শ্রাবণী গুপ্ত সরকার

            


প্রেম সমকামী
হিমাদ্রি  কিশোর  দাশগুপ্ত 
প্রকাশক : প্রিয়া  বুক  হাউস 
আলোচনায় :শ্রাবণী গুপ্ত সরকার

অল্পদিন আগে শেষ হওয়া বইমেলায় অন্যতম বিতর্কিত উপন্যাসটি হলো প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত রচিত 'প্রেম সমকামী'। সম্প্রতি আইনী সমর্থন পেলেও সমকামিতা বাংলা সাহিত্যে মোটেই চর্চিত বিষয় নয়। হয়তো বা ক্কচিৎ কখনো কোন কোন ব্যতিক্রমী সাহিত্যিকের কলমে উঠে এসেছে বিষয়টি।

        হিমাদ্রি কিশোর সব সময়েই অনায়াসে বিচিত্র বিষয় নিয়ে কাজ করেন। অভিনবর প্রতি তাঁর অসীম আগ্রহ এবং তিনি সাহসীও বটে। তাই তাঁর উপন্যাসের কাহিনী গড়ে ওঠে সমকামিতা নিয়ে।

           বাস্তব সমস্যাগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না। লেখক তাই কলম চালান সেই সব সমস্যাকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচর করার জন্য। সমকামিতা কোনো নিষিদ্ধ বিষয় না, পাপ না। ভালোবাসার একটা রূপভেদ মাত্র।
 তরুণী লেখিকা এবং সাংবাদিক অহনা সমকামিতা নিয়ে উপন্যাস লেখার সুযোগ পেয়েছে এক নামী পত্রিকার পুজো সংখ্যায়। খুব কম সময়ে এই বিষয়টি জানার জন্য ঐ গোষ্ঠীভুক্ত কারোর সঙ্গে পরিচিত হওয়া খুব প্রয়োজন। এই সূত্রেই আলাপ রুদ্রাণী, শ্যামলীদের সঙ্গে।

         ওদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয় অহনার। বেশীটাই তিক্ত আর হতাশাজনক।  উপন্যাসের বিষয়বস্তু নিয়ে দূরত্ব ঘনায় নীলের সঙ্গেও।অহনার মধ্যে তৈরী হয় সমকামীদের প্রতি সহানুভূতি।নীলের প্রভুত্ব ব্যঞ্জক আচরণের বিপরীত কোটিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রুদ্রাণী আর শ্যামলীর আশ্চর্য টান। প্রেমের জন্য অনায়াসে অগ্রাহ্য করা যায় শারীরিক কষ্ট। 
     উপন্যাস এগোয়, অহনাও পরিণত হয় আঘাতে, নানা ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়। আপাত আধুনিক মানুষের কুৎসিত সংস্কার মনকে ব্যথিত করে।

          উপন্যাসের শেষে ভালোবাসার ভিন্ন প্রকাশের রামধনু রঙে রঙিন হয় মন। হয়তো বা সব মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সমকামী প্রেম।

        বেশ কিছু ঐতিহাসিক চরিত্রের নাম এবং ইঙ্গিত আছে উপন্যাসে।লেখকের সাহসকে সাধুবাদ জানাই। স্পষ্ট ভাষায় একটি সমকালীন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে মনছোঁয়া উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য। মৃদু বিষণ্ণতার সঙ্গে কোথায় যেন জয়ের আনন্দ এক হয়ে গেছে শেষ অংশে। অহনার বাবার বটবৃক্ষের মতো ভূমিকা ভালো লাগে। মায়েদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অহনার মা আর রুদ্রাণীর মাকে কেন্দ্র করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

       প্রিয়া বুক হাউস থেকে প্রকাশিত এই ব্যতিক্রমী উপন্যাসের অনবদ্য প্রচ্ছদটি এঁকেছেন শিল্পী রঞ্জন দত্ত।
শ্রাবণী গুপ্ত সরকার