনি একা বইতে পারছেন না বলে আমাকে ভার দিলেন ? এ শাস্তি কেন দিলেন ? এসব ভেবেও বলা গেল না মলিকে। শুধু নিরুপায় গলায় বললাম, আচ্ছা ভাবব মলি। আরও ভাবতে হবে তাহলে !
পরদিন মলিকে আসতে বলেছিলাম। শনিবার হাফ ছুটির পরেওঁর তেমন কোনও কাজ নেই বললেন। মলি যথাসময়ে এলেন। তার মধ্যেই অন্য একটা নাম ভেবে রেখেছি। এই নামটা পছন্দ না-হলে এবার মলিকেই নাম ঠিক করে নিতে বলব। তবে আমার বিশ্বাস এই নামটা মলির নিশ্চয়ই পছন্দ হবে।
~ অপমানিতের ইতিহাস ? এই নামটা কিন্তু ভালো লাগছে অনীকদা।
~ তবে এটাই থাক। স্বস্তি পেয়ে আমি বললাম।
~ নামটা শুনতে ভালো। কিন্তু স্যার, এই নামটা বিট্টুর বইতে চলবে না।
আমি আৎকে উঠি। এটাও চলবে না ? খেয়াল করে দেখেছি মলি মাঝে মাঝে স্যার বলছেন, আবার অনীকদাও বলছেন। কোন কোন অভিব্যক্তিতে স্যার আর অনীকদা বলছেন ভাবার চেষ্টা করি আমি। এর মধ্যেই নিশ্চুপ ঘরে শব্দের প্রলেপ লাগায় মলি।
~ আসলে অপমানিতের ইতিহাস কথাটা ঠিক মনে হচ্ছে না। এ তো ইতিহাস নয়। অপমান আমাদের সভ্যতার ইতিহাসে ছিল, তেমনি আজও বর্তমান, ভবিষ্যতেও থাকবে হয়তো-বা। এ বোধহয় আর পাল্টাবে না অনীকদা।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে মলি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল।
~ তাহলে ?
~ আমি একটা অন্য নাম ভেবেছি দাদা। আপনার পছন্দ হবে কিনা জানি না। আত্মহত্যার স্বরলিপি।
আমি প্রায় লাফিয়ে উঠি। বাহ্‍, ঠিক নাম। আর ভাবতে হবে না। এর থেকে ভালো নাম আর হতেই পারে না। বিট্টু যা লিখেছে সে তো আত্মহত্যার স্বরলিপিই। এতেই তো ওকে মরতে হল।
কিছুক্ষণ নানা কথা বলে মলি চলে গেলেন। যাওয়ার সময় আমার অনুমতি নিয়ে পাণ্ডুলিপিও ব্যাগে ভরে ফেললেন।
~ প্রুফ এসে গেছে। একটু চেক করে দিতে হবে। পাণ্ডুলিপির ফটোকপি দিয়েছিলাম প্রেসে।
আমি ভাবছি এবার কি প্রুফটাও দেখে দিতে বলবেন মলি ?
~ ভূমিকাটা আপনিই লিখুন মলি।
দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছি কি আমি ?
~ না অনীকদা, এর কোনও ভূমিকা থাকবে না। আত্মহত্যার স্বরলিপির কোনও ভূমিকা থাকতে নেই। আসলে পুরোটাই একটা ভুমিকা কিনা !
শুধু ব্রতীন মজুমদারের একটা পরিচিতি থাকা চাই। সেটা আপনি লিখে দিন, প্লিজ। স্বরলিপিকারের ছবিসহ পরিচিতি দেবো।

মলি চলে গেলেন। আমার জন্য একগুচ্ছ গোলাপ এনেছিলেন। সেদিকে তাকিয়ে দেখি প্রত্যেকটি গোলাপে বিট্টুর মুখ। হাসছে। হেসেই চলেছে। সারা ঘরে যেদিকে তাকাই, সেদিকেই বিট্টুর হাসিমুখ। আমি ঘামতে থাকি। আবার বোধহয় অসুস্থ হয়ে পড়ব আমি। আমার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে। স্বরলিপিকার যেন আমার মাথায় হাত রাখল। আমি চোখ বুজে চুপচাপ শুয়ে থাকি আর বিট্টুর স্পর্শ অনুভব করি। আর অনুভবে অনুভবে ক্রমশই অতলে তলিয়ে যেতে থাকি।



যুগান্তর মিত্র