তিনটি কবিতা
১.
ক্ষত
ধুলো পড়ে আছে ক্ষতদের সারা গায়ে
ডুব দিয়ে ফেরা শামুকখোলের দল
বালি ঝরে পড়ে চেনা অচেনার পায়ে
আমাদের আছে বাঁচার সুকৌশল!
যন্ত্রণাগুলো সাজিয়ে রেখেছি পথে
বিষণ্নসুখে আস্তাবলের ঘোড়া
চাবুক যখন নিজের মেজাজে ছোটে
দশদিক ঢাকে ধুলোয় লাগামছাড়া।
সে ধুলো উড়ছে বছর বছর ধরে
একলা আকাশে মেঘেদের ঠাসাঠাসি
আমরা আজও সর্বনাশের ঘোরে
বিদ্বেষ নিয়ে করছি যে রেষারেষি।
নিলামে উঠছে হাজার সুখের চাবি
সূর্য হাসুক শিউলি ফুলের ভোরে,
নতুনের কাছে এইটুকু আজ দাবি
ভাঙব বলেই সুনামী আসুক জোরে।
সুনামী মানে তো সাগরকে ভেঙে দেখা
ধুলোদের গায়ে বৃষ্টি আসুক ঝেঁপে,
সারা বাড়িময় থৈ থৈ কাদামাখা
ক্ষতদের আজ না হয় নিলাম মেপে!
২.
আফ্রিকা
কমে গেছে স্নানঘরে বাষ্পের কদর
ঘনত্ব ফিকে হয়ে গেলে হিম জমে
দু এক পা পিছিয়ে যাই…
আবার সেই ব্যস্ত বাস স্ট্যান্ড!
ধুলোমাখা হাসি কান্না বিষাদ
আড্ডা দিচ্ছে চায়ের ঠেকে…
মাটির খুরিতে তিনকাপ চা ঢালতে ঢালতে
ঋজু বলেছিল,
‘দীপিকা পাদুকনকে বিয়ে
করব’। চোখে দুটো পোকা পড়েছিল!
শিলাবৃষ্টির পর শুনশান রাস্তায় আততায়ী অটো।
খুন হল
যেদিন আদিবাসী মেয়েটা ‘রাজনীতি’
বলে দিল কিছুলোক…
সেই সার্কাসে জমকালো ভোটের প্রচার !
আমাদের চিঠি লেখা হল না ঠান্ডায় …
হাত পা কাঁপল শুধু।
শীতে প্রতিবার আমি সার্কাস দেখি।
একদল গরম আফ্রিকা !
আমি আরও দুটো আফ্রিকা দেখেছি, মনে পড়ে।
কলকাতার ফুটপাত আর একটা
তোমার বুকের ভেতর…
৩.
হারিয়ে যেতে হয়
পুরোনো সিগারেটের ভেতর গুটিয়ে নিয়েছি
অথচ কিছু বেঁচে থাকা বাকি
চায়না টাউনের কত পথ
চোখে ধুলো দেয়।
আনমনা ফুটপাথে কখনো সূর্যটা
ফেরি করে রোদ...
শহরে বৃষ্টি নামে। ভেসে যায় ঘর
হাজারো তর্কের ভেতর…
বেকার শিশুর বাবা
মাথা কুটছে ভিজে রাস্তায়…!
অথচ ভেবেছি ‘সব ঠিক হবে’!
পালাতে পালাতে থেমে যাব
পাশাপাশি…
হারিয়ে যায় ট্রাঙ্কের চাবি
ভাড়া ঘরে শেষ লাইটের বিল
আর… একসাথে দ্যাখা সেই সাদা চাঁদ!
সবর্না চট্টোপাধ্যায়