হ্যাঁ, সংসদ অভিধান যা
বলছে, অর্থাৎ 'কোষ' বানানটি লেখাই অভিপ্রেত, এ কথায় আমাদের প্রবল সায় আছে। 'কোশ'-ও
লেখা চলতে পারে, ভুল নয়, কেউ কেউ লেখেনও, কিন্তু আমাদের পক্ষে এ বানান লেখা সম্ভব
নয়। কারণটা বলি। 'শ' ব্যবহার করলে মনে হয় শরীরের কোষগুলো কেমন যেন দুবলা, 'ষ'-র
ঝাঁঝটুকু নেই। বিশেষত মগজের কোষগুলোর কথা যখন ভাবি, 'শ' কেমন ম্যাড়মেড়ে লাগে।
মগজের কোষে ঝাঁঝ থাকাটা জরুরি।
কথায় ঝাঁঝ থাকতে হবে, ভাবনায় ঝাঁঝ থাকা চাই, তবেই না নিরীহ, গোবেচারা স্বভাবটাকে
বিসর্জন দেওয়া যায়। তুমি ভদ্দরলোক-- কাজেই তুমি চশমাবাবুদের দলে, অর্থাৎ তুমি একটা
বেড়াল মারতেও ভয় পাও-- এ কথাটা ভাঙা হাড়ের শরীরে মেটাল প্লেট
ঢুকিয়ে মেরামত করার মতো করে পাবলিক মগজে ভরে নিয়েছে। আমি বা আমরা পাবলিকের সে তালটাতে রস, আঁশ হয়ে বাঁচব কেন?
এতকাল নানা বয়সে নানা কথা ভেবেছি। একদল লোকের ভিড়ের মধ্যে লটকে থেকে কত আমোদেই না
ভেবেছি এই এবার সুদিন বুঝি এল, আর তা আমাদের ঘাড়ে চেপেই আসবে, কেননা আমাদের মন
বিজ্ঞাননির্ভর, সততা নিয়ে বড়াই আমাদের, দ্বন্দ্বমূলক যা কিছু তার নিরসন ঘটবে, আর
আমরাই দেশ গড়ার আর্কিটেক্ট, মানুষের পাশে তো আমরাই, কাজেই একদিন আমরাই জয়তিলক পরে
মাথাভর্তি সম্মান নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবো...। হায়, সে দিবসভাবনা কেমন যেন উল্টে শেষে উধাও হয়ে গেল। চাইলে তার
ব্যাখ্যাও শোনাতে পারি, কিন্তু বোধবুদ্ধির ঝাঁঝমুক্ত হয়ে সিরিয়াল নায়িকার মোহিনী
রূপ ধরতে রাজি নই। রাজনীতিকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ভাবার মূর্খামি আমাদের নয়, তবে
আমরা কিছুটা ইমপালসিভ। আমরা আবেগের দাসত্ব মানি। ভাষা, শব্দ, কথার তেজই
যদি না থাকে, তবে আর রইলটা কী! 'একমাত্র আমরাই পারি'-- এ কথা বারবার ঘোষণার মধ্যে
তেজি ভাবটা আলবৎ আছে। কথায়, কাজে একমাত্রিকতার ঝোঁক যদি বা থাকেও, স্বভাব তো
বদলাতে পারবো না। অনেক লড়াইয়ের পর এমন টেম্পারড চরিত্রে সামিল হয়েছি। জুনিয়র
জুনিয়র থাকবে, সিনিয়র সিনিয়র। আমরা সিনিয়র-জুনিয়র, সকলেই ঝাঁঝালো স্বভাবটা নিয়ে
বাঁচতে চাই। অতীতে আমাদের সিনিয়রদের সমাজ বদলাবার গর্বকল্পনা ছিল। সে কল্পনার
ক্ষীর সর ননীটুকু যেন তাদের অধিকারে আছে-ছিল, এমন ভাব দেখাবার ছলে তারা
পুঁজিনৃত্যের মেয়াদ আর কতকাল তা অঙ্ক কষে বলে দিতে পারতেন। অঙ্ক কষার কেউ নেই আজ
আর, কাজেই বাংলা ভাষায় আরও জোর পড়েছে।
আ মরি বাংলা ভাষা! ভাষা বদলাবো না, তাতে যদি স্বভাব বদলে যায় ! আগে ভাবতাম, 'ভূতে
পশ্যন্তি বর্ব্বরা'-- বাংলা ভাষার এ প্রবচন মেনেই ভালোমন্দ যা কিছু ঘটছে, এখন মনে হয় পুরোনো প্রবচনে যেন আর
কুলোচ্ছে না, নতুন কোনো প্রবাদ বানাতে হবে।
শিবাশিস দত্ত